![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
ফেসবুকের হোমপেইজে ভেসে আসা একটি মর্মান্তিক ভিডিও দেখলাম।
একটি মেয়েকে জনসম্মুখে মেরে রক্তাক্ত করা হয়েছে। নাকমুখ মাথা থেকে রক্ত ঝরছে… পা খুঁড়িয়ে পড়ে যাচ্ছে ঢলে।
তবুও পাবলিক নির্দয়ভাবে তাকে অনবরত মেরে যাচ্ছে।
মেয়েটি এদিক সেদিক ছুটে পালানোর চেষ্টা করেও ব্যর্থ হলো। অনেকগুলো মানুষ চতুর্দিকে ঘিরে দাঁড়িয়ে তার উপর নির্মম অত্যাচারের দৃশ্য উপভোগ করছে। কেউ বা হুইসেল বাজিয়ে হাততালি দিচ্ছে। কেউ মোবাইল ফোনে ভিডিও করছে।
কিল ঘুষি, লাথি... যে যার ইচ্ছেমত মেরেই চলেছে।
সজোরে লাথি মেরে নিচে ফেলে দিয়ে একজন মেয়েটির গায়ে পেট্রোল ঢেলে দিলো। এরপর আরেকজন পাশ থেকে দৌড়ে এসে আগুন ধরিয়ে দিলো...
দৃশ্যটির ভয়াবহতা লিখে প্রকাশ করার সাধ্য আমার নেই।
মাটিতে গড়িয়ে আগুন নেভানোর চেষ্টা করে সে ব্যর্থ... সে জ্বলছে...
জ্বলেই যাচ্ছে আর বাঁচাও বাঁচাও বলে চিৎকার করছে।
মনে মনে ভাবছি হয়তো কোনো একজন সহৃদয়বান ব্যক্তি দৌড়ে এসে আগুন থামাতে সাহায্য করবে। সবাইকে বলবে অনেক হয়েছে... এইবার থাম।
ভাবতে ভাবতেই দেখলাম একজন ড্রাম হাতে নিয়ে দৌড়ে এলো।
এখনও মেয়েটির বাঁচার সম্ভাবনা আছে !!
কিন্ত সে দৌড়ে এলো ঠিকই... আগুন থামাতে নয়, আরও আগুন জ্বালাতে।
তার ড্রামভর্তি পেট্রোল মেয়েটির গায়ে ঢেলে দেয়ার পর দাউ দাউ করে জ্বলে উঠলো ডেথ ভ্যালীর আগুন।
উৎফুল্ল জনতা হাততালি দিচ্ছে। কেউ ইট পাটকেল ছুঁড়ে মারছে। কেউ ছবি তুলছে।
একজন মেয়ে মানুষের মৃত্যু আনন্দ উপভোগ করছে উৎফুল্ল জনতা।
ঘটনাটি ঘটেছিলো গুয়েতেমালার রাজধানীর নিকটস্থ একটি স্পটে।
যতদুর জেনেছি ১৬ বছর বয়সী এই মেয়েটির মোটর বাইকের আঘাতে ৬৪ বছর বয়সী একজন বৃদ্ধ ট্যাক্সি ড্রাইভার নিহত হওয়ার পর পালানোর সময় ঘটনাস্থলেই পাবলিক তাকে ঘিরে ফেলে।
কোনো কথা বলার সুযোগ না দিয়ে মারধর শুরু করে কয়েকজন উঠতি বয়সী ছেলে।
এরপর আরো মানুষজন দূর থেকে এসে হত্যাকান্ডে অংশ নেয়।
গায়ে আগুন দেয়ার অল্প কিছুক্ষনের মধ্যেই মেয়েটি মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়ে।
একজন নারী যতই অপরাধ করুক না কেনো, পুরুষ কতৃক তাকে শাস্তি দেয়াটা অমানবিক।
নারী অপরাধীদের জন্য নারী পুলিশ আছে। পুরুষদের জন্য রয়েছে পুরুষ।
নিয়মতান্ত্রিকভাবে নারীদের জন্য নারীই হওয়া উচিত।
একজন নারীকে পুরুষকতৃক শাস্তিপ্রদান রাষ্ট্রসংবিধানের খেলাফ।
আপনি হয়তো ভাবতে পারেন এমন লোমহর্ষক নির্মম হত্যাকান্ড অন্ততঃ আমাদের দেশে কখনো ঘটবেনা। ঘটতে পারেনা।
মাছ ভাত খাওয়া উদারমনা বাঙ্গালী জাতি এতোটা হিংস্র হতে পারেনা।
আপনার ধারণাটি সত্য নয়। বরং অন্যান্য দেশের তুলনায় বাংলাদেশে গনপিটুনিতে মানুষ মারার ঘটনা বেশি ঘটে থাকে।
বলছিঃ
কুমিল্লা সদরের দক্ষিন উপজেলায় এক ডাকাতকে ধরা হয়েছে।
গনপিটুনি দিয়ে তাকে হত্যা করা হবে।
সেজন্য মসজিদের ইমামকে বলা হলো মাইক বাজিয়ে গ্রামবাসীকে ডেকে আনা হউক। ইমাম সাহেব গ্রামে ডাকাত ধরা পড়ার খবর মাইকের মাধ্যমে ঘোষনা করে দিলেন।
যে যার সাধ্যমত দেশীয় অস্ত্রসস্ত্র নিয়ে ডাকাত পেটাতে চলে এলো।
ডাকাতকে আগে থেকেই হাত পা মুখ বেঁধে রাখা হয়েছিলো। গ্রামের লোকজন এসেই শুরু করলো গনধোলাই।
পাতলা গড়নের শরীর। পাবলিকের বেধড়ক পিটুনিতে ঘটনাস্থলেই মারা যায় ডাকাত শেখ ফরিদ।
অতঃপর জানা গেলো নিহত ডাকাত ছিলো একজন প্রবাসী। আবুল কালাম নামে এক ব্যক্তির কাছে ভিসার বাকী টাকা চাইতে আসলে কালাম তাকে টাকা না দিয়ে ডাকাত বানিয়ে দেয়। তার বাড়ি অন্যজেলায় হওয়ায় গ্রামের লোকজন তাকে চিনতে পারেনি।
একই ধাঁচের আরেকটি লোমহর্ষক ঘটনা ঘটেছে সাভারে।
২০১১ সালের ১৮ জুলাই শবে বরাতের রাতে ডাকাত সন্দেহে সাভারের আমিনবাজারে মসজিদের মাইকে ঘোষনা দিয়ে কতিপয় পুলিশের সহায়তায় এলাকাসী গণপিটুনি দিয়ে হত্যা করেছিলো টগবগে ছয় তরুণকে। পরে প্রমাণ হয়েছিলো নিহত ওই ছয় তরুনরা ছিলো বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের মেধাবী ছাত্র।
ডাকাতি কিংবা কোন রকম অপরাধের সাথে তারা জড়িত ছিলোনা। ঘটনায় পুলিশ প্রথমে ডাকাত সন্দেহে রিপোর্ট দিলেও পরে তদন্তে বের হয়ে আসে প্রকৃত সত্য।
সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে এই ঘটনা নিয়ে তীব্র সমালোচনা হয়েছিলো। কিন্ত নির্দোষ সেই ছয় তরুনের জীবন কেউ ফিরিয়ে দিতে পারেনি।
সম্প্রতি সিলেটের শিশু রাজনকে নির্মমভাবে পিটিয়ে হত্যার ভিডিও ফুটেজ হত্যাকারীদের মধ্য থেকেই কেউ একজন ফেসবুকে আপলোড দেয়ায় এই মর্মান্তিক ঘটনাটি দেশবাসী জেনেছে।
প্রতিবাদ করেছে দেশ বিদেশের অসংখ্য বিবেকবান মানুষ।
.
প্রতিদিন পৃথিবীজুড়ে এমন হাজারো লোমহর্ষক ঘটনা ঘটে থাকে। তন্মধ্যে দুচারটা ঘটনা ভাইরাল হয়ে আমাদের নজরে এসে পড়ে। কিছু ঘটনা আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে আসে। অতি আকর্ষনা না থাকায় কিছু ঘটনা হারিয়ে যায় নিমিষেই...
ফেসবুক/ব্লগে অনলাইন অ্যাক্টিভিস্টরা এমন ইস্যু নিয়ে আলোচনা সমালোচনা করে থাকে।
অন্যায় অপরাধের প্রতিবাদ করে পোস্ট দেয়।
এই প্রতিবাদ শুধু অনলাইনেই সীমাবদ্ধ না রেখে যদি সামাজিকভাবেও করা হতো,
তাহলে দেশে অন্যায় অপরাধকর্মের ঘটনা অনেকাংশে কমে যেতো বলে আমি মনি করি।
আপনার আশেপাশে প্রতিদিন কত রকম অন্যায় অপরাকর্ম ঘটছে। সরাসরি সেসব অন্যায়ের প্রতিবাদ করুন।
আপনি আজ তনু ধর্ষনের বিরুদ্ধে ফেসবুকে পোস্ট দিয়ে ব্যাপক সমবেদনা জানাচ্ছেন, দেখা যাবে দুদিন পর আপনার পাশের বাড়ির আরেক তনু ধর্ষিত হওয়ার খবর ছড়িয়ে পড়েছে।
বাস কিংবা ট্রেনে কোনো নারী লাঞ্ছিত হওয়ার খবরে আপনি যতটা প্রতিবাদী হয়ে ফেসবুকে জ্বালাময়ী পোস্ট লিখেন, ঠিক ততটা জ্বালাময়ী মনোবল নিয়ে আপনার সামনে ঘটতে থাকা এমন অন্যায়ের সরাসরি প্রতিবাদ করুন।
কাউকে ডাকাত কিংবা ছিনতাইকারী সন্দেহে মারপিট করা হচ্ছে। আপনি নিজেও মারপিটে অংশ না নিয়ে বরং সঙ্গে সঙ্গে পুলিশে খবর দিন। আপনার সামান্য মানবিক সহযোগিতায় বেঁচে যেতে পারে একটি জীবন। এমনও তো হতে পারে, ব্যক্তিগত আক্রোশে কেউ নিরপরাধ কাউকে ডাকাত/ছিনতাইকারী সাজিয়ে পাবলিকের হাতে ছেড়ে দিয়েছে !
নগর পতিতাদের বিরুদ্ধে ফেসবুকে আপনি ঘৃনাভরে অনেক বড় প্রচ্ছদ না লিখে বরং কোনো দাতব্য সংস্থার মাধ্যমে পতিতাদের সামাজিক মর্যাদা নিয়ে বেঁচে থাকার ব্যবস্থা করে দিন।
ইভটিজারদের ফেসবুকে গালাগালি না করে ইভটিজারদের পরিচয় নিয়ে তাদের বিরুদ্ধে সামাজিক প্রতিরোধ গড়ে তুলুন।
দেশে অপরাধ কমবেই...
২| ০৬ ই জানুয়ারি, ২০১৭ রাত ১২:৩৭
ফরিদ আহমদ চৌধুরী বলেছেন: সহমত
৩| ০৬ ই জানুয়ারি, ২০১৭ রাত ১২:৪০
মোটরসাইকেল ভ্যালী বলেছেন: কি বিভতস
স্বাগতম আমার ব্লগ বাড়ীতে Click This Link
৪| ০৬ ই জানুয়ারি, ২০১৭ রাত ১:২৪
শামীম শাহ বলেছেন: ধন্যবাদ
৫| ০৬ ই জানুয়ারি, ২০১৭ দুপুর ১:৩৬
রাজীব নুর বলেছেন: আপনার ব্লগটি পড়ে মন খারাপ হয়ে গেল।
৬| ২৮ শে জুন, ২০১৭ সকাল ৮:১২
প্রতিবাদি সৈনিক বলেছেন: লিখা নকল করে ফেইসবোক থেকে এনে বল্গার হতে চান যতসব
৭| ২৮ শে জুন, ২০১৭ সকাল ৮:১২
প্রতিবাদি সৈনিক বলেছেন: লিখা নকল করে ফেইসবোক থেকে এনে বল্গার হতে চান যতসব
©somewhere in net ltd.
১|
০৬ ই জানুয়ারি, ২০১৭ রাত ১২:১৩
চাঁদগাজী বলেছেন:
একদিকে আলোকিত এক আমেরিকা, ইউএস, কানাডা, ব্রাজিল; অন্ধকারে আরেক আমেরিকা, গুয়াতেমালা, হাইতি, মেস্কিকো