নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

ইদের শুভেচ্ছা

শামীম শাহ

শামীম আহমেদ

শামীম শাহ › বিস্তারিত পোস্টঃ

ঘটনা বিশ্লেষন

০৪ ঠা মার্চ, ২০১৭ রাত ১:৩৮


গত মঙ্গলবার (২৮/০২/১৭) দেশব্যাপী পরিবহন ধর্মঘট পালিত হয়েছে।
একজন ট্রাক চালকের আদালতকতৃক মৃত্যুদন্ডাদেশকে কেন্দ্র করে ডাকা হয়েছিলো এই ঘর্মঘট। সরকারবিরোধীদের স্বতস্ফুর্ত সমর্থন ছিলো ধর্মঘটে।
সরকারের প্রতি অসন্তষ্ট দেশের সাধারণ জনগণেরও মৌন সমর্ন ছিলো এতে।

কিন্ত আমরা আম জনতার কয়জনই বা এই ধর্মঘটের পেছনের উদ্দেশ্যটা জানি?

মুল ঘটনাটি হলো, (প্রথম আলোর সুত্র অনুযায়ী)
ড্রাইভার মীর হোসেন সাভারের ঝাউচর এলাকায় মাটি টানা ট্রাকের ড্রাইভার।
তিনি ধলেশ্বরী নদীর পাড় থেকে ট্রাকে করে মাটি এনে বিক্রি করেন। এটাই তার পেশা।

ধলেশ্বরী নদীপাড়ে বসবাস করেন স্থানীয় বাসিন্দা নূরু গাজি ও তার স্ত্রী খোদেজা বেগম।
ঘটনার পাঁচ দিন আগে থেকে নুরু গাজীর পারিবারিক রাস্তা দিয়ে ট্রাকে করে মাটি নিয়ে যেতে থাকেন মীর হোসেন। এতে করে বাড়ির সামনের রাস্তার মারাত্মক অবনতি হয়।
নুরু গাজি নিষেধ করলেও ড্রাইভার মীর হোসেন তার কথা আমলে নেন নি। ঘটনার দিন (২০-জুন-২০০৩) নূরু গাজী ও তার স্ত্রী খোদেজা বেগম রাস্তায় দাঁড়িয়ে বাধা দিলে মীর হোসেন গাড়ির চাকায় পিষে দেয়ার হুমকি দেন।
কিন্ত এতেও তারা রাস্তা থেকে সরে না আসায় আসামী মীর হোসেন ইচ্ছাকৃতভাবে ট্রাকচাপা দেন এবং খোদেজা ঘটনাস্থলে মারা যান।
মামলার দীর্ঘসময় পর আসামী দোষী সাব্যস্ত হওয়ায় আদালতে মীর হোসেনের মৃত্যুদন্ডের রায় দেয়া হয়।

এই রায়কে কেন্দ্র করেই ডাকা হয়েছে দেশব্যাপী ধর্মঘট।
ঘটনাটি কি নিয়ে, সেটা পরিস্কারভাবে না জেনেই আমরা সরকারের সমালোচকেরা সমর্থন করে বসলাম পরিবহণ মালিক সমিতির সিদ্ধান্তকে।

ধর্মঘটের দরুন দেশে যে অবর্ণনীয় জনদুর্ভোগ আর ক্ষয়ক্ষতি হলো,
এর দায়ভার নেবে কে?
সরকার? বিরোধীদল? পরিবহন সমিতির ডাকে সাড়া দেয়া সাধারণ শ্রমিকরা?
নাকি এটি আমাদের কপালের লিখন ছিলো!

এবার আসি আরেকটি ঘটনায়,
২০০৯ সালে নোয়াখালীর সোনাইমুড়ি উপজেলায় পোরকরা গ্রামে হিজবুত তাওহীদ নামক একটা ধর্মীয় সংগঠন সরব হয়ে ওঠে।
তাদের মতাদর্শ সুন্নি ইসলামের সাথে কিছুটা সাংঘর্ষিক হওয়ায় হিজবুত তাওহীদ কর্মী সমর্থকদের বিরুদ্ধে ফতোয়া জারি করেন স্থানীয় মসজিদের ইমাম।
একদিন শুক্রবার জুমার নামাজের পর ইমাম সাহেব মুসল্লীদের সঙ্গে নিয়ে অতর্কিত হামলা করেন হিজবুত তাওহীদ সদস্যদের ঘরবাড়িতে। তাদের বসতবাড়িতে অগ্নিসংযোগ করে আটটি বাড়ি সম্পুর্ণ জ্বালিয়ে দেয়া হয়।
তাদের ঘরে লুটপাট চালানো হয়। তাদের পরিবারের সদস্যদের সবাইকে আহত করা হয়। নারীদের সম্ভ্রমহানি করা হয়। গৃহহীন করা হয় অনেককেই।

উদ্দেশ্য একটাই, ধর্মরক্ষা করা।

দীর্ঘদিন নিস্ক্রিয় থাকার পর আস্তে আস্তে আবারো সংগঠনটির কার্যক্রম চালু হয় সেখানে। অতঃপর ২০১৬ সালের ১৪ই মার্চ আবারও ইমাম কতৃক ফতোয়া জারি করে হামলা করা হয় তাদের উপর। এবারের হামলা ছিলো অত্যন্ত লোমহর্ষক।
ভয়াবহ এই হামলায় অংশ নেয় সাধারণ কৃষক শ্রমিক দিনমজুর, ড্রাইভার, ব্যবসায়ী, সর্বস্তরের ইসলামপ্রিয় মানুষ।

কাফের হত্যা করার আহবান ছড়িয়ে পড়লো চতুর্দিকে। একজনের কান থেকে আরেকজনের কান।
গুজবের বলি হলো শতশত নিরীহ লোক। হাসপাতালগুলোতে তিল ধারনের ঠাঁই ছিলোনা। জবাই করে হত্যা করা হয়েছে তিনজনকে। কারো চোখ উপড়ে নেয়া হয়েছে কারো গায়ে পেট্রোল ঢেলে আগুন লাগিয়ে দেয়া হয়েছে।
হামলাকারী দল কিংবা আহতদের অনেকেরই ধর্ম সম্পর্কে তেমন কোনো ধারণা নেই।
কেউ বা ৫ ওয়াক্ত নামাজের এক ওয়াক্তও ঠিকভাবে পড়েনা। (কমেন্টে দেয়া ছবিগুলো দেখলে বুঝবেন)

এর দায়ভার কে নেবে?
সরকার? বিরোধীদল, নাকি ধর্ম রক্ষা করতে আসা লাঠিকোদাল হাতে গ্রামের ওই অশিক্ষিত কৃষক?

প্রসঙ্গ আসায় বলতে হচ্ছে,
১৯৯২ সালে ভারতের বাববি মসজিদ ভাঙ্গাকে কেন্দ্র করে আগুনের লেলিহান শিখার মতো সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা ছড়িয়ে পড়ে আশেপাশের দেশগুলোতে।
এর সবচেয়ে বেশি প্রভাব পড়েছিলো বাংলাদেশে। গরীব নিরীহ হিন্দুদের উপর চলেছিলো স্মরণকালের ভয়াবহ অত্যাচার।
শতাব্দি হতে বাস করে আসা বাপদাদার বসতবাড়ি থেকে তাদের উচ্ছেদ করা হয়েছে। হত্যা, ধর্ষন, মন্দির ভাঙ্গা, তাদের ঘরবাড়িতে লুটপাটতো ছিলোই।
এরশাদ ক্ষমতা ছাড়ার আগেও বাবরি মসজিদ ইস্যুতে গুজব রটিয়ে দেশে সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা হয়েছিলো। কিন্ত ৯২ এর পরে দফায় দফায় হামলা চালানো হয়েছে হিন্দুদের উপর।
গৃহহীন হয়েছে হাজার হাজার সংখ্যালঘু হিন্দু। যাদের অধিকাংশই ছিলো গ্রামের খেটে খাওয়া সাধারণ মানুষ।
তারা আদৌ জানতোনা আসলে কোন কারনে বাপদাদার বসতবাড়ি থেকে বিতাড়িত করা হচ্ছে তাদের!
তাদের অন্যায়টা কি ছিলো?
ভারতের বাবরি মসজিদ ভাঙ্গার সাথে বাংলাদেশের গরীব অসহায় হিন্দু নাগরিকদের সম্পর্ক কি ছিলো? এর জবাবটা কেউ দিতে পারবেন?

তাদের রেখে যাওয়া সেসব জমিনের বর্তমান মালিক কারা, কখনো জানতে চেয়েছি আমরা?
নির্যাতনের পর গৃহহীন হয়ে সহজ সরল ভীতুমনা হিন্দু পরিবারগুলো খালি হাতে তাদের স্ত্রী সন্তান আর বৃদ্ধ অসুস্থ মা বাবাকে নিয়ে কোথায় আশ্রয় নিয়েছিলো, তারা কি খেয়ে বেঁচেছিলো, ঘর থেকে বিতাড়িত হয়েও বা তারা কতটা নিরাপদ ছিলো, একবার ভেবেছি আমরা?

এর দায়ভার কে নেবে?
সরকার, বিরোধীদল, নাকি আমাদের বিবেক?

কাজেই,
একজনের অপরাধের দায়ভার অন্যজনের কাঁধে চাপানোর রাষ্ট্রীয় সংস্কৃতি থেকে আমাদের বেরিয়ে আসতে হবে।
প্রত্যেক মানুষেরই বিবেক আছে। সিদ্ধান্ত নেয়ার অধিকার আছে।
ধর্মীয় কিংবা রাজনৈতিক যেকোনো ঘটনার সচ্ছ সংবাদ পাওয়ার আগ পর্যন্ত বিনাবিবেচনায় সিদ্ধান্ত নিয়ে হুমড়ি খেয়ে কারো উপর আক্রমণ করার মানসিকতা থেকে সরে আসতে হবে।

মন্তব্য ৪ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (৪) মন্তব্য লিখুন

১| ০৪ ঠা মার্চ, ২০১৭ রাত ১:৪৪

শোভনের শোভন বলেছেন: সহমত পোষন করছি ভাই।

০৪ ঠা মার্চ, ২০১৭ রাত ১:৫৬

শামীম শাহ বলেছেন: ধন্যবাদ ভাই

২| ০৪ ঠা মার্চ, ২০১৭ দুপুর ২:৪০

টারজান০০০০৭ বলেছেন: "১৯৯২ সালে ভারতের বাববি মসজিদ ভাঙ্গাকে কেন্দ্র করে আগুনের লেলিহান শিখার মতো সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা ছড়িয়ে পড়ে আশেপাশের দেশগুলোতে।
এর সবচেয়ে বেশি প্রভাব পড়েছিলো বাংলাদেশে। গরীব নিরীহ হিন্দুদের উপর চলেছিলো স্মরণকালের ভয়াবহ অত্যাচার।
শতাব্দি হতে বাস করে আসা বাপদাদার বসতবাড়ি থেকে তাদের উচ্ছেদ করা হয়েছে। হত্যা, ধর্ষন, মন্দির ভাঙ্গা, তাদের ঘরবাড়িতে লুটপাটতো ছিলোই।"....................গাজার নৌকা পাহাড় ডিঙ্গাইয়া যায় !

৩| ১৭ ই মে, ২০১৭ রাত ১২:৪৫

শামীম শাহ বলেছেন: বুঝিয়ে বলুনটারজান

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.