![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
পথ হারানো পথিকের জন্য পথের মোড়ে কেউ না কেউ আছে অপেক্ষমাণ পথ দেখাবে বলে ।
সেই ছোটবেলা থেকেই আমরা বইপত্রে পড়ে আসছি – মানুষ সামাজিক জীব! এর কারণটি হলো মানুষ একা বসবাস করতে পারে না। মানুষ নিয়েই সমাজ গঠিত আর সমাজেই বসবাস করে মানুষ। সমাজ ও মানুষ একে অপরের সাথে ওতপ্রোতভাবে জড়িয়ে আছে। মানুষ ছাড়া যেমন সমাজ গঠন অসম্ভব তেমনি সমাজ ছাড়া মানুষ অচল। মানুষ সমাজের অন্যতম উপাদান, তার পরও কিছু মানুষ সমাজের চক্ষুশূল হিসেবে বিবেচিত হয়। অর্থাত্, কিছু মানুষ সমাজের অংশ হয়েও যেন সমাজের কাছে গ্রহণযোগ্যতা পায় না। অথচ এই মানুষগুলোর কোনো দোষ নেই! তাহলে কেন এই একচোখা আচরণ? আসুন জেনে নিই এমন কিছু মানুষ সম্পর্কে, যারা সমাজে বাস করেও সমাজের চক্ষুশূল।
শিক্ষিত কিন্তু বেকার পুরুষ :
বেকার সমস্যা আমাদের দেশের অন্যতম জাতীয় সমস্যা। অসংখ্য ছেলেমেয়ে উচ্চ শিক্ষিত হয়েও চাকরির জন্য দ্বারে দ্বারে ঘুরে বেড়াচ্ছে, কারণ চাহিদা অনুযায়ী কর্মসংস্থানের সুযোগ নেই। আবার সবার পক্ষে তো ব্যবসা করাও সম্ভব নয়। ফলে বেকার সমস্যা দুরীভূতও হচ্ছে না। আমাদের দেশে সাধারণত পড়াশোনা শেষ হবার আগেই একজন মেয়ের বিয়ে হয়ে যায়। তাই বেকার নারীর চেয়ে বেকার পুরুষই লোকজনের চোখে খটকা দেয় বেশি। চাকরি না পাওয়াটা তাই দোষের কিছু না হলেও তাকে উঠতে-বসতে শুনতে হয় পরিবার, আত্মীয় ও সমাজের কটু কথা, সইতে হয় নানান গঞ্জনা। বেকার পুরুষরা বিবেচিত হতে থাকে সমাজের চক্ষুশূর হিসেবে।
তথাকথিত “অসুন্দর” নারী :
সৃষ্টিকর্তা একেকজন মানুষকে একেকভাবে সৃষ্টি করেছেন, কারো সাথে কারো মিল নেই। মানুষের নিজের চেহারার পেছনে কোনো হাত নেই। তাই কেউ যদি দেখতে সুন্দর না হয়, তাহলে তাকে দোষ দেয়াটা মোটেও যুক্তিসংগত নয়। অথচ আমাদের সমাজে তথাকথিত অসুন্দর নারীদের সাথে এমন আচরণ করা হয়, যেন চেহারা খারাপ হওয়াটা তাদের দোষ! এমনকি এ কারণে তাদের বিয়েতেও হয় অনেক ধরনের সমস্যা হয়। যেমন সহজে বিয়ে হতে চায় না বা বিয়ের সময়ে প্রচুর যৌতুক দিতে হয়।
রঙটি যাহার কালো :
চেহারার মতো গায়ের রঙের জন্যও কোনো মানুষকে দায়ী করা যায় না। মূলত গায়ের রঙ নির্ভর করে ভৌগলিক অবস্থান ও বংশগতির ওপর। তার পরেও যাদের গাত্রবর্ণ কালো, তাদের দিকে সমাজের লোকজন তাচ্ছিল্যের দৃষ্টিতে তাকায়। একজন মানুষ যত গুণীই হোক না কেন, শুধুমাত্র গায়ের রঙ কালো হলেই সমাজ তাকে অবহেলা করে। এই গায়ের রঙের জন্যই আটকে থাকে অনেকের বিয়ে। এমনকি অনেক কাজের ক্ষেত্রেও গায়ের রঙটা দেখা হয়। বিশেষ করে শোবিজে।
কম উচ্চতা যার :
কম উচ্চতা বা খাটো মানুষরাও যেন সমাজের চক্ষুশূল। সবাই বামন বলে ব্যঙ্গ করতে থাকে। বিশেষ করে খাটো পুরুষদের সমস্যা হয়ে থাকে বেশি। কারণ নারীরা খাটো পুরুষদের সঙ্গী হিসেবে পছন্দ করে না। কম উচ্চতার কারণে তারা অনেক চাকরি থেকেও বঞ্চিত হয়। যেমন প্রতিরক্ষা বাহিনীতে কম উচ্চতার লোকদের নেয়া হয় না।
টাক মাথার দুঃখী মানুষ :
টাক মাথার মানুষরা স্বভাবতই দুঃখী হয়ে থাকে। কারণ টাক মাথা কেউ পছন্দ করে না। চুল মানুষের সৌন্দর্যের একটি বিশেষ অলংকার। এই অলংকারটি না থাকলে সৌন্দর্য স্বাভাবিক ভাবেই কমে যায়। মেয়েদের তুলনায় ছেলেদের টাক পড়ার প্রবণতা থাকে বেশি। তাই তাদের এ ব্যাপারে সমস্যাও হয় বেশি। টাক মাথার পুরুষদের নারীরা পছন্দ করে না। তাদের হতে হয় উপহাসের পাত্র। বিশেষ করে যাদের খুব কম বয়সেই টাক পড়ে যায় তারা পড়ে যান বিপাকে।
কম বয়সী বিধবা :
মানুষের জন্মটা যেমন তার হাতে নেই, তেমনি মৃত্যুটাও নেই। তাই অকালে কারো মৃত্যুটা অন্য কারো দোষ হতে পারে না। অথচ আমাদের সমাজে কোনো মেয়ে যদি কম বয়সেই বিধবা হয়, তাহলে তার স্বামী মারা যাবার জন্য দায়ী করা হয় তাকেই! তাকে গণ্য করা হয় অপয়া বা কুলক্ষণা হিসেবে।
নিঃসন্তান পুরুষ ও নারী :
একটি পরিবার তখনই পূর্ণতা পায় যখন তাতে শিশুর আগমন ঘটে। নারী বা পুরুষ, কেউই নিঃসন্তান থাকতে চায় না। কিন্তু যাদের শারীরিক কোনো কারণে সন্তান হয় না,
তাদের সমাজ করে চরমতম অবহেলা। পুরুষদের আটকুঁড়ে আর নারীদের বাঁজা বলে গঞ্জনা দেয় সবাই। প্রতিনিয়ত তাদের অপদস্থ হতে হয় সমাজের কাছে। বিশেষ করে নারীদের ভুগতে হয় বেশি।
গড়ন যাদের মোটা :
মোটা নারী ও পুরুষ ছোটবেলা থেকেই উপহাসের শিকার হতে হতে বড় হয়। মোটকু, ভোটকা, ভটকু, জাম্বু – এগুলো যেন তাদের অতি সাধারণ সম্বোধন হয়ে দাঁড়ায়। সব জায়গাতেই মোটা মানুষদের রাখা হয় পেছনে, তাদের অবজ্ঞা করা হয় সব কিছুতেই। অনবরত ব্যঙ্গের মুখোমুখি হতে হতে মোটা মানুষরা ভোগ করে মানসিক চাপ। যেন মোটা হওয়াটাই সবচেয়ে বড় দোষ!
মেয়েলি স্বভাবের পুরুষ :
প্রত্যেক মানুষের মধ্যেই মা-বাবা দুজনেরই জিন থাকে। এই জিনের কারণেই নারী-পুরুষ লিঙ্গ নির্ধারিত হয়। তবে অনেক নারীর মধ্যেই পুরুষালি ভাব যেমন বেশি থাকে, তেমনি অনেক পুরুষের মধ্যেই থাকে অতিরিক্ত মেয়েলি স্বভাব। এমন পুরুষদের অনেকের ভীড়েই চট করে চোখে পড়ে। ফলে তাদের ভোগান্তিটাও হয় বেশি। পরিবার থেকে শুরু করে আত্মীয়, প্রতিবেশী, বন্ধুবান্ধব, সহকর্মী সকলেই এই মেয়েলি স্বভাবের পুরুষদের নিয়ে উপহাস করে থাকে। তাদেরকে শুনতে নানান কটু কথা। এমনকি অনেক কুরুচিপূর্ণ পুরুষ তাদের কুপ্রস্তাবও দেয়।
বেশি বয়সী অবিবাহিত নারী :
আমাদের সমাজে খুব কম বয়সেই মেয়েদের বিয়ে হয়ে যায়। তাই যাদের বয়স একটু বেশি হয়ে গেলেও বিয়ে হয় না, সেসব নারীর হয়ে ওঠে সমাজের চক্ষুশূল। তাদের নিয়ে সমাজে ছড়িয়ে যায় নানান অকথা-কুকথা। অতি আপনজনরাও ছড়াতে থাকে তাদের নামে কুত্সা। এমনকি চরিত্র নিয়েও করা হয় বিভিন্ন সন্দেহ। এমন নারীরা পরিবারেই সবচেয়ে বেশি অবহেলার শিকার হন। আপনজনরাই তাদের বেশি অবজ্ঞা করে।
©somewhere in net ltd.