নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

এস এম মাসুদ ভুবন।

শামীম মোহাম্মাদ মাসুদ

আমি খুব সাধারন একটা ছেলে বেড়ে উঠা গ্রামে, আর ভালোবাসি বাংলাদেশ। পড়তে খুব পছন্দ করি, মাঝে মাঝে লিখারও চেষ্টা করি।

শামীম মোহাম্মাদ মাসুদ › বিস্তারিত পোস্টঃ

শুভ জন্মদিন অজান্তা

০৫ ই মে, ২০২৫ সকাল ১১:৩৬

আজ অজান্তার জন্মদিন। অমিত তার সারা ঘর সাজিয়ে রেখেছে। রুমের চারদিকে রঙবেরঙের বেলুন, পশ্চিম পাশের দেয়ালে কর্কশিটে লেখা, 'শুভ জন্মদিন অজান্তা'। টেবিলে ৪ টি গোলাপ রেখেছে অজান্তাকে দিবে বলে। 'ভালোবাসা'র চার অক্ষর আর গোলাপের সংখ্যাও চার, এটি ভালোবাসার প্রতীক। আজ অজান্তা আসবে সে জানে। অমিত রাত জেগে অপেক্ষা করছে তার জন্য। রাতের গভীরতা বাড়ে, সেই সাথে অমিতের অপেক্ষার গভীরতাও বাড়ে।

অজান্তার সাথে কাটানো শেষ জন্মদিনে ওরা দু'জন পাশাপাশি বসে কেক কেটেছিলো। অজান্তার জন্য অনেকগুলো কাঁচের চুড়ি নিয়ে গিয়েছিলো অমিত। দোকানে যত রঙের চুড়ি আছে সব রঙ। অজান্তার যখন যে রঙটা ইচ্ছে করবে তাই পরবে। চুড়িগুলো পেয়ে সে কি যে খুশি হয়েছিলো! বাচ্চাদের মত সেগুলো হাতে লাগিয়ে নাড়াচাড়া করছিলো, হাত দিয়ে ছুঁয়ে দেখে বারবার, অমিত মুগ্ধ হয়ে অজান্তার এই খুশির দৃশ্য দেখে। সামান্য কাঁচের চুড়ি পেয়ে যে মেয়ে এত খুশি হতে পারে তাকে নিশ্চিন্তে বিবাহ করা যায়। সেদিনের সেই দৃশ্য, অজান্তার মায়াবী মুখটা এখনো অমিতের চোখে ভেসে উঠে।

রাত দুটা নাগাদ অপেক্ষার অবসান হয়। অজান্তা অমিতের পাশে এসে চুপটি করে বসে। চারপাশে একবার চোখ বুলিয়ে নেয়। তারপর অমিতের হাত জড়িয়ে ধরে, কাঁধে মাথা রাখে। অমিত অজান্তার পাশে চুপ করে বসে থাকে। কিছু বলতে চেয়েও পারেনা। অজান্তা অমিতের চোখের দিকে তাকিয়ে বলে;
- কেন এমন পাগলামি করো? এত আয়োজন কেন করেছো?

আমিত তার চোখের দিকে তাকিয়ে উত্তর দেয়;
- তোমার জন্য। তোমার এই বিশেষ দিনে তোমাকে অনেক শুভেচ্ছা।

অজান্তা কিছুটা অস্থির হয়ে বলে;
- তোমার এই কল্পনা থেকে বের হতে হবে অমিত, বাস্তবতা হলো আমি আর তোমার সাথে নেই। আমরা অনেক আগেই আলাদা হয়ে গেছি।

অমিত মৃদু হেসে উত্তর দেয়;
- জীবন থেকে আলাদা হলেই মন থেকে আলাদা হয় কে বললো তোমায়?

অজান্তা উঠে দাঁড়িয়ে যায়, অমিতের হাত ছাড়িয়ে বলে;
- তুমি সবকিছু যতটা সহজ করে নিতে পারো আমি পারিনা। আমার যে এসব দেখলে প্রচন্ড কষ্ট হয়।

অমিত উঠে গিয়ে অজান্তার পিছনে দাঁড়ায়। কানের কাছে ফিসফিস করে বলে;
- আমার এই যন্ত্রণা থেকে তোমার মুক্তি নেই। যদি তোমার আগে মরে যাই তবেই মুক্তি।

অজান্তা পেছন ঘুরে অমিতের দিকে তাকায়। তারপর কথা ঘুরিয়ে বলে;
- বাজে বকার অভ্যেস তোমার এখনো গেলো না। চলো কেক কাটি।

অমিত অজান্তার হাত ধরে টেবিলে রাখা কেক কাটলো। অমিত শব্দহীন হাততালি দিতে দিতে অজান্তার দিকে মুগ্ধ হয়ে তাকিয়ে আছে। ওকে আজ ভীষণ অন্যরকম লাগছে। মেরুন রঙা শাড়ি পরেছে, কপালে মেরুন টিপ, হাতে অমিতের দেয়া একটা মাত্র কাঁচের চুড়ি পরেছে। মেরুন রঙের শাড়িতে মেয়েদের ভীষণ সুন্দরী লাগে। অমিত প্রশ্ন করে;
- তুমি আমার সব স্মৃতি মুছে ফেলেছো?

- হুম সব ফেলে দিয়েছি, তোমার টি শার্ট পুড়িয়ে দিয়েছি, চিঠিগুলো জ্বালিয়ে দিয়েছি এক সন্ধ্যায়, আর সব চুড়ি ভেঙে ফেলেছি এক এক করে।

- তাহলে হাতের ওই একটা চুড়ি?

- এটিই শেষ স্মৃতি, এটা ভাঙার সাহস পাইনি।

- আমার দেয়া ভালোবাসার স্মৃতি?

- সেটা নতুন করে জীবনে আসা মানুষটার ভালোবাসায় ঢাকা পড়ে গেছে।

অমিত টেবিলে রাখা চারটি গোলাপ অজান্তার হাতে দিয়ে বলে;
- তোমার জীবনের সবকটি জন্মদিনে আমি তোমার অপেক্ষায় থাকবো।

অজান্তা গোলাপগুলো বুকে জড়িয়ে বলে;
- আমাদের প্রথম দেখার চারটি গোলাপ।

অমিত অজান্তার গালে হাত লাগিয়ে বলে;
- নতুন পুরুষ গোলাপ দেয়?

অজান্তা আর চোখের জল আটকে রাখতে পারেনি। মাথা নীচু করে বলে;
- আমেরিকায় এরকম দেশী গোলাপ পাওয়া যায়না। তাই হয়তো দেয়না।

"যাই হোক, আমি আজ আসি। নিজের জীবনকে এবার গুছিয়ে নাও।"
এ কথা বলে অজান্তা দরজার দিকে এগিয়ে যায়।

দরজার মুখে হঠাৎ থেমে যায়, তারপর অমিতের দুই হাত নিজের হাতের মুঠোয় শক্ত করে ধরে এক নিঃশ্বাসে বলে ওঠে,
– একটা কথা বলি?
– বলো।
– আমার মৃত্যুসংবাদ শোনা পর্যন্ত তুমি বেঁচে থেকো।

অমিত স্তব্ধ হয়ে যায়। এই কথার ওজন তার বুকের ভেতর পাথরের মতো চেপে বসে। সে কিছুই বলতে পারেনা, শুধু নিঃশব্দে তাকিয়ে থাকে।
অজান্তা ধীরে ধীরে অন্ধকারে মিলিয়ে যায়।

অমিত দরজার পাশে দাঁড়িয়ে থাকে—অনড়, নিঃশ্বাসহীন। চারপাশে নিস্তব্ধতা। কেবল দেয়ালে ঝুলতে থাকা রঙিন বেলুনগুলো একটু একটু দুলছে বাতাসে।

সে নিজের দিকে ফিরে তাকায় না। পা বাড়ায় না রুমের ভেতরে। তার মনে একটাই প্রশ্ন—
অজান্তা কি সত্যিই এসেছিলো? নাকি এই পুরোটা তার একা থাকার দীর্ঘ অপেক্ষার জন্ম দেওয়া বিভ্রম?

সে দাঁড়িয়ে থাকে দরজার চৌকাঠে,
একটি জন্মদিনের রাত, যেখানে কেক কাটা হয়, গোলাপ দেওয়া হয়, আর ভালোবাসা বলে কিছু যদি থেকে থাকে—তা হয়তো কেবল স্মৃতিতে।

(অপেক্ষা সিরিজ থেকে)
© শামীম মোহাম্মদ মাসুদ

মন্তব্য ৬ টি রেটিং +১/-০

মন্তব্য (৬) মন্তব্য লিখুন

১| ০৫ ই মে, ২০২৫ দুপুর ১:২৭

মাহমুদুর রহমান সুজন বলেছেন: সুন্দর প্রকাশ।

০৫ ই মে, ২০২৫ দুপুর ২:২৯

শামীম মোহাম্মাদ মাসুদ বলেছেন: অনেক ধন্যবাদ, শুভকামনা রইলো।

২| ০৫ ই মে, ২০২৫ রাত ১১:২৩

শায়মা বলেছেন: হেলুস্যিনেশন!

০৬ ই মে, ২০২৫ সকাল ১০:১৩

শামীম মোহাম্মাদ মাসুদ বলেছেন: হতে পারে, আবার বাস্তবও হতে পারে! ধন্যবাদ আপনাকে।

৩| ০৬ ই মে, ২০২৫ সকাল ১০:২৪

রাজীব নুর বলেছেন: অজান্তা ভালো থাকুক। সুস্থ থাকুক।

০৬ ই মে, ২০২৫ দুপুর ১২:৫৪

শামীম মোহাম্মাদ মাসুদ বলেছেন: ধন্যবাদ রাজীব ভাই, ভালোবাসা নিবেন।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.