নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
গুরুত্বপূর্ণ ঘটনার ভেতরের কারণগুলো জানতে এবং বিশ্লেষণ করতে চেষ্টা করি এবং সবার সাথে শেয়ার করতে পছন্দ করি। সামাজিক, রাজনৈতিক আর আন্তর্জাতিক বিষয়ে লেখালেখি করতে ভালো লাগে। তাই ব্লগে পদচারনা।
বর্তমানে আইএস নামক তাকফিরি সন্ত্রাসী গোষ্ঠীর নিঃসংশয়তা দেখে আমরা
সবাই আশ্চর্য হয়ে যাই, কিভাবে মানুষের পক্ষে এতটা বর্বরতা চালানো সম্ভব?
কিন্তু প্রকৃত সত্য হল আরবরা জাতিগতভাবেই এক সময় সব থেকে নিষ্ঠুর জাতি
ছিল। পরবর্তীতে মহানবী (সঃ) তাদের ইসলামের সুমহান পতাকা তলে নিয়ে
আসেন, কিন্তু মহানবীর (সঃ) মৃত্যুর পরই মুয়াবিয়া পুত্র ইয়াজিদের নেতৃত্বে
আরবদের একটি অংশ তাদের সেই পুরনো রুপে ফিরে যায়। নিচের একটি
বর্বরতার ঘটনা তুলে ধরলাম আপনাদের কাছে রেফারেন্স হিসেবে।
আজ হতে ১৩৭৭ চন্দ্র-বছর আগে ৬১ হিজরির ৫ ই সফর হযরত ইমাম হুসাইন
(আ.)'র চার বছরের কন্যা হযরত রুকাইয়া শাহাদত বরণ করেন।
শহীদদের নেতা ও কারবালা বিপ্লবের মহানায়ক ইমাম হুসাইন (আ.)'র সবচেয়ে
ছোটো ও আদরের মেয়ে হিসেবে ওই কচি বয়সে বাবার হৃদয়-বিদারক শাহাদত
এবং বাবার ছিন্ন মস্তক মুবারককে বর্শার আগায় বিদ্ধ করে নিয়ে যেতে দেখা ছিল
তাঁর জন্য এক অতি ভয়ানক দৃশ্য!
তৃষ্ণার্ত অবস্থায় বাবার ছিন্ন মাথার দিকে তাকিয়ে-থাকা এই কচি ও ইয়াতিম শিশুর
আর্তনাদ যেন আল্লাহর আরশ কাঁপিয়ে তুলতো। কিন্তু এ অবস্থায়ও কারবালার ময়দান
থেকে পাষণ্ড ইয়াজিদ-বাহিনী তাঁকে তাঁর বড় বোন হযরত (দ্বিতীয়) ফাতিমা (সা. আ.)
ও হযরত সাকিনা (সা. আ.) এবং ফুফি হযরত জাইনাব (সা. আ.) ও হযরত উম্মে
কুলসুম (সা.আ.)'র সঙ্গে দড়ি দিয়ে বেঁধে কুফায় নিযুক্ত ইয়াজিদের গভর্নর ইবনে
জিয়াদের দরবারে নিয়ে যায়।
ওবায়দুল্লাহ ইবনে জিয়াদ নবী-পরিবারের বন্দীদের দিকে ব্যাঙ্গ-বিদ্রূপের বান ছুঁড়ে
মারছিল এবং চরম বেয়াদবী দেখিয়ে ইমাম হুসাইন (আ.)'র কর্তিত শির মুবারক নিয়ে
খেলা করছিল যাতে বন্দীদের ক্ষত-বিক্ষত হৃদয়ে লবণ মাখিয়ে দেয়া যায়।
নবী-পরিবারের সদস্যদেরকে সিরিয়ার রাজধানী দামেস্কে নেয়া হয় বন্দী অবস্থায়।
কারবালা থেকে দামেস্ক পর্যন্ত দীর্ঘ ও মরুময় দুর্গম পথে প্রচণ্ড গরমের মধ্যেও কচি
শিশু রুকাইয়া (সা.আ.)-কে হাঁটানো হয় এবং পাষণ্ড উমাইয়া সেনারা এ সময় তাকে
ধমক দেয়া ছাড়াও চাবুক দিয়ে মারতেও দ্বিধা বোধ করেনি।
রুকাইয়া (সা.আ.)-কে দামেস্কে ইয়াজিদের রাজ-দরবারে সবার সামনে উপহাস করেছে
খোদ ইয়াজিদ (আল্লাহর অশেষ অভিশাপ বর্ষিত হোক তার ওপর) এবং এ সময় এই
মহাপাপী ইমামের কর্তিত শির মুবারকের ওপর বেত দিয়ে আঘাত হানছিল। ইমামের শির
মুবারক একটি প্লেটের ওপর রাখা হয়েছিল।
নবী-পরিবারের সদস্যদেরকে বন্দী করে রাখা হয় একটি জরাজীর্ণ ভবনের ধ্বসে-পড়া
কাঠামো বা ধ্বংসস্তূপের মধ্যে। সেখানে রাতের বেলায় শিশু রুকাইয়া (সা.আ.)'র মর্মভেদী
কান্নায় ইয়াজিদের ঘুমের ব্যাঘাত ঘটছিল। এ অবস্থায় মহাপাপী ইয়াজিদ ইমাম হুসাইন
(আ.)'র কর্তিত শির মুবারকটি এই শিশুর কাছে পাঠায় যাতে তাঁর কান্না থেমে যায়।
বাবার ছিন্ন শির মুবারকটি দেখে শিশু রুকাইয়া (সা.আ.) ছুটে যান ও প্রিয় বাবার মাথাটি
কোলে নেন এবং নিজের মাথাও রাখেন নিষ্পাপ ইমামের মাথায়। এ অবস্থায় তিনি দশই
মুহররম থেকে গত ২৫ দিনে তাঁর ওপর দিয়ে বয়ে যাওয়া নানা বেদনা, যন্ত্রণা ও নির্যাতনের
ঝড়গুলোর দুঃসহ স্মৃতি নিয়ে ভাবতে থাকেন এবং এ অবস্থার মধ্যেই এক সময় চিরতরে
নিথর ও নিস্তব্ধ হয়ে পড়েন যখন তাঁর আত্মা পাড়ি জমায় বেহেশতে চিরশান্তির আশ্রয়ে।
(ইমামের কাটা শিরের সঙ্গে কী তাঁর কোনো কথা হয়েছিল?)
নতুন ইমাম ও ভাই হযরত যাইনুল আবেদীন (আ.) ওই ধ্বংসস্তূপের মাটিতেই দাফন করেন
ছোট্ট বোনকে। সেখানে গড়ে ওঠে এক দর্শনীয় মাজার। সারা বিশ্বের নানা প্রান্তের বহু মানুষ
আজও সেখানে জিয়ারত করতে ভিড় জমান।
ইতিহাস লেখকদের কেউ কেউ ইমামের এই শিশু কন্যাার নামকে ক্ষুদ্র ফাতিমা বা 'ফাতিমায়ে
সুগরা' বলে উল্লেখ করেছেন। বড় ফাতিমা বা ইসলামের ইতিহাসের দ্বিতীয় ফাতিমা (সা. আ.)
নামে ইমামের পৃথক এক কন্যার কথাও জানা যায়। কোনো কোনো লেখক ভুলবশত ইমাম-কন্যা
সাকিনা ও রুকাইয়া (সা.আ.)-কে একই সন্তানের দুই নাম বলে মনে করেন। কিন্তু তারা দুই জনই
ছিলেন ইমাম হুসাইন (আ.)'র দুই ভিন্ন কন্যা। সাকিনা (সা. আ.) অনেক পরে বড় হয়ে মারা যান
মদীনায়। কবি নজরুলের কবিতায়ও পৃথকভাবে ফাতিমা ও সাকিনা নামটি এসেছে:
"কঙ্কন পৌচী খুলে ফেল সকিনা
কাঁদে কেরে কোলে করে কাশেমের
কাটা শীর
খান খান খুন হয়ে ক্ষরে বুকফাটা নীর
কেঁদে গেছে থামি হেথা মৃত্যুও রুদ্ধ
বিশ্বের ব্যাথা যেন বালিকা এ ক্ষুদ্র
গড়া গড়ি দিয়ে কাঁদে কচি মেয়ে ফাতিমা
আম্মাগো পানি দেও ফেটে গেলছাতিমা ।"
©somewhere in net ltd.