নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

অন্যদের সেভাবেই দেখি, নিজেকে যেভাবে দেখতে চাই। যারা জীবনকে উপভোগ করতে চান, আমি তাঁদের একজন। সহজ-সরল চিন্তা-ভাবনা করার চেষ্টা করি। আর, খুব ভালো আইডিয়া দিতে পারি।

সত্যপথিক শাইয়্যান

আমি লেখালিখি করি, মনের মাধুরী মিশিয়ে

সত্যপথিক শাইয়্যান › বিস্তারিত পোস্টঃ

কলম্বাসের আগেই মালি\'র যে রাজা আমেরিকা আবিষ্কার করেছিলেন

৩০ শে মার্চ, ২০২৪ ভোর ৫:২৩



নতুন জ্ঞান অর্জন করা ছিলো তাঁর নেশা। সেই জ্ঞান অর্জন করতে গিয়েই তিনি পাড়ি জমালেন মহাসাগরের অসীমে। পৌঁছে গেলেন আমেরিকায়। যে সময়ে তিনি আমেরিকা জয় করেছিলেন, তারও ২০০ বছর পরে কলম্বাস আমেরিকা পৌঁছান। কলম্বাসের আগে আমেরিকা মহাদেশের তীরে পৌঁছানো সেই ব্যক্তিটি হচ্ছেন- মালির রাজা মানসা আবু বকর ২য়।

মানসা আবু বকরঃ

'মানসা' অর্থ রাজা, সম্রাট বা সুলতান। ১৪০০ সালের দিকে আফ্রিকার মালি সাম্রাজ্যের শাসক ছিলেন মানসা মুসা। আমি যে সময়ের কথা বলছি, সেই সময়ে আফ্রিকার এই রাজ্যটি উন্নতির চরম শিখরে পৌঁছেছিলো। মালি রাজ্য কতটা ধনী ছিলো তা বুঝা গিয়েছিলো মানসা মুসার বিখ্যাত হজ্জ যাত্রার সময়ে। আরব ইতিহাসবীদদের বর্ণনা অনুযায়ী, হজ্জের সময়ে মুসা এতো সোনা খরচ করেছিলেন যে 'সোনার দাম ৬ রুপার দিরহাম কমে গিয়েছিলো'।

মানসা মুসা ছিলেন মানসা আবু বকর ২-এর ঠিক পরের শাসক। আবু বকরের শাসনামলে সাম্রাজ্যে শান্তি আর শৃঙ্খলা এতোটাই উচ্চ পর্যায়ে গিয়ে ঠেকেছিলো যে তা এক উদ্ভট উপাখ্যানে পরিণত হয়। সিরিয়ান ঐতিহাসিক, আল-উমারি যখন মানসা মুসা'র সাথে কায়রোতে দেখা করেন, তিনি জানতে পারেন কিভাবে মানসা আবু বকর আটলান্টিক মহাসাগর জয়ের নেশায় নিজের সিংহাসন ছেড়ে চলে গিয়েছিলেন।



আবু বকরের কাহিনী যতটুকু জানা যায়ঃ

প্রথমে মানসা আবু বকর অনেক জাহাজ ভরে মানুষ পাঠালেন মহাসাগরে। কয়েক বছর পরে সেই মানুষগুলো'র একজন ফিরে এলো মালির রাজার কাছে। সেই জাহাজের ক্যাপ্টেনকে জিজ্ঞাসা করা হলো যে, সে কি খবর নিয়ে এসেছে।

সে সুলতান আবুবকরকে বললো- '' ও সুলতান! আমরা অনেক দূর পর্যন্ত সাগরে ভ্রমন করেছিলাম যতক্ষণ না খোলা সাগরে একটি নদী'র মাঝে আমরা গিয়ে পড়লাম। সেই নদীর প্রচন্ড স্রোতে নিজেদের ভাসিয়ে অন্যান্য সব জাহাজগুলো এগিয়ে গেলো। আমি তাঁদেরকে আর কখনো দেখতে পাইনি। সেই নদীতে না ঢুকে কাল বিলম্ব না করে আমি ফিরে এসেছি।''

ক্যাপ্টেনের কথা শুনে আবুবকর যখন সিদ্ধান্ত নিলেন আটলান্টিক পাড়ি জমাবেন, তখন তিনি মালি ও মিশরের জাহাজ প্রস্তুতকারীদের ২০০০ জাহাজ বানানোর নির্দেশ দিলেন। এই দুই হাজার জাহাজের মাঝে তাঁর সবচেয়ে দক্ষ জনবল, ডাক্তার, জাদুকর, নাবিক দিয়ে ১০০০ জাহাজ আর একই পরিমাণ জাহাজে সোনা, পানি আর অন্যান্য দ্রব্য বোঝাই করলেন, এটা তাদের জন্যে কয়েক বছর বেঁচে টিকে থাকার জন্যে যথেষ্ট ছিলো।

এরপরে, ১৩১১ অথবা ১৩১২ সালে মানসা মুসার কাছে রাজ দায়িত্ব অর্পন করার পরে, মানসা আবু বকর আর তাঁর লোকেরা আটলান্টিক পাড়ি দিলেন। আটলান্টিক মহাসাগরে জাহাজগুলো ভাসিয়ে অদৃশ্য হয়ে গেলেন।



মানসা আবু বকর কি আমেরিকা মহাদেশে পৌছে কি করলেন?

মালি'র ইতিহাস থেকে জানা যায়, মানসা আবু বকর ২ ব্রাজিলের কোন সাগর তীরে পৌছেছিলেন। আবু বকর ২য় তখন সেই অঞ্চলের টুপি উপজাতিদের সাথে যোগাযোগ স্থাপন করে বাণিজ্য সংযোগ স্থাপন করেন। এই বাণিজ্যের মাধ্যমে শিম, চিনাবাদাম, তুলা, গ্রীষ্মমন্ডলীয় ফল এবং তামাক-সহ অনেক ব্রাজিলীয় ফসলের সাথে মালির উপনিবেশবাদীদের পরিচিত হয়। বিনিময়ে, মালি'র পশুসম্পদ যেমন ভেড়া, গিনি ফাউল, এবং গবাদি পশু'র সাথে টুপি উপজাতির জানতে পারে।

এরপরে, ১৩১৪ সালে, নিজ দেশে খবর পাঠিয়ে মানসা আবু বকর আরো বাণিজ্য কাফেলা নিয়ে আসেন ব্রাজিলে। তিনি ব্রাজিলের যে এলাকায় নেমেছিলেন, সেই এলাকার নামকরণ করেছিলেন 'বোরে বামবুকে'।

আসলেই কি 'মানসা আবু বকর-২' আমেরিকায় পৌঁছেছিলেন?

মালি'র কেউ আমেরিকায় পৌছেছিলেন কিনা তার কোন প্রমাণ পাওয়া যায় না। তবে, কলম্বাসের ডায়েরী থেকে জানা যায় যে, তিনি যখন আমেরিকায় পৌঁছান, তখন কিছু আফ্রিকানকে সেখানে ব্যবসা করতে দেখেছিলেন!




সূত্রঃ

১) Joan Baxter, Africa's 'greatest explorer', BBC News.
২) The First African Voyage To The Americas, a story, African American Registry
৩) Mansa Abu Bakr II: 9th Ruler of Mali, https://www.youtube.com/watch?v=2b0uN_RS5uw
৪) Ḏḥwty, The Legend of How Mansa Abu Bakr II of Mali Gave up the Throne to Explore the Atlantic Ocean, Ancient-origins
৫) Indonesia Window, African Muslim explorers reach America nearly 200 years before Columbus
৬) Bipin Dimri, Abu Bakr II: Did the King of Ancient Mali go to America?, Historic Mysteries
৭) The African History dot com

মন্তব্য ১৫ টি রেটিং +১/-০

মন্তব্য (১৫) মন্তব্য লিখুন

১| ৩০ শে মার্চ, ২০২৪ ভোর ৫:৪০

মোহাম্মদ সাজ্জাদ হোসেন বলেছেন:





বড়ই চমৎকার একটি লেখা।

৩০ শে মার্চ, ২০২৪ ভোর ৫:৪৩

সত্যপথিক শাইয়্যান বলেছেন:



ধন্যবাদ। আমার কাছেও নতুন তথ্য!!!

শুভেচ্ছা নিরন্তর।

২| ৩০ শে মার্চ, ২০২৪ ভোর ৬:১৩

অধীতি বলেছেন: দারুণ তথ্য। জেনে সমৃদ্ধ হলাম।

৩০ শে মার্চ, ২০২৪ ভোর ৬:২৬

সত্যপথিক শাইয়্যান বলেছেন:



দারুণ সাহসী ছিলেন তিনি।

ধন্যবাদ নিরন্তর।

৩| ৩০ শে মার্চ, ২০২৪ সকাল ৮:৩০

অহরহ বলেছেন: কোথা থেকে কোন গাজাখুরি গল্প ফেদেছেন ভাইয়া........ হাস্যকর।

৪| ৩০ শে মার্চ, ২০২৪ সকাল ৯:৩৪

সোনাগাজী বলেছেন:


ততকালীন আফ্রিকানরা কি আটলান্টিক পাড়ি দেয়ার মতো কাঠের জাহাজ বানাতে পারার কথা? সংখ্যায় আবার ২০০০ ?

৩০ শে মার্চ, ২০২৪ সন্ধ্যা ৬:০১

সত্যপথিক শাইয়্যান বলেছেন:



ভালো প্রশ্ন। মালীর ইতিহাসবীদরা বলেন, সেই সময় মিশর থেকে কারিগর নিয়ে গিয়ে তিনি জাহাজ বানিয়েছিলেন।

ধন্যবাদ।

৫| ৩০ শে মার্চ, ২০২৪ সকাল ১০:০০

মোহাম্মদ সাজ্জাদ হোসেন বলেছেন:



৩০ শে মার্চ, ২০২৪ সকাল ৯:৩৪১
সোনাগাজী বলেছেন:
ততকালীন আফ্রিকানরা কি আটলান্টিক পাড়ি দেয়ার মতো কাঠের জাহাজ বানাতে পারার কথা? সংখ্যায় আবার ২০০০ ?


২০০০ জাহাজ বানানো হয়তো সম্ভব না।
কিন্তু কলা গাছ দিয়ে দুই হাজার ভেলা ও কি বানানো সম্ভব হতো না তাদের পক্ষে?
তাদেরকে এতই নির্বোধ মনে করা সঠিক কাজ না।

৩০ শে মার্চ, ২০২৪ সন্ধ্যা ৬:০২

সত্যপথিক শাইয়্যান বলেছেন:



কলাগাছ নয়। জাহাজ! জাহাজ বানিয়েছিলেন তিনি।

ভালো করে লেখা পড়ুন।

ধন্যবাদ।

৬| ৩০ শে মার্চ, ২০২৪ দুপুর ১২:৩৭

ধুলো মেঘ বলেছেন: কাঠের জাহাজের চল কি কলম্বাসের আগে কেউই করেনি? ভাইকিং ও পর্তুগীজ জলদস্যুরা তো পৌরাণিক কাল থেকেই কাঠের জাহাজ নিয়ে সমুদ্রে ত্রাস তৈরি করেছিল। গ্রীক ও ট্রোজান সেনাদের মধ্যে যে যুদ্ধ হয়েছিল (ইলিয়ড), তাতে কি কাঠের তৈরি সমুদ্রগামী জাহাজের ব্যবহার কেবল রূপকথা বলেই মনে হয়েছে?

৩০ শে মার্চ, ২০২৪ সন্ধ্যা ৬:০৪

সত্যপথিক শাইয়্যান বলেছেন:



অনেকেই হয়তো ইতিহাসে কাঁচা। বিচিত্র কিছু নয়। এতো এতো দেশ!!! কতগুলো আর মনে রাখা যায়!!!

হম্বার কি নিজের কল্পনার মিশেলে লিখেন নাই?

ধন্যবাদ।

৭| ৩০ শে মার্চ, ২০২৪ সন্ধ্যা ৭:৩৩

শূন্য সারমর্ম বলেছেন:


কলম্বাসকে সবাই চিনলো,উনাকে খুজে বের করে চিনতে হচ্ছে।সমস্যা কোথায়?

৩০ শে মার্চ, ২০২৪ রাত ৮:৫২

সত্যপথিক শাইয়্যান বলেছেন:



সমস্যা আছে, আটলান্টিক সমুদ্রের গভীর পানি-সম সমস্যা।

ধন্যবাদ।

৮| ৩০ শে মার্চ, ২০২৪ রাত ১১:২৩

শেরজা তপন বলেছেন: ইতিহাস ও নাম নিয়ে এখানে কিছু বিভ্রান্তি আছে। প্রথমত কথা হচ্ছে মালি সাম্রাজ্যের কোন রাজা এই সুমুদ্র যাত্রা করেছিলেন?

মুদ্রযাত্রার জন্য দায়ী মানসার পরিচয় কিছু বিভ্রান্তির বিষয়। মুসার বিবরণের আল-উমারির রেকর্ডে মানসার নাম উল্লেখ নেই, তিনি মুসার পূর্বসূরি ছাড়া তার পরিচয়ের কোনো ইঙ্গিত দেয়নি। আরব ইতিহাসবিদ ইবনে খালদুনের মতে, কয়েক দশক পরে লিখছেন, মানসা হিসেবে মুসার পূর্বসূরি ছিলেন মুহাম্মদ ইবনে কু। যেমন, বেশ কয়েকজন ঐতিহাসিক মানসা মুহাম্মদের নাম বলা হয়েছে যিনি মূলত সমুদ্রযাত্রার করেছিলেন।

মানসা মুসা মূলত হজ্জে গিয়ে এই সুমুদ্রযাত্রার গল্পটা করেছিলেন এক মিশরিয়কে;

মালি সাম্রাজ্যের শাসক মানসা মুসা তার হজ্জের সময় কায়রোতে অবস্থানকালে আবু আল-হাসান আলী ইবনে আমির হাজিব নামে একজন মিশরীয় কর্মকর্তার সাথে একটি অসাধারণ গল্প শেয়ার করেছিলেন।
মুসার মতে, তার পূর্বসূরি (তার আগে রাজা) আটলান্টিক মহাসাগর অতিক্রম করার সাহসী প্রচেষ্টায় একটি বড় নৌবহরের নেতৃত্ব দিয়েছিলেন। লক্ষ্য ছিল সমুদ্রের দূরতম সীমা আবিষ্কার করা।

এখানে আরবি ইতিহাস থেকে নেয়া কলম্বাসের আমেরিকা আবিস্কারের পরে তাঁর আগে আফ্রিকানদের আমেরিকা আবিস্কারের বিষয় নিয়ে চুম্বক অংশ( সময়ের অভাবে এডিট করা হল না)ঃ

মালির সম্রাট ১৩১১ সালে আটলান্টিক মহাসাগর পাড়ি দেওয়ার জন্য সিংহাসন ত্যাগ করেন এবং তিনি তার সাথে প্রায় 200টি জাহাজ সজ্জিত করেছিলেন। প্রায় ২০০০ অতিরিক্ত নৌযান দ্বারা, যার অর্থ হল তিনি প্রায় ২০০ বছর আগে কলম্বাসের সমুদ্রযাত্রার আগে, এবং ক্রিস্টোফার নিশ্চিত করেছেন যে কলম্বাস তার নিজের হাতে একটি পাণ্ডুলিপিতে লিখেছিলেন যে, আফ্রিকানরা আমেরিকা মহাদেশে পৌঁছানোর ক্ষেত্রে তার আগে ছিল, যা প্রমাণ করে যে আদিবাসীরা আমেরিকার লোকেরা শিখেছিল কিভাবে সোনার খাদ এবং গলিয়ে অন্য ধাতুর সাথে মিশ্রিত করা যায়।কলম্বাস যোগ করেছেন যে এটি সম্পূর্ণরূপে আফ্রিকান পদ্ধতি, এবং এটি অকল্পনীয় ছিল যে আমেরিকার লোকেরা ঘটনাক্রমে আফ্রিকান কারুশিল্পের সাথে এটি শিখেছিল।
কলম্বাস আরও নিশ্চিত করেছেন যে তিনি যখন নতুন বিশ্বে এসেছিলেন, তখন তিনি এমন লোকদের খুঁজে পেয়েছিলেন যারা তাদের আকার এবং চেহারায় আফ্রিকানদের সাথে সাদৃশ্যপূর্ণ ছিল এবং এটি ইঙ্গিত দেয় যে আবু বকর মৃত্যু থেকে রক্ষা পেয়ে আমেরিকায় বসতি স্থাপন করেছিলেন।
ফরাসি ইভান ভ্যান সার্টিমার মতো পণ্ডিতরা আছেন, "তারা কাম বিফোর কলম্বাস" বইটির লেখক, যিনি রুটজার্স বিশ্ববিদ্যালয়ে কাজ করেছিলেন এবং আর্থিক বিজ্ঞানী গাউসস ডায়াওয়ারা, যিনি বলেছিলেন যে আবু বকর দ্বিতীয় নতুন বিশ্বে পৌঁছাতে সফল হয়েছেন।
***
আপনার ইতিহাস পড়ে চমৎকৃত হলাম; আমার প্রিয় একটা বিষয় তাই একটু মাতব্বরি করলাম। কষ্ট নিয়েন না। তবে কথিত আছে মুহাম্মদ ইবনে কু আর ফিরে আসেননি কোনদিন সেই জন্যই মানসা মুসা রাজা হতে পেরেছিলেন।

৯| ৩০ শে মার্চ, ২০২৪ রাত ১১:২৯

রাজীব নুর বলেছেন: দারুন ইতিহাস।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.