নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
গুরুত্বপূর্ণ ঘটনার ভেতরের কারণগুলো জানতে এবং বিশ্লেষণ করতে চেষ্টা করি এবং সবার সাথে শেয়ার করতে পছন্দ করি। সামাজিক, রাজনৈতিক আর আন্তর্জাতিক বিষয়ে লেখালেখি করতে ভালো লাগে। তাই ব্লগে পদচারনা।
আজ হতে ২৭ বছর আগে ১৯৮৮ সালের ৩ জুলাই ইরানের একটি যাত্রীবাহী বিমান ধ্বংস করে দেয় মার্কিন নৌবাহিনী। পারস্য উপসাগরে ইরান উপকূলের সমুদ্রসীমায় ঢুকে ‘ভিনসেন্স’ নামের একটি মার্কিন যুদ্ধ জাহাজ ওই অমানবিক হামলা চালায়। ফলে বিমানটির ২৯৮ জন আরোহীর সবাই প্রাণ হারান। বিমানটিতে ছিল ৬৬টি শিশু ও ৫৩ জন মহিলা । বিদেশি নাগরিক ছিল ৪৬ জন।
সেদিনের ঘটনাটি ছিল: বন্দর নগরী ‘বন্দর আব্বাস’ থেকে দুবাইগামী বিমান বন্দরে অপেক্ষমাণ যাত্রীরা ইরান এয়ারের ৬৫৫ নম্বর ফ্লাইটের মাধ্যমে মাত্র ত্রিশ মিনিটের এক নিয়মিত যাত্রায় দুবাই যাওয়ার জন্য ওই বিমানে আরোহণ করেন।
মার্কিন রণতরীগুলোকে নিকটবর্তী ইরানী গানবোটগুলোর ওপর হামলার আদেশ দেয়া হয় এবং মার্কিন হেলিকপ্টারগুলোও ইরানী গানবোটগুলোর ওপর হামলা শুরু করে।
এদিকে বন্দর আব্বাস বিমান বন্দরে যাত্রীরা বিমানের অভ্যন্তরে আসনের সাথে তাঁদের বেল্ট বেঁধে নেন এবং এর পরপরই বিমান উড্ডয়ন করল। পারস্য উপসাগরে মোতায়েন মার্কিন ‘এস ভিনসেন্স’ সুপারক্রুজার তা মনিটর করছে। আর ঐ সুপারক্রুজারের হেলিকপ্টারগুলো আগে থেকেই গুলি বিনিময় করছিল ইরানী গানবোটগুলো সাথে।
ইতিমধ্যে একটি মার্কিন হেলিকপ্টার খোয়া গেল এবং মার্কিন এস ভিনসেন্সের ক্যাপ্টেন ইরানের ঐ যাত্রীবাহী বিমানের ওপর মিসাইল ছোঁড়ার আদেশ দেন। নিহত হন বিমান আরোহী ২৯৮ জন নিরপরাধ মানুষ। ইরান এয়ারের এয়ার বাস এ-৩০০ বিমানটি যখন ধ্বংস হয় তখন তার ভেতরে ৫৩ জন মহিলার কোলে ছিল তাদের বাচ্চারা।
পশ্চিমা মদদে ইরানের বিরুদ্ধে যুদ্ধ শুরু করে পরাজিত হওয়ার দ্বারপ্রান্তে উপনীত সাদ্দামের মতো একজন অপরাধীকে রক্ষা করতেই ইরানি ওই যাত্রীবাহী বিমানটি ভূপাতিত করা হয়। এমনিভাবে ইরানের বিরুদ্ধে ইরাকের আট বছরব্যাপী চাপিয়ে দেয়া যুদ্ধে মিসাইল ও রাসায়নিক অস্ত্রের শিকার হয়েছে গ্রাম-শহরের অগণিত নিরপরাধ মানুষ।
বিশ্ববিবেক যুক্তরাষ্ট্রের এই অপরাধের তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানায়। কিন্তু মার্কিন নেতারা প্রথমে একটা দায়সারা গোছের ব্যাখ্যা দিয়ে বলেন যে, ভুলক্রমে ঘটনাটি ঘটেছে। অবশ্য মার্কিন কর্মকর্তাদের এই মিথ্যাচার খুব শিগগিরই স্পষ্ট হয় যখন তৎকালীন মার্কিন প্রেসিডেন্ট রিগান আমেরিকার ওই যুদ্ধ জাহাজের ক্যাপ্টেন উইল রজার্সকে সাহসিকতার পদক হিসেবে একটি মেডেল পরিয়ে দেন।
ওই হামলার বিষয়ে মার্কিন নেতারা কখনও কোনো দুঃখ প্রকাশতো করেইনি বরং অমানবিক অবস্থান নিয়ে তারা ওই অপরাধের পক্ষে সাফাই গেয়েছেন। ‘হোয়াট রিয়েলি হেপেন্ড ডট কম’ ওয়েবসাইটের ভাষ্যমতে, যুক্তরাষ্ট্রের তৎকালীন ভাইস প্রেসিডেন্ট জর্জ বুশ এই অপরাধযজ্ঞ সম্পর্কে বলেছেন, ‘আমি কখনোই ওই ঘটনার জন্য ক্ষমা চাইবো না। কী ঘটেছে এবং বাস্তবতা কী,এসবকে আমি গুরুত্ব দিচ্ছি না।’ ওয়েব সাইটটি আরো লিখেছে, ইরানি বিমান ধ্বংসের সঙ্গে জড়িত সবাইকে পদক দেয়া হয়েছে। সে সময় ভিনসেন্স জাহাজে যারা ছিলেন তারা সবাই পুরস্কৃত হয়েছেন। ওই ঘটনার পর ভিনসেন্স যুদ্ধ জাহাজের ক্যাপ্টেন উইলিয়াম রজার্স এক সাক্ষাতকারে বলেছিলেন, তিনি প্রয়োজনে শত শত বারও এ ধরনের নির্দেশ দিতে কুণ্ঠাবোধ করবেন না।
উল্লেখ্য, পরে এটা জানা গেছে যে, মার্কিন যুদ্ধ জাহাজের যেই সেনাকে যাত্রীবাহী ইরানি বিমান টার্গেট করে ক্ষেপণা্স্ত্র ছুঁড়তে বলা হয়েছিল সে প্রথমে ওই অমানবিক নির্দেশ শুনে হতবাক হয়ে গিয়েছিল (কারণ, জাহাজের সবার কাছেই এটা স্পষ্ট ছিল যে ইরানি বিমানটি ছিল একটি যাত্রীবাহী বিমান) এবং তাই সে ওই নির্দেশ মানতে প্রথমে অস্বীকৃতি জানিয়েছিল। কিন্তু এরপর যখন তাকে কোর্ট মার্শাল করার তথা সামরিক আদালতে বিচার করার হুমকি দেয়া হয় তখন সে ক্ষেপণাস্ত্র নিক্ষেপের নির্দেশ পালন করে।
এতে কোন সন্দেহ নেই যে, ভুলক্রমে নয় বরং যাত্রীবাহী বিমান বিধ্বংসের ঘটনা ছিল সম্পূর্ণ উদ্দেশ্যমূলক ও ইচ্ছাকৃত।
এরপর এ ঘটনার প্রতিবাদ জানিয়ে ইরান জাতিসংঘে যুক্তরাষ্ট্রের বিরুদ্ধে অভিযোগ উত্থাপন করলে জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদের পাঁচ স্থায়ী সদস্য দেশ কেবল দুঃখ প্রকাশ করে, যুক্তরাষ্ট্রের বিরুদ্ধে কোনো নিন্দা প্রস্তাবও তারা গ্রহণ করেনি। আন্তর্জাতিক বিমান চলাচল সংস্থাও কেবল নিহত পরিবারবর্গের প্রতি সমবেদনা প্রকাশ করে। তাদের দাবি, বিমান বিধ্বংসের ঘটনাটি ভুলক্রমে ঘটেছে এবং এর পেছনে অন্য কোন উদ্দেশ্য ছিল না।
যাইহোক, এ বিষয়ে আন্তর্জাতিক আদালতে ইরানের অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে শুধুমাত্র নিহতদের পরিবারবর্গকে ক্ষতিপূরণ দিতে যুক্তরাষ্ট্রকে আদেশ দেয়। ইরানের যাত্রীবাহী বিমান ভূপাতিত করার ঘটনা এ অঞ্চলে মার্কিন সেনা উপস্থিতির নেতিবাচক পরিণতির একটি দৃষ্টান্ত মাত্র। এ দুঃখজনক ঘটনার দুই দশকেরও বেশি সময় পার হবার পরও যুক্তরাষ্ট্রসহ কয়েকটি পশ্চিমা দেশ এ অঞ্চলের স্থল ও পানি সীমায় দাপটের সাথে ঘুরে বেড়াচ্ছে এবং আরো বেশী প্রভাব বিস্তারের চেষ্টা করছে। অথচ তাদের উপস্থিতির ফলে এ অঞ্চলে নিরাপত্তাহীনতা দিন দিন বেড়েই চলেছে। ইরান সবসময়ই বলে আসছে বিদেশী সামরিক উপস্থিতি এ অঞ্চলে নিরাপত্তাহীনতার জন্য দায়ী এবং আঞ্চলিক দেশগুলোই পারে শান্তি, নিরাপত্তা ও স্থিতিশীলতা প্রতিষ্ঠা করতে।
সুত্রঃ রেডিও তেহরান।
০৪ ঠা জুলাই, ২০১৫ সকাল ১০:৩৭
আল-শাহ্রিয়ার বলেছেন: ধন্যবাদ আপনার অনুপ্রেরনার জন্য। আমি অবশ্যই চেষ্টা করবো।
২| ০৪ ঠা জুলাই, ২০১৫ সকাল ১০:৪৪
শাহাদাত হোসেন বলেছেন: আমেরিকা হচ্ছে সন্ত্রাসীদের গডফাদার
০৪ ঠা জুলাই, ২০১৫ রাত ৮:২৬
আল-শাহ্রিয়ার বলেছেন: সহমত
৩| ০৪ ঠা জুলাই, ২০১৫ সকাল ১০:৫৮
হাফিজ উল্লাহ্ শামীম বলেছেন: ইতিহাস সন্ত্রাসী রাষ্ট ক্ষমা করবে না।
৪| ০৪ ঠা জুলাই, ২০১৫ বিকাল ৫:২২
এ কে এম রেজাউল করিম বলেছেন:
১৯৮৮ সালের ৩ জুলাই, আমি তখন অ্যাভিয়েশন টেকনোলজিতে পড়াশুনা করছি। আমার স্পষ্ট মনে আছে এ খব্রটি টিভিতে দেখে আমি খুব ব্যাথিত হয়েছিলাম। পরের দিন ক্লশে গেলে এক ক্লশমেট এ নিয়া হাসি-তামাশা করলে তার সাথে আমি ঝড়গা করেছিলাম। তখন খোমেনী ইরানের ক্ষমতায়, শুধু সাদ্দাম হোসেনকে বাঁচানোর জন্য আমেরিকা ইহা করেছিল। সেই সাদ্দাম হোসেন এখন কোথায়!
‘ভিনসেন্স’ নামের একটি মার্কিন যুদ্ধ জাহাজ ওই অমানবিক হামলা চালায়। ভিনসেন্স যুদ্ধ জাহাজের ক্যাপ্টেন উইলিয়াম রজার্স -এর পরে গাড়ীতে বোমা হামলার স্বীকার হয় ও অল্পের জন্য তার প্রান রক্ষা পায়।
০৪ ঠা জুলাই, ২০১৫ রাত ৮:২৫
আল-শাহ্রিয়ার বলেছেন: ইতিহাস কখনোই ওদের ক্ষমা করবে না।
৫| ০৪ ঠা জুলাই, ২০১৫ বিকাল ৫:২৬
নতুন বলেছেন: সম্রাজ্যবাদ দুনিয়ারউপরে খবরদারীর জন্য এরা সবই করতে পারে। পারমানবিক বোমার ব্যবহার এরাই প্রথম করেছিলো... বিশ্ব শান্তির জন্য।
০৪ ঠা জুলাই, ২০১৫ রাত ৮:২৪
আল-শাহ্রিয়ার বলেছেন: বিশ্বশান্তি!! আসলেই। এটাই আমেরিকার ধর্ম। কথায় আছে চোরের মার বড় গলা।
©somewhere in net ltd.
১| ০৪ ঠা জুলাই, ২০১৫ সকাল ১০:১৮
হারুনর রশিদ কায়সার বলেছেন: এই পোষ্টটি অনেক ভালো লেগেছে । অনেক ধন্যবাদ । আশা করি এই রকম পোস্ট আপনার কাছ থেকে আরো পাবো । জনপ্রিয় নিউজ সাইট http://www.onn24.com এ আমি চিফ রিপোর্টার হিসেবে আমি দায়িত্বরত । আমাকে আপনার লিখাগুলো পাঠাবেন । আমি তা প্রকাশনার ব্যাবস্থা করবো ।আমার মেইল [email protected]