নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

এস এম মাসুদ ভুবন।

শামীম মোহাম্মাদ মাসুদ

আমি খুব সাধারন একটা ছেলে বেড়ে উঠা গ্রামে, আর ভালোবাসি বাংলাদেশ। পড়তে খুব পছন্দ করি, মাঝে মাঝে লিখারও চেষ্টা করি।

শামীম মোহাম্মাদ মাসুদ › বিস্তারিত পোস্টঃ

অপেক্ষা (৩য় পর্ব)

২৯ শে এপ্রিল, ২০২৫ বিকাল ৩:০৬

ফকির সাহেবের সাথে ইদানীং টুকটাক কথা হচ্ছে। আজ সকালে বাইরে বের হতে যাচ্ছিলাম, হঠাৎ মনের অজান্তেই শুনলাম কেউ একজন আমাকে ডাকছে। স্বাভাবিক প্রবৃত্তিতে উত্তর দিলাম। ঘাড় ঘুরিয়ে দেখি—ফকির সাহেব রাগী চোখে আমার দিকে তাকিয়ে আছেন।

আমি বললাম,
— আপনি কবে আসবেন? অজান্তার সাথে আপনার কি সম্পর্ক?

ফকির সাহেব গম্ভীর গলায় উত্তর দিলেন,
— অমিত, তুমি এত অস্থির হয়ে উঠছো কেন? সময় হলে আমাদের দেখা হবেই।

আমি হাল ছাড়লাম না।
— অজান্তার কোন খবর পেলেন? সে কেমন আছে?

তিনি একরকম দীর্ঘশ্বাস ফেলে বললেন,
— অজান্তা তোমার কল্পনায় যেমন আছে, ঠিক তেমনই আছে।

আমি অনুভব করলাম, উনি কিছু লুকাচ্ছেন। কিছুটা রেগে বললাম,
— আপনি মিথ্যে বলছেন। টেক্সাসে কেন গিয়েছিলেন? কী রহস্যের অনুসন্ধান ছিল সেখানে?

ফকির সাহেব একটু হাসলেন, তবে সে হাসিতে ব্যঙ্গের ছোঁয়া ছিল না, বরং গভীর বেদনা।
— মানুষের সারাটা জীবনই রহস্যে ঘেরা। আপাতত আমাকে কাজ করতে দাও। সময় হলে তোমার কাছে ফিরবো।

একথা বলে তিনি উঠে দাঁড়ালেন। আমি পেছন থেকে চিৎকার করলাম,
— যে রহস্যের শুরু আপনি করেছেন, তার শেষও আপনাকেই করতে হবে!

ফকির সাহেব কিছুক্ষণ দাঁড়িয়ে থাকলেন, তারপর একটু মৃদু হেসে বললেন,
— তুমি নিজেই একটি বিরাট রহস্যের চরিত্র, অমিত। একদিন তুমিই সব খুঁজে বের করবে।

তারপর তিনি নিরবে চলে গেলেন। আমি বসে রইলাম, যেন হঠাৎ হারিয়ে গেলাম নিজের ভেতর।

আজ অনেকদিন পর ভার্সিটিতে যাওয়ার কথা মনে পড়ল। বেশ কয়েকদিন ক্লাস করাইনি। চাকরিটা এখনো আছে, সেটাই অনেক। অবশ্য চাকরি নিয়ে কখনোই আমার তেমন মাথাব্যথা ছিল না।

ওহ প্রিয় পাঠক, আপনাদের আমার পরিচয় দেয়া উচিত।
আমি অমিত, এতক্ষণে আপনারা আমার নামটি জেনে গিয়েছেন। আমি বর্তমানে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সামাজিক বিজ্ঞান অনুষদের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের একজন লেকচারার। এখানে আমার স্নাতক আর স্নাতকোত্তর শেষ করেছি।

আমার বাবা আবদুল মালেক—দেশের একজন বিশিষ্ট শিল্পপতি, প্রচুর ক্ষমতাধর ও অঢেল সম্পদের মালিক। দাদার বাড়ি শেরপুরের নালিতাবাড়ী উপজেলার রাজনগর গ্রামে। আমাদের পৈতৃক বাসা বনানীতে। কিন্তু আমি সেই বিলাসিতা ছেড়ে এখন মগবাজারের একটি ছোট্ট ফ্ল্যাটে একা থাকি। নিজের তৈরি স্বাধীন এক রাজত্বে বাস করি—যেখানে কোনো নিয়ম নেই, কোনো যুদ্ধ নেই।

আমি অনার্স লাইফ থেকেই কবিতা, সাহিত্য আর প্রেমের জীবনে ডুবে গেছি। সেই জীবনে কোনো বাঁধাধরা নিয়ম নেই। অজান্তার সাথে বিচ্ছেদের পর বাবার বাসা ছাড়ি। তখন মনে হচ্ছিল, আর কোনোভাবেই সেই স্বাভাবিক জীবনে ফেরা সম্ভব নয়।

অজান্তা আমার জীবনকে যেমন পূর্ণ করেছিল, তেমনি আমায় ঠেলে দিয়েছিল এক নতুন দর্শনের দিকে—এক এমন পথে, যেখানে প্রত্যেক অনুভূতি গভীর, আর প্রত্যেক নিঃশ্বাস একেকটা রহস্যময় গল্পের ইঙ্গিত।

অজান্তার পরিচয় আপনারা অনেকটুকু জেনেছেন। অজান্তার বাড়িও শেরপুরের নলিতাবাড়ি উপজেলায়, গ্রামের নাম, চরহকদি। ছবির মত সুন্দর একটি গ্রাম, চারপাশে নদী বয়ে গেছে আর হাজারো বৃক্ষদেবী গ্রামটিকে ঘিরে ধরে আছে। আজান্তা আমার দূর সম্পর্কের আত্মীয়, সেই সুত্রে ওদের পরিবারের সবার সাথেই আমাদের চেনাজানা আছে। অজান্তার বাবার নাম সৈয়দ নজরুল ইসলাম, পেশায় আম্বরখানা হাই স্কুলের প্রধান শিক্ষক। গ্রামের এবং ইউনিয়নের খুবই সম্মানিত ব্যক্তি। নজরুল স্যার হিসেবে এক নামে সবাই চিনে।

অজান্তা একবার আমাকে তার গ্রাম দেখাতে নিয়ে গিয়েছিলো। আমি কাছে গেলেই তার সাহস বেড়ে যেতো। কোন কিছুকেই ভয় পেতো না। মনে হতো কোন এক অজানা জগতে সে হারিয়ে যেতো। যেখানে লোকচক্ষুর কোন ভয় নেই, কোন নিয়মের বালাই নেই, ঘরে ফিরবার তাড়া নেই। অজান্তা আমাকে বলতো,

"তুমি চোখের সামনে এলে, হিমালয় পর্বত হাতের মুঠোয় পাওয়ার মত আনন্দ হয় আমার। মনে হয় এখন আমার কাউকে পরওয়া করার নেই, হিমালয় জয় করা পর্বতারোহী আমি।"

আমি অজান্তার চোখের দিকে তাকাই, অসম্ভব বিষ্ময় মেয়েটির চোখে মুখে। তার হাতটি শক্ত করে চেপে ধরে রাখি। বুঝিয়ে দেই আমি আছি, তোমার সামনে হিমালয় পর্বতের মত শক্তভাবে আছি। অজান্তা আমার বুকের মধ্যে তার মাথা ঠেকিয়ে হাত দিয়ে জড়িয়ে ধরে রাখে। তার চুলের মিষ্টি একটা গন্ধ আমাকে মোহিত করে ফেলে। আমি ঘোরতর এক আনন্দ অনুভব করি।

আমরা একটা সিএনজি নিয়ে অজান্তাদের গ্রামের ভেতর দিয়ে শেষমাথায় চলে যাই। একদম পশ্চিমে, সীমান্তের কাছাকাছি। চারকোনা নদীর পাড় ঘেঁষে অসংখ্য গাছ সারি সারি দাঁড়িয়ে আছে। আমরা একটি কড়ই গাছের নীচে বসি। নদীর হুহু করা বাতাস আমাদের উড়িয়ে নিয়ে যাচ্ছিলো। বাতাসে অজান্তার চুলগুলো পেছনে উড়ছে। আকাশী রঙের একটা থ্রী পিছ পরা, সাদা ওড়না বাতাসের সাথে এলোমেলো হয়ে যাচ্ছে। আমি অজান্তার দিকে মুগ্ধ হয়ে তাকিয়ে আছি। ওকে এতটা সুন্দরী করে স্রষ্টা শুধু আমার জন্যই বানিয়েছেন। সে আমার হাতের বাহু জড়িয়ে ধরে কাঁধের উপর মাথা রেখে বসে আছে।

আমাকে বলে,
- অমিত, আমি তোমার বৃত্তে বন্দী হয়ে গেছি। সকাল দুপুর রাত এক সেকেন্ডের জন্যও তোমাকে মন থেকে সরাতে পারিনা।

আমি ওর চোখের দিকে তাকিয়ে জবাব দেই,
- তোমাকে সরাতে কে বলেছে? আমি চাই তোমার সমস্ত শিরা-উপশিরায় মিশে যেতে। তোমার জীবনের প্রতিটি সেকেন্ড আমি নিতে চাই।

আজান্তা আমাকে আরো শক্ত করে ধরে বলে,
- আমার হয়ে থেকো অমিত, আমি তোমার ছায়া হয়ে আজীবন থাকতে চাই।

আমি অজান্তার হাত ছাড়িয়ে তাকে নিজের বুকের মধ্যে চেপে ধরি। সে ছোট অবুঝ বালিকার মত আমার বুকে জড়োসড়ো হয়ে চুপ করে থাকে। আমি ডান হাত দিয়ে তার গালের চিবুক ধরি। সে চোখ উপরে তুলে আমার দিকে তাকায়, কিছু বলতে গিয়েও থেমে যায়। আমি আমার মাথাটা নিচু করে তার ঠোঁটের কাছে নিজের মুখটি নিয়ে যাই। অজান্তা চোখ বন্ধ করে আলতো করে আমার গালে তার জীবনের প্রথম চুম্বনের স্পর্শ দেয়। আমার সমস্ত শরীর কেঁপে উঠলো। অজান্তা লজ্জায় নিজের মুখটি আমার বুকের মধ্যে লুকিয়ে ফেলে চুপ করে থাকলো।

নদীর বাতাস এখনো হুহু করে বয়ে চলেছে। অজান্তা আমার বুকের ভেতর মুখ লুকিয়ে নিশ্চুপ হয়ে আছে। আমরা দুজনেই সময়ের গতি যেন থামিয়ে দিয়েছি। শুধু চারদিকে নদীর গর্জন, পাখিদের ক্ষীণ ডাক আর গাছেদের পাতায় পাতায় বাজতে থাকা অদৃশ্য সঙ্গীত। আমি আলতো করে আমার হাত দিয়ে অজান্তার চুল ছুঁয়ে দিই। সে ধীরে ধীরে মাথা তুলে তাকায় আমার দিকে। তার চোখের কোণে জমে আছে লাজুক এক উজ্জ্বলতা, মুখে মৃদু হাসি।

কিছু না বলেই সে উঠে দাঁড়ায়। ওড়নাটা সামলে নদীর দিকে হেঁটে যায়। চুপচাপ, ধীরে ধীরে। আমি মুগ্ধ হয়ে দেখি তাকে — তার থ্রিপিসের আকাশী রঙ, এলোমেলো চুল আর নদীর পাড়ে নরম মাটিতে পায়ের ছাপ ফেলে এগিয়ে চলা। আমি আস্তে আস্তে তার পেছনে এগিয়ে যাই। কিছু বলি না। শুধু চাই, এই সময়টা অনন্তকাল ধরে থাকুক।

নদীর ধারে দাঁড়িয়ে অজান্তা পানির দিকে আনমনে দূরে তাকায়। আমাকে বলে;
- একটা কবিতা শোনাও কবি।

অজান্তা আমার কবিতার অন্যতম পাঠক। নতুন কবিতা লিখলেই অজান্তাকে শোনাই। আমি পাশে দাঁড়িয়ে বলে যাই;

"তোমায় দিলাম একটুখানি মায়া
আমার মত বিশাল একটি ছায়া
অবুঝ কোমল দুটি মনের মাঝে
প্রেম হয়ে যায় নতুন স্বপ্ন সাজে।

তোমায় দিলাম ভরদুপুরের রোদ
আরো দিলাম প্রথম চুমুর বোধ
মিষ্টি ভীষণ প্রেমের অনুভূতি
তোমায় পাওয়ার আজন্ম আকুতি।"

অজান্তা দূরে তাকিয়ে আছে এখনো, চোখের কোনে জল চিকচিক করছে। সে কিছু বলার শক্তি হারিয়ে ফেলেছে। আমি বুঝতে পারি এটা তার আনন্দের অশ্রু। অব্যক্ত এক খুশির অনূভুতিতে সে এই মুহূর্তে ডুবে আছে। নিজের ভালোবাসার মানুষকে কাছে পাওয়ার যে আনন্দ সে আনন্দের সাথে কোনকিছুর ভাগ হয়না। সময়, ক্ষন আর পরিবেশ মিলিয়ে আমরা এক অন্যরকম আবেগে মিশে গিয়েছিলাম সেদিনের সেই দুপুরবেলায়।

অজান্তার সাথে আমার সারাদিনই কথা হতো, সকাল-দুপুর-রাত আমরা একে অপরের সাথে একসাথে কাটাতাম। দুরত্বের বসবাস কিন্তু আমরা একসাথে থাকতাম। চার বছরের ভালোবাসার সময় এমনভাবে কাটিয়েছি কখনো মনে হয়নি আমরা দুজন দুই শহরে থাকি। সারাক্ষন একে অপরের সাথে মিশে থাকতাম।

আমার সকাল শুরু হতো অজান্তার ফোনে, রোজ সকালে আমার ঘুম ভাঙিয়ে দেয়া ছিলো তার প্রথম কাজ। ফোন দিয়েই কানের কাছে মিষ্টি কন্ঠে বলতো;
- গুড মর্নিং মহারাজ। আমার মহারাজা উঠবে না?

অজান্তার গলাটা শুনেই আমার ভেতরটা ঠান্ডা হয়ে যেতো। সকালের ঘুম জড়ানো চোখে এত সুন্দর এক অনুভূতির তৈরি হতো যা আমি আর পৃথিবীর কোন কিছুতে পাইনি। এই মেয়েটি আমায় দিয়েছিলো এরকম হাজারো সুন্দর সব অনুভূতি। সে অনুভূতি খুঁজে খুঁজে আমি আজ পাগলপ্রায়। নিজের জীবনের সমস্ত কিছু উজাড় করে দিয়ে যাকে ভালোবেসেছি তাকে ছাড়া জীবন কাটাবো সেটা এক মুহূর্তের জন্যও ভাবিনি।

শাহবাগ পেরুতেই মাহির সাথে দেখা। মাহি আমার স্টুডেন্ট, অনার্স সেকেন্ড ইয়ার। খুবই শান্ত, ভদ্র আর কোমল একটা মেয়ে। একটু শ্যামবর্ণ, গোলগাল মুখ, সামনে একটা বাঁকা দাঁত আছে যা তাকে আরো সুন্দরী করে তুলেছে। মাহির সবচেয়ে সুন্দর হলো তার চোখ। গোলগোল বড় বড় দুটি চোখ, কারো দিকে তাকালে যে কেউ তার চোখের প্রেমে পড়ে যাবে। মেয়েটা আমাকে অসম্ভব পছন্দ করে। সে আমাকে দেবদাস স্যার ডাকে। আমার মধ্যে নাকি দেবদাসের সমস্ত লক্ষণ আছে। আমি অবশ্য তাকে খুব বেশি পাত্তা দেইনা। অল্প বয়সী মেয়েদের অবেগকে পাত্তা দেয়ার বয়স ও সময় অনেক আগেই আমি পার করে এসেছি।

শাহবাগের ফুলের দোকানের সামনে সে দাঁড়িয়ে ছিলো, কাঁধে ছোট্ট ব্যাগ, চেহারায় ক্লান্তির ছাপ। আমাকে দেখেই দৌড়ে সামনে এলো;
- স্যার আপনি আজকে এদিকে? রহস্য কি? ক্লাসে ফিরবেন তাহলে?

আমি নিরস গলায় উত্তর দিলাম;
- তোদের কিছু না পড়ালে তো হবেনা। তোরা তো নইলে সব ফেল্টুস হয়ে যাবি।
- কোথায় ছিলেন এতদিন?
- ছিলাম কোথাও, ঘুরেফিরে আর মানুষ দেখে দেখে। তোরা আছিস কেমন?
- আমাদের খবর তো আপনি নেন না। এমন বিবর্ণ চেহারা হয়েছে কেন? ঘুমান না কতদিন?

মাহি আমার সবকিছুতে খেয়াল করতে চায়। ক্লাসের বাইরে, লাইব্রেরিতে, সেমিনারে, রাস্তায় যেখানেই দেখা হোক আমাকে নিয়ে তার কৌতূহলের সীমা নেই। মাঝেমধ্যে ফোন দেয়, আমি ধরিনা। কিছু কিছু আবেগে প্রশ্রয় দিতে নেই। আমরা সবাই সময় আর আবেগের বৃত্তে বন্ধী। কেউ এই চক্র থেকে বের হতে পারিনা। এই যে সময় আজকে আমাকে যে পথে নিয়ে এসেছে আমি কি তাকে আটকাতে পেরেছি? আমার কিছুই করার নেই, সবকিছু নিয়মের মধ্যে দিয়ে এগিয়ে যাবে।

মাহির থেকে বিদায় নিয়ে আমি শাহবাগ পেরিয়ে এগিয়ে যাচ্ছি। আমার সাথে এগিয়ে যাচ্ছে আমার ফেলে আসা সময়, মাহির আবেগ, অজান্তার হাজারো জীবন্ত স্মৃতি আর ফকির সাহেবের জন্য অপেক্ষা। আমি জানি না অজান্তা এখন কেমন আছে, কি অবস্থায় আছে। একমাত্র ফকির সাহেব এর উত্তর খুঁজে দিতে পারবে। যার জন্য আরো বছর দেড়েক অপেক্ষা করা লাগবে। একসময় আমাদের জীবনের সব রহস্যের অবসান হয় কিন্তু অপেক্ষার অবসান হয়না। কারো কারো জন্য আমাদের অনন্তকাল অপেক্ষা করতে হয়।

(অপেক্ষা-৩য় পর্ব © শামীম মোহাম্মদ মাসুদ)

মন্তব্য ০ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (০) মন্তব্য লিখুন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.