নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

ইদের শুভেচ্ছা

শামীম শাহ

শামীম আহমেদ

শামীম শাহ › বিস্তারিত পোস্টঃ

ডিজিটাল (ডি-জি-টা-ল)

০৫ ই জানুয়ারি, ২০১৭ সকাল ৯:৪৮

বারাক ওমাবা Change সাইনবোর্ড নিয়ে নির্বাচনী প্রচারণা চালানোয় আমেরিকানরা ভেবেছিলো তরুনমনা ওবামার কাছে সত্যিই নতুন কিছু আশা করা যায়। চল সবাই ভোট দেই !
ওবামা সরকার গঠন করার পরপরই ট্যাক্সের পরিমান প্রায় দ্বিগুন করে দিলেন।
বিরাট চেঞ্জ... ভোটদাতারা স্ট্রেঞ্জ।

বাংলাদেশে আওয়ামী সরকার গঠনের সময়ে মন্ত্রীসভায় কয়েকজন তরুনমুখ দেখে সবাই ভেবেছিলো সত্যিই দেশে নতুন কিছু হতে চলেছে এবার। সবাই আগ্রহ নিয়ে তাকিয়ে আছে কি করতে যাচ্ছে আমাদের সরকার।

নির্বাচনী ইশতেহার অনুযায়ী ঘোষিত হলো ভিশন-২১। অর্থাৎ ২০২১ সালনাগাদ দেশকে ডিজিটাল বানানো হবে।
কমিটমেন্ট অনুযায়ী শুরু হলো ডিজিটালাইজেশান প্রক্রিয়া।
দেশের কল্যানে প্রধানমন্ত্রীর বিজ্ঞানীপুত্রকে রাষ্ট্রীয় আমন্ত্রনে দেশে ডেকে নিয়ে আসা হলো। তিনি এসেই তড়িঘড়ি করে কয়েকটি জনকল্যানকর পদক্ষেপ নিলেন। সবই কম্পিউটার আর ইন্টারনেট সংশ্লিষ্ট। সেসব খাতে বিপুল পরিমাণে সরকারী অর্থব্যয় করা হলো। দেশকে ডিজিটাল বানিয়েই ছাড়বেন বলে শপথ নিলেন।
দেশ এগিয়ে চললো প্রযুক্তির সমাহারে।

তিনি দুইহাত উপরে তুলে একহাতে দোয়েল ল্যাপটপ আরেক হাতে বিজয়চিহ্ন দেখালেন। বিটিভিতে তাঁর জয়জয়গান।
বারবার হাসিমুখে পোজ দিচ্ছিলেন দেশের গর্ব এই তরুন বিজ্ঞানী। বাংলা ইংরেজী মিলিয়ে একটি কাঁচামাচু বিবৃতিও দিলেন তাৎক্ষনিক।
তিনি কি বললেন আর কি বোঝাতে চাইলেন অজপাড়া গাঁয়ে বিটিভির নিয়মিত দর্শক হাশেম মিয়া, কুদ্দুস আলী, আম্বিয়ার মা, দিনমজুর মোখলেস মিয়ারা কিছুই বুঝলোনা।
তাদের কাছে ডিজিটালের মানে জিবন চালানোর জন্য মৌলিক চাহিদাগুলো পুরণ হওয়া। অর্থাৎ তিনবেলা ঠিকভাবে খেয়ে পরে বেঁচে থাকতে পারা।

তবে বাংলাদেশ ব্যাপক পরিমানে ডিজিটাল হয়েছে। এটা অস্বীকার করার সুযোগ নেই।
ডি জি টাল...
যেদিকেই তাকাই খালি ডিজিটাল আর ডিজিটাল।

চলুন দেখা যাক কোন কোন খাতে আমরা ডিজিটাল হলামঃ

পারিবারিক কলহ- আগে স্বামী স্ত্রীতে ঝগড়া বাধলে স্ত্রী রান্নাবান্না বন্ধ করে দিতো কিংবা রাগ করে বাপের বাড়ি চলে যেতো। এখন স্বামী স্ত্রীতে ঝগড়া বাধলে ফেসবুকে ব্লক করে দেয়।

ধানের মেশিন- পায়ের জোরে মেশিন চালিয়ে ধান মাড়ানোর যুগ শেষ। দেশে এসেছে চায়নার ডিজিটাল ধান মাড়াই কল।

রান্নার চুলা- মাটির তৈরী চুলায় লাকড়ি গুঁজে রান্না করতো বাংলার রমনীরা। দুহাত ময়লা হতো কয়লার কালিতে। বারবার ঘোমটা ঠিক করতে করতে কপালে কালো হয়ে যেতো তাঁদের। এখন ঘরে ঘরে গ্যাস আর ইলেট্রিক চুলা। অত্যাধুনিক ইলেক্ট্রনিক ইন্ডাকশন কুকার। টাইমারে সময় সেট করে চালের পাতিল বসিয়ে মোবাইল টেপাটিপি করে নির্দ্ধিধায়। যথাসময়ে ভাত রেডি...

ঠেলাগাড়ি- প্রাচীনকাল থেকে আবহমান বাংলায় মালামাল পারাপারের অন্যতম বাহন ছিলো এই হস্তচালিত গাড়ি।
এখন আর ঠেলাগাড়িকে শক্তিব্যয় করে ঠেলে চালাতে হয় না। ডিজেল ইঞ্জিন সেট করে আপগ্রেড করা হয়েছে। ধারণা করা হচ্ছে এক্ষেত্রেও সরকারের বিস্তর ভুমিকা রয়েছে।

বাল্যবিবাহ- মেয়েদের বিয়ের জন্য নির্ধারিত বয়স ছিলো ১৮। বর্তমানে সরকারীভাবে ২ বছর কমিয়ে ১৬ করা হয়েছে। ভবিষ্যতে আরো কমানোর পরিকল্পনা রয়েছে।
সরকারের ধারণা, ক্লাস ফোরের মেয়েরা আজকাল আইফোন হাতে নিয়ে ঘন্টার পর ঘন্টা ফোনে কথা বলে। এদেরকে তখনই বিয়ে দেয়া উচিত।
লন্ডনে গার্ল সামিটে প্রধানমন্ত্রী বাল্যবিবাহ বন্ধের ঘোষনা দিয়ে এসেছেন। তার কিছুদিন পর এক জরিপে দেখা গেছে দেশে বর্তমানে ২ শতাংশ কন্যাশিশুর বিয়ে হচ্ছে যাদের বয়স গড়ে ১১।

হরতাল- আগেরদিনের হরতালে রাস্তায় দাঁড়িয়ে সরকারবিরোধী মিছিল করা হতো। গাড়ি চললে দূর হতে ইটপাটকেল ছোঁড়া হতো। এখন ইটপাটকেল বাদ দেয়া হয়েছে। বাজারে এসেছে আধুনিক পেট্রোল বোমা। ইটপাটকেলের আঘাতে মানুষ সামান্য আহত হতো। গাড়ির গ্লাসভাঙ্গা ছাড়া তেমন কোনো ক্ষতি হতোনা। কিন্ত পেট্রোল বোমায় যাত্রীসহ পুরো গাড়ি জ্বালিয়ে দেয়া যায়। হরতালের আরেকটি ডিজিটাল ভার্সন হলো, আগে শুধুমাত্র বিরোধীদলই হরতালের ডাক দিতো, এখন সরকারও মাঝে মাঝে হরতালের ডাক দেয়।
.

এবার আসুন দেখা যাক আমাদের সরকারের নানারকম ডিজিটালাইজেশানের ভিড়ে যা কিছু এখনও নন-ডিজিটাল রয়ে গেছেঃ

১- বিমানবন্দরে কাস্টম অফিসের চোরাচালান শনাক্তকরণ যন্ত্র।
২- খাদ্য এবং বিভিন্ন শিল্পপণ্যের মান নিয়ন্ত্রণের প্রতিষ্ঠান বি এস টি আইয়ের মান নিরুপণের যন্ত্র।
৩- এফডিসির ভিডিও ক্যামেরা। মান্ধাতার আমলের ঠুশঠাশ ক্যামেরায় চলছে বাংলা চলচ্চিত্র প্রতিষ্ঠান।
৪-দেশের চিকিৎসা ব্যবস্থাপনায় সরকারী বেসরকারী মেডিকেলের যাবতীয় যন্ত্রপাতি।
৫- রাজনীতিবিদদের প্রতিশ্রুতি।
৬- বিরোধীদলীয় নেত্রীর বাসার টেলিফোন সেট।
৭- বিদ্যুতের খুঁটি।
৮- গাড়ির ফিটনেস সার্টিফিকেট প্রদানকারী সংস্থায় ইঞ্জিনিয়ারের চোখের চশমা।
৯- পুলিশের তুই তোকারী।
১১- দমকল ব্যাবস্থাপনা (ফায়ার সার্ভিস)
১২- সরকারী প্রতিষ্ঠানে কর্মচারীদের নৈতিক চরিত্র।

তবে সবচেয়ে বেশি ডিজিটাল হয়েছে রিকশাওয়ালারা। কারন এখন আর প্যাডেল চেপে ঘাম ঝরাতে হয়না। মটরের সুইচ স্টার্ট করেই ভোঁ ভোঁ করে ছুটে চলে...
আগে যাত্রীরা বলতো চাচা গায়ে জোর নাই নাকি? একটু জোরে চালান -_-
এখন বলে চাচা স্পিড একটু কমান না :o
চাচা মিয়া পেছনে তাকিয়ে দাঁত কেলিয়ে হেসে বলে খিঁচ মাইরা বইসা থাহেন ছার...

বাউরে… কত্ত ডিজিটাল !

মন্তব্য ২ টি রেটিং +১/-০

মন্তব্য (২) মন্তব্য লিখুন

১| ০৫ ই জানুয়ারি, ২০১৭ সকাল ১০:৩৪

শেখ জামাল ১২ বলেছেন: :-P =p~ B-)

২| ০৫ ই জানুয়ারি, ২০১৭ দুপুর ১২:৩৬

শাহাদাৎ হোসাইন (সত্যের ছায়া) বলেছেন: সামনের দিন ভালা ঠেহে না। তাই পাবনার মানষিক হাসপাতালটা ডিজিটালাইজড করা দরকার।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.