নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
ময়মনসিংহের শিল্পকলাবিহীন এবং ছবি আঁকার ঘোর বিরোধী গরিব মধ্যবিত্ত গোঁড়া ধার্মিক ঘরের সন্তান জয়নুল। ম্যাট্রিক ক্লাসে পড়ার সময় শুধু কলকাতার আর্ট স্কুলটা স্বচক্ষে একবার দেখার জন্য বাড়ি থেকে পালিয়ে কলকাতা চলে এলেন।
একদিকে অচেনা শহর, আত্মীয়স্বজন কেউই তো নেই এই শহরে। হাতের এক টাকাই সর্ব সম্বল, কলকাতার ধর্মতলায় দুটো কমলা নিয়ে বিস্তর দরাদরি, ফলে হঠাৎই দুগালে কষে থাপ্পড় বসালো বিক্রেতা! এতেই কলকাতাকে বড়ই কঠিন ঠাঁই মনে হলো তাঁর।
তারপর মনে হলো, না এই শহরে থাকা যাবেনা! চোখ মুছতে মুছতে শিয়ালদহে ফিরে গিয়ে বিনা টিকিটে উঠে পড়লেন ফের ট্রেনে। সেবার আর্ট স্কুল আর দেখা হলো না কিশোর জয়নুলের।
বাড়িতে ফিরেও অজস্র প্রশ্নের সম্মুখীন হলেন। কম বাধা আসেনি। ছেলে আর্ট স্কুলে ভর্তি হবে কোন বিধানে, ছবি আঁকা যে শরিয়তের বরখেলাপ!
তার পরের বৎসর আর্ট স্কুলে ভর্তি হয়ে জয়নুলকে কয়েক মাস ওয়েলেসলি স্কয়ারের বেঞ্চিতে রাত্রিযাপন করতে হয়েছিলো। আর্ট স্কুলে ভর্তি হওয়াটাও ছিলো তাঁর জন্য সাত সমুদ্র তেরো নদী জয় করার মতো।
বাবা পুলিশের দারোগা, কি টাকা আর বেতন! টানাটানির সংসার। মাসিক মাইনেতে ১১ জনের সংসার চালাতে যেন তমিজ উদ্দিন আহমেদের চোখে সর্ষে ফুল। ছেলের জেদ দেখে নিজের গলার হার বিক্রি করে ছেলেকে আর্ট স্কুলে পাঠালেন জয়নাবুন্নেছা। ভর্তি হলেন বটে কিন্তু জয়নুলের থাকার জায়গা নেই। থাকবেন কোথায়?
"তাই পার্কে থাকতে হতো। কিন্তু সবচেয়ে কষ্টকর ছিল পার্কে ভোর হওয়ার পর শতরঞ্জি বাঁধা তোশকটা বগলে নিয়ে কোথায় রাখব কোথায় রাখব করে নিত্যনতুন জায়গার সন্ধান।" এক সাক্ষাৎকারে বলেছিলেন তিনি।
আর্টপাগল ছেলেটি পরে জানতে পারলেন, এক-একটি করে মসজিদের বারান্দায় কয়েকটি করে রাত অনায়াসে কাটিয়ে দেওয়া যায়।
শিল্পী জয়নুল আবেদিনকে এমনি ধারা অজস্র অভিজ্ঞতা নিয়ে এবং শহর ও গ্রামের সাধারণ জীবনধারার মধ্যে থেকে আর্টের সাধনা করতে হয়েছে। কি যে পরিশ্রম আর শ্রম তিনি দিয়েছেন তা অবর্ণনীয়। বলতেন , 'নদীর ছবি আঁকার আগে পানির দোলনই আগে বুঝতে হবে।’
১৯৪৩-এর বাংলার দুর্ভিক্ষ জয়নুল আবেদিনকে একেবারে বদলে দিলো। গ্রাম-বাংলার রোমান্টিক নিসর্গ শিল্পীকে রূপান্তরিত করে ফেলে এক দুর্দান্ত বিদ্রোহী ব্যক্তিত্বে। তারপর থেকে সারাটি জীবনই বিক্ষুব্ধ থেকে গেছেন তিনি। দুর্ভিক্ষ শুরু হওয়ার পরপরই জয়নুল তাঁদের ময়মনসিংহের বাড়িতে ফিরে গিয়েছিলেন। সেখানেও দুর্ভিক্ষের যে মর্মান্তিক দৃশ্যাবলি দেখে সহ্য হলোনা তাঁর; আবার কলকাতায় ফিরে এলেন তিনি। কিন্তু দুর্ভিক্ষপীড়িত দুস্থ মানবতা যেন সে যাত্রায় তাঁর সঙ্গী হয়ে আসে।
সেই আবেগই তাঁকে তাড়িত করে, বাধ্য করে অমানবিক পরিস্থিতির এক মানবিক নির্মাণে। রাতদিন শুধু কলকাতার দুর্ভিক্ষের সেসব নারকীয় দৃশ্যাবলির স্কেচ করতে শুরু করলেন। । জয়নুল তখন আর্ট স্কুলের একজন শিক্ষক, আয় খুবই স্বল্প।
দুর্ভিক্ষের বাজারে উন্নতমানের শিল্পসামগ্রী তখন যেমন ছিল দুর্লভ, তেমনি দুর্মূল্য। সে কারণে তিনি বেছে নিলেন শুধু কালো কালি আর তুলি। শুকনো তুলিতে কালো চীনা কালির টানে স্কেচ করতে থাকেন অতি সাধারণ সস্তা কাগজের ওপর, ব্যবহার করতেন কার্টিজ পেপার। এসব কাগজ ছিল ঈষত্ পীত বর্ণের। কখনোবা প্যাকেজিং কাগজও। সাধারণ স্বল্পমূল্যের এসব অঙ্কন সামগ্রী ব্যবহার করে তিনি যে শিল্প সৃষ্টি করলেন তাই পরিণত হলো অমূল্য সম্পদে।
ভবিষ্যতের মানুষ যদি ১৯৪৩ সালের দুর্ভিক্ষের বাংলাকে খানিকটা অনুভবে বুঝতে চায় তাহলে তাকে বিস্তর নথিপত্র ঘাঁটা ছাড়াও দুটি শিল্পবস্তুর নিশ্চয় সন্ধান নিতে হবে – বিজন ভট্টাচার্যের নাটক এবং আবেদিনের ছবি।
কত গভীরভাবে এঁদের নাটক এবং ছবি ১৯৪৩ সালের বিপর্যয়কে লেখায় এবং রেখায় ফুটিয়ে তুলেছিল ওই দুজন শিল্পীর কথাতেই তার প্রমাণ পাওয়া যায়।
বিজন ভট্টাচার্যের নাটক দেখতে দেখতে জয়নুল আবেদিন বলেছিলেন, ‘তুলি এবং ব্রাশ ছুড়ে ফেলে দিতে ইচ্ছে হয়।’ আর জয়নুলের ছবি দেখে বিজন ভট্টাচার্য বলেছিলেন, ‘থাকত ওইরকম ব্রাশ আর তুলি।’
এখনতো চারিদিকে রুচির দুর্ভিক্ষ! একটা স্বাধীন দেশে সুচিন্তা আর সুরুচির দুর্ভিক্ষ! এই দুর্ভিক্ষের কোন ছবি হয়না।” বলতেন তিনি।
.
একবার এক সাক্ষাৎকার গ্রহীতা তাঁকে প্রশ্ন করলেন - "আপনি দুর্ভিক্ষের উপর ছবি আঁকলেন অথচ বন্যার ছবি আঁকলেন না কেন?"
"বন্যা প্রকৃতির। তাই এর বিরুদ্ধে করবার কিছুই নেই।দুর্ভিক্ষ মানুষের সৃষ্টি। মানবতার অপমান আমাকে ব্যথিত করেছিল। তাই দুর্ভিক্ষের ছবি একেছি।’’ শিল্পাচার্য জয়নুল আবেদিন উত্তর দিলেন। .
মুক্তিযুদ্ধ জয়নুলকে প্রচণ্ড আলোড়িত করেছিল। দেশ স্বাধীনের পর লেগে গেলেন শিল্পচর্চা সংগঠনের কাজে। এবারে লোকশিল্প পূর্ণ মনোযোগ তাঁর। স্বপ্ন দেখতেন লোক ও কারুশিল্প জাদুঘরের।
.
স্বাধীনতার অব্যবহিত পরেই বঙ্গবন্ধু শেষ মুজিবুর রহমানের সরকার জয়নুল আবেদিনকে দায়িত্ব দিলেন বাংলাদেশের সংবিধানেল অঙ্গসজ্জার জন্যে। তিনিও বিনা বাক্যে রাজি। তাঁকে সাহায্য সহযোগিতা করেন আরও কয়েকজন শিল্পী।
সম্ভবত পাকিস্তান আমলে শিল্পাচার্য জয়নুল শিল্পী মুস্তাফা মনোয়ারকে বলেছিলেন, ‘মনোয়ার, দুর্ভিক্ষ হলে সে ছবি আঁকা যায়, নিরন্ন মানুষের হাহাকার ছবিতে দেখানো যায়। কিন্তু পাকিস্তানি শোষণের সময় মনের দুর্ভিক্ষ চলছে—এটা তো কোনো ছবিতে আঁকা যায় না।’
মৃত্যুর দুদিন আগে মুস্তাফা মনোয়ার হাসপাতালে শিল্পাচার্যকে রং-তুলি এগিয়ে দিতেই তিনি কাগজের গায়ে কালো রঙে, কাঁপা হাতে একটি ছেলে আর একটি মেয়ের মুখ এঁকেছিলেন, সেই ছবিটির শিরোনাম ‘টু ফেসেস’।
শিল্পাচার্য মুখ দুটি এঁকে সেদিন যেন আগামী দিনকে জানিয়ে দিলেন, এসব নতুন মুখই গড়ে তুলবে নতুন বাংলাদেশ।
তিনি বাংলাদেশের প্রাতিষ্ঠানিক চারুকলা শিক্ষার জনক। তাঁর ছোঁয়ায় গড়ে উঠলো ন্যাশনাল আর্ট কলেজ, চারুকলা ইনস্টিটিউট।
আজ উপমহাদেশের কিংবদন্তি চিত্রশিল্পী শিল্পাচার্য জয়নুল আবেদিনের ১০৯ তম জন্মদিন। বিনম্র শ্রদ্ধা জানাই তাঁর প্রতি।
আর্ট এজ
ছবি- রশীদ তালুকদার
সংগৃহীত
৩০ শে ডিসেম্বর, ২০২৩ সকাল ১০:৪৮
শাহ আজিজ বলেছেন: ধন্যবাদ , সময় দেবার জন্য । নুরু ভাইয়ের কি মনে পড়ে গেল ? আপনি কার জন্য বেহেশত দাখিলের সুপারিশ করলেন ? এটা জয়নুল আবেদিনকে নিয়ে লেখা , নুরু ভাইকে নিয়ে নয় ।
২| ৩০ শে ডিসেম্বর, ২০২৩ সকাল ১০:৫৬
বাকপ্রবাস বলেছেন: বিনম্র শ্রদ্ধা
৩০ শে ডিসেম্বর, ২০২৩ সকাল ১১:৩১
শাহ আজিজ বলেছেন: ধন্যবাদ ।
৩| ৩০ শে ডিসেম্বর, ২০২৩ সকাল ১০:৫৯
নাহল তরকারি বলেছেন: প্রতিভাকে আটকিয়ে রাখা যায় না। সেটা প্রকাশ হবেই।
৩০ শে ডিসেম্বর, ২০২৩ সকাল ১১:৩২
শাহ আজিজ বলেছেন: সত্যি কথা বটে ।
৪| ৩০ শে ডিসেম্বর, ২০২৩ সকাল ১০:৫৯
হাসান রাজু বলেছেন: নুরু ভাই এমন করে মহান ব্যাক্তিদের জন্ম ও মৃত্যু দিবসে পোস্ট করে শ্রদ্ধা জ্ঞাপন করতেন ।
৩০ শে ডিসেম্বর, ২০২৩ সকাল ১১:৩০
শাহ আজিজ বলেছেন: ও আচ্ছা । আমি শিল্পী বলে জয়নুলের কথা ছেপেছি ।
৫| ৩০ শে ডিসেম্বর, ২০২৩ সকাল ১১:৪৫
কালো যাদুকর বলেছেন: তৃতীয় শ্রেনীতে ওঁর বায়োগ্রাফি পড়েছিলাম। এত বিস্তারিত না অবশ্য, আপনার লিখার সূত্র ধরে বিস্তারিত জানলাম। আপনি নিজেই চারুশিল্পী , তাই আপনার এই বর্ননা অনেকটাই বাস্তবিক ভাবে জয়নূল স্যারের স্ট্রাগলটি ফুটে উঠেছে। পার্কে রাত্রি যাপন করে কলেজ পড়া শেষ করা, আমরা কল্পনাও করতে পারি না। শ্রদ্ধা ও ভালবাসা শীল্পার্যাকে।
৩০ শে ডিসেম্বর, ২০২৩ দুপুর ১২:৪৮
শাহ আজিজ বলেছেন: ধন্যবাদ যাদুকর আপনার সুগঠিত মন্তব্যের জন্য ।
৬| ৩০ শে ডিসেম্বর, ২০২৩ দুপুর ১২:১৩
প্রামানিক বলেছেন: সেসময় যারা অভাবের সাথে যুদ্ধ করে জ্ঞান চর্চা করেছেন তারাই প্রতিষ্ঠিত হয়েছেন। পূর্ববঙ্গ থেকে কলিকাতায় যাওয়া যে কয়জন লেখক হয়েছেন তাদের বেশির ভাগই থাকা খাওয়ার কষ্টে ভুগেছেন।
৩০ শে ডিসেম্বর, ২০২৩ দুপুর ১২:৫২
শাহ আজিজ বলেছেন: আমার বাবা উচ্চশিক্ষার্থে কলকাতা গিয়ে কয়েকদিন মসজিদে ঘুমিয়েছেন ১৯২৮ সালে । কষ্টের মধ্য দিয়েই সার্থকতা অর্জন হয় ।
৭| ৩০ শে ডিসেম্বর, ২০২৩ দুপুর ১২:২৫
গেঁয়ো ভূত বলেছেন: শিল্পাচার্য জয়নুল আবেদিনের কঠিন জীবন কাহিনী ভালো লেগেছে। তবে, নিচে সংগৃহীত না লিখে মূল লেখকের নাম উল্লেখ করে দিলে আরও ভাল হতো।
৩০ শে ডিসেম্বর, ২০২৩ দুপুর ১২:৫০
শাহ আজিজ বলেছেন: আর্ট এজ এটা ছেপেছে , আমি আর্ট এজের সদস্য কিন্তু মুল লেখাটি কার তা অনুল্লেখিত ছিল বলে ওটা দেয়া যায়নি ।
৮| ৩০ শে ডিসেম্বর, ২০২৩ দুপুর ১২:৫৩
মোহাম্মদ সাজ্জাদ হোসেন বলেছেন:
এই পোস্টখানায় আপনারা নিজের কোন কৃতিত্ব দেখি না।
৩০ শে ডিসেম্বর, ২০২৩ দুপুর ১২:৫৭
শাহ আজিজ বলেছেন: হুম তাতো উল্লেখ করেছি , এতেও কি জ্বালা মেটেনা আপনার ??
৯| ৩০ শে ডিসেম্বর, ২০২৩ বিকাল ৪:৩৫
রাজীব নুর বলেছেন: সুন্দর একটা লেখা শেয়ার করার জন্য আন্তরিক ধন্যবাদ।
৩০ শে ডিসেম্বর, ২০২৩ সন্ধ্যা ৬:৪৫
শাহ আজিজ বলেছেন: ধন্যবাদ
©somewhere in net ltd.
১| ৩০ শে ডিসেম্বর, ২০২৩ সকাল ১০:৩৫
হাসান রাজু বলেছেন: পড়তে পড়তে মনে পড়ে গেল, নুরু ভাই। আল্লাহ উনাকে বেহেশত নসিব করুন ।