নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
গুরুত্বপূর্ণ ঘটনার ভেতরের কারণগুলো জানতে এবং বিশ্লেষণ করতে চেষ্টা করি এবং সবার সাথে শেয়ার করতে পছন্দ করি। সামাজিক, রাজনৈতিক আর আন্তর্জাতিক বিষয়ে লেখালেখি করতে ভালো লাগে। তাই ব্লগে পদচারনা।
গত ২৬ মার্চ থেকে সৌদি আরবের নেতত্বে সামরিক জোট ইয়েমেনে একতরফা হামলা শুরু করে। সৌদি আরব, সংযুক্ত আরব আমিরাত, বাহরাইনের সাথে মিশরও সৌদি জোটে যোগদান করে হামলায় অংশ নিচ্ছে। এমনকি ওই জোটের সাথে ইসরাইলও সম্পৃক্ত রয়েছে বলে বিশ্বের বিভিন্ন মিডিয়ায় প্রচারিত হয়েছে। একতরফা যুদ্ধের প্রথম দিকে মনে হয়েছিল যে, সৌদি জোট মাত্র এক থেকে দুই সপ্তাহের মধ্যে ইয়েমেন দখল করতে পারবে। কিন্তু ফল হয়েছে উল্টো। সৌদি জোটের বিমান হামলায় হাজার হাজার নীরিহ মানুষ হতাহত হবার পাশাপাশি শত শত বেসামরিক স্থাপনা ধ্বংস হয়েছে।
বিপরীতে ইয়েমেনি যোদ্ধাদের হামলায় সৌদি জোটের ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ ক্রমান্বয়ে বৃদ্ধি পাচ্ছে। বিভিন্ন তথ্যে জানা গেছে, ইয়েমেনি দেশপ্রেমিক যোদ্ধাদের পাল্টা হামলায় এ যাবত ১০টি অত্যাধুনিক আ্যাপাচি হেলিকপ্টার, শতাধিক সাঁজোয়া যান, ৩০টি ট্যাঙ্ক, ৩টি সেনাঘাঁটি, ১০টি সীমান্ত চৌকি, ৫টি ক্ষেপণাস্ত্র মঞ্চ ধ্বংস, বিপুল পরিমাণ অস্ত্রশস্ত্র আটক, পাঁচ শতাধিক সৌদিজোট সেনা নিহত এবং দুই সহস্রাধিক আহত হয়েছে। এসময় ইয়েমেনি যোদ্ধারা কয়েকটি সীমান্ত ফাঁড়িসহ সৌদি ভূখণ্ড দখল করে। সৌদি জোটের উদ্যোগে একতরফা যুদ্ধের অন্যতম কারণ হচ্ছে, ইয়েমেনের প্রতিবাদী জনতাকে স্তব্ধ করে ক্ষমতাচ্যুত ও পলাতক সাবেক প্রেসিডেন্ট মানসুর হাদিকে পুণরায় ক্ষমতায় ফিরিয়ে আনা। কিন্তু বাঁধ সেধেছে ইয়েমেনি বীর যোদ্ধাদের দুর্বার প্রতিরোধ। অবস্থা এমনই হয়েছে যে, ইচ্ছা থাকলেও সৌদি জোট এখন রনাঙ্গন ত্যাগ করতে পারছে না। কারণ এতে তাদের প্রভাব ও মান সম্মানের বিষয়টি জড়িত রয়েছে।
উল্লেখ্য, ১৯৯০ সালে উত্তর ইয়েমেন ও দক্ষিণ ইয়েমেন একত্রিত হয়ে ইয়েমেন প্রজাতন্ত্র গঠিত হয়। দেশটির উত্তর ও উত্তর-পূর্বে সৌদি আরব, পূর্বে ওমান এবং দক্ষিণে এডেন সাগর অবস্থিত। আয়তন ৫লাখ ২৭ হাজার ৯৭০ বর্গ কিলোমিটার। জনসংখ্যা ২ কোটি ৩৮ লাখ ৩৩ হাজার। মাথাপিচু আয় মাত্র ৯০০ মার্কিন ডলার। অর্থাৎ মধ্যপ্রাচ্যে দেশটি অর্থনৈতিকভাবে দুর্বল হিসেবে বিবেচিত। ইয়েমেন পর্যটকদের জন্য আকর্ষনীয় স্থান। ইয়েমেনিরা পরিশ্রমী এবং যোদ্ধা জাতি হিসেবে পরিচিত। দেশটির অধিকাংশ এলাকা পাহাড় ও মরুভূমি ঘেরা। সৌদি জোটের হামলায় এ যাবত ১ কোটি ৩০ লাখ অধিবাসী খাদ্য নিরাপত্তা ঝুঁকিতে রয়েছে। বহু হাসপাতাল, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, হাটবাজার, গুরুত্বপূর্ণ সামরিক বেসামরিক স্থাপনা বিমান হামলায় বিধ্বস্ত হয়েছে। ব্যাপক ধ্বংসযজ্ঞ চালিয়েও সৌদি জোট বাহিনী সাফল্য অর্জন করতে পারছে না কেন?
সৌদি আরব কি ফাঁদে পা দিয়েছে? ইয়েমেন যুদ্ধ এখন সৌদিসহ উপসাগরীয় কয়েকটি দেশের জন্য রীতিমত প্রেস্টিজ ইস্যু হয়ে দাঁড়িয়েছে। পেট্রো ডলারের শক্তিতে বলীয়ান সৌদি আরব সব সময় গোটা মধ্যপ্রাচ্যে প্রভাবশালী দেশ হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হবার স্বপ্ন দেখে আসছিল। যার ফলশ্রুতিতে গত দুই দশকে প্রায় ১৮/১৯ হাজার কোটি ডলার ব্যয়ে অত্যাধুনিক সমরাস্ত্র ক্রয় করে। কিন্তু সৌদিদের আকাঙ্ক্ষায় বাঁধ সেধেছে মধ্যপ্রাচ্যের অন্যতম পরাশক্তি শক্তি ইরানের উত্থান। অর্থনৈতিক, সামরিক, শিক্ষা, চিকিৎসা ও প্রতিনিয়ত উন্নত প্রযুক্তি উদ্ভাবনের মাধ্যমে দেশটি বিশ্ববাসীকে ইতোমধ্যে তাক লাগিয়ে দিয়েছে। সম্প্রতি ৬ জাতিগোষ্ঠীর সাথে সম্পাদিত পারমানবিক চুক্তির মাধ্যমে দেশটি আন্তর্জাতিক অঙ্গনে প্রভাব বিস্তারের ক্ষমতা রাখে। ফলে সৌদিদের হতাশা আরো বৃদ্ধি পায়। এমনকি সৌদি আরব এখন ইরানকে এক নম্বর শত্রু হিসেবে মনে করে। ইয়েমেনের ক্ষমতাচ্যুত প্রেসিডেন্ট মানসুর হাদি সৌদি সমর্থিত।
অপরদিকে ইয়েমেনের বিভিন্ন রাজনৈতিক দল এবং গোষ্ঠী ইরানকে সমর্থন করে। আর এতে ক্ষেপে যায় সৌদি আরব। তারা একতরফাভাবে ইয়েমেনে হামলা শুরু করে। প্রথমদিকে বিমান হামলা চালিয়ে ইয়েমেনের অসংখ্য স্থাপনা ধ্বংস করা হয়। এসময় বিমান হামলায় শত শত নারী-পুরুষ-শিশু হতাহত হয়। তখন সৌদি জোট ধারনা করেছিল যে, মাত্র কয়েক সপ্তাহের মধ্যে গোটা ইয়েমেন তাদের আয়ত্বে এসে যাবে। কিন্তু ফল হয়েছে উল্টো। এখন প্রতিনিয়ত ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতির শিকার হচ্ছে সৌদি সামরিক জোট। অতএব, ফলাফল শূন্য।
এখন প্রশ্ন হচ্ছে, বিপুল ক্ষয়ক্ষতি সত্ত্বেও সৌদি জোটি কি ইয়েমেনে হামলা অব্যাহত রাখবে না কি একতরফা যুদ্ধবিরতি ঘোষণা করে তারা কি পিছু হটে যাবে? এক্ষেত্রে দুটি বিষয় থাকতে পারে। প্রথমটি হচ্ছে, ইয়েমেনি যোদ্ধারা যদি আক্রমন আরো তীব্রতর করে- তাহলে সৌদি জোট ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতির সম্মুখীন হবে। তখন পরিস্থিতি নতুন মোড় নিতে পারে। আর যদি এভাবে যুদ্ধ অব্যাহত থাকে-তাহলেও সৌদি জোটের ক্ষয়ক্ষতি বাড়তে থাকবে। এভাবে এক সময় সৌদি জোটের অনুরোধে হয়ত আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের উদ্যোগে স্থায়ী যুদ্ধবিরতি সম্ভব হবে। তখন হিসাব-নিকাশ করে দেখা যাবে, একতরফা যুদ্ধে জড়িয়ে আন্তর্জাতিক অঙ্গনে সৌদি আরবের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন হয়েছে।
উল্লেখ্য, ইরাকের কুয়েত আগ্রাসন অতপরঃ সৌদি ভূখণ্ডে হামলার সময় মুসলিম বিশ্ব সৌদি আরবকে সমর্থন দিয়েছিল। বর্তমান ইয়েমেন যুদ্ধের প্রেক্ষাপট ভিন্ন। পেট্রো ডলার কিংবা দান অনুদান দিয়ে মানুষের বিবেক কেনা যায় না। এবারের যুদ্ধে সৌদি আরব হয়ত সেটাই ভেবেছিল। তারা এও ভেবেছিল যে, ইয়েমেন যুদ্ধে বিশ্বের অধিকাংশ মুসলিম দেশ সৌদি জোটে যোগ দেবে। সেটাও সম্ভব হয়নি। ইরানকে চিরশত্রু ভেবে নিজের ক্ষমতা জাহির করতে গিয়ে একটি দুর্বল দেশে হামলা চালাতে গিয়ে প্রতিরোধ যোদ্ধাদের হাতে উল্টো মার খাওয়া এখন সৌদিদের জন্য মান-সম্মানের ইস্যু হয়ে দাঁড়িয়েছে।
সুত্রঃ আনোয়ারুল হক আনোয়ার
০৮ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৫ রাত ১:০২
আল-শাহ্রিয়ার বলেছেন: এখানে শিয়া সুন্নি যুদ্ধ হচ্ছে না। এমনকি সালেহ পর্যন্ত হুথিদের সমর্থন করেছেন। এখন সৌদি আরবের সাথে ইয়েমেনের যুদ্ধ হচ্ছে। যেখানে সৌদি চাচ্ছে তাদের প্রতি অনুগত সরকারকে ক্ষমতায় বসাতে, কিন্তু তাদের এই আশা দুরাশায় পরিণত হয়েছে।
২| ০৮ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৫ রাত ১২:৪৭
আশরাফুল আলম আশিক বলেছেন: ভাইয়া খুব সুন্দর লিখছেন ।
৩| ০৯ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৫ রাত ১২:০৩
সচেতনহ্যাপী বলেছেন: সালেহ কেন করছেন?? ইয়েমেন মানেই কি অভিন্ন না একাংশ?? হাদীর অনুসারীরা কি?? আর সৌদীর আক্রমনই বা কাদের উপর??
০৯ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৫ রাত ১২:০৮
আল-শাহ্রিয়ার বলেছেন: প্রকৃত পক্ষে হাদির পক্ষে সৌদি আরব ছাড়া আর কেউ নেই। আর সৌদি আক্রমণ ইয়েমেনিদের উপর
৪| ০৯ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৫ রাত ১২:২৫
সচেতনহ্যাপী বলেছেন: আর সৌদি আক্রমণ ইয়েমেনিদের উপর- তা হলে আর সালেহ্ কেন এতোগুলি বছর যুদ্ধ করে একত্র করেছে কাদের?? হুতি অধ্যুশিত এলাকাই একমাত্র ইয়েমেন নয়!!
০৯ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৫ রাত ১২:২৭
আল-শাহ্রিয়ার বলেছেন: ৯০ শতাংশ এলাকাকে আপনি ইয়েমেনের বাহিরে বলতে পারেন না
৫| ০৯ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৫ রাত ১২:৩৪
সচেতনহ্যাপী বলেছেন: মানে ধরে নিলাম ৯০শতাংশ এলাকায় হুতি মানে শিয়া এবং এরাই সংখ্যাগরিষ্ঠ।। মেনে নিলেও বলতে হয় আলি আবদুল্লাহ্ সালেহ্ প্রভূত ক্ষমতা এবং সামরক বলে বলীয়ান ছিল।। প্রশ্ন তাহলে কেন ক্ষমতা ত্যাগ?? কেনই বা আজ শত্রুশিবিরে??
০৯ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৫ রাত ১:০১
আল-শাহ্রিয়ার বলেছেন: এক সময় সালেহ সরকার সৌদি সেবাদাস ছিল। বর্তমানে যেমন মনসুর হাদি। আর হুথিরা একক সংখ্যাগরিষ্ঠ না হলেও বর্তমান পরিস্থিতে সবাই তাদের সাথে দেশ রক্ষায় কাধে কাধ মিলিয়ে সৌদিজোটের বিরুদ্ধে যুদ্ধে অংশগ্রহন করছে।
©somewhere in net ltd.
১| ০৮ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৫ রাত ১২:১৫
সচেতনহ্যাপী বলেছেন: ১৯৯০ সালে উত্তর ইয়েমেন ও দক্ষিণ ইয়েমেন একত্রিত হয়ে ইয়েমেন প্রজাতন্ত্র গঠিত হয়।এবং যার নেতৃত্বে হয়েছিলো তার নাম আলি আবদুল্লাহ সালেহ্।। আজ যে বিরোধী শিবিরে।। আর যুদ্ধটি শিয়া-সুন্নীর।। যা আজ সেই আগের মতই দুইভাগে বিভক্ত।।
শিয়াদের জন্য ইরান আর সুন্নীদের জন্য সৌদী।। মাঝখান থেকে অস্ত্র বিক্রয় হচ্ছে পশ্চিমাদের।। খুবই মজার লা তাই না??