![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
এক ব্যক্তির নাম পাটোয়ারী।
তার কাছে পাটোয়ারী নামের মর্মার্থ জানতে চাওয়া হলো।
সে জানেনা।
পাটোয়ারীর অর্থ সে জানেনা কারন সে পাটোয়ারী না।
ঘাটাঘাটি করে জানা গেলো বৃটিশ আমলে জমিজিরাতের বেচাকেনায় মধ্যস্ততা করে যারা মজুরী (পারিশ্রমিক) নিতো, তাদের পাটোয়ারী বলা হতো।
একই ধাঁচের আরেকটা টাইটেল হলো তরফদার। যার অর্থ পক্ষপাতিত্ব করা।
এদুটো টাইটেলের প্রচলন পাকিস্তানিদের মধ্যে বিদ্যমান।
ভারতবর্ষে মানুষের নামের আগে পরে বহুমাত্রিক উপাধি ব্যবহারের রেওয়াজটা বহুকাল ধরে চলে আসছে। ইংরেজ শাষনামলে নতুন কিছু উপাধি যোগ হয়ে এর প্রভাবটা আরো বেড়েছে। যা নিয়মতান্ত্রিকভাবে এই অঞ্চলে আজ অবদি চলছে।
আমার এক বন্ধুর নাম আজিম ব্যাপারী। ব্যাপারী বলা হয় ব্যবসায়ীদের।
সে কোনো ব্যবসার সাথে জড়িত না।
কৌতুহলবশত তার নামের সাথে ব্যাপারী ব্যবহার করার কারন জানতে চাইলাম।
জবাবে বললো এটা আমাদের বংশীয় মর্যাদা। সম্ভবতঃ আমার প্রয়াত দাদা বিরাট রকমের ব্যবসায়ী ছিলেন। সেজন্যই প্রজন্ম পরম্পরায় আমরা এই টাইটেলটা ব্যবহার করছি।
ওহ্ আচ্ছা।
বললাম পরিবারের কাউকে জিজ্ঞেস করে আমাকে যাতে জানায়।
পরের দিন সে জেনে আসলো তার দাদা তুষের ব্যবসা করতেন। তুষ হচ্ছে চাল আলাদা করার পর ধানের অবশিষ্ট অংশ। যা গরু মহিষকে খেতে দেয়া হয়।
তার দাদা তুষের ব্যবসা করতেন সেজন্য তিনি ব্যাপারী। কিন্ত আজিম তুষের ব্যবসা করেনা…. তবুও সে ব্যাপারী !!
যাউগ্গা, সামনের দিকে আউগ্গা।
আসুন নামের আগে পরে ব্যবহৃত অন্যান্য টাইটেলগুলো নিয়ে একটু আলোচনা করা যাক।
মুন্সী...
যাদের হাতের লেখা সুন্দর, ভারত পাকিস্তানে তাদের মুন্সী উপাধি দেয়া হয়।
আমাদের দেশে মাদ্রাসায় পড়ুয়া ছাত্রদের মুন্সি ডাকে !
সব মাদ্রাসাছাত্রের হাতের লেখা কিন্ত সুন্দর হয়না। তবুও তারা মুন্সি।
সরকার...
বাংলাদেশে ইউ/পি নির্বাচনের আগে গ্রাম সরকার নির্বাচনের প্রথা ছিলো। গ্রাম সরকারের প্রচলন থাকা অবস্থায় এলাকাভিত্তিক বিচারকার্য পরিচালনা করতেন নির্বাচিত গ্রাম সরকাররা। দেশে এখন গ্রাম সরকার প্রথা নেই।
তবুও এদেশে হান্নান সরকার মান্নান সরকাররা ঠিকই আছে।
শাহনাজ সরকার শেরেবাংলা কৃষিবিশ্ববিদ্যালয়ের চেয়ারম্যান। উনার নামের শেষে সরকার লাগানো আছে। যদিও তিনি সরকার নন।
মাঝি...
প্রভাবশালী সামুদ্রিক মাছ ব্যবসায়ীরা বংশ পরিক্রমায় এই উপাধিটি ব্যাবহার করে থাকে।
শেখ...
এটি একটি অ্যারাবিক বংশ উপাধি। বাংলাদেশেও এই উপাধিটির প্রচলন আছে। যেমন শেখ জামাল, শেখ কামাল।
আমার একজন ঘনিষ্ট বন্ধুর নাম শেখ মামুন। যদিও সে আরবী বংশোদ্বুত না।
বিশ্বাস...
সম্ভবত এই নামধারীদের প্রতি আস্থা রাখা যেতে পারে। তারা কাউকে বিশ্বাস না করলেও তাদেরকে সবাই যাতে বিশ্বাস করে, সেজন্যই বোধহয় এই টাইটেলটি ব্যবহার করা হয়।
বাংলাদেশের সাবেক রাষ্ট্রপতি এবং জাতীয় সংসদের স্পীকারের নাম ছিলো আব্দুর রহমান বিশ্বাস।
কাজী...
যারা বিয়ের রেজিস্ট্রি করে থাকে। বিয়ে পড়ায়।
আমার ফ্রেন্ডলিস্টে একজন আছে, কাজী মাসুদুর রহমান। সে বিয়ে শাদীর কাজ করে কিনা জানা দরকার। ভবিষ্যতে প্রয়োজন হলে পরে ফেসবুকের মাধ্যমেই সেরে নেয়া যাবে।
কাজী’র আরেকটি অর্থ হলো বিচারক। এটা আরবী শব্দ। উর্দুতেও বিচারকদের কাজী বলা হয়।
খাঁন...
অর্থাৎ পাঠান। যাদের আরবীতে বলা “মুখ মাফী” জাতিগতভাবে এরা বিচার বুদ্ধিহীন।
মোঘলদের খাঁন বলা হয়। যারা অন্যায়ভাবে ভারতবর্ষে হামলা চালিয়ে ক্ষমতা দখল করে দীর্ঘস্থায়ী হতে পারেনি।
যারা শুধুমাত্র ধর্মীয় ইস্যুকে কেন্দ্র করে ভারত থেকে আলাদা হয়ে নতুন একটি মুসলিম রাষ্ট্র গঠন করেছিলো পরে।
অথচ তৎকালীন সময়ে ভারত ছিলো বিশ্বের পরাক্রমশালী একমাত্র মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ট দেশ।
বাংলাদেশে মুক্তিযুদ্ধের সময়ে বিশ্বের শক্তিধর দেশগুলোর সমর্থন থাকা স্বত্বেও ৯৩ হাজার সুদক্ষ সেনাবাহিনী নিয়ে আত্মসমর্পন করেছিলো।
কারন ওরা খাঁন (পাঠান) গাধার সাথে যাদের তুলনা করা হয়।
কেউ আবার শাহরুখ খান, সালমান খান আমির খানের উদাহরণ দিয়ে বসবেন না যেনো। পাকিস্তানের পরমাণু বিজ্ঞানীর নামও তো কাদের খান।
গোবরেও পদ্মফুল ফোটে কিন্ত !!
আসুন মজুমদার নিয়ে গবেষনা করা যাক এবারঃ
যতদুর জানি বৃটিশ আমলে জমিন লীজ নিয়ে যারা চাষবাস করতো কিংবা অন্যের কাছে সেই জমীন বর্গা (মজুম) দিয়ে যথা সময়ে লভ্যাংশ বুঝে নিতো, তাদের মজুমদার বলা হতো।
(সত্য নাও হতে পারে)
বৃটিশরা ভারতবর্ষ ত্যাগ করার পর মজুমদাররা সেইসব জমির মালিক হয়ে যায় (সেজন্য বর্তমানে জমিজমা রেজিস্ট্রির সময় ১৯২২ (বৃটিশ আমলের) সনের খতিয়ানকে হেবা (দান) দলিলের আওতাভুক্ত করা হয়। কারন ওই আমলের দলিলের হার্ডকপি অনেকের কাছেই নেই)
বৃটিশরা গাট্টি বোচকা নিয়ে কবেই চলে গেছে এই উপমহাদেশ ছেড়ে। কিন্ত মজুমদাররা এখনও ঘাপটি মেরে বসে আছে !
আমার মনে আছে দীর্ঘদিন আগে যুগান্তর পত্রিকায় পড়েছিলাম বি এন পি কর্মীদের দ্বারা শীলা রানী মজুমদার লাঞ্ছিত।
শীলা রানী মজুমদার ছিলেন একজন ফুটপাথ ভিখারিনী।
ভাবলাম মজুমদার হয়েও তিনি ভিক্ষা করেন। তার মানে এই টাইটেলটার মুল্যবান কোনো অর্থ নেই।
আবার কেউ কেউ নামের সাথে চৌধুরী ব্যবহার করে থাকে।
পাকিস্তানের পাঞ্জাব প্রদেশে কাজের ছেলেদের চৌধুরী বলে ডাকা হয়।
এই নামের অন্যকোনো ভালো অর্থও থাকতে পারে, তবে আমার জানা নেই।
উইকিপিডিয়ায় গবেষনা চালাতে হবে।
আরো আছে,
হাওলাদার, জোয়ারদার, মন্ডল, খোন্দকার, প্রামানিক, সৈয়দ, তালুকদার, কোরেশী, মিয়া, মোল্লা, মীর্জা, ভুঁইয়া ইত্যাদি।
আবার সনাতন ধর্মীদের মধ্যে অনেকগুলো শ্রুতিমধুর গোত্রীয় উপাধি আছে,
ব্যানার্জি, চ্যাটার্জি, মুখার্জি, গুপ্ত, দাস, রায়, শীল, চট্টোপাধ্যায়, বন্ধোপাধ্যায়, ঠাকুর, সেন, চক্রবর্তী ইত্যাদি।
দাসের অর্থ বুঝি। গোলামদের খাঁটি বাংলায় দাস বলা হয়ে থাকে।
একটা সময় ছিলো যখন রাজা বাদশাহ্রা গরীব মানুষদের কিনে দাস বানিয়ে রাখতো।
জমিদারী প্রথায় দাসের সন্তানরাও জমিদারদের গোলামী করতো। কিন্ত সভ্যতার এই যুগে স্বাধীনভাবে জন্ম নিয়েও এই টাইটেল ব্যবহার করে স্বেচ্ছায় নিজেদের গোলাম বানিয়ে রাখার যৌক্তিকতা জানা নেই।
বাকী টাইটেলগুলোর মর্মার্থ এখনো উদ্ধার করতে পারিনি। কারো ধারণা থাকলে সামান্য মেহনত করে আমাকে জানাবেন।
বাধিত থাকিবো...
২| ০৬ ই জানুয়ারি, ২০১৭ রাত ১:৪৯
প্রবাসী দেশী বলেছেন: নাম দিয়া কি আসে যায় ...মানুষ বেঁচে থাকে তার কাজে ..কথাটি ভুলে গেলে চলবে না।
৩| ০৬ ই জানুয়ারি, ২০১৭ রাত ২:০৪
শামীম শাহ বলেছেন: শাহ্ তো শাহেনশাহ্
৪| ০৬ ই জানুয়ারি, ২০১৭ রাত ৩:২১
ইউজারনেম / ইমেইল বলেছেন: সুন্দর পোস্ট। ভাল লেগেছে।
৫| ০৬ ই জানুয়ারি, ২০১৭ সকাল ৭:১৩
শূণ্য পুরাণ বলেছেন: নামের টাইটেল বিশারদ! লেখাটা পছন্দ হয়েছে।
৬| ০৬ ই জানুয়ারি, ২০১৭ সকাল ৮:৩৮
সাদা মনের মানুষ বলেছেন: কয়েকটাতে বেশ মজা পেলাম.....আরো কিছু টাইটেল মনে হয় বাকী রয়ে গেল
৭| ০৬ ই জানুয়ারি, ২০১৭ সকাল ৮:৩৯
সাদা মনের মানুষ বলেছেন: আচ্ছা শাহ্ উপাধী নিয়া তো কিছুই বললেন না, আপনার নামের মাহাত্মটাও তাহলে জানা হয়ে যেত
৮| ০৬ ই জানুয়ারি, ২০১৭ সকাল ৯:৫৭
শাহাদাৎ হোসাইন (সত্যের ছায়া) বলেছেন: ব্যাপক গবেষণা
৯| ০৬ ই জানুয়ারি, ২০১৭ বিকাল ৪:৩১
শামীম শাহ বলেছেন: লেখার সময় যতটুকু মনে এসেছে তাই লিখলাম। আরও অনেক টাইটেল আছে। বিশেষ করে সনাতন ধর্মে
১০| ০৬ ই জানুয়ারি, ২০১৭ সন্ধ্যা ৬:৪১
গিয়াস উদ্দিন লিটন বলেছেন: শেখ, সৈয়দ,মোগল, পাঠান, কাজী, গাজী, শাহ, মিঞা, মীর্জা, মোল্লা, খন্দকার ইত্যাদি কয়েকটি ভিনদেশী পদবী যা উপ মহাদেশে মুসলমান আগমনের সাথে জড়িত সে কয়টি পদবী বাদে বাংলার অধিকাংশ পদবীই হিন্দু-মুসলমান নির্বিশেষে প্রায় সকল ধর্মে ও বর্নে সুলভ।
আরো কিছু পদবী যেমন- চৌধুরী, হালদার, মজুমদার, তালুকদার, পোদ্দার, সরদার, প্রামাণিক, হাজরা, হাজারী, মন্ডল, মোড়ল, মল্লিক, সরকার, বিশ্বাস ইত্যাদি বংশ পদবীর রয়েছে হিন্দু -মুসলমান নির্বিশেষে সকল সপ্রদায়েই একান্ত রূপ।
১১| ০৭ ই জানুয়ারি, ২০১৭ সন্ধ্যা ৬:৪০
শামীম শাহ বলেছেন: বর্তমান যুগে এতোসব বাহারী পদবী নিস্প্রয়োজন। আমি মনে করি।
ধন্যবাদ আপনাকে গিয়াস উদ্দিন লিটন
©somewhere in net ltd.
১|
০৬ ই জানুয়ারি, ২০১৭ রাত ১:৪৫
প্রবাসী দেশী বলেছেন: বাকী টাইটেলগুলোর মর্মার্থ এখনো উদ্ধার করতে পারিনি। নিজের টাই তো বললেন না। .... .
যাউগ্গা, আবার বলেন সামনের দিকে আউগ্গা।