নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

এস এম মাসুদ ভুবন।

শামীম মোহাম্মাদ মাসুদ

আমি খুব সাধারন একটা ছেলে বেড়ে উঠা গ্রামে, আর ভালোবাসি বাংলাদেশ। পড়তে খুব পছন্দ করি, মাঝে মাঝে লিখারও চেষ্টা করি।

শামীম মোহাম্মাদ মাসুদ › বিস্তারিত পোস্টঃ

ব্যক্তিগত ডায়রি থেকে

০২ রা মে, ২০২৫ রাত ৯:৪০

আমার গ্রামের চারপাশে নদী, দ্বীপের মত খুব সুন্দর ছোট্ট একটি গ্রাম। নদীটা গোলাকার একটু বাঁকানো অনেকটা গণিতের সিগমা চিহ্নের মত দেখতে। নদীর একমুখে বাঁধ দিয়ে রাস্তা বানানো হয়েছে গ্রামবাসী চলাচলের জন্য। দুইপাশের নদীটা গোল হয়ে সেই বাঁধের উপর এসে শেষ হয়েছে। পাখির চোখে উপর থেকে গ্রামটাকে দেখলে মনে হবে চারপাশে নদীবেষ্টিত ছবির মত ঝকঝকে সুন্দর মায়াবী এক গ্রাম। আমার দুরন্ত শৈশব কেটেছে এই নদীর পাড়ে, মাঠে, রাস্তায়, ধূলায় কিংবা বাঁধের বটতলায়।

আমাদের বাড়ির একটু সামনেই একটা পোল ছিলো। ইটের তৈরি গোলাকার বড় চোঙা দিয়ে বানানো পোল। সম্ভবত পাকিস্তান আমলের তৈরি এটি। এত মজবুত আর সুন্দর গড়নের গ্রামের কোন পোল আমি দেখিনি। পাতলা টকটকে লাল ইটের তৈরি দুইপাশ। একটু উপরে গাঁথুনি দিয়ে মানুষের বসার জায়গা করে দিয়েছে। গ্রামের সবাই সন্ধার পরে সেই পোলের উপর আড্ডা জমাতো। সকাল-বিকেল-সন্ধ্যা কিংবা মধ্যরাত কেউ না কেউ সেই পোলের উপর বসে আড্ডা দিতো, সাংসারিক আলাপ করতো, দুঃখ-সুখের বিলাপ করতো।

পোলটার উপর বসলে ভোরে লাল আভায় রক্তিম সূর্য উঠার দৃশ্য যেমন পূর্বপাশে দেখা যেতো, তেমনি শেষ বিকেলের পশ্চিমের সূর্য ডোবার দৃশ্যও দেখা যেতো। আমি অনেক মানুষকে সেই পোলের উপর কাঁদতে দেখেছি, অনেককে দেখেছি শেষ বিকেলে উদাস হয়ে বসে থাকতে। তখন মোবাইলের যুগ ছিলোনা। সন্ধ্যার পরে বিদ্যুৎ চলে গেলে বাতাস খাওয়ার একমাত্র জায়গা ছিলো সেই পোলটি।

আমাদের ছোটদের এসব আলোবাতাস, সুখ কষ্ট নিয়ে মাথাব্যথা নেই। শুকনা মৌসুমে আমাদের অবস্থান থাকতো সেই পোলের নীচে। বড় যে চোঙা ছিলো সেটার ভেতর আমরা ছোটরা অনায়াসে চলাফেরা করতে পারতাম। পোলের এপাশ থেকে ওপাশ দৌড়াতাম। নীচে বসে ঘর বানিয়ে খেলতাম, উপর থেকে লাফিয়ে নীচে পড়তাম।

বর্ষাকালে একপাশের পানি অপর পাশে প্রবাহিত হতো। পোলের নীচে টইটম্বুর জলের স্রোতে মাছ ধরতো আলীফুফা। পূর্বপাশে মশারি বা এক ধরনের জাল বসিয়ে দিলে স্রোতের সাথে অজস্র মাছ এসে জমা হতো সেই জালে। আলীফুফা জালের পাশে দাঁড়িয়ে থাকতো। আমরা উপর থেকে মাথা তুলে মাছ দেখতাম। দশমিনিট পরপরই জালে অজস্র ছোটমাছ জমা হতো। আমরা একপাশে কিছু একটা ছুড়ে ফেলে দৌড়ে অন্য পাশে এসে দেখতাম স্রোতের সাথে সেই জিনিসটা চলে যাচ্ছে দূরে, অনেক দূরে।

কালের পরিক্রমায় সেই পোলটি ভেঙে ফেলা হয়েছে। এখন সেখানে সরাসরি রাস্তা৷ পশ্চিমে বাড়িঘর হয়ে আর সূর্যের ডুবন্ত সময় দেখা যায়না। বর্ষাকালে কেউ আর মাছ ধরে না। বাচ্চাদের ওখানে আর দেখতে পাইনা। সবাই বোধহয় আমার মত বড় হয়ে গেছে। সভ্যতায় হারিয়ে গেছে সেই পোলটির মত।।

(ব্যাক্তিগত ডায়রি থেকে/শামীম মোহাম্মদ মাসুদ)

মন্তব্য ১ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (১) মন্তব্য লিখুন

১| ০৩ রা মে, ২০২৫ সকাল ১০:১৮

রাজীব নুর বলেছেন: আপনাদের গ্রাম কোথায়? নাম কি?

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.