![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের শৈশব, কৈশোর কেটেছে পারিবারিক ধর্মীয় আবহে।
পিতা শেখ লুৎফুর রহমান ছিলেন একজন ধার্মিক ব্যক্তিত্ব। যৌবন বয়সেই তিনি রাজনীতিতে জড়িয়ে পড়েছিলেন দুই আলেমের সান্নিধ্যে থেকে। তাঁর রাজনৈতিক দুইজন গুরুই দেওবন্দ পাশ মাওলানা। ফলে আলেমদের সাথে বঙ্গবন্ধুর অন্য রকম এক সুগভীর সম্পর্ক ছিল। ইতিহাস তাই প্রমাণ করে।
বঙ্গবন্ধুর পারিবারিক আত্মীয় সূত্রে এক দাদা ছিলেন 'সদর সাহেব হুজুর' নামে পরিচিত মাওলানা শামছুল হক ফরিদপুরী রহমতুল্লাহ আলাইহি। তিনি যখন লালবাগ মাদরাসার মুহতামিম, তখন শেখ মুজিবুর রহমান ঢাকার রাজনীতিতে তরুন নেতা। বঙ্গবন্ধু সদর সাহেব হুজুরের একান্ত ভক্ত ছিলেন।
সপ্তাহে কয়েকবার দাদাকে দেখতে লালবাগে যেতেন। ফলে তৎকালীন ফরিদপুরী হুজুরের সমসাময়িক অনেক আলেমকে তিনি দাদাজি বলে সম্বোধন করতেন। সেই সুবাদে তাঁদের সাথে সুগভীর এক সম্পর্ক গড়ে উঠেছিল শেখ মুজিবুর রহমানের। মুজিবের সেই সময়কার ইতিহাসটি আমাদের অনেকেরই জানা নেই। মাওলানাদের সাথে বঙ্গবন্ধুর এই শ্রদ্ধা ভালবাসার সম্পর্কটা আড়ালেই রয়ে গেছে। কেবল রাজনৈতিক জীবনটাই ছড়িয়ে ছিঁটিয়ে আছে ইতিহাসের নানান বাঁকে।
মাওলানা আতাউর রহমান খান (কিশোরগঞ্জের সাবেক এমপি) তাঁর এক স্মৃতিচারণে লিখেছেন,
‘গাড়ি ইত্তেফাক অফিসের সামনে দাঁড় করিয়ে ড্রাইভার বাদে আমরা সবাই শায়েখদ্বয়ের (মাওলানাশামসুল হক ফরিদপুরী এবং মাওলানা আতাহার আলী) পেছনে পেছনে গেলাম। তাঁরা খুঁজছিলেন শেখ মুজিবুর রহমান সাহেবকে। মুজিবুর রহমান সাহেব তখনও বড় কোন নেতা ছিলেন না।
তবে ছাত্র নেতা হিসেবে এবং জাতীয় নেতাদের কাছে যাতায়াত করতেন বলে অনেক কিছুই করতে পারতেন। আমরা অফিসের অনেক পিছনের এক রুমের দরজায় দাঁড়িয়ে দেখতে পেলাম, কয়েকজন লোক গল্পগুজবে মত্ত। আমরা গিয়ে দাঁড়াতেই শেখ মুজিব সাহেব চেয়ার ছেড়ে হন্তদন্ত অবস্থায় এগিয়ে এলেন। আর বিস্মিত কণ্ঠে বলতে লাগলেন- আরে, দাদা এখানে! হুযুর আপনি? দাদা এখানে কোন খবর না দিয়েই সরাসরি উপস্থিত! কোন দরকার হলে আমাকে একটু খবর দিলেই তো আমি উপস্থিত হতাম।
আতাহার আলী সাহেব বললেন, আরে না না, খবর দেয়ার হলে তোমাকে খবরই দিতাম। এখানেই প্রয়োজন, তাই নিজে এসেছি। এরপর শেখ সাহেব তাঁর অন্যান্য বন্ধুদের পরিচয় করিয়ে দিয়ে, সদর সাহেব এবং আতাহার আলী সাহেবকে বসালেন। উল্লেখ্য, শেখ মুজিবুর রহমান আতাহার আলী সাহেবকে দাদা এবং সদর সাহেবকে দাদাহুজুর বলে সম্বোধন করতেন'।
(হযরত ফরিদপুরী (র.)-এর সান্নিধ্যে কিছুক্ষণ, মাওলানা শামসুল হক ফরিদপুরী (র.) স্মারক গ্রন্থ, প্রকাশ ১৯৯৯ ইংরেজি)।
আল্লামা শাসছুল হক ফরিদপুরী সব সময় পাঞ্জাবীর উপরে কালো কোট পড়তেন। একদিন লালবাগে হুজুরের কামরায় শেখ মুজিবুর রহমান বসা। মুজিব বললেন, দাদা আপনার কোটটি আমার খুব ভাল লাগে। সাথে সাথে সদর সাহেব হুজুর নিজের পরনের কালো কোটটি গা থেকে খুলে নাতি মুজিবকে পরিয়ে দিলেন।
বললেন, ‘নাতি গায়ে দাওতো দেখি, তোমাকে কেমন লাগে। মুজিব পরতেই ফরিদপুরী বললেন, দারুন লাগছে নেতাকে। এখন মনে হচ্ছে তোমাকে সত্যিকারের জাতীয় নেতা। ঠিক আছে তোমাকে দিয়ে দিলাম। তুমি সব সময় এটা পড়ে মিটিং মিছিলে যাবে।’ সেই যে দাদাহুজুরের কালো কোট শেখ মুজিবুর রহমান গায়ে পড়েছিলেন, বরকতের জন্যই কিনা কে জানে, আমৃত্যু এই কালো কোট ছিল তাঁর নিত্য সঙ্গী। বঙ্গবন্ধুর প্রিয় পোশাক।
(কে এই মাওলানা ৬ষ্ট পর্ব, তামিম রায়হান, আমারব্লগ ১১ নভেম্বর ২০১২)
মুজিবকোট নিয়ে নানান বানোয়াট গল্প রয়েছে ইতিহাসের পাতায়।
বিখ্যাত 'মুজিবকোট' মূলত মাওলানা কোট ছিল। বঙ্গবন্ধুর শরীরে সারা জীবন জড়িয়েছিল এদেশের সর্বজন শ্রদ্ধেয় এক বুর্যুগ আলেমের ভালোবাসা।
এটি কখনোই বঙ্গবন্ধুর সৃষ্ট আদর্শ ছিল না।
ভারত উপমহাদেশে প্রথম রাজনীতিবিদ হিসেবে হাতা বিহীন কোট পরার ধারা শুরু করেছিলেন পন্ডিত জওহরলাল নেহেরু। কোট পরার রাজনৈতিক রেওয়াজটি বৃটিশ আমল থেকে শুরু হয়ে আজ অবদি ভারতবর্ষে চলে আসছে নিয়মতান্ত্রিকভাবেই। বিশেষ করে ভারত, পাকিস্তান এবং বাংলাদেশে।
কোটের সাথে ব্যক্তি আদর্শ, ধর্ম কিংবা রাজনীতির কোন সম্পর্ক নেই।
ছয় দফা আন্দোলনের সাথে কোটের সম্পর্কটিও বিতর্কিত। বঙ্গবন্ধুর কোন ছবিতেই ছয় বোতামের কোট পরতে দেখা যায়নি তাঁকে। তবে হ্যাঁ, বঙ্গবন্ধুর ঘোষিত ছয় দফা আন্দোলনকে স্মরণীয় রাখতে কেউ কেউ ছয় বোতামের কোট বানিয়েছিলেন। সাধারণত একটি কোটের সর্বোচ্চ পাঁচটি বোতাম হয়ে থাকে। এবিষয়ে কারো কোন প্রশ্ন থাকলে কমেন্টে লিখতে পারেন। যথাযথ উত্তর দেয়ার চেষ্টা করবো ইনশাআল্লাহ।
(ছবিতে শেখ ফজলুল হক মণি তাঁর জন্মদিনে কোট পরিয়ে দিচ্ছেন বঙ্গবন্ধুকে)
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের শৈশব, কৈশোর কেটেছে পারিবারিক ধর্মীয় আবহে।
পিতা শেখ লুৎফুর রহমান ছিলেন একজন ধার্মিক ব্যক্তিত্ব। যৌবন বয়সেই তিনি রাজনীতিতে জড়িয়ে পড়েছিলেন দুই আলেমের সান্নিধ্যে থেকে। তাঁর রাজনৈতিক দুইজন গুরুই দেওবন্দ পাশ মাওলানা। ফলে আলেমদের সাথে বঙ্গবন্ধুর অন্য রকম এক সুগভীর সম্পর্ক ছিল। ইতিহাস তাই প্রমাণ করে।
বঙ্গবন্ধুর পারিবারিক আত্মীয় সূত্রে এক দাদা ছিলেন 'সদর সাহেব হুজুর' নামে পরিচিত মাওলানা শামছুল হক ফরিদপুরী রহমতুল্লাহ আলাইহি। তিনি যখন লালবাগ মাদরাসার মুহতামিম, তখন শেখ মুজিবুর রহমান ঢাকার রাজনীতিতে তরুন নেতা। বঙ্গবন্ধু সদর সাহেব হুজুরের একান্ত ভক্ত ছিলেন।
সপ্তাহে কয়েকবার দাদাকে দেখতে লালবাগে যেতেন। ফলে তৎকালীন ফরিদপুরী হুজুরের সমসাময়িক অনেক আলেমকে তিনি দাদাজি বলে সম্বোধন করতেন। সেই সুবাদে তাঁদের সাথে সুগভীর এক সম্পর্ক গড়ে উঠেছিল শেখ মুজিবুর রহমানের। মুজিবের সেই সময়কার ইতিহাসটি আমাদের অনেকেরই জানা নেই। মাওলানাদের সাথে বঙ্গবন্ধুর এই শ্রদ্ধা ভালবাসার সম্পর্কটা আড়ালেই রয়ে গেছে। কেবল রাজনৈতিক জীবনটাই ছড়িয়ে ছিঁটিয়ে আছে ইতিহাসের নানান বাঁকে।
মাওলানা আতাউর রহমান খান (কিশোরগঞ্জের সাবেক এমপি) তাঁর এক স্মৃতিচারণে লিখেছেন,
‘গাড়ি ইত্তেফাক অফিসের সামনে দাঁড় করিয়ে ড্রাইভার বাদে আমরা সবাই শায়েখদ্বয়ের (মাওলানাশামসুল হক ফরিদপুরী এবং মাওলানা আতাহার আলী) পেছনে পেছনে গেলাম। তাঁরা খুঁজছিলেন শেখ মুজিবুর রহমান সাহেবকে। মুজিবুর রহমান সাহেব তখনও বড় কোন নেতা ছিলেন না।
তবে ছাত্র নেতা হিসেবে এবং জাতীয় নেতাদের কাছে যাতায়াত করতেন বলে অনেক কিছুই করতে পারতেন। আমরা অফিসের অনেক পিছনের এক রুমের দরজায় দাঁড়িয়ে দেখতে পেলাম, কয়েকজন লোক গল্পগুজবে মত্ত। আমরা গিয়ে দাঁড়াতেই শেখ মুজিব সাহেব চেয়ার ছেড়ে হন্তদন্ত অবস্থায় এগিয়ে এলেন। আর বিস্মিত কণ্ঠে বলতে লাগলেন- আরে, দাদা এখানে! হুযুর আপনি? দাদা এখানে কোন খবর না দিয়েই সরাসরি উপস্থিত! কোন দরকার হলে আমাকে একটু খবর দিলেই তো আমি উপস্থিত হতাম।
আতাহার আলী সাহেব বললেন, আরে না না, খবর দেয়ার হলে তোমাকে খবরই দিতাম। এখানেই প্রয়োজন, তাই নিজে এসেছি। এরপর শেখ সাহেব তাঁর অন্যান্য বন্ধুদের পরিচয় করিয়ে দিয়ে, সদর সাহেব এবং আতাহার আলী সাহেবকে বসালেন। উল্লেখ্য, শেখ মুজিবুর রহমান আতাহার আলী সাহেবকে দাদা এবং সদর সাহেবকে দাদাহুজুর বলে সম্বোধন করতেন'।
(হযরত ফরিদপুরী (র.)-এর সান্নিধ্যে কিছুক্ষণ, মাওলানা শামসুল হক ফরিদপুরী (র.) স্মারক গ্রন্থ, প্রকাশ ১৯৯৯ ইংরেজি)।
আল্লামা শাসছুল হক ফরিদপুরী সব সময় পাঞ্জাবীর উপরে কালো কোট পড়তেন। একদিন লালবাগে হুজুরের কামরায় শেখ মুজিবুর রহমান বসা। মুজিব বললেন, দাদা আপনার কোটটি আমার খুব ভাল লাগে। সাথে সাথে সদর সাহেব হুজুর নিজের পরনের কালো কোটটি গা থেকে খুলে নাতি মুজিবকে পরিয়ে দিলেন।
বললেন, ‘নাতি গায়ে দাওতো দেখি, তোমাকে কেমন লাগে। মুজিব পরতেই ফরিদপুরী বললেন, দারুন লাগছে নেতাকে। এখন মনে হচ্ছে তোমাকে সত্যিকারের জাতীয় নেতা। ঠিক আছে তোমাকে দিয়ে দিলাম। তুমি সব সময় এটা পড়ে মিটিং মিছিলে যাবে।’ সেই যে দাদাহুজুরের কালো কোট শেখ মুজিবুর রহমান গায়ে পড়েছিলেন, বরকতের জন্যই কিনা কে জানে, আমৃত্যু এই কালো কোট ছিল তাঁর নিত্য সঙ্গী। বঙ্গবন্ধুর প্রিয় পোশাক।
(কে এই মাওলানা ৬ষ্ট পর্ব, তামিম রায়হান, আমারব্লগ ১১ নভেম্বর ২০১২)
মুজিবকোট নিয়ে নানান বানোয়াট গল্প রয়েছে ইতিহাসের পাতায়।
বিখ্যাত 'মুজিবকোট' মূলত মাওলানা কোট ছিল। বঙ্গবন্ধুর শরীরে সারা জীবন জড়িয়েছিল এদেশের সর্বজন শ্রদ্ধেয় এক বুর্যুগ আলেমের ভালোবাসা।
এটি কখনোই বঙ্গবন্ধুর সৃষ্ট আদর্শ ছিল না।
ভারত উপমহাদেশে প্রথম রাজনীতিবিদ হিসেবে হাতা বিহীন কোট পরার ধারা শুরু করেছিলেন পন্ডিত জওহরলাল নেহেরু। কোট পরার রাজনৈতিক রেওয়াজটি বৃটিশ আমল থেকে শুরু হয়ে আজ অবদি ভারতবর্ষে চলে আসছে নিয়মতান্ত্রিকভাবেই। বিশেষ করে ভারত, পাকিস্তান এবং বাংলাদেশে।
কোটের সাথে ব্যক্তি আদর্শ, ধর্ম কিংবা রাজনীতির কোন সম্পর্ক নেই।
ছয় দফা আন্দোলনের সাথে কোটের সম্পর্কটিও বিতর্কিত। বঙ্গবন্ধুর কোন ছবিতেই ছয় বোতামের কোট পরতে দেখা যায়নি তাঁকে। তবে হ্যাঁ, বঙ্গবন্ধুর ঘোষিত ছয় দফা আন্দোলনকে স্মরণীয় রাখতে কেউ কেউ ছয় বোতামের কোট বানিয়েছিলেন। সাধারণত একটি কোটের সর্বোচ্চ পাঁচটি বোতাম হয়ে থাকে। এবিষয়ে কারো কোন প্রশ্ন থাকলে কমেন্টে লিখতে পারেন। যথাযথ উত্তর দেয়ার চেষ্টা করবো ইনশাআল্লাহ।
(ছবিতে শেখ ফজলুল হক মণি তাঁর জন্মদিনে কোট পরিয়ে দিচ্ছেন বঙ্গবন্ধুকে)
©somewhere in net ltd.