নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

আসক্ত আমি দিবা স্বপ্নে!

শািহনুর৯৩

হাসতে ভালবাসি।

শািহনুর৯৩ › বিস্তারিত পোস্টঃ

রতনের রাজি হতে একটি রতন-০২

০৮ ই জানুয়ারি, ২০১৬ ভোর ৪:২৮

রতনের রাজি হতে একটি রতন- ০১
একইসাথে জিলাপি আর সিনেমার লোভে রতনের চোখ ঝলমল করছে ও বুকটা সামান্য দুরু দুরু করছে মোরগ হাতে বাজারে যাওয়ার পথে কখন যে কার চোখে পড়ে যায়। পরক্ষণেই ভাবে আর যার চোখেই পরি এখানেত আর দাদি আসতেছেনা দেখতে তাই পরে যা হবার হবে এখন আগে গুড়ের জিলেপী খাবে আর সিনেমা দেখবে। মাটির রাস্তা ছেড়ে ডানের মোড়টা ঘুরে বড় রাস্তায় উঠবে এমন সময় রতনের কাকা হাতেম আলীর সাথে মুখো-মুখি। হাতেম আলীর সোজা প্রশ্ন- রতন কই যাস ?
রতনের খানিকটা থতমত উত্তর, কাআ...কা বাজারে যাআই। তুঅমি?
হাতেম আলী মুচকী হেঁসে বলে, ঘটনাকি রতন? হঠাত আম্মার লাল মোরগ নিয়া তুই বাজারে?
রতন হাতেম আলীর সংকেত বুঝতে পারল সহজেই। না হাতেম আলীকে তার ভয় নেই। হাতেম আলী রতনের তিন বছরের বড় আর দুষ্টুমিতেও রতনের চেয়ে তিন ধাপ এগিয়ে। রতন আর হাতেম আলীর মধ্যে বোঝাপড়াটাও ভালই। রতন সংকোচ না করে বলে দিল, তোমার আম্মা পাঠাইছে ইমাম সাহেবকে দিতে। কিন্তু কাকা মেলাদিন হইল গুড়ের জিলাপি খাই নাই। তুমি খাইতে চাইলে মোরগটা বেইচা দাও।
হাতেম আলী লোভনীয় হাসি দিয়া বলল আমিও খামু কিন্তু আমার কোন দোষ দিবিনা। তুইত তর দাদীরে চিনস, বাড়িতে উঠতে দিবনা জানবার পাইলে।
তোমার দোষ হব কেন? মোরগ’ত আর তোমার কাছে পাঠায় নাই। পরেরটা পরে দেখা যাবে, আগে গরম গরম গুড়ের জিলাপী খাওয়ার ব্যবস্থা কর।
অত:পর চাচা-ভাতিজা মিলে খুব সহজেই নাজমা বেগমের নাদুস নুদুস লাল মোরগ বেচে ভালই দাম পেল। দুজনে সোজা কালু মিয়ার জিলাপির দোকানে গেল। আশে পাশের কয়েক গ্রামে এই দোকানের জিলাপীর সুখ্যাতি আছে। রতন জিলাপির কড়াই এর সামনে দাড়িয়ে গেল। কালু মিয়া কড়াইয়ের গরম তেলের মধ্যে ময়দা পেচিঁয়ে পেঁচিয়ে জিলাপি বানাচ্ছে।রতনের কাছে মনে হচ্ছে যেন কোন শিল্পি কোন এক বিশেষ ধরণের ফুলের ছবি বার বার একে যাচ্ছে। তার খুব ইচ্ছে করে একদিন নিজের হাতে এমন করে পেঁচিয়ে পেঁচিয়ে জিলাপি বানাবে। হাতেম আলী এতক্ষনে দোকানের ভিতরে গিয়ে বসেছে আর মোটামুটি চিতকার করে ডাকছে- এই রতন আয় এখানে, তুই জিলাপী খাইতে আইছস নাকি দেখবার আইছস?
এক কেজি গুড়ের জিলাপী কিনে দুজনে বসে মন ভরে খাচ্ছে। কারো মুখে কোন কথা নেই দুজনেই জিলাপীর স্বাদ নিতে ব্যস্ত। হঠাতই হাতেম আলী স্ব-শব্দে হাসতে হাসতে বলে উঠল বেচারা ইমাম সাহেবের রিজিকেই নাই মোরগটা, তর দোষ কি? বলেই আবার হাসতে শুরু করল।
এবার রতনও না হেসে পারেনা। হাসি থামিয়ে বলে কিন্তু তোমার আম্মা-ত সেইটা বুঝবনা কাকা। বুড়ি খালি বক বক করে। সকাল বেলা বারান্দায় বইসা অত সুন্দর একটা স্বপ্ন দেখতাছিলাম বুড়ি চেচাইয়া নস্ট কইরা দিল।
তুই জাইগা জাইগা স্বপ্ন দেখস?
হুম, দেখি।
কি স্বপ্ন দেখস?
স্বপ্নে দেখি আমি সেনাবাহিনীর বড় অফিসার হইছি। আমার হাতে মেলা বড় বন্দুক দেইখা সবাই ডরাইতাছে আর তোমার আম্মাও আমারে ডরাইতাছে। বলতে বলতে জোরে জোরে হেসেই ফেলল রতন।
হাতেম আলী কৌতুহল বশত বলে, কত বড় বন্দুক?
রতন লম্বা টেনে উত্তর দেয়, অনেক বড়।
হবি। তুই একদিন অনেক বড় হবি। তুই আমাদের গর্ব। আমাদের সারা গায়ের গর্ব। সারা গায়ের মধ্যে তুইি-ইত একমাত্র শহরে যাইয়া হোস্টেলে এ থাইকা পড়াশুনা করস। আইচ্ছা তগরে শহরের ইশকুলের মাস্টারাও কি মোটা মোটা কাঁচা কইঞ্চা দিয়া মারে??? আমি মৌলবী মাস্টারের মাইরের ডরেত আর ইশকুলেই গেলাম না।
কাকা সব ইস্কুলেইত মাইর দেয় পড়া না পারলে তবে শহরে কাঁচা কইঞ্চা পাওয়া যায়না। ঠিকমত পড়া লেখা করলে আর স্যারদের সাথে বেয়াদবী না করলে মারব ক্যা? কিন্তু কাকা আমার হোস্টেলে থাকতে একদম ভালা লাগে না। আমার খালি এপাড়া-ওপাড়া ঘুরতে ইচ্ছা করে। বলতে বলতেই ওদের থালার জিলাপী শেষ! রতন বলল কাকা আরো খাবা?
হাতেম আলী হাসিয়া বলে আর আধাসের হইলে ভালা হইত।
মনের কথাটা বলছ কাকা। আমারও পেট ভরে নাই।
তাদের সামনে থালায় আরো আধা কেজি জিলপী আসল। তাদের চোখ মুখে ঠিক প্রথম বারের মতই হয়ত তার চেয়ে একটু বেশিই আগ্রহ আর ক্ষুধা ভেসে উঠেছে এবারও। এখন আর কারও মুখে কোন কথা নাই, মুখ কেবলই জিলাপী চর্বনে ব্যস্ত আর জিহ্বা ব্যস্ত গরম গরম মচমচে গুড়ের জিলেপীর স্বাদ নিতে। নিমিষেই থালা শূন্য হয়ে গেল। কিন্তু তবু যেন ওদের মন ভরেনা। মন না ভরলেও কিছু করার নাই, পেটত ভরছে। রতন একটু মোচড় দিয়া বসে বলল কাকা সিনেমা দেখবা? অনেকদিন সিনেমাওত দেখিনা।

(চলবে)

মন্তব্য ০ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (০) মন্তব্য লিখুন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.