নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

এস এম মাসুদ ভুবন।

শামীম মোহাম্মাদ মাসুদ

আমি খুব সাধারন একটা ছেলে বেড়ে উঠা গ্রামে, আর ভালোবাসি বাংলাদেশ। পড়তে খুব পছন্দ করি, মাঝে মাঝে লিখারও চেষ্টা করি।

শামীম মোহাম্মাদ মাসুদ › বিস্তারিত পোস্টঃ

ব্যাক্তিগত ডায়রি থেকে

১৯ শে সেপ্টেম্বর, ২০১৭ রাত ১০:৩৯

আমাদের বাসায় প্রথম যে টেলিভিশন কেনা হয় তা ছিলো নিপ্পন কোম্পানির সাদাকালো ১৪" টিভি। ফেনীর ট্রাংক রোডের রেইনবো ইলেক্ট্রনিক্স থেকে আব্বু যেদিন টিভিটি বাসায় আনেন সেদিন আমাদের তিন ভাই বোনের আনন্দের সীমা ছিলোনা। কিন্তু মধ্যবিত্ত সরকারী চাকুরিজীবি বাবার পক্ষে সেই সময় টিভি কেনা এত সহজ ছিলোনা। আমাদের ছোট্ট গ্রামটিতে সেই সময় টিভি ছিলো হাতেগোনা কয়েক পরিবারে। আমরা তিন ভাই বোন তখন বড় হচ্ছিলাম। বাইরে যাওয়া শিখেছি। আড্ডা দেয়া, ঘোরাঘুরি , টিভি দেখা। তবে শুক্রবার বাংলা সিনেমা দেখার একটা ট্রেন্ড সেসময় ছিলো। যার কারনে যেসব ঘরে টিভি ছিলো সেখানে যাওয়া শুরু করেছিলাম। মাঝেমধ্যে ঘরের পাশের দোকানেও যাওয়া হতো। সেসময় শুক্রবার ছিলো একটা ঈদ। কঠিন আনন্দ আর নিখাদ স্বাধীনতা থাকতো এই দিনে। আমরা শুক্রবার বিকেলে উড়তাম। যেমনটা একটা পাখি উড়ে, এ ঘরে ও ঘরে করে সিনেমা দেখতাম।

একদিন বাবার কাছে বায়না ধরলাম টিভির জন্য। আমাদেরও একটি টিভি কেনা চাই। আমরা এখন বড় হচ্ছি মানুষের বাড়ি গিয়ে সিনেমা দেখতে আর ভালো লাগেনা। তবে তখন অল্প স্বল্প বুঝতেও পারতাম এই দাবি এত সহজে আদায়ের নয়। মধ্যবিত্ত পরিবারের সন্তানেরা বড় হতে হতে পারিবারিক হিসাব নিকাশ আর সংগ্রাম শিখে যায়। যা বাবা মায়ের জন্য বিব্রতকর হয়। আব্বু আম্মু নেমে গেলেন টিভি কেনার হিসাব নিকাশে। আমাদের সেদিকে কোন খেয়াল নেই। আমরা উড়েই যাচ্ছিলাম। এ বাড়ি ও বাড়ি করে টিভি দেখার মাত্রাটা বাড়ছিলোই...

একদিন আম্মুর কাছে খবর পেলাম আমাদেরও টিভি কেনা হবে। মধ্যবিত্ত পরিবারের মায়েরা হলো সুইস ব্যাংক। আর বাবারা শুন্য কোটা।এসব মায়েরা কয়েক মাস পরপর কিভাবে কিভাবে যেন হাত খরচের টাকা বাঁচিয়ে ভালো টাকা জমিয়ে ফেলেন। এজন্য দেখা যায় পরিবারের সকল সম্পদে মায়ের অবদান থাকে বেশি । এখানেও ব্যাতিক্রম নয়। আম্মু তার জমানো টাকা আব্বুকে দিয়ে বলেছেন, বাকি টাকা ম্যানেজ করে যাতে আগামী সপ্তাহেই টিভি কেনা হয়। আমাদের অত্যাচার আর ওনার ভালো লাগছে না।

আমাদের তিন ভাইবোনদের যেন এই একটি সপ্তাহ কাটছিলোই না। ছোট আমরা সে সপ্তাহে যাকেই সামনে পেয়েছি তাকেই এই সংবাদ দিয়েছি যে আমাদের আগামী সপ্তাহে টিভি কেনা হবে।

অবশেষে সেই শুক্রবার এলো যেদিন আমরা আমাদের টিভিতে বিকালে সিনেমা দেখেছিলাম। ঘরের পিছনে লম্বা বাঁশের ডগায় আটকানো এন্টিনা নেড়েচেড়ে বিটিভি ক্লিয়ার করা হলো। আমাদের ঘরেও তখন অন্য অনেক ছেলেমেয়ে এসেছে। সবাই অপেক্ষা করছে। টিভি উপস্থাপিকা ঘোষনা করলেন এখনি শুরু হবে আজকের বাংলা সিনেমা। আমি আশেপাশে তাকিয়ে দেখলাম কারো কোন দেখতে অসুবিধা হচ্ছে কিনা। দরজার সামনে দাঁড়ানো আম্মুর চোখগুলা দেখে নিলাম। একজোড়া চোখ তখন সন্তানের জন্য কিছু করতে পারার পরম তৃপ্তিতে ছলছল করছিলো। আহ জীবন, আহ মধ্যবিত্ত জীবন।

(ব্যাক্তিগত ডায়রি থেকে/শামীম মোহাম্মদ মাসুদ)

মন্তব্য ৫ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (৫) মন্তব্য লিখুন

১| ১৯ শে সেপ্টেম্বর, ২০১৭ রাত ১০:৪৮

প্রশ্নবোধক (?) বলেছেন: আমার মা বারান্দার খুটির ছায়া কোনদিকে গেলে কয়টা বাজে বলে দিতে পারতেন। সেভাবেই হিসেব করে স্কুলে পাঠাতেন। সমস্যা বাধতো বর্ষাকালে আকাশ মেঘলা থাকলে ছায়া দেখা যায়না । ফলাফল স্কুলে যেতে দেরি হতো কিংবা অতি পূর্বেই স্কুলে উপস্থিত হতাম। আহারে সাধের ঘড়ি (!) ক্লাস নাইনে উঠার আগ পর্যন্ত অতি দুরের বস্তু ছিল।

২| ১৯ শে সেপ্টেম্বর, ২০১৭ রাত ১০:৪৯

সোহাগ সালেহ বলেছেন: আহা মধ্যবিত্ত জীবন! সুখ দুখের গাঁথামালা। অদ্ভুত কষ্টের, অদ্ভুত সুন্দর!

৩| ২০ শে সেপ্টেম্বর, ২০১৭ রাত ১২:২৫

হাসান কালবৈশাখী বলেছেন:
সুন্দর

৪| ২০ শে সেপ্টেম্বর, ২০১৭ সকাল ৯:২৪

মোস্তফা সোহেল বলেছেন: আপনার স্মৃতিচারন ভাল লেগেছে।

৫| ২০ শে সেপ্টেম্বর, ২০১৭ বিকাল ৫:৫৮

অত্র এলাকার বড় ভাই বলেছেন: আমাদের নিপ্পন টিভিটা channel changer টা ঠিক করতে মেকারের কাছে দিয়েছিলাম, মেকার বেটায় যে দোকানে তালা দিয়েছে- আর খুলেনাই। এখনো বাড়ি গেলে টিভিটার কথা মনে হয়।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.