নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
গুরুত্বপূর্ণ ঘটনার ভেতরের কারণগুলো জানতে এবং বিশ্লেষণ করতে চেষ্টা করি এবং সবার সাথে শেয়ার করতে পছন্দ করি। সামাজিক, রাজনৈতিক আর আন্তর্জাতিক বিষয়ে লেখালেখি করতে ভালো লাগে। তাই ব্লগে পদচারনা।
ইরানের সাথে সম্পর্ক স্বাভাবিক করা ও ইয়েমেন যুদ্ধ থেকে বেরিয়ে আসার পথ খুঁজছে সৌদি আরব।
সৌদি আরবের ক্রাউন প্রিন্স মোহাম্মদ বিন সালমানের এই উদ্যোগ মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলোর পরস্পরবিরোধী অবস্থানে বড় ধরনের পরিবর্তন আনতে পারে। ২০১৬ সালের জানুয়ারিতে সৌদি আরবের শিয়া নেতা শেখ নিমর আল-নিমরের মৃত্যুদণ্ড কার্যকরের জেরে দুই দেশের কূটনৈতিক সম্পর্কের ব্যাপক অবনতি হয়। এক পর্যায়ে ইরানের সঙ্গে সম্পর্ক ছিন্নের ঘোষণা দেয় সৌদি আরব।
কূটনৈতিক সম্পর্ক পুনঃপ্রতিষ্ঠার আভাস দিয়ে ইরানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী জাভেদ জারিফ বলেছেন, শিগগিরই দুই দেশের মধ্যে কূটনীতিক বিনিময় করা হবে। এবারের হজ শেষে সেপ্টেম্বরই এটা হতে পারে। ইরানের সাথে সৌদি সম্পর্ক স্বাভাবিক করার মধ্যস্থতার প্রক্রিয়ায় সংশ্লিষ্ট রয়েছে ইরাক সরকার।
ইরাকের প্রভাবশালী শিয়া নেতা মুকতাদা আল সদর প্রকাশ্যে কূটনৈতিক প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন। গত মাসের শেষের দিকে সৌদি আরবের ক্রাউন প্রিন্স মোহাম্মদ বিন সালমানের সাথে তিনি সাক্ষাৎ করেন। ইরাকের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী কাশিম আল আরাজি রিয়াদ ও তেহরানের মধ্যে সম্পর্ক স্বাভাবিক করার অংশ হিসেবে গত মাসে সৌদি আরব সফর করার পর ইরানের নেতাদের সাথে বৈঠক করেন। আরাজি ইরানের নেতাদের জানান, মোহাম্মদ বিন সালমান ইরানের সাথে উত্তেজনা কমিয়ে আনতে আগ্রহী।
সুন্নি আরব দেশগুলোর মধ্যে যে অস্ত্র কেনার প্রতিযোগিতা তার নেপথ্যে রয়েছে শিয়া ইরানকে মোকাবেলার প্রবল চেতনা। পারস্য বনাম আরব আভিজাত্যের বিরোধ মধ্যপ্রাচ্যে অস্ত্র প্রতিযোগিতা শুধু বাড়ায়নি; ইসরাইলকেও নিরাপদ করে তুলেছে। ইরানবিরোধী অবস্থান গ্রহণের জন্য সৌদি আরব দেশটিতে আরব আমেরিকান ইসলামিক সামিটের আয়োজন করলেও কার্যত তা ফলপ্রসূ হয়নি। মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প এই সম্মেলনে যোগ দিয়ে সৌদি আরবের সাথে কয়েক বিলিয়ন ডলারের অস্ত্র বিক্রির চুক্তি করলেও আন্তর্জাতিক ভাবে ইরানের ওপর নতুন করে কোন অবরোধ আরপের উদ্যোগ গ্রহণ করতে পারেন নাই , যা ছিল সৌদি আরবের জন্য হতাশাজনক। বরং এশিয়া ও ইউরোপের বৃহৎ প্রতিষ্ঠানগুলো ইরানে বিনিয়গের জন্য প্রতিযোগিতায়লিপ্ত হয়েছে।
অন্যদিকে ইরানের সাথে সম্পর্ক রাখার অপরাধে দীর্ঘ দিনের মিত্র রাষ্ট্র কাতারের ওপর অবরোধ আরোপ করে সৌদি সরকার ও খাদ্যদ্রব্যসহ সব ধরনের পণ্য রপ্তানি বন্ধ করে দেয়। কাতারের এই বিপদে বন্ধুর মত সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দেয় ইরান। কাতার বিরোধী অবরোধের পর প্রথম দেশ হিসেবে কোন প্রকার চুক্তি না করেই মাত্র বারো ঘণ্টার মধ্যে কার্গো বিমানে খাদ্যসহ আবশ্যকীয় পণ্য পাঠায় ইরান, যদিও সেই সময় ইরন ও কাতার দুই দেশের মধ্যে কোন রাষ্ট্রদূত পর্যায়ের সম্পর্কও ছিল না। পরবর্তীতে ইরান ও তুর্কি সহয়তায় অবরোধ মোকাবালায় সক্ষম হয় কাতার। এরই মধ্যে ইরান ও কাতার তাদের মধ্যে রাষ্ট্রদূত বিনিময় করেছে। আন্তর্জাতিক পর্যায়ে ইরানকে প্রকাশ্য সমর্থন করছে ভূমি পথে সৌদি আরবের সাথে সংযুক্ত দেশটি।
এদিকে সৌদি আরবের নেতৃত্বে মুসলিম দেশগুলোকে নিয়ে ইরান বিরোধী যে জোট গঠন করা হয়েছিল সেই জোট প্রতিষ্ঠা ব্যার্থ হয়েছে।
এরই মধ্যে পারমাণবিক শক্তিধর একমাত্র মুসলিম রাস্ত্র পাকিস্থান জানিয়েছে ইরান বিরোধী কোন পদক্ষেপে তারা অংশ নিবে না বরং ইরান ও সৌদি মধ্যে সংঘাত দূর করতে তারা কূটনৈতিক প্রচেষ্টা চালাবে। অন্যদিকে সব থেকে শক্তিধর মুসলিম রাষ্ট্র তুরস্ক সেই দেশে সঙ্ঘটিত ব্যার্থ ক্যু'য়ের পর থেকে তাদের পররাষ্ট্রনীতিতে অমূল পরিবর্তন এনেছে। এক সময় সৌদি জোট গড়তে সর্বাপেক্ষা ভূমিকা গ্রহণকারী দেশটি এখন ইরানের সাথে কাধে কাধ মিলিয়ে চলছে। যেকোন ইস্যুতে ইরান-তুরস্ক এখন যৌথ বিবৃতি দিচ্ছে। এমনকি ইরান-রাশিয়া-তুরস্ক এখন কৌশলগত অংশীদাররে পরিণত হয়েছে।
উপসাগরীয় সহযোগিতা পরিষদের সদস্য রাষ্ট্র ওমান ইরান বিরোধী যেকোন প্রচেষ্টার বিরুদ্ধে অবস্থান নিবে বলে জানিয়েছে। আরেক সদস্য রাষ্ট্র কুয়েতকে ইরানের অন্যতম মিত্র রাষ্ট্র বলে মনে করা হয়। এমনকি সৌদিআরবের সব থেকে ঘনিষ্ঠ দেশ আরব-আমিরাত ইরানের সাথে শক্তিশালী বাণিজ্যিক সম্পর্ক রয়েছে। আরব-আমিরাতের ব্যাংক ব্যাবহার করেই ইরান আন্তর্জাতিক লেনদেন সম্পন্ন করছে।
ইয়েমেনে ইরান সমর্থিত হুথি বিদ্রোহীদের বিরুদ্ধে অনিশ্চিত যুদ্ধে সৌদি আরব বড় ধরনের বিপর্যয়ের মুখে পড়েছে। যুদ্ধের বিপুল ব্যয় বহনের পাশাপাশি সৌদি আরবের নিরাপত্তা হুমকির মুখে পড়েছে। এই যুদ্ধে পশ্চিমা বিশ্ব এবং মুসলিম দেশগুলোর পক্ষ থেকে রিয়াদ যে ধরনের সমর্থন আশা করেছিল তা পায়নি। বরং ইয়েমেনে ১০ হাজার মানুষের মৃত্যু, শিশুহত্যা, কলেরাসহ মানবিক বিপর্যয়ে সৌদি আরবের ভাবমর্যাদা মারাত্মক ক্ষুণ্ণ হয়েছে।
ইয়েমেনে দীর্ঘস্থায়ী যুদ্ধ করা সৌদি আরবের জন্য কঠিন হয়ে পড়ছে। সৌদি আরবের সমর্থনপুষ্ট মানসুর হাদি সরকার ইয়েমেনের ওপর কর্তৃত্ব প্রতিষ্ঠা করতে ব্যর্থ হয়েছেন। ইয়েমেন এখন রাষ্ট্র হিসেবে দুই ভাগে বিভক্ত হয়ে পড়েছে। এই পরিস্থিতিতে সমঝোতা ছাড়া ইয়েমেনের যুদ্ধের অবসান সম্ভব নয়। অপর দিকে ইয়েমেন যেকোনো সমঝোতার জন্য ইরানকে পক্ষভুক্ত করতে হবে। কারণ হুতি বিদ্রোহীরা ইরানের সমর্থন নিয়ে লড়াই চালিয়ে যাচ্ছে।
এদিকে সিরিয়ায় ইরান সমর্থিত প্রেসিডেন্ট বাসার আল আসাদকে ক্ষমতাচ্যুত করবার সৌদি ও মার্কিন ষড়যন্ত্র ব্যার্থ হয়েছে। সন্ত্রাসীদের বিরুদ্ধে তিনি জিতে নিজের অবস্থান শক্ত করেছেন। অন্যদিকে সৌদি সরমর্থিত নুসরা ফ্রন্ট ও আইএস বিশাল পরাজয় বরন করেছে। সম্প্রতি সেনাবাহিনী দেইর-আল-জোর মুক্ত করবার পর সিরিয়া বিষয়ক জাতিসংঘের প্রধান আলোচক বিদ্রোহীদের পরাজয় মেনে নিতে বলেছেন। সুতরাং সৌদি আরবের পক্ষে ইরানপন্থী সিরিয়ার সরকার পতন করা এখন দুঃস্বপ্নে পরিণত হয়েছে।
সুতরাং সৌদি আরব এখন ইরানের সাথে ভালো সম্পর্ক গড়ে তুলে, উত্তেজনা কমাতে চাচ্ছে। গতবার ইরানী নাগরিকরা হজ্বে অংশগ্রহণ না করতে পারলেও, সৌদি আরব হজ্ব বিষয়ে ইরানের সব দাবী মেনেনিয়েছে এবং এবার ইরান থেকে প্রায় ৯০ হাজার হাজী হজ্বে অংশগ্রহণ করেছেন। ইরানী হাজীদের সৌদি আরবের হজ্জ বিষয়ক কমিটির প্রধান বিমান বন্দরে উপস্থিত থেকে ফুল ও খেজুর দিয়ে স্বাগত জানিয়েছেন। যা ইরান-সৌদি আরবের সুসম্পর্ক প্রতিষ্ঠার ইঙ্গিত বহন করে।
©somewhere in net ltd.