![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
সপ্নটা অনেক বড় , কিন্তু দিনকে দিন সপ্ন গুলো ফিকে হয়ে যাচ্ছে ।
আফগানিস্তানের মানুষরা কোনো বিয়ের
অনুষ্ঠান হলে প্রাণভরে আনন্দ করেন৷
খানিকক্ষণের জন্য হলেও ভুলে যান তাদের দুঃখ
দুর্দশা, যুদ্ধ বিগ্রহ৷ সারা রাত
ধরে চলতে থাকে নাচ, গান, হৈ হুল্লোড়৷
আপনজন ও পরিবার পরিজন ছেড়ে যেতে হবে বলে নববধূর
মুখটা থাকে মলিন৷ চোখে থাকে অশ্রু৷ এটা কিন্তু সবসময়
লোক দেখানো নয়৷ বাস্তবিকই অনেক মেয়েকে জোর
করে বিয়ে দেওয়া হয়, তাই তাদের মুখে হাসি থাকে না৷
কিশোরী নাদিয়ার ভাগ্যেও ঘটেছে এই রকমটি৷ জোর
করে তাকে বিয়ে দেওয়া হয়৷ কিন্তু
বরকে সে মেনে নিতে পারেনি৷ তাই
চেষ্টা করে আত্নহত্যার৷ তবে সে চেষ্টা ব্যর্থ হয়৷ এখন
সে অসুখী এক গৃহবধূ৷
জাতিসংঘের এক রিপোর্ট অনুযায়ী, আফগানিস্তানের
৮০ শতাংশ বিয়ে জোর করে দেওয়া৷ প্রায় অর্ধেক
ক্ষেত্রেই নববধূর বয়স ১৬ বছরের নীচে৷ জীবনের সুন্দর
দিনটিকে ভয়াবহ বলে হয় অনেকের কাছে৷ আত্মহত্যাই
মুক্তির একমাত্র পথ বলে মনে করে তারা৷
আফগানিস্তানের সাম্প্রতিক এক সমীক্ষায়
দেখা গেছে, প্রতি এক লাখে পাঁচ জন
মেয়ে আত্মহত্যার পথ বেছে নেয়।
<>শহরের মেয়েরা বেশি হতাশাগ্রস্ত=
স্ত্রীরোগ বিশারদ ডা. মনিকা হাউসার ২০ বছর
আগে জার্মান
নারী রক্ষা সংস্থা ‘মেডিকা মোনডিয়ালে'
গড়ে তোলেন৷ বছর নয়েক ধরে আফগানিস্তানে কাজ
করছে প্রতিষ্ঠানটি৷ ডা. হাউসার
আফগানিস্তানে মেয়েদের
মধ্যে আত্মহত্যা বেড়ে যাওয়ার প্রবণতা লক্ষ্য করেছেন৷
তাঁর ভাষায়, ‘‘বিশেষ করে শহরের মেয়েদের
মধ্যে এটা দেখা যাচ্ছে৷ কারণ তাঁরাই জোর
করে দেওয়া বিয়েকে মেনে নিতে পারে না৷''
শহরের মেয়েরা তুলনামূলকভাবে শিক্ষিত৷ গণমাধ্যম ও
ইন্টারনেটের কারণে তাঁরা অনেক কিছুই জানেন৷ তাই
অনিচ্ছা সত্ত্বেও বিয়ে হলে তাঁরাই হতাশায় ভোগেন
বেশি৷
সমীক্ষায় জানা গেছে, আফগানিস্তানে ১.৮ মিলিয়নের
বেশি নারী ডিপ্রেশনে ভুগছেন৷ চিকিত্সক ও
মনস্তত্ত্ববিদ ডা. মোহাম্মদ আশরাফ রাওয়ান জানান,
‘‘খুব অল্পবয়সে বিয়ে হলে মেয়েরা তাদের ওপর
চাপানো দায়িত্ব পালন করতে পারেন না৷ বিশেষ
করে জোর করে বিয়ে দেওয়া হলে প্রায়ই দাম্পত্য
সমস্যা ও বিবাহ বিচ্ছেদ দেখা দেয়৷ নানা রকম মানসিক
সমস্যা ও ডিপ্রেশন ভোগেন মেয়েরা৷ যা আত্মহত্যার
পথে নিয়ে যায়৷''
<>সনাতন প্রথা=
ইসলামি আইন অনুযায়ী, বিয়েতে পাত্র-পাত্রী দুজনেরই
সম্মতি প্রয়োজন৷ কিন্তু আফগানিস্তানে হাজার হাজার
বছর ধরে চলা সনাতন প্রথাই জয়ী হচ্ছে৷ মা-
বাবা তাদের ইচ্ছা চাপিয়ে দেন বিশেষ
করে কন্যা সন্তানের ওপর৷
ছেলেরা অনেকটা স্বাধীনতা ভোগ করেন৷ মা-বাবার
পছন্দের পাত্রীকে তারা প্রত্যাখ্যান করতে পারেন
অথবা গ্রহণও করতে পারেন৷ অনেক ছেলে নিজেরাও
জীবনসঙ্গী নির্বাচন করতে পারেন৷
আফগানিস্তানের মানবাধিকার কমিশনের মুখপাত্র
ফৌজিয়া নাওয়াবি এই প্রসঙ্গে বলেন, ‘‘আত্মহত্যার
চেষ্টা করেছে, এমন বহু মেয়ের সঙ্গে কথা বলেছি আমি৷
বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই এই প্রচেষ্টার কারণটা হল জোর
করে বিয়ে দেওয়া৷''
আফগানিস্তানের উত্তরাঞ্চলের চারটি প্রদেশের
দায়িত্বে রয়েছেন ফৌজিয়া৷ তিনি জানান, ‘‘২০১২
সালে এই প্রদেশগুলিতে ৩৬টি আত্মহত্যার
চেষ্টা করা হয়েছে৷ এর মধ্যে ১০ জন বেঁচে গেছেন৷
তবে তালিকার
বাইরে থাকা সংখ্যাটা আরো বেশি হবে৷ কেননা অনেক
পরিবারই বিষয়টি গোপন রাখতে চেষ্টা করেন৷''
<>আইনগত সহায়তা=
ডা. মোনিকা হাউসার জানান,
মেডিকা প্রতিষ্ঠানটি ভূক্তভোগী মেয়েদের শুধু
মনস্তাত্ত্বিক সহায়তাই দেয় না, আইনগত সাহায্য
সহযোগিতাও দিয়ে থাকে৷
মেয়েরা যাতে নির্ভয়ে তাদের
সমস্যাগুলি তুলে ধরতে পারে, সে ব্যবস্থাও
করে থাকে সংস্থাটি৷ আইনের চোখে নারী ও পুরুষ সমান
হলেও তা শুধু কাগজে কলমেই সীমাবদ্ধ৷ নারীর
প্রতি সহিংসতা রোধে তিন বছর আগে একটি আইনের
খসড়া তৈরি করা হয়েছিল৷ কিন্তু এখন পর্যন্ত তা সংসদ
কর্তৃক পাশ করা হয়নি৷ আইনের এই খসড়ায় অন্যান্য
বিষয়ের মধ্যে মেয়েদের বিয়ের বয়স কমপক্ষে ১৬ বছর
করার প্রস্তাব রয়েছে৷
©somewhere in net ltd.