নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
গুরুত্বপূর্ণ ঘটনার ভেতরের কারণগুলো জানতে এবং বিশ্লেষণ করতে চেষ্টা করি এবং সবার সাথে শেয়ার করতে পছন্দ করি। সামাজিক, রাজনৈতিক আর আন্তর্জাতিক বিষয়ে লেখালেখি করতে ভালো লাগে। তাই ব্লগে পদচারনা।
কিছুটা আর্থিক সাচ্ছন্দ্য আশায় মধ্যপ্রাচ্যে পাড়ি জমানো বাংলাদেশী নারী শ্রমিকদের মধ্যে অনেকেই সে দেশে মালিক ও তার পরিবারের সদস্যদের হাতে শারীরিক ও মানসিক নির্যাতনের শিকার হচ্ছেন বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। ভয়াবহ নির্যাতনের শিকার এসব নারীর মধ্যে অনেকে উপায় না পেয়ে কর্মস্থল থেকে পালিয়ে যাচ্ছেন।
সৌদি আরবে পালানো নারীরা বাংলাদেশ দূতাবাসে আশ্রয় নিচ্ছেন। অনেকের পরিবারের সদস্যরা তাদের আপনজনকে দ্রুত দেশে ফেরত আনতে প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ে নিয়োগকারী কোম্পানির নাম, নির্যাতনের ধরন, বাংলাদেশ থেকে পাঠানো রিক্রুটিং এজেন্সির নাম, টেলিফোন নম্বরসহ বিস্তারিত তথ্য উল্লেখ করে আবেদন করছেন। তবে গত দেড় বছরে প্রবাসী কল্যাণ মন্ত্রণালয়ে যত অভিযোগ জমা পড়েছে তার মধ্যে নির্যাতিত নারীদের দেশে ফেরানোর সংখ্যা খুবই কম বলে সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে।
রিক্রুটিং এজেন্সির মালিকদের পক্ষ থেকে দাবি করা হচ্ছে, যাওয়ার আগে নারী শ্রমিকের পরিবারের সদস্যরা বলছেন, তার এবং তার পরিবারের পক্ষ থেকে বিদেশ যেতে কোনো সমস্যা নেই। কিন্তু যাওয়ার পরই তারা নানা অজুহাত দেখিয়ে বলেন, ‘দেশে আমি দুধের বাচ্চা রেখে এসেছি। আমি আর থাকতে পারব না’। তখনই তারা দেশে ফিরতে নির্যাতনের ‘বানোয়াট’ অভিযোগ তৈরি করেন।এজেন্সির ৩০০ টাকার স্ট্যাম্পে মুচলেকায় উল্লেখ থাকে বিদেশ যাওয়ার পর কোনোভাবেই চুক্তি মোতাবেক নির্দিষ্ট সময়ের আগে দেশে ফিরতে পারবেন না।
প্রবাসী কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের সংশ্লিষ্ট দফতরে সৌদি আরবের জেদ্দায় নির্যাতনের শিকার মুক্তা বেগমকে দেশে ফেরত আনার জন্য তার ভাই মো: বোরহান লিখিত অভিযোগ করেন। তিনি মন্ত্রণালয়ের নির্দিষ্ট ফরমে উল্লেখ করেন, মোসাম্মৎ মুক্তা বেগম, পাসপোর্ট নম্বর বিএম০৮৬৬৩৭৩, মোবাইল নম্বর ০০৯৬৬৫৫৮২৬৫৫০৯। বাবার নাম আব্দুল করিম তালুকদার। গ্রামের নাম মাদারীপুর বাহোরান্দি। চলতি বছরের ২৯ নভেম্বর রিক্রুটিং এজেন্সি তানিয়া ট্রেডিং ইন্টারন্যাশনালের (আরএল-৪৩৬) মাধ্যমে সৌদি আরব যান। অভিযোগে মুক্তার ভাই দেশে ফেরত আসার কারণের জায়গায় উল্লেখ করেন, সৌদি আরবে বিভিন্ন নিয়োগকর্তার বাসায় শারীরিক নির্যাতন ও যৌন হয়রানির শিকার হন তার বোন। নিয়োগকর্তার বাসা থেকে পালিয়ে বর্তমানে বাংলাদেশ দূতাবাসের (জেদ্দা) আশ্রয়ে আছেন। সৌদি আরবের দালাল তাকে আটকানোর চেষ্টা করছে। তাকে জরুরি ভিত্তিতে দেশে আনা প্রয়োজন।
মুক্তার ভাই বোরহান বলেন, তাকে সৌদি আরব পাঠাতে ৭০ হাজার টাকা খরচ করতে হয়েছে। শুধু মুক্তা নন- সৌদি আরবে রিক্রুটিং এজেন্সির পাঠানো এমন কয়েক শ’ নারী শ্রমিক এখন নির্যাতনের শিকার হচ্ছেন বলে প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ে ভুক্তভোগীদের পক্ষ থেকে লিখিত অভিযোগ দেয়া হয়েছে। তবে এসব অভিযোগের বিপরীতে দেশে ফেরা নারীর সংখ্যা খুবই কম বলে জানিয়েছেন মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বশীল এক কমকর্তা। শুধু সৌদি আরব নয় ; একইভাবে জর্দান, কাতারে ও অনেক নারী শ্রমিক নির্যাতিত হচ্ছেন। প্রতিটি পরিবারের পক্ষ থেকেই তাদের দেশে ফেরত আনতে অনুরোধ জানানো হয়েছে। এর মধ্যে অনেকে আবার নিখোঁজও রয়েছেন মাসের পর মাস।
সৌদি আরবে নারী শ্রমিক নির্যাতন প্রসঙ্গে একটি রিক্রুটিং এজেন্সির মালিক স্বীকার করেন, সৌদি আরবে গৃহকর্তা-কর্ত্রীরা নারী শ্রমিকদের ইদানীং কিছুটা নির্যাতন করছেন। বেতনও পাচ্ছেন না। সময়ের বেশি তাদের দিয়ে কাজ করানো হচ্ছে। এসব ব্যাপারে মন্ত্রণালয়ের এখনই গুরুত্ব সহকারে উদ্যোগ নেয়া উচিত বলে তিনি মনে করেন।
চলতি বছরের নভেম্বর পর্যন্ত সৌদি, কাতারসহ বিভিন্ন দেশে পাড়ি জমিয়েছেন এক লাখ ১৩ হাজার নারী শ্রমিক। অভিবাসন বিশেষজ্ঞরা বলছেন, বিদেশে নির্যাতিত নারী শ্রমিকদের কিভাবে বেতনভাতা নিশ্চিতসহ তাদের সুরক্ষা করা যায় তা নিয়ে সংশ্লিষ্টদের ভাবা উচিত।
সুত্রঃ নয়াদিগন্ত
©somewhere in net ltd.