নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
গুরুত্বপূর্ণ ঘটনার ভেতরের কারণগুলো জানতে এবং বিশ্লেষণ করতে চেষ্টা করি এবং সবার সাথে শেয়ার করতে পছন্দ করি। সামাজিক, রাজনৈতিক আর আন্তর্জাতিক বিষয়ে লেখালেখি করতে ভালো লাগে। তাই ব্লগে পদচারনা।
পুলিশ সুপার (এসপি) বাবুল আক্তারের স্ত্রী মাহমুদা খানম (মিতু) হত্যা মামলার উল্লেখযোগ্য আসামিরা ধরা পড়েছে। তারা জবানবন্দি ও নানা স্বীকারোক্তি দিয়েছে। কিন্তু শোনা যাচ্ছে, তদন্ত নিয়ে এখন আর আলোচনা নেই। এখন আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে এসেছে বাবুল আক্তারের চাকরি।
বাবুল আক্তারকে আগে আমরা সরকারের সব স্তর থেকে নায়ক হিসেবে চিত্রিত করতে দেখেছি। যখন মিতুকে আমরা রাস্তায় রক্তাক্ত ঢলে পড়তে দেখেছিলাম, পুলিশের বড় কর্তারা তখন বলেছিলেন, এই হত্যার সঙ্গে জঙ্গিরা জড়িত থাকতে পারে। সাহসী বাবুল আক্তার ছিলেন তেমনই ডাকসাইটে পুলিশ অফিসার, যিনি জান বাজি রেখে জঙ্গি ডেরায় বারংবার হানা দিয়েছেন, তাই জঙ্গিদের কোনো গোষ্ঠী তাঁর স্ত্রীকে হত্যা করে বদলা নিয়েছে। এরপর বিশেষ অভিযানে ১০ হাজারের বেশি মানুষকে গ্রেপ্তার করা হলো। আমরা লক্ষ করব, এই গ্রেপ্তারের অভিযানে পুলিশের বাড়াবাড়ি এবং মানবাধিকারের লঙ্ঘন ও হয়রানির যে চিরাচরিত অভিযোগ ওঠে, সেটা তুলনামূলক কম ছিল। কারণ, মিতুর রক্তাক্ত নিথর দেহ জনগণকে স্তম্ভিত করেছিল। সেই ১০ হাজারের বেশি মানুষের মধ্যে নিশ্চয় সন্দেহভাজন জঙ্গিরা ছিল, তাদের কবে কার বিচার হবে, এর মধ্যে কবে কার আদালতে শুনানি শেষ, সাক্ষ্য গ্রহণের পরে দোষী সাব্যস্ত হবে, তা আমরা জানি না। আইনের আপন গতি এটা আমাদের জানতে দেবে, এমন রাষ্ট্র আমরা এখনো গড়ে তুলতে পারিনি। এমনকি এর মধ্যে কত লোককে ইতিমধ্যে কী বিবেচনায় ছেড়ে দেওয়া হয়েছে বা তার মধ্যে কতজন জামিনে বেরিয়েছে, তাও আমরা জানতে পারি না। সরকারি কৌঁসুলিরা (পিপি) কখন কার জামিনের বিরোধিতা করেন, কখন নীরব থাকেন, কখন ‘মৃদু বিরোধিতা’ করেন, তা আমরা জানি না।
বাবুল আক্তারকে আমরা দুভাবে কল্পনা করতে পারি। প্রথমত, তিনি একজন সদ্য স্ত্রীহারা স্বামী, যিনি ব্যথিত ও মর্মাহত। তাঁর শ্বশুর সাক্ষ্য দিচ্ছেন, তাঁর মেয়ের সঙ্গে তাঁদের কোনো মনোমালিন্যের পূর্বাপর কোনো খবর তাঁদের কাছে নেই। দ্বিতীয়ত, তিনি আইনের চোখে একজন সন্দেহভাজন ব্যক্তি। এই দুটি সম্ভাব্য অবস্থার কোনোটিই এই যুক্তিকে গ্রহণযোগ্য করে তোলে না যে তাঁকে দ্রুত পদত্যাগ করতে হবে। শোক প্রকাশের জন্য তাঁর পদত্যাগ জরুরি নয়। নিজকে আড়াল করতেও তাঁর পদত্যাগ জরুরি নয়। কারণ, পদত্যাগ তাঁকে তদন্ত থেকে নিস্তার দিতে পারে না।
বাবুলের ‘পদত্যাগ’ মিতুহত্যার তদন্তের গতিকে বাধাগ্রস্ত বা প্রভাবিত করার কথা নয়। বাবুলকে কেউ পদত্যাগে বাধ্য করলেও মিতু হত্যার তদন্তের গতিকে বাধাগ্রস্ত বা প্রভাবিত করার কথা নয়। এখন ওপরের যেকোনোটি সত্য হলেও তা পুলিশ প্রশাসনকে কোনো দায়মুক্তি দেবে না। যেকোনো ছুতানাতায় মিতু হত্যার বিচারে দীর্ঘসূত্রতা সৃষ্টি করা হলে তা আইন কিংবা জনগণের চোখে গ্রহণযোগ্য হবে না।
মিতু হত্যার বিচার আরও লাখো বিচারাধীন মামলার ভিড়ে হারিয়ে যাবে বা পদত্যাগী বা পদচ্যুত বাবুল আক্তারও হারিয়ে যাবেন, অথচ তার বিশ্বাসযোগ্য কারণ আমরা জানব না—এর কোনাটিই আইনের শাসনের ধারণাকে সমুন্নত করে না। তাঁকে ১৫ ঘণ্টার নাটকীয় জিজ্ঞাসাবাদ, সেই সময়ে তাঁর পদত্যাগ, পরে তাঁর কাজে যোগদানের অভিযোগ অগ্রাহ্য, আবার তাঁর জন্য মানবিক কারণে দেড় মাস অপেক্ষা, আবার আড়াই মাসে তদন্তের খোঁজ না নেওয়ার জন্য আফসোস—সব মিলিয়ে নিহত মিতুর চেয়ে জীবিত বাবুল আক্তার সব মনোযোগের কেন্দ্রবিন্দুতে আসছেন।
©somewhere in net ltd.