![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
(মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়ের ধনাঢ্য বড় দাদার কাছে লেখা চিঠি)
'শ্রীচরণকমলেষু
আপনি বোধহয় জানেন আমি প্রায় দুই বৎসর হইল মাথার অসুখে ভুগিতেছি, মাঝে মাঝে অজ্ঞান হইয়া যাই। এ পর্য্যন্ত নানাভাবে চিকিৎসা হইয়াছে, কিন্তু সাময়িকভাবে একটু উপশম হইলেও আসল অসুখ সারে নাই। কয়েকজন বড় বড় ডাক্তারের সঙ্গে পরামর্শ করিয়া আমি বুঝিতে পারিয়াছি কেবল ডাক্তারি চিকিৎসার উপর নির্ভর করিয়া থাকিলে সম্পূর্ণ আরোগ্য লাভ করা সম্ভব হইবে কি না সন্দেহ। অথচ প্রথম অবস্থায় আরোগ্যলাভের ব্যবস্থা না করিলে অসুখ যত পুরাতন হইবে, ততই আরোগ্যের সম্ভাবনা কমিয়া যাইবে। সুতরাং অন্য চিন্তা স্থগিত রাখিয়া সর্ব্বাগ্রে আমাকে সুস্থ হইবার জন্য সর্ব্বপ্রকার চেষ্টা করিতে হইবে।
আমার যতদূর বিশ্বাস, সাহিত্যক্ষেত্রে তাড়াতাড়ি নাম করিবার জন্য স্বাস্থ্যকে সম্পূর্ণ অবহেলা করাই আমার এই অসুখের কারণ। আমার প্রথম পুস্তক ১৩৪০ সালে প্রকাশিত হয়। তিন-চার বৎসরের মধ্যে বাঙ্গালা সাহিত্যের অধিকাংশ সমালোচক স্বীকার করিয়াছেন যে, রবীন্দ্রনাথ ও শরৎচন্দ্রের পরবত্র্তী যুগে আমি সর্ব্বশ্রেষ্ঠ লেখক। অবশ্য mass-এর নিকট popular হইতে আমার কিছুদিন সময় লাগিবে, কারণ mass mind নূতন চিন্তাধারাকে অত্যন্ত ধীরে ধীরে গ্রহণ করে। এই নিয়মে শিক্ষিত শ্রেণী ছাড়াও mass-এর মধ্যেও আমার popularity যে ক্রমে ক্রমে বাড়িতেছে তাহার পরিচয়ও আমি পাইতেছি। বাঙ্গালা দেশে সাহিত্যক্ষেত্রে প্রতিষ্ঠা লাভের জন্য আমাকে আর কিছু করিতে হইবে না।
কিন্তু দুঃখের বিষয়, আমি যখন International fame-এর জন্য নিজেকে প্রস্তুত করিতেছিলাম, সেই সময় এই অসুখ হইয়া সব গোলমাল করিয়া দিয়াছে। যে সময়ের মধ্যে এবং যে বয়সে আমি বাঙ্গালা সাহিত্যে যতখানি প্রতিষ্ঠা লাভ করিয়াছি, বাঙ্গালা দেশে আর কেহই তাহা পারে নাই। অন্য দেশের সাহিত্যের ইতিহাসেও এরূপ দৃষ্টান্ত নাই। এজন্য আমার স্বাস্থ্যহানি ঘটিবে তাহা আমি জানিতাম, কিন্তু এরূপ একটা অসুখ যে হইবে তাহা আমি কল্পনাও করিতে পারি নাই। সাধারণভাবে স্বাস্থ্য খারাপ হইলে বৎসরখানেক লেখা ও পড়া কমাইয়া দিয়া নিয়মমত থাকিলে স্বাস্থ্য ভালো করা যাইবে আমার এইরূপই ধারণা ছিল।
আমি এক বৎসরকাল আমার এই অসুখ সারাইবার জন্য ব্যয় করিব স্থির করিয়াছি। জোড়াতালি দেওয়া চিকিৎসার পরিবর্ত্তে আরোগ্য লাভের জন্য যাহা কিছু প্রয়োজন সমস্ত ব্যবস্থা করিব, কারণ তাহা না করিলে এই অসুখ সারিবে কি না বলা কঠিন। এক বৎসর চেষ্টা করিয়া যদি আরোগ্য লাভ না করিতে পারি, তাহা হইলে বুঝিতে পারিব আমার যে অত্যন্ত উচ্চ ধসনরঃরড়হ ছিল তাহা সম্পূর্ণরূপে সফল করিতে পারিব না। আংশিক সাফল্য লইয়াই সাধারণভাবে আমাকে জীবন কাটাইতে হইবে। এভাবে বাঁচিয়া থাকিবার ইচ্ছা আমার নাই।
আমি আপনাকে সমস্ত কথা পরিষ্কার করিয়া খুলিয়া লিখিলাম। চিকিৎসার জন্য আমার অর্থের প্রয়োজন আছে, এখন চাকুরীতে আমি যাহা মাহিনা পাই তাহাতে চিকিৎসা চলিবে না। এ পর্য্যন্ত যেরূপ চলিয়াছে সেইরূপ জোড়াতালি দেওয়া চিকিৎসা চলিতে পারে মাত্র।
এই জন্য আমি আপনার নিকট এক বৎসর কালের জন্য মাসিক একশত টাকা করিয়া সাহায্য প্রার্থনা করিতেছি। চিকিৎসার ক্ষতি না করিয়া আমি যাহা উপার্জ্জন করিব এবং এই একশত টাকা করিয়া পাইলে আমি ঠিকভাবে চালাইতে পারিব।
আশা করি আপনি ভাবিয়া দেখিবেন যে, আমার সমস্ত ভবিষ্যৎ এই অসুখ হইতে আরোগ্য লাভের উপর নির্ভর করিতেছে। আমার ইহা সাধারণ অসুখ নহে, ইহার প্রকৃত চিকিৎসার জন্য ডাক্তার, ওষুধ প্রভৃতির খরচ ছাড়াও আরও বহুবিধ খরচ দরকার। আপনার পক্ষে মাসিক একশত টাকা দেওয়া কিছুই নহে, কিন্তু ইহা আমার জীবন মরণ সমস্যা।'
(চিঠিটি জাকির তালুকদারের “মানিক বাঁড়ুজ্জের সাথে যাবার সময়” প্রবন্ধ থেকে নেওয়া। চিঠিটির কী উত্তর এসেছিল কিংবা আদৌ কোনো উত্তর এসেছিল কিনা জানা নেই।)
২| ১১ ই মার্চ, ২০১৫ দুপুর ১:৪৪
শাহ ইমতিয়াজ বলেছেন: অভিনন্দন
৩| ১১ ই মার্চ, ২০১৫ দুপুর ২:৪৭
ফা হিম বলেছেন: ইতিহাস
৪| ১১ ই মার্চ, ২০১৫ বিকাল ৩:১৪
বিদগ্ধ বলেছেন: পড়িলাম। খ্যাতির প্রতি বাঁড়ুজ্জি মশাইয়ের সবিশেষ আগ্রহ ছিল ইহা নিশ্চয় বলা যায়।
৫| ১১ ই মার্চ, ২০১৫ বিকাল ৩:৩১
সালমান মাহফুজ বলেছেন: রবীন্দ্রনাথ ও শরৎচন্দ্রের পরবত্র্তী যুগে আমি সর্ব্বশ্রেষ্ঠ লেখক।-- সত্যিই তাই । শরত-রবীন্দ্রানাথের পরে আজ পর্যন্ত কেউ মাণিককে অতিক্রম করতে পারে নাই ।
৬| ১১ ই মার্চ, ২০১৫ বিকাল ৩:৫৭
আরণ্যক রাখাল বলেছেন: ধন্যবাদ সেয়ার করার জন্য| তাঁর প্রচন্ড আত্মবিশ্বাস আর শ্রম তাঁকে এই হিমালয়সম উচ্চতায় নিয়ে এসেছে
৭| ১১ ই মার্চ, ২০১৫ বিকাল ৪:২০
সুফিয়া বলেছেন: ধন্যবাদ শেয়ার করার জন্য। ভালো লাগল।
৮| ১১ ই মার্চ, ২০১৫ বিকাল ৫:৩৭
সুমন কর বলেছেন: শেয়ার করার জন্য ধন্যবাদ।
৯| ১১ ই মার্চ, ২০১৫ সন্ধ্যা ৭:১৩
এম এম করিম বলেছেন: ধন্যবাদ শেয়ার করার জন্য।
১০| ১১ ই মার্চ, ২০১৫ রাত ৮:৫৪
ডি মুন বলেছেন:
আপনার পক্ষে মাসিক একশত টাকা দেওয়া কিছুই নহে, কিন্তু ইহা আমার জীবন মরণ সমস্যা
হৃদয় আর্দ্র করে দেয় এই লাইনগুলো। ভালো সাহিত্যিকদের কপালে যেন দুঃখভোগ লেখা না থাকে, এটাই প্রার্থনা।
প্রিয় উপন্যাসিক এর এই চিঠিটি শেয়ার করার জন্যে আপনাকে ধন্যবাদ।
ভালো থাকুন।
১১| ১১ ই মার্চ, ২০১৫ রাত ৯:২৩
রেজওয়ানা আলী তনিমা বলেছেন: শেয়ার করার জন্য বিশেষ ধন্যবাদ।
১২| ১১ ই মার্চ, ২০১৫ রাত ১১:১৮
মাঈনউদ্দিন মইনুল বলেছেন:
গভীর আগ্রহ নিয়ে পড়লাম। অনেককিছু জানার আছে।
শেয়ার করার জন্য ধন্যবাদ
১৩| ১২ ই মার্চ, ২০১৫ বিকাল ৪:০২
মহামহোপাধ্যায় বলেছেন: শেয়ার করবার জন্য অনেক ধন্যবাদ। এই চিঠির ফলাফল জানতে ইচ্ছে করে।
১৪| ১৩ ই মার্চ, ২০১৫ রাত ১১:২৪
মিনাক্ষী বলেছেন: শেয়ার করার জন্য ধন্যবাদ
১৫| ০২ রা সেপ্টেম্বর, ২০১৮ দুপুর ১২:৪২
রাইয়ান পাটোয়ারী বলেছেন: চিঠিটির উত্তর এসেছিল,
চিঠিটিতে তার দাদা লিখেছিলেন ‘আত্মীয় কিংবা অনাত্মীয় কাউকেই আমার পক্ষে ধার দেওয়া সম্ভব নয়’
©somewhere in net ltd.
১|
১১ ই মার্চ, ২০১৫ দুপুর ১:২৫
বঙ্গভূমির রঙ্গমেলায় বলেছেন:
ধন্যবাদ শেয়ারের জন্য।