নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

অন্যদের সেভাবেই দেখি, নিজেকে যেভাবে দেখতে চাই। যারা জীবনকে উপভোগ করতে চান, আমি তাঁদের একজন। সহজ-সরল চিন্তা-ভাবনা করার চেষ্টা করি। আর, খুব ভালো আইডিয়া দিতে পারি।

সত্যপথিক শাইয়্যান

আমার মনে বিষ আছে এবং আমি তা ব্লগে এপ্লাই করি! জানেনই তো, পৃথিবীর সবচেয়ে দামী ঔষধ বিষ দিয়েই তৈরী হয়! আর, আপনারা তা ফ্রিতে পাচ্ছেন।

সত্যপথিক শাইয়্যান › বিস্তারিত পোস্টঃ

ফেস মাস্কের অনেক আগেই, রোগ প্রতিরোধে তাবিজ ব্যবহার করতেন মুসলিম চিকিৎসকরা

০৯ ই মে, ২০২৫ দুপুর ১২:১৮



আজ যেমন অনেকেই COVID-19 থেকে রক্ষার জন্য মুখে মাস্ক পরেন এবং শ্বাস-প্রশ্বাসের ব্যায়াম করেন—যদিও এসব পদ্ধতির বৈজ্ঞানিক ভিত্তি নিয়ে বিতর্ক আছে—তেমনি প্রাচীনকালে ইসলামী বিশ্বও দুর্দিনে রোগব্যাধি প্রতিরোধে আশ্রয় নিয়েছিল নানা প্রতিরক্ষামূলক যন্ত্র ও আচার-অনুষ্ঠানের।

১১শ শতক থেকে শুরু করে ১৯শ শতকের কাছাকাছি সময় পর্যন্ত মুসলিম সংস্কৃতিতে দেখা যায়—খরা, দুর্ভিক্ষ, বন্যা এমনকি মহামারি থেকে রক্ষার আশায় ব্যবহার হতো জাদুকরী পাত্র, চিকিৎসার হার, এবং আরও নানা ধরণের তাবিজ-কবচ।

এই তাবিজ ও প্রতীকচিহ্নগুলোর অনেকগুলোই ছিল দৃষ্টিনন্দন এবং সূক্ষ্মভাবে নির্মিত। এজন্য এগুলো শিল্প ইতিহাসবিদদের, যেমন আমার, দৃষ্টিতে বিশেষ আগ্রহের বিষয়। আজকাল যদিও এসবকে লোকবিশ্বাস বা কুসংস্কারের নিদর্শন হিসেবে দেখা হয়, প্রাচীন যুগে এই আচার-পদ্ধতিগুলো ইসলামি জ্ঞান, বিজ্ঞান ও শিল্পের অভিজাত পরিমণ্ডল থেকেই উদ্ভূত হয়েছিল।


ইসলামি চিকিৎসক ও ব্যক্তিগত সুরক্ষা সরঞ্জাম

“পার্সোনাল প্রোটেকটিভ ইকুইপমেন্ট” বা “PPE” শব্দটি এখন আমাদের দৈনন্দিন জীবনের অংশ হয়ে দাঁড়িয়েছে, যেখানে আমরা দেখি, সম্মুখসারির স্বাস্থ্যকর্মীরা গাউন, ফেইস শিল্ড ও গ্লাভস পরে COVID-19 থেকে নিজেদের সুরক্ষিত রাখছেন।

রোগ ছড়ানোর জীবাণুবিদ্যা আবিষ্কারের আগেও ইসলামি ভূখণ্ডে মহামারিগুলোকে অনেক সময় মনে করা হতো বাতাসের মধ্যে ছড়িয়ে পড়া কোনো পচনশীল দূষণ, যার মাধ্যমে “আর্দ্র” আত্মারা মানুষের দেহে প্রবেশ করে। কিছু মধ্যযুগীয় ইসলামি চিন্তাবিদ বিশ্বাস করতেন, প্লেগ হয় “কালো ফেরেশতারা” অদৃশ্য তীর ছুঁড়ে মারার কারণে।

আরবিভাষায় এই পুরনো রোগ-বোঝাপড়ার ছাপ আজও রয়ে গেছে। উদাহরণস্বরূপ, “প্লেগ”-এর আরবি শব্দ ta‘un এসেছে ta'ana ক্রিয়াপদ থেকে, যার অর্থ “বিদ্ধ করা” বা “আঘাত করা।”



প্রাক-আধুনিক ইসলামি সমাজে, যে জিনিসটি ব্যক্তিকে বিভিন্ন ক্ষতির হাত থেকে রক্ষা করার জন্য সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ PPE হিসেবে বিবেচিত হতো, তা ছিল তাবিজযুক্ত জামা—একটি কাপড়ের পোশাক, যাতে পবিত্র পাঠ লেখা থাকত এবং যা প্রায়ই যুদ্ধে পরা হতো। বুকে বৃত্তাকার নকশা, কাঁধে রাউন্ডেল ও ঝালরযুক্ত কলারসহ এই জামাগুলোর বর্ণনা শুনলে অনেকটা ডিস্কো যুগের স্টাইল মনে হতে পারে—কিন্তু বাস্তবে এগুলো ছিল যুদ্ধের বডি আর্মারের মতো।

এই জামাগুলোর গায়ে আঁকা থাকত চতুর্ভুজ, সংখ্যা ও বিভিন্ন প্রতীক। এদের “তাবিজগত শক্তিতে চার্জড” বলে মনে করা হতো—অর্থাৎ, মনে করা হতো এগুলো রোগ ও মৃত্যুর বিরুদ্ধে পরিধানকারীকে শারীরিকভাবে সুরক্ষা দিতে সক্ষম।

দক্ষিণ এশিয়ার ১৫ ও ১৬ শতকের কিছু তাবিজ জামার গায়ে ছিল পুরো কুরআনের পাঠ এবং আল্লাহর সমস্ত নাম। ধর্মতত্ত্ব গবেষক রোজ মুরাভচিক-এর মতে, এই নামগুলো উচ্চারণ করলে জামাটি যেন হয়ে যেত এক ধরনের “পোশাক রূপী তসবি”—যার মাধ্যমে মালিক আল্লাহর গুণগান করে ধারাবাহিকভাবে জিকির করতে পারতেন।

ভারতের আরও কিছু তাবিজ জামার পেছনে লেখা থাকত কুরআনের আয়াত, যেখানে আল্লাহকে ডাকা হয়েছে “সর্বশ্রেষ্ঠ রক্ষক এবং পরম দয়ালুদের মধ্যেও সর্বাধিক দয়ালু” হিসেবে।




ইসলামি চিকিৎসকের প্লেগবিরোধী নকশা ব্যবহারের ইতিহাস

মধ্যযুগীয় ইসলামি সমাজে আরও কিছু সাধারণ PPE ছিল যেমন: ক্ষুদ্র তাবিজযুক্ত স্ক্রল—যা ছিল সস্তা ছাপানো কাগজে কুরআনের আয়াত লেখা ছোট্ট রোল এবং তাবিজ নকশা, যেমন সোলাইমানের ছয় কোণবিশিষ্ট সীলমোহর।

এই কুরআনিক স্ক্রল এবং তাবিজগুলো গলায় পরা হতো অথবা দেহের সঙ্গে সংযুক্ত করে রাখা হতো, যা থেকে বোঝা যায়—এই বস্তুগুলোর সরাসরি শারীরিক সংস্পর্শেই এর ভেতরের বরকত বা "বারাকাহ" (আরবি শব্দে জীবনশক্তি) মুক্ত হতো বলে বিশ্বাস করা হতো।

আজকের মহামারির প্রেক্ষাপটে সবচেয়ে প্রাসঙ্গিক ছিল ইসলামি প্লেগবিরোধী তাবিজ, যাকে বলা হতো “নামের বাগান” বা আরবিতে “জান্নাত আল-আস্মা”। এটি গোটা ইসলামি বিশ্বে ব্যবহৃত হতো, তবে বিশেষভাবে জনপ্রিয় ছিল উসমানীয় সাম্রাজ্যে।

“নামের বাগান” ছিল একটি বৃত্তাকার তাবিজ নকশা, যার মধ্যে থাকত ১৯টি অক্ষর ও সংখ্যা, কুরআনের আয়াত, এবং আল্লাহর কয়েকটি নাম। কিছু আঁকা ছবিতে দেখা যায় নকশাগুলোতে ইচ্ছাকৃত দাগ বা ঝাপসা অংশ—যা ইঙ্গিত করে যে মানুষ এই নকশাগুলো চুমু খেত, ঘষত বা ওষুধ তৈরি করত—যাতে করে এর বারাকাহ সক্রিয় হয়।




ইসলামি চিকিৎসক ও পানির মাধ্যমে আরোগ্য সাধন

ইসলামি ঐতিহ্যে পানিকে অত্যন্ত পবিত্র ও আরোগ্যদায়ক মনে করা হয়। এটি পরিচ্ছন্নতা ও আল্লাহর নৈকট্যের প্রতীক, এবং কুরআনে বলা হয়েছে—“প্রত্যেক জীবন্ত বস্তুই পানি থেকে সৃষ্টি”।

৭ম শতাব্দী থেকে, মক্কায় পবিত্র জমজম কূপের পানি মুসলিমরা আরোগ্য লাভের আশায় পান করে আসছেন। এখনও হাজিরা সেই কূপের পানি বোতলে ভরে বাড়ি নিয়ে যান এবং কেউ সরাসরি পান করেন, কেউ আবার অন্য তরলে মিশিয়ে ওষুধরূপে ব্যবহার করেন।

আজকের দিনে অনলাইনে আপনি প্লাস্টিক বোতলে জমজম পানি কিনতে পারেন, যার দাম প্রায় ১৪ ডলার। কিন্তু পূর্বের যুগে এই পানি সিরামিক কলস বা পাত্রে করে আনা হতো, যা ব্যবহার হতো খাওয়ার আগে বা নামাজের আগে ধর্মীয় শুদ্ধিকরণের জন্য।

এছাড়াও, সাধারণ পানি বিশেষ ধাতব পাত্রে ঢেলে, তার ওপর দোয়া পড়ে, তাবিজি নকশায় লেখা শব্দ ও ছবি দিয়ে আরোগ্যদায়ক পানি তৈরি করতেন লোকজ চিকিৎসকরা। অনেক সময় এসব পাত্রে উদ্দেশ্যও লেখা থাকত, ফলে ইতিহাসবিদরা জানতে পেরেছেন—এই পানি ব্যবহৃত হতো বিষক্রিয়া, কুকুর কামড়, পেটের সমস্যা, হৃদয়ের ব্যথা (হৃদয়ভঙ্গ), এমনকি প্লেগ নিরাময়ে।

শতাব্দীর পর শতাব্দী ধরে মুসলিম প্রসূতি নারীদের এই পানি দিয়ে ঠান্ডা করা হতো, যাতে যন্ত্রণায় কিছুটা আরাম মেলে।




আজকালকার ইসলামি আরোগ্যচর্চা

আজকের দিনে আধুনিক চিকিৎসাবিজ্ঞান ও প্রযুক্তির অগ্রগতির কারণে প্রচলিত ইসলামি প্রতিরক্ষামূলক ও আরোগ্য শিল্প অনেকটাই পিছিয়ে পড়েছে।

তবুও, তাবিজ, হোমিওপ্যাথিক চিকিৎসা ও লোকজ পদ্ধতি ইসলামি সমাজে এখনও বিদ্যমান—যেমনটা পৃথিবীর অনেক ধর্মীয় সংস্কৃতিতেই দেখা যায়। এখনো অনেক মুসলমান জাদুবলে অভিষিক্ত ধাতব পাত্র (তাবিজি বাটি) বাড়িতে ব্যবহার করেন; এগুলো eBay-তে বিক্রিও হয়।

প্রার্থনা বা ধ্যানের মতো—যার কিছুটা প্লেসেবো প্রভাব থাকলেও—মানসিক ও শারীরিক স্বস্তি এনে দেয়, ধর্মীয় সংকটময় সময়ে বহু মুসলমানই হাজার বছর ধরে এই ধরনের ধর্মীয় বস্তু থেকে শান্তি ও শক্তি খুঁজে পেয়েছেন।

শিল্পের দৃষ্টিকোণ থেকেও, এসব বস্তু মানবজাতির সৃষ্টিশীলতা ও সুস্থতার প্রতি গভীর আকাঙ্ক্ষার প্রতিচ্ছবি। আজকের মহামারির যুগেও এ ধারা বিদ্যমান।


==========
অনুবাদ
মূলঃ ক্রিস্টিনা গ্রুবার
===============



মন্তব্য ৬ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (৬) মন্তব্য লিখুন

১| ০৯ ই মে, ২০২৫ দুপুর ২:০৮

নতুন বলেছেন: কিছু মানুষ আছে যারা খুব সহজেই যে কোন জিনিস বিশ্বাস করে। তারাই মুলত ধর্মে বিশ্বাসী বেশি হয়। তাদের সাথেও প্রতারনা বেশি হয়।

যারা যৌক্তিক ভাবনা করে তারা হোমিওপ‌্যায়ী বা পানিপড়ার মতন প্রতারনায় ধরা খাবেনা। তারা আধুনিক বিজ্ঞানের কাছে যাবে।

০৯ ই মে, ২০২৫ বিকাল ৪:১৭

সত্যপথিক শাইয়্যান বলেছেন:




এই ধরণের মেডিসিনের কদর সব জায়গাতেই আছে।

ধন্যবাদ।

০৯ ই মে, ২০২৫ বিকাল ৪:২০

সত্যপথিক শাইয়্যান বলেছেন:




এটা খারাপ কিচু নয়।

২| ০৯ ই মে, ২০২৫ বিকাল ৩:০৬

রিফাত হোসেন বলেছেন: বিশ্বাসে মিলায় বস্তু তর্কে বহুদূর।

০৯ ই মে, ২০২৫ বিকাল ৪:১৯

সত্যপথিক শাইয়্যান বলেছেন:




আমরা যারা হজ্ব/উমরা করেছি, তাঁরা জমজমের পানিকে শিফা হিসেবে ধরে নিয়ে পান করি।

ধন্যবাদ।

০৯ ই মে, ২০২৫ বিকাল ৪:২১

সত্যপথিক শাইয়্যান বলেছেন:




আমাদের বাপ-দাদারা এলোপ্যাথি ঔষধ কম খেয়েছেন।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.