নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
গুরুত্বপূর্ণ ঘটনার ভেতরের কারণগুলো জানতে এবং বিশ্লেষণ করতে চেষ্টা করি এবং সবার সাথে শেয়ার করতে পছন্দ করি। সামাজিক, রাজনৈতিক আর আন্তর্জাতিক বিষয়ে লেখালেখি করতে ভালো লাগে। তাই ব্লগে পদচারনা।
গত কিছুদিন ধরে মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী রেক্স টিলারসন এশিয়া ও মধ্যপ্রাচ্য সফরে ব্যস্ত ছিলেন। এই সফরে অনেক গুরুত্ব পূর্ণ বিষয়গুলো সমাধান করবার কথা ছিল তার। কিন্তু এখন পর্যন্ত কোন সুখবর দিতে পারে নাই মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী।
মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রীকে অনেকটা নিচু পর্যায়ে স্বাগত জানানো হয়েছে পাকিস্থানে। রাওয়ালপিন্ডিতে তাকে একটি সামরিক বিমানঘাঁটিতে তাকে স্বাগত জানিয়েছে পাক পররাষ্ট্র দপ্তরের মধ্যম পর্যায়ের একজন কর্মকর্তা। মার্কিন শীর্ষ পর্যায়ের কর্মকর্তাদের জন্য পাকিস্তান সাধারণত যে ধরনের অভ্যর্থনার ব্যবস্থা করে থাকে এটা তার সঙ্গে সঙ্গতিপূর্ণ নয়। এ সফরের মধ্যদিয়ে তিনি পাকিস্তানের সঙ্গে আমেরিকার সম্পর্ক উষ্ণ করার চেষ্টা করবেন বলে ধারণা করা হয়েছিল। মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী আফগান যুদ্ধে সরাসরি পাকিস্তানের সেনা বাহিনীর সাহায্য কামনা করেছেন।
কিন্তু পাকিস্তানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী খাজা মোহাম্মাদ আসিফ সম্প্রতি আমেরিকাকে সতর্ক করে দিয়ে বলেছেন,পাকিস্তান কখনোই আমেরিকার আধিপত্যকামী মনোভাবের সামনে নতজানু হবে না এবং ওয়াশিংটনের হয়ে অন্য কোনো দেশের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করবে না। আমেরিকার সামরিক সাহায্য বিষয়ে পাক কর্মকর্তারা বলেছেন, আমেরিকার কাছ থেকে পাকিস্তান কোনো রকমের সামরিক সরঞ্জাম, অর্থনৈতিক সহায়তা কিংবা অন্য বস্তুগত সুবিধা চায় না। পাকিস্তান শুধু পারস্পরিক সমতার ভিত্তিতে আমেরিকার সঙ্গে সম্পর্ক চায়। উল্লেখ্য এর পূর্বে বেশ কয়েকবার অ্যামেরিকা পাকিস্তানকে সামরিক সাহায্য বন্ধ করে দেবার হুমকি দিয়েছিল।
এর আগে, মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী রেক্স টিলারসন রিয়দে সংবাদ সম্মেলনে দায়েশ বিরোধী শিয়া যোদ্ধাদের ইরাক ছেড়ে যেতে বলেন। তিনি বলেন "যেসব শিয়া যোদ্ধা ইরাকে এতদিন দায়েশের বিরুদ্ধে লড়াই করছিল এখন তাদের কাজ শেষ। এখন তাদেরকে নিজ নিজ দেশে ফিরে যেতে হবে।"
তবে ইরাকের প্রধানমন্ত্রী হায়দার আল-এবাদি রাজধানী বাগদাদে মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী রেক্স টিলারসনের সঙ্গে সাক্ষাতে দেশটির প্রতিরোধ যোদ্ধা বা স্বেচ্ছাসেবী বাহিনী হাশ্দ আশ-শাবির প্রতি সমর্থন জানিয়েছেন। হাশ্দ আশ-শাবির বিরুদ্ধে মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রীর সাম্প্রতিক বক্তব্যের প্রতিক্রিয়ায় হায়দার আল-এবাদি বলেছেন, স্বেচ্ছাসেবী ওই বাহিনী ইরাকসহ এ অঞ্চলের জনগণের একমাত্র ভরসা। এবাদি বলেছেন ইরাকের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে কাউকে হস্তক্ষেপ করতে দেব না।
রেক্স টিলারসনের এই সফরের মধ্যে দুইটি বিষয় মীমাংসা করতে গিয়েছিলেন। একটি বিষয় ছিল কুর্দিদের সাথে ইরাক সরকারের দন্দ মীমাংসা করে দেওয়া। অন্যটি ছিল কাতার ও সৌদি আরবের মধ্যে বিরোধ মীমাংসা করা। কিন্তু তিনি এই দুইটি ক্ষেত্রেও ব্যার্থ হয়েছেন। ইরাক সরকার ইতিমধ্যে কুর্দিদের কাচ থেকে তেল সমৃদ্ধ কিরকুক প্রদেশ নিজেদের নিয়ন্ত্রনে এনেছে।
অন্যদিকে সৌদি ও কাতার সমস্যাও সৌদি-আরবের অনড় অবস্থানের জন্য মীমাংসা করা তার পক্ষে সম্ভব হয়ে ওঠে নাই। বরং আঞ্চলিক অস্ত্র প্রতিযোগিতার মধ্যে কাতার ও রাশিয়া সামরিক এবং কৌশলগত সহযোগিতা চুক্তি সই করেছে। এর পূর্বে সৌদি আরবের রাজাও রাশিয়া সফর করে অস্ত্র কিনেছিল। অর্থাৎ মধ্যপ্রাচ্যে মার্কিন একছত্র অস্ত্র ব্যাবসাও এখন হুমকির মুখে পড়েছে।
অন্যদিকে ইরানের সাথে পরমাণু চুক্তি নিয়ে বিরোধে জড়িয়ে অ্যামেরিকা অনেকটা একা হয়ে পড়েছে। অ্যামেরিকার দীর্ঘদিনের মিত্র ইউরোপীয় ইউনিয়ন এমনকি ইংল্যান্ড পর্যন্ত ইরানের সাথে চুক্তি রক্ষার পক্ষে মত দিয়েছে। ইউরোপীয় ইউনিয়ন অ্যামেরিকাকে সতর্ক করে বলেছে অ্যামেরিকা চুক্তি থেকে বেড়িয়ে গেলেও ইউরোপ ইরানের সাথে সহযোগিতা অব্যাহত রাখবে। অথচ মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রীর এই সফরের একটি অন্যতম লক্ষ ছিল ইরান বিরোধী জোট গঠন করা। তবে কথিত ইরান বিরোধী এই জোটে সৌদি আরব ছাড়া আর কোন দেশকে অ্যামেরিকা পাশে পায় নাই।
আমেরিকার সিনেটের আর্মড সার্ভিসেস কমিটির চেয়ারম্যান জন ম্যাককেইন মার্কিন সরকারকে সতর্ক করে বলেছেন, ইরাক, সিরিয়া ও ইয়েমেনে সাফল্য অর্জনের পাশাপাশি ইরান ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্রের পরীক্ষা চালিয়েছে। কিন্তু আমেরিকার আরব মিত্ররা কাতারের সঙ্গে উত্তেজনা সৃষ্টি করে রেখেছে, এখন মধ্যপ্রাচ্যের ঘটনাবলীকে গুরুত্ব না দিলে ওই অঞ্চলে আমেরিকার প্রভাব শেষ হয়ে যেতে পারে।
সর্বশেষ ইরানের ক্ষেপণাস্ত্র কর্মসূচির ওপর নতুন নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে একটি বিল পাস করেছে অ্যামেরিকা। এ পদক্ষেপের ফলে ইরান ও ছয় জাতিগোষ্ঠীর মধ্যে সই হওয়া পরমাণু সমঝোতা থেকে ট্রাম্প প্রশাসন বের হয়ে যাবার বার্তা দিলো। যদিও নিজ দেশেই ৫৭ শতাংশ নাগরিক ট্রাম্পের তৎপরতায় অসন্তোষ প্রকাশ করেছে।
©somewhere in net ltd.