নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
গুরুত্বপূর্ণ ঘটনার ভেতরের কারণগুলো জানতে এবং বিশ্লেষণ করতে চেষ্টা করি এবং সবার সাথে শেয়ার করতে পছন্দ করি। সামাজিক, রাজনৈতিক আর আন্তর্জাতিক বিষয়ে লেখালেখি করতে ভালো লাগে। তাই ব্লগে পদচারনা।
ওমর আল মুখতার ছিলেন লিবিয়ার এক সংগ্রামী বীর সেনানী যিনি ২৩ বছর ধরে ইতালিয় উপনিবেশের বিরুদ্ধে সংরাম চালিয়েছিলেন। ১৯৩১ সালের ১৬ সেপ্টেম্বর দখলদার ইতালিয় সেনাদের হাতে এই মরু সিংহ শাহাদত বরণ করেন। এ সময় তার বয়স হয়েছিল ৭২ বছর।
মুখতারের নেতৃত্বে ২৩ বছর ধরে ইতালিয় উপনিবেশবাদের বিরুদ্ধে সংগ্রাম চালিয়েছিল লিবিয়ার দেশ প্রেমিক যোদ্ধারা।
শাইখুল মুজাহিদ উমর মুখতার রহিমাহুল্লাহ ১৮৬২ সালে তিনি সিরনিকার আল-বুতনান জেলায় জানযুর গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন এবং শৈশবেই তিনি পিতৃমাতৃহীন হন। ইয়াতিম অবস্থায় তাকে দত্তক পুত্র হিসেবে গ্রহণ করেছিলেন শারিফ আল গ্বারিয়ানি নামের এক ব্যক্তিত্ব। তিনি ছিলেন সেনুসসি সুফি নামের এক ধর্মীয়-রাজনৈতিক আন্দোলনের কর্মী।
মুখতার জাগবুবে সেনুসসি বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশুনা করেছিলেন ৮ বছর। তিনি ছিলেন কুরআন-বিশেষজ্ঞ। মুখতার ১৮৯৯ সালে দখলদার ফরাসিদের বিরুদ্ধে লড়াই করার জন্য শাদে গিয়েছিলেন। সেখানে ফরাসিদের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে নেতৃত্ব দিচ্ছিলেন রাবিহ আজ জুবাইর।
১৯১১ সালের অক্টোবর মাসে অটোম্যান তুর্কি সাম্রাজ্যের সঙ্গে ইতালির যুদ্ধের সময় ইতালির নৌবাহিনী হানা দেয় লিবিয়ার উপকূলে। সে সময় লিবিয়া ছিল তুর্কি সাম্রাজ্যের অংশ। ইতালিয়রা লিবিয়াকে আত্মসমর্পণ করতে বলে। কিন্তু তুর্কি সেনারা ও তাদের লিবিয় সহযোগীরা আত্মসমর্পণের পরিবর্তে উপকূল ছেড়ে পেছনের দিকে সরে আসেন।
ইতালিয় হানাদার বাহিনী তিন দিন ধরে ত্রিপলি ও বেনগাজিতে বোমা বর্ষণ করে। লিবিয়ার সাইরেনাইকা অঞ্চলের জনগণ ওমর মুখতারের নেতৃত্বে একের পর এক প্রতিরোধ যুদ্ধ চালিয়ে যেতে থাকেন। মরুভূমির লড়াইয়ে অভিজ্ঞ ওমর মুখতার হয়ে ওঠেন ইতালিয় সেনাদের জন্য চক্ষুশূল। ইতালীয়রা মরু অঞ্চলে যুদ্ধের সাথে পরিচিত ছিল না। শায়েখ তার ছোট সৈন্যদল নিয়ে সফল গেরিলা আক্রমণে সক্ষম হন। আক্রমণের পর তার বাহিনী মরুভূমিতে আত্মগোপন করত। তার বাহিনী দক্ষতার সাথে বিভিন্ন সামরিক স্থাপনা, সৈন্যবহরের উপর আক্রমণ চালায় এবং যোগাযোগ ও সরবরাহে বিঘ্ন সৃষ্টি করে। তার গেরিলা পদ্ধতির লড়াইয়ে ইতালীয় সৈনিকরা পর্যুদস্ত হয়ে পড়ে।
ইতালীয় গভর্নর আর্নেস্ট বমবেলি ১৯২৪ সালে জেবেল আখদারের পার্বত্য অঞ্চলে পাল্টা গেরিলা বাহিনী গঠন করেন যা জিহাদিদের উপর বেশ কয়েকটি আক্রমণ পরিচালনা করে। শায়েখ দ্রুত তার কৌশল পাল্টান এবং মিশর থেকে সাহায্য লাভে সমর্থ হন। ১৯২৭ সালের মার্চে ইতালীয়রা জাঘবুব দখল করে। ১৯২৭ থেকে ১৯২৮ পর্যন্ত মুখতার সানুসি বাহিনীকে পুনর্গঠিত করেন। তার দক্ষতার কারণে ইতালীয় ক্রুসেডর গভর্নর জেনারেল আটিলিয়ো তেরুজ্জি শায়েখকে “ব্যতিক্রমী স্থীরচিত্ত ও অটল ইচ্ছাশক্তিসম্পন্ন” বলে উল্লেখ করতে বাধ্য হয়।
১৯২৯ সালে পিয়েত্রো বাদোগলি গভর্নর হিসেবে নিয়োগ পায়। ওমর মুখতারের সাথে আলোচনায় তাকে নিঃশর্ত আত্মসমর্পণ করতে বলা হয়। সেই বছরের অক্টোবরে মুখতার এই প্রস্তাব ফিরিয়ে দেন এবং ইতালীয় সেনানায়ক রডোলফো গ্রাজিয়ানির সাথে ব্যাপক যুদ্ধের জন্য লিবিয় মুজাহিদদের পুনরায় সংগঠিত করেন।
জুনে পরিচালিত সেনা অভিযানে গ্রাজিয়ানির বাহিনী শায়েখের মুজাহিদ বাহিনীর কাছে পরাজিত হয়। পিয়েত্রো বাদোগলি, এমিলো দা বোনো ও বেনিতো মুসোলিনির সাথে গ্রাজিয়ানি শায়েখের প্রতিরোধ ভেঙে দিতে পরিকল্পনা করেন। পরিকল্পনা অনুযায়ী সহস্রাধিক মানুষকে উপকূলবর্তী কনসেন্ট্রেশন ক্যাম্পে নিয়ে আসা হয়, গিয়ারাবুবে উপকূল থেকে লিবিয়া ও মিশরের সীমানা বন্ধ করে দেয়া হয়। এর উদ্দেশ্য ছিল যাতে জিহাদিরা কোনো বিদেশী সাহায্য না পায় এবং স্থানীয় জনতার সমর্থন থেকে বঞ্চিত হয়। সানুসিদের প্রতিরোধে গ্রাজিয়ানির এই পরিকল্পনা সফল হয়। জিহাদিরা সাহায্যবঞ্চিত হয় এবং ইতালীয় বিমান দ্বারা আক্রান্ত হয়। স্থানীয় মুনাফিক, গাদ্দার, চর ও ক্রুসেডরদের সহায়তাকারীদের সাহায্যে ইতালীয় বাহিনী স্থলযুদ্ধেও জিহাদিদের উপর আধিপত্য স্থাপন করে। ঝুকি সত্ত্বেও শাইখুল মুজাহিদিন উমর মুখতার রহিমাহুল্লাহ জিহাদ চালিয়ে যান। ১৯৩১ সালের ১১ সেপ্টেম্বর তাকে অতর্কিত আক্রমণ করে প্রেপ্তার করা হয়।
অবশেষে ১৯৩১ সালের ১১ সেপ্টেম্বর এক অতর্কিত হামলায় আহত ও বন্দি হন মুখতার। ৫ দিন পর আতঙ্কগ্রস্ত ইতালিয় দখলদাররা তাকে ফাঁসিতে ঝুলিয়ে শহীদ করে।
ঐতিহাসিক বর্ণনা থেকে জানা যায় মরুর সিংহ নামে খ্যাত ওমর মুখতারকে মুসোলিনির ইটালিয়ান সেনা অফিসার জিজ্ঞেস করেছিল: তুমি কি জান তোমার শাস্তি মৃত্যুদণ্ড? জবাবে ওমর মুখতার বলেছিলেন, হ্যাঁ। ওই অফিসার বললেন, তুমি যা করেছ তার জন্য তুমি কী অনুতপ্ত? ওমর মুখতার বললেন, প্রশ্নই হয় না, আমি আমার দেশ আর মানুষের জন্য লড়েছি। সেনা আদালতের বিচারক তার দিকে তাকিয়ে বলে, তোমার মত লোকের এমন পরিণতি দেখে আমি দুঃখিত। ওমর মুখতার বললেন, "কিন্তু এটাই তো জীবন শেষ করার সর্বশ্রেষ্ঠ উপায়। মহান আল্লাহকে ধন্যবাদ তিনি আমাকে এভাবে বীরের মত শহীদ হওয়ার সুযোগ দিয়েছেন।” এরপর বিচারক প্রস্তাব দিল তাকে মুক্ত করে দেয়া হবে যদি তিনি মুজাহিদদের কাছে চিঠি লেখেন যাতে মুজাহিদরা ইটালিয়ানদের সাথে যুদ্ধ বন্ধ করে। ওমর মুখতার বিচারকের দিকে তাকিয়ে বলেছিলেন:
"যেই শাহাদত অঙ্গুলি দিয়ে আমি প্রতিদিন সাক্ষ্য দেই যে এক আল্লাহ ছাড়া আর কোন মাবুদ নাই। সেই আঙ্গুল দিয়ে অসত্য কোনো কথা লিখতে পারবো না। আমরা এক আল্লাহ ছাড়া আর কারো কাছে আত্মসমর্পণ করি না। আমরা হয় জিতি, না হয় মরি।"
তথ্যসুত্রঃ পার্সটুডে, ইসলামিক লাইট। আরও জানতে পড়তে পারেন
১/ মরুসিংহ, মদিনা পাবলিকেশন্স। (উপন্যাস)
২/ মক্কার পথে- মুহাম্মাদ আসাদ
৩/ ডেনমার্কের নও মুসলিম সাংবাদিক শহীদ হলাম্বো এর লেখা "মরু সাহারা।"
২| ১৭ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৭ দুপুর ১২:২৮
শহিদুল ইসলাম মৃধা বলেছেন: এজন্যই তিনি বীর!
১৮ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৭ রাত ১২:৪৮
আল-শাহ্রিয়ার বলেছেন: সহমত।
৩| ১৭ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৭ বিকাল ৪:৫৭
ভুতু বলেছেন: সালাম হে বীর
১৮ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৭ রাত ১২:৪৮
আল-শাহ্রিয়ার বলেছেন: সালাম বীর। আল্লাহ্ তাকে জান্নাত দান করুন।
©somewhere in net ltd.
১| ১৭ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৭ সকাল ৯:১৮
দেশ প্রেমিক বাঙালী বলেছেন: