![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
আমি খুব সাধারন একটা ছেলে বেড়ে উঠা গ্রামে, আর ভালোবাসি বাংলাদেশ। পড়তে খুব পছন্দ করি, মাঝে মাঝে লিখারও চেষ্টা করি।
বিগত পাঁচ-ছয় মাস যাবত ফকির আবদুল হাই সাহেবকে মাথা থেকে সরাতে পারছি না। আমি নিজে থেকেই বিড়বিড় করে ওনার সাথে কথা বলা শুরু করেছি। দিন রাত যখনই অবসরে থাকি ফকির সাহেবের চিন্তা মাথায় ঘুরপাক খায়। লোকটার প্রতি এক আত্মার টান অনুভব করছি। গত একমাস যাবত প্রশ্ন করছি, আপনি এখন কোথায়? কবে আসবেন? উনি কোন উত্তর দিচ্ছেন না। আসলে একটি আত্মা যদি আরেকটি আত্মার সাথে ঠিকঠাক যোগাযোগ করতে না পারে তাহলে উত্তর পাওয়া যায়না। কিন্তু আমি জানি ফকির সাহেব আমার সামনে আসবেনই। হয়তো আরো বছর দেড়েক অপেক্ষা করতে হবে। আমাদের অনেক কথা বলা বাকি আছে। আমরা আসলে সবাই কারো না কারো জন্য অপেক্ষা করি।
এদিকে অজান্তার ভীষণ মন খারাপ। আমি নাকি ইদানীং তাকে ভুলে যাচ্ছি। মাথার মধ্যে নতুন কোন ভূত ঢুকেছে। আমি হাসতে হাসতে প্রশ্ন করি;
- জামাই পেয়ে নিশ্চয়ই স্বর্গে গমন করেছো? আমাকে এখন নরকের বাসিন্দা লাগে।
সে একটু বিরক্ত হয়ে উত্তর দেয়,
- জামাই নিয়ে কটুক্তি কইরো না। আমার জামাই ফেরেশতার মত ভালো মানুষ।
আমি খিলখিল করে হাসতে হাসতে বলি,
- প্রত্যেক প্রাক্তন প্রেমিকাই তার জামাইকে ফেরেশতা হিসেবে পরিচয় করিয়ে দেয়।
- সে আসলেই একজন ভালো মানুষ। পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ পড়ে, সামনে হজ্ব করবে। আমাকে খুবই ভালোবাসে, যত্ন করে। আমিও তাকে পছন্দ করে ফেলেছি।
অজান্তা অন্যদিকে তাকিয়ে কথাগুলো বলে গেলো। আমি মাথা নীচু করে রইলাম। কিছু বলার সাধ্য যে আমার নেই। অজান্তার এরকম সুখের সংসার তো আমিই চেয়েছি। আমি নিজ হাতে আমাদের যত্নে গড়া ভালোবাসার সলিল সমাধি করেছি, শুধুমাত্র তার সুখের জন্যই। সেই অজান্তা যদি আজকে সুখে থাকে, স্বামীকে ভালোবাসে তাহলে তো কিছু বলার নেই আমার।
অজান্তার সাথে যখন আমার ব্রেকাপ হয় তখন তার বাবা তার বিয়ের জন্য উঠেপড়ে লাগে। আমাদের আসলে ঠিকঠাক আনুষ্ঠানিক ব্রেকাপ হয়েছে তাও বলা যাবেনা। নিয়তির এক পাষণ্ড খেলায় আমরা বিচ্ছিন্ন হয়ে গেছি।
যাই হোক, ব্রেকাপের কিছুমাস পরেই তার বিবাহ হয়। পাত্র আইটি ইঞ্জিনিয়ার, বুয়েট থেকে পড়াশোনা করে বর্তমানে আমেরিকায় চাকরি করছে। বিরাট অবস্থা সম্পন্ন পরিবার। আমেরিকার জর্জিয়া অঙ্গরাজ্যের সাভানা শহরে থাকে। এই শহরটি আমেরিকার সবচেয়ে সুন্দর শহরগুলোর মধ্যে অন্যতম। খুবই ঐতিহ্যবাহী আর রোমান্টিক শহর, মানুষগুলো মিশুক আর বন্ধুপ্রিয়। সাভানার সবচেয়ে বিখ্যাত পার্কের নাম ফোরসাইট পার্ক। শহরের অন্যতম পরিচিত এবং সুন্দর স্থান—বিশাল সবুজ মাঠ, ঐতিহাসিক ফোয়ারা, আর গাছপালার ছায়া মিলে এক শীতল, শান্ত পরিবেশ তৈরি করে। বিয়ের ছয়মাস পরে অজান্তাকে তার জামাই আমেরিকায় নিয়ে যায়। এরপর এখনো আর দেশে আসেনি। দুজনেই সেখানে সুখের সংসার করছে।
দুনিয়াতে দুইটা পেশা আমার খুব অপছন্দের, এক নম্বরে আর্মি অফিসার দুইয়ে মেরিন ইঞ্জিনিয়ার। অজান্তার কপাল ভালো তার জামাই আমার অপছন্দের পেশায় নেই। আইটি পেশার লোকজন কিছুটা রোবটিক হয়। কিন্তু অজান্তার জামাই নাকি বিরাট রোমান্টিক মানুষ। শুনে ভালো লেগেছে, রোমান্টিক বউ রোমান্টিক জামাই, বিজ্ঞানের সূত্র মিলেনা। দুই রোমান্টিক মানুষ একসাথে থাকতে পারেনা, এদের রোমান্টিকতা তখন বিষাক্ত আকার ধারন করে, মতের অমিল বেশি হয়। দুইজন ভালো রান্না করা বাবুর্চি কখনো একে অপরের রান্নায় সন্তুষ্ট হতে পারেনা কারন উভয়ের ধারণা এর চেয়ে ভালো রান্না সম্ভব, ব্যপারটি অনেকটা এরকমই।
সকালে মগবাজার থেকে হেঁটে রওয়ানা করলাম বনানী যাবো। ফকির সাহেবের বাসার দিকে একটু ঢুঁ মেরে আসা দরকার। গতকাল রাতে কেউ একজন আমাকে ঘুমের ঘোরে বলেছিলো আমাকে দেখতে ইচ্ছে করছে। আমি ঠিক মনে করতে পারছিলাম না লোকটা কে? তাই ভাবলাম ফকির সাহেব এলো কিনা একটু ঘুরে আসি। আজকে আমার হাঁটা দিবস, নো বাস নো রিক্সা। ইদানীং রাস্তায় একা হাঁটতে পারিনা, সাথে অজান্তাও থাকে। কিছুদূর গেলেই মেয়েটা আমার সাথে হাঁটে। সারাটা পথ টুনটুন করে কথা বলে।
আজান্তার ছিলো তারের মত গলা। ঝনঝন করে কথা বের হতো। ঝটপট স্নিগ্ধ সুন্দর, শ্রুতিমধুর আওয়াজ। মনে চায় সারাক্ষণ কানের কাছে ধরে রাখি, বাজতেই থাকুক। প্রথম যেদিন ওর সাথে ফোনে কথা বলি আমি তার কথার প্রেমে পড়ে যাই। দিনটার কথা মনে আছে, সেদিন অজান্তার বড় বোনের বিবাহ হয়েছে। সারা বাড়ি আনন্দ আর হৈ হুল্লোড়ে মত্ত। অজান্তাও বিরাট খুশি। আমাকে ফোন দিয়েই একটা চটপটে স্নিগ্ধ গলা বলে চললো;
"হ্যালো আসসালামু আলাইকুম, আপনি মিঃ অমিত বলছেন? আমি অজান্তা, আপনার পরিচিত একজন। চিনতে পেরেছেন?"
আমি মন্ত্রমুগ্ধের মত অবাক হয়ে কথাগুলো শুনছিলাম। অজান্তাকে আমি চিনি, আমার এক বড় ভাইয়ের কাজিন। গ্রামে থাকে, আমরা পূর্ব থেকেই পরিচিত ছিলাম। কিন্তু এভাবে মাঝরাতে হুট করে ফোন দিবে সেটা ছিলো ভাবনার বাইরে। আমি কিছুটা ঘোরের মধ্যে জবাব দিলাম, "জ্বি, আমি অমিত। তোমাকে আমি চিনতে পেরেছি। তুমি ভালো আছো?......." এরপর অজান্তা কথা বলে গেলো। আমি অবাক হয়ে শুনছিলাম। যেন কয়েক শত কবিতার লক্ষ লক্ষ শব্দের ছন্দ আমাকে বিমোহিত করে গেলো। সেই কথোপকথন এক ঘন্টার উপরে গিয়ে ঠেকেছে। কিভাবে এই সময়টা পার হয়েছে আমি বা অজান্তা কেউই টের পাইনি। বিয়েবাড়ির সমস্ত চোখকে ফাঁকি দিয়ে অজান্তা সেদিন আমার সাথে অজানা এক বন্ধনে জড়িয়ে পড়েছিলো। আমাদের প্রেম মূলত সেদিনই শুরু হয়ে গিয়েছিলো। আমাদের আলাদা কোন প্রপোজ ডে ছিলোনা। আমরা কবে যে একে অপরের সাথে মিশে গেছি টের পাইনি। ওর মধ্যে এক অদ্ভুত মায়া ছিলো, সে মায়ায় আমাকে খুব শক্ত করে বেঁধে ফেলেছিলো দিনে দিনে।
"এই অমিত আস্তে হাঁটো, আমি পারছি না"
অজান্তার গলার আওয়াজ শুনে আমি পেছন ফিরে তাকালাম। সাতরাস্তা পার হচ্ছিলাম, সাতরাস্তার মোড় পার হলেই নাবিস্কো বিস্কিটের গন্ধ নাকে আসে। মজার ব্যপার হচ্ছে এই গন্ধটা আমার খুব পছন্দের। সবসময় এই রাস্তায় চলতেই আমি নাক ভরে ঘ্রাণটা নিই। বছর বছর মানুষ বদলে যায় কিন্তু এই গন্ধটা একই রকম আছে, কখনো বদলায়নি।
অজান্তা আমার হাত ধরে হাঁটছে। আজকে তাকে বেশ সুন্দরী লাগছে। জলপাই রঙের একটা থ্রীপিছ পরেছে। চুলগুলো ছেড়ে দেয়া, আধভেজা। কপালে টিপ পরেছে, সে সাধারণত টিপ পরেনা। ফর্সা মেয়েটা রোদে পুড়ে একদম লাল হয়ে গেছে। সমসময় মুখে হাসি লেগে থাকে, হাসলে ডান গালে টোল পড়ে। চোখগুলো ভাসা ভাসা, মাঝারি সাইজের। লম্বা উঁচা নাক, গোলগাল চেহারাটা অদ্ভুত এক মায়া দিয়ে ভরে থাকে। মনে হয় আমাকে আগলে রেখেছে অদ্ভুত সেই মায়ায়।
"অমিত, তোমার মনে আছে আমাদের প্রেম হওয়ার প্রথম দেখা হওয়ার দিনটি?" অজান্তা প্রশ্ন করে।
"হুম স্পষ্ট মনে আছে, দিনটি ছিলো শনিবার। তোমার কলেজ খোলা ছিলো, কলেজ ড্রেস পরেই আমার সাথে দেখা করেছিলে। আমি নতুন প্রেমের এক বিশাল রোমাঞ্চ নিয়ে ঢাকা থেকে শেরপুর গিয়ে দেখা করি"
অজান্তার বাড়ি শেরপুরের নালিতাবাড়ী উপজেলায়। আমার গ্রামের বাড়িও একই উপজেলায়, আমি ছোটবেলা থেকেই ঢাকায় থাকি। যার কারনে গ্রামের খুব বেশি কিছু চেনাজানা নেই। আমাদের আর অজান্তাদের পাশাপাশি গ্রাম, সীমান্তবর্তী এলাকা। ওপাশটি ভারতের মেঘালয় রাজ্যের গারো পাহাড়ের পাদদেশে অবস্থিত। আমাদের দুই গ্রামের পাশেই চারকোনা নদী। খুবই সুন্দর আর মনোমুগ্ধকর জায়গা। বর্ষাকালে পানি প্রবাহ বেশি থাকে, আর শুষ্ক মৌসুমে অনেক সময় শুকিয়ে যায়।
অজান্তা তখন শেরপুর সরকারি কলেজে অনার্স ফার্স্ট ইয়ারে পড়ে। আমি সকালে ঢাকা থেকে রওয়ানা করে ১১ টা নাগাদ পৌঁছে যাই। কলেজের গেটে সে আমার জন্য অপেক্ষায় থাকো। তার চোখে মুখে প্রচন্ড উচ্ছাস আর আনন্দধারা বয়ে যাচ্ছে। আমি হাতে করে চারটি গোলাপ নিয়ে গেছি। অজান্তা গোলাপগুলো হাতে নিয়েই ঘ্রাণ দেখলো। আমাকে জিজ্ঞেস করলো, চারটি গোলাপের রহস্য কি? আমি জবাব দিলাম, "ভালোবাসা চারটি অক্ষর দিয়ে লিখতে হয়, ইংরেজিতেও LOVE চারটি অক্ষর তাই আমার গোলাপের সংখ্যাও চার" অজান্তা হাসলো, সেই হাসির প্রতিটি মিলিসেকেন্ডে আমি ভেঙেচুরে যাচ্ছিলাম এক অজানা ভালোলাগায়।
আমরা কলেজের পাশেই একটি কফিশপে বসি। খুব ছোট কফিশপ, ভেতরে বসার জন্য আলাদা ব্যবস্থা আছে। কলেজের অনেক কাপলরা বসে আছে, আড্ডা দিচ্ছে। আমরাও একটি টেবিলে বসলাম। অজান্তা আমার সামনেই বসলো। নীল রঙের কলেজ এফ্রোন, গোলাপি ওড়না দিয়ে মাথা ঢাকা। বেশ জড়সড়ভাব নিয়ে নিজেকে গুটিয়ে বসেছে। প্রথম দেখা, তার উপর কলেজের পাশে দেখেই হয়তো একটু অস্বস্তিতে রয়েছে। আমি ওর কফিটা নেড়ে দিচ্ছিলাম, সে আমার দিকে সরাসরি তাকাতে লজ্জা পাচ্ছিলো দেখে আড়চোখে দেখছে। মেয়েরা লজ্জা পেলে আরো সুন্দরী লাগে, অজান্তাকেও ভীষণ সুন্দর লাগছে।
আমি নানান রকম কথা বলে অজান্তাকে একটু নরমাল করার চেষ্টা করলাম। ফোনে সে যতটা ঝটফট করে কথা বলে আমার সামনে ততটাই মৃদুভাষী। আমি বললাম;
- ফোনে তো ভালোই ফটফট করো, বাস্তবেতো দেখি কথা বলাই ভুলে গেছো।
সে মাথা নীচু করে জবাব দেয়,
- আপনাকে দেখে আর কথা বের হচ্ছেনা।
- আমি কি দেখতে খুবই ভয়ংকর?
- নিজের স্বপ্ন যখন চোখের সামনে বসে থাকে তখন কথা বের হবে কিভাবে? আমি আমার স্বপ্নকে প্রাণভরে দেখতে চাই।
অজান্তার কথাগুলো শুনে আমি থমকে যাই। ওর দিকে এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকি। এই প্রথম অজান্তাও আমার দিকে সরাসরি চোখে তাকিয়ে আছে। অনেক কথা বলতে চায় ওর চোখ। কিন্তু কিছু খুশি মানুষকে বাকরুদ্ধ করে দেয়।
আমরা কফিশপ থেকে বের হয়ে আবার কলেজের দিকে হাঁটছিলাম। অজান্তা তার ব্যাগ থেকে কয়েকটি চকোলেট বের করে আমাকে দিলো। আমি চকোলেট নিতে গিয়ে তার হাতটি ধরে রাখলাম। সে ছাড়িয়ে নিলোনা, আমার হাত ধরেই হাঁটতে লাগলো। সেই থেকে আমরা হাত ধরে হেঁটে যাই। কত রাস্তা, নদীর পাড়, ফুটপাত ধরে এভাবে হেঁটে গেছি আমরা দিনের পর দিন, শেরপুর শহরের প্রতিটি রাস্তায় আমরা আমাদের চিহ্ন রেখেছি। পুরো শহর অজান্তার মুখস্ত। আমার হাত ধরে হাঁটা হলো তার সবচেয়ে পছন্দের কাজ।
আমি সেদিন বিদায় নেয়ার সময়, অজান্তা রিক্সার পাশেই দাঁড়িয়ে ছিলো। আমি রিক্সা করে বাসস্ট্যান্ডে এসে তারপর ঢাকার বাস ধরবো। অজান্তা আমাকে বললো;
- আমি আপনাকে ভীষণ মিস করবো।
- তোমার হাতটা ছাড়ার পর নিজেকে অর্ধেক খালি খালি লাগছে।
- সাবধানে যাবেন, বাসে বসেই ফোন দিবেন।
- তুমি বাড়ি যাও ঠিকঠাক।
আমি রিক্সা থেকে হাত বাড়িয়ে অজান্তার মাথায় হাত বুলিয়ে দেই। রিক্সা এগিয়ে চলে সামনের দিকে। আমার ভেতর এক অদ্ভুত শূন্যতা কাজ করছে। পিছনে তাকিয়ে দেখি অজান্তা এখনো ওখানে দাঁড়িয়ে আমার রিক্সার দিকে তাকিয়ে আছে। ভালোবাসা মানে মায়া, জাগতিক সবচেয়ে বিশুদ্ধ মায়া থাকে ভালোবাসার মানুষের জন্য। এই মায়ার লোভ সামলানো অনেক কঠিন কাজ।
গাড়ির বিকট হর্ণের শব্দে পিছনে তাকিয়ে দেখি আমি রাস্তার মাঝখানে হাঁটছি। তাড়াতাড়ি রাস্তা পার হয়ে ওপারে চলে গেলাম। আমি বনানী চলে এসেছি। অজান্তা হঠাৎ কোথায় হারিয়ে গেলো। মেয়েটা এরকম করে মাঝেমধ্যে। না বলে চলে যায়, হয়তো স্বামীসেবায় ব্যস্ত হয়ে পড়ে।
আমি বনানী মাঠের পাশ দিয়ে ফকির সাহেবের বাড়ির গলিতে ঢুকে পড়েছি। দুপুরের কড়া রোদেও মাঠে একদল কিশোর খেলে যাচ্ছে। বনানীর সমস্ত রাস্তাঘাট আমার চেনা। আমার দুরন্ত শৈশব কেটেছে এখানে। এখানকার কাকেরাও আমাকে চিনে। ফকির সাহেবের গেট এখনো তালাবদ্ধ। রাস্তায় হঠাৎ আমির ভাইকে দেখলাম। একই এলাকায় থাকেন। নামকরা কবি, কবি আমিরুল হক। ফকির সাহেবের কাছের মানুষ। ওনার মাধ্যমেই আমি ফকির সাহেবের সাথে পরিচিত হয়েছিলাম। আমির ভাই দেখামাত্রই আমাকে বুকে জড়িয়ে ধরলেন। কুশলাদি জিজ্ঞেস করার পর জিজ্ঞেস করলাম;
- আমির ভাই, ফকির সাহেব এখন কই থাকেন?
উনি উত্তর দিলেন।
- ফকির ভাইয়ের কোন ঠিকঠিকানা নেই। একবার একেক দেশে যান। নানান মানুষের সাথে সময় কাটান ঘুরে বেড়ান, রহস্য খুঁজে বেড়ান। একা মানুষ, কোন পিছুটান নেই। পয়সাপাতির তো অভাব নেই। আধ্যাত্মিকতা নিয়ে ইদানীং নাকি উনি বিদেশে সেমিনার করাচ্ছেন।
- এখন কই আছেন?
- যাওয়ার আগে আমার কাছে এসেছিলেন। আমারিকায় গিয়েছেন, জর্জিয়ার সাভানায় যাবেন। আমেরিকার সবচেয়ে সুন্দর শহরগুলোর একটি। সেখানে তিনি প্রতিবছরই একবার করে যান। ওই শহরে তিনি নাকি কোন এক অজানা রহস্যের সন্ধান করে বেড়াচ্ছেন।
আমি কথাগুলো শুনে অস্থির হয়ে পড়লাম। আমির ভাইয়ের থেকে বিদায় নিয়ে আবার মগবাজারের উদ্দেশ্যে হেঁটে চললাম। অজান্তা স্বামীসহ আমেরিকার যে শহরে থাকে ফকির সাহেব সেই শহরে প্রতি বছরই কোন এক অজানা রহস্যের সন্ধানে যান। তাহলে ফকির সাহেবের সাথে কি অজান্তার কোন সম্পর্ক আছে? তিনি কি অজান্তাকে চেনেন? আমার যে ভবিষ্যতবাণী তিনি করেছিলেন তা কিভাবে মিলে গেলো। অজান্তার সাথে কি ফকির সাহেবের কোন যোগাযোগ আছে?
এরকম অসংখ্য প্রশ্ন আমার মাথা পাহাড়ের মত ওজন করে রেখেছে। তপ্ত দুপুরে গরমে ঘেমে আমি অস্থির হয়ে উঠেছি। আমার একটু বিশ্রাম দরকার। কোথাও বসে প্রশ্নগুলোর উত্তর খুঁজতে চাই। এই প্রশ্নগুলোর উত্তর আমি কিভাবে পাবো?
(গল্প: অপেক্ষা-২য় পর্ব © শামীম মোহাম্মদ মাসুদ)
©somewhere in net ltd.