![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
শামিম ইশতিয়াক জন্ম ৭ জুলাই, জাতীয় কবি কাজি নজরুল ইসলামের শৈশবের স্মৃতি বিজরিত ময়মনসিংহের ত্রিশালে। অর্থনীতি তে স্নাতক ও স্নাতকোত্তর শেষ করেন আনন্দ মোহন কলেজ থেকে, ইসলামি আরবি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে কামিল মাস্টার্স ডিগ্রি অর্জন করেন, এছাড়াও আইন শিক্ষায় এল এল বি শেষ করেন। ছাত্রজীবন থেকেই লেখালেখি শুরু, বিভিন্ন পত্রিকায় প্রতিনিধি হিসেবে কাজ শুরু করেন, পাশাপাশি দৈনিক, সাপ্তাহিক মাসিক পত্রিকাগুলোতে লেখালেখি শুরু করেন, সমসাময়িক বিষয় নিয়ে কবিতা, গল্প, রম্য রচনা, কলাম, ভ্রমণকাহিনী লিখেছেন বিভিন্ন পুস্তক, ম্যাগাজিন, পত্রিকায়, রয়েছে কবিতা আবৃত্তির কালেকশন। ভ্রমণকাহিনী লেখার পাশাপাশি দেশ ভ্রমণেও তিনি পরিচিত মুখ, পরিচালনা করেন ভ্রমণ এজেন্সি। তিনি জাতীয় দৈনিকে সাংবাদিকতা শুরু করেন পাশাপাশি তিনি তিনি সম্পাদনা করেছেন কয়েকটি সাপ্তাহিক পত্রিকা, সাহিত্য পত্রিকা ও অনলাইন নিউজ পোর্টাল । সামাজিক, সেচ্ছাসেবী ও সাহিত্য সংগঠনের তিনি দায়িত্বশীল ও নিয়মিত সদস্য হিসেবে কাজ করে এসেছেন। সাহিত্য চর্চা ও সামাজিক কর্মকাণ্ডের জন্য তিনি সম্মাননা পদক, পুরস্কার লাভ করেছেন।
"বিনুদি"
-শামিম ইশতিয়াক
ছাদের একপাশটায় ছিল সাদা গোপালের দুটি গাছ, পাশেই নাম না জানা এক লতানো পাতার সারি,
অন্যপাশে অর্ধমৃত ডালিম বৃক্ষ ,
বেচে আছে জীবন মৃত্যুর সন্ধিক্ষণে, প্রতিদিন বিকাল হলে এক মগ জল ছিটাতাম, প্রাণের আশায়, চিরসবুজের আশায়, অর্ধমৃত দেহে ঝুলন্ত ফলের আশায়।
ছাদের উপরের আকাশটায় রোজ সাদা মেঘের কুন্ডলী জমতো, কফির মগে চুমুক দিয়ে রোজ ডুবে যেতাম কুন্ডলীর মাঝে, খুজতাম অদৃশ্য সুখ, গায়েপরে ভাব জমাতাম মেঘেদের সাথে,
কিন্তু লাভ হতোনা, মেঘেরা বড্ড জিদ্দি, আপন করে নিবেই না তখন মন খারাপ করে নিচে তাকাতাম,
কংক্রিট জুড়ে জমতো শীতল শ্যাওলা, রোজ ভাবতাম শ্যাওলা গুলো পরিষ্কার করব, উপড়ে ফেলবো সুখের মাঝে বেআইনি দখল নেয়া দুঃখ গুলোকে,
কিন্তু তা আর হলো কই?
দখলদারীরা যে বড্ড বেহায়া।
ছাদে আমি আসি লোভ নিয়ে, বিস্মিত আকাশ সোনালী রোদ এসব দেখার লোভ নিয়ে,
বিনু দিদি বলতো আমি নাকি বড্ড লোভী, আমার নাকি চামড়ার লোভ, খোলা চুলের ঘ্রানের লোভ আর পুকুর পাড়ে বিনু দিদিকে একা পাওয়ার লোভ,
আমি শুনে হাসতাম, বোকার মত হাসতাম, বিনু দি তখন বলতো, দেখিস একদিন তুই অনেক কাদবি,
বিনুদির সেদিনের কথা সত্য হয়নি, আমি কাদিনি, এইতো গেলো সপ্তাহ বিনুদি এসেছিলো এক ফুটফুটে বাচ্চা নিয়ে, আমি আন্তাজ করতে পারিনি ছেলে নাকি মেয়ে তবে আমি ঠাট্টা করে বলেছিলাম, বিনুদি দেখো দেখো চোখটা আমার মত হয়েছে,
বিনুদি কিছু বলেনি, বুকের জমাট মাংসপিন্ডের উঠানামায় বুঝেছিলাম এই ছাড়লো এক দীর্ঘশ্বাস,
বিনুদির চোখ ভেজে গেছিলো নোনা জলে, অন্যপাশে তাকিয়ে শুধু বলেছিল, এবার একটা বিয়ে কর নীলাভ্র।
আমার ছাদে এখন দুটি বাতাবী লেবুর গাছ, আমি রোজপ্রাতে লেবু ফুলের দিকে তাকিয়ে থাকি, বিনুদি বাতাবী লেবু ফুল বড্ড ভালোবাসতো, এগুলা নাকি সুভাস ছড়ায় এ শহরজুড়ে, তারপর নাকি সে সুভাস জমা করা যায় কাচের বোয়ামে।
একদিন অবেলায় কি যে হলো
গুড়ুগুড়ু বিষাদে আকাশ ডেকে গেল, সময় স্থির হয়ে গেলো,
আমার ছাদে নামলো উত্তাল ঝড়,
চুরমার হয়ে গেলো সাজানো বাগান,
বিনুদি সেদিন সেজেছিলা লাল বেনারসিতে, পিশির মুখে শুনেছিলাম, বিনুদি নাকি ঝড়ের ভয়ে অনেক কেদেছিল।
এখন আর বাগান নেই, মেঘেরা নেই, নেই শ্যাওলারা, তবে আছে বাতাবী লেবুর ঘ্রাণ, আর বিনুদির জন্য উতলা প্রাণ।
শামিম ইশতিয়াক
আনন্দ মোহন কলেজ, ময়মনসিংহ ।
©somewhere in net ltd.