![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
আমি অতি সাধারন একজন মানুষ,নিজকে নিয়ে খুব বেশি প্রত্যাশা নাই।পেশায় টেক্সটাইল ইঞ্জিনিয়ার,একসময় নাটকে ক্যামেরার পেছনে কাজ করেছি।টুকটাক লেখালেখি করি।হাসতে ভালোবাসি,ভালোবাসি হাসাতে।এই তো।
চিন্তা করুন একটা সাধারন পরিবারের কথা,এই পরিবারে বৃদ্ধ দাদী,বাবা,মা,দুই ছেলে,ছেলেদের বউ,দুই মেয়ে,নাতি নাতনি আছে।পরিবারের কর্তা বাবা,প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক ছিলেন রিটায়ার করেছেন।বড় ছেলে সরকারী চাকুরী করে আর ছোট ছেলে একটা মাল্টিন্যাশনাল কোম্পানীতে।বড় মেয়ের বিয়ে হয়েছে,ছোট মেয়েটা ক্লাস টেনে পড়ে সাইন্সে।এদের প্রাত্যহিক জীবনের সাথে ঠাসাঠাসি করে আছে দুর্নিতী,এগুলো প্রমান করতে নিউটনের গতিসুত্র লাগে না শুদ্ধ বিবেক আর সততা থাকলেই হয়,আপনাদেরকে স্বাগতম দুর্নিতীর সর্গরাজ্যে।
ছোটবেলায় আমরা সবাই পড়েছি মানুষের মৌলিক চাহিদা সম্পর্কে?আসুন আমরা ঢুকে পড়ি এই পরিবারের মৌলিক চাহিদার সাথে দুর্নিতীর সর্গরাজ্যে।
খাদ্য।
** বাঁচতে হলে খেতে হবে,হয় ভাত নাহয় রুটি।ধরে নেই উপরোক্ত পরিবারের সবাই মিনিকেট চালের ভাত খায়।প্রতি মাসে তাদের ৫০ কেজীর একবস্তা চাউল লাগে।মিনিকেট চাউলে মেশানো থাকে আটাশ চাউল,কিভাবে যে এরা মেশায় না দেখলে কেউই বিশ্বাস করতে পারবেন না।তাহলে প্রতি কেজীতে ৩ টাকার আটাশ চালের দুর্নিতী হলে
মাসিক চাল বাবদ দুর্নিতীর চার্জ, ৫০*৩=১৫০ টাকা।(*শুধু মিনিকেট নয় অন্যান্য চাউলের ক্ষেত্রেও এটা প্রযোজ্য)
** তারপরে আসা যাক তেলের কথায়
সয়াবীন তেল=সয়াবীন+পাম ওয়েল, সরিষার তেল=সরিষা+তিষি+ভ্যান্না।
এই পরিবারে মাসিক সয়াবীন তেল লাগে ১২ লিটার আর সরিষার তেল লাগে আধা লিটার।প্রতি লিটার সয়াবীনে দুর্নিতী হয় ৫ টাকার আর সরিষার তেলে হয় ৭ টাকার তাহলে মাসিক তেল বাবদ চার্জ,সয়াবীন+সরিষা=১২*৫+৩.৫=৬৩.৫ টাকা।
** এবার আসি মসলার দিকে,
টাকা দিয়ে আমরা হলুদের গুঁড়ার সাথে কিনছি সীসা,মরিচের গুঁড়ার সাথে কিনছি ইঁটের গুঁড়া।জিরা আর ধনিয়ার গুঁড়ায় ডাঁটার ফাঁকি।
তাহলে এই পরিবারের মসলা বাবদ মাসিক দুর্নিতীর চার্জ =১৭ টাকা।
** চাল,তেল আর মসলা খেয়ে তো জীবন চলে না ভাই,মাছ,মাংস,ডাল,সব্জী লাগবে।
মাছে আছে ফরমালিন,যে মাছ বরফ দিয়ে এক সপ্তাহ ঠিক থাকার কথা সেটা এখন মাসের পর মাস ঠিক থাকছে পচছে না।মাছ বিক্রেতা যদি প্রতিদিন বিশ কেজী মাছ আমদানী করে তার ভেতর এক কেজী পচার কথা,সেই মাছ এখন পচছে না।মাছ ভেদে গড়ে ধরলাম কেজীপ্রতি সে দুর্নিতী করছে ২.৫ টাকা।
এই পরিবারের মাসে মাছ লাগে আট কেজী,মাছের চার্জ=৮*২.৫=২০ টাকা।
** লাগবে মাংস,গরুর মাংসের সাথে আছে মহিষ আর খাসীর মাংসের সাথে আছে ভেড়া।মুরগী কিনতে না জানলে দেশী মুরগীর বদলে পাবেন পাকিস্তানী।ব্রয়লার কিনলে আরেক সমস্যা ব্রয়লারের খাদ্যের সাথে আছে বিভিন্ন রকম খনিজ যার অনেকটাই আমাদের শরীরের জন্য বিষাক্ত।রান্নার পরেও তা ধ্বংস হয় না।একটা কথা বলতে ভুলে গেছি গরু মোটাতাজা করনেও অনেক পদ্ধতি ব্যাবহার করা হয়,যেমন মোটাতাজাকরন ওষধ,তুলা খাওয়ানো আরও হাবিজাবি।এসবও মানবদেহের জন্য হানিকারক।
এই পরিবারের মাসিক মাংস লাগে ৫ কেজী,কেজীপ্রতি দুর্নিতীর চার্জ ১০ টাকা করে হলে মাসে আসছে ৫*১০=৫০ টাকা।
** সব্জী কিনতে হবে।যারা সব্জী উৎপাদন করে সারা বছর তাদের ঘরে হাহাকার,দাম নাই।অথচ বাজারে যান আগুন,সব্জীতে হাত দেওয়া যায় না।তাহলে দামটা উঠছে কোথায়?এইতো এসেছেন আসল যায়গায়।ধরেন আপনে সব্জীর ব্যাবসায়ী পাইকারী দরে কৃষকের কাছ থেকে কিনেছেন সব্জী।আপনি টাকা দিয়ে মাল কিনবেন আর ভাই বেরাদরদের কিছু দিবেন না তা কি হয়!এই হল শুরু।যাত্রাপথে ট্রাকে ওভারলোডের কারনে পুলিশ মামাদের উৎপাত ,বিভিন্ন এলাকার ওপর দিয়ে যাবেন,এলাকা আপনের আমার বাপের সম্পত্তি নয় তার চার্জ তো দিতেই হবে।তাহলে মোটামুটি বোঝা গেল কোথায় দাম উঠছে।ক্যারিং কষ্টটা বাদ দিলাম কারন সব পন্যেরই ক্যারিং কষ্ট থাকবে।এখন আসুন বাজারে,সব্জী কিনে আনতে হবে আপনাকেই আবার ঐ পুলিশ,ভাই বেরাদর,এলাকার চার্জ সবকিছু কিন্তু নিজেকেই পরিশোধ করতে হল কারন ওটা সহ আমদানীকারকের লাভের ব্যাপার আছে না।
(সব্জীর ভেতর আলু,পটল,ঢেড়স,চিচিঙ্গা,শষা,টমেটো,শিম,মিষ্টি কুমড়া,লাউ,বেগুন,শাক,চালকুমড়া,কড়লা,বরবটি,থোর,গাজর,পেপে,কচু,মরিচ,পেয়াজ,কাঁচা কলা উল্লেখযোগ্য)
ডিমও এই পর্যায়ে পরে।
*গ্রামে যারা আছেন তারা এই সমস্যা থেকে মুক্ত
তাহলে এই পরিবারের সব্জী বাবদ মাসিক চার্জ=১২০ টাকা।
** মানুষ সামাজিক জীব,এদের নানা ধরনের সামাজিকতা আছে।এই ধরুন মাসে একবার হলেও আপনাকে কোন না কোন বাড়িতে অতিথি হয়ে যেতে হবে।আপনি কি ভাই?কাইকোষ! খালি হাতে যাবেন নাকি?হয় ফল নিবেন অথবা মিষ্টি।মিষ্টি তে পাবেন আটা আর ফলে পাবেন ফরমালিন আর কৃত্তিম রং(বেদানা)।নিজের বাড়ির জন্যেও এগুলো কেনা হয়।
ফল আর মিষ্টির চার্জ= ১৫ টাকা।
** অন্যের বাড়িতে অতিথি হয়ে যাবেন একটু সেজে গুজে ফিটফাট হয়ে যাবেন না তা কি হয়?আপনাকে ব্যাবহার করতে হবে বডি স্প্রে অথবা পারফিউম।বাজার থেকে পারফিউম বা বডি স্প্রে যাই কিনেন না কেন ঠকার সম্ভাবনা শতভাগ কারন পুরাতন রঙ করা বোতলে দেশী গন্ধ পানীয়।
পারফিউম বাবদ চার্জ= ৬ টাকা।
**(এটা প্রসাধনীতে আসা দরকার ছিল সুযোগ পেয়ে ঢুকিয়ে দিলাম)
** বাসায় নাতি নাতনি আছে এরা বিভিন্ন সময় জুস খেতে চাইবে,চকলেট,চুইংগাম খেতে চাইবে।জুসের কথা যখন আসলই,আরও একটা ব্যাপার না শেয়ার করে পারছি না,জুস ছাড়াও বাজারে বিভিন্ন ধরনের এনার্জী ড্রিঙ্কস পাওয়া যায় এই ধরুন গা গরম এনার্জী ড্রিঙ্কস,চাঙ্গা হবেন এনার্জী ড্রিঙ্কস ইত্যাদি ইত্যাদি।আমরা সকলেই জানি দীর্ঘদিন একটানা এই এনার্জী ড্রিঙ্কস খেলে শরীরে ব্যাপক নেতিবাচক প্রভাব পড়ে।আপনি বেশী সচেতন তাই খান না,কিন্তু গায়ে খাটা লোকজন এই ড্রিঙ্কস ভাতের মত খায়,আমি ফ্যাক্টরি জব করি আমি তো ব্যাপারটা নিজের চোখের সামনে দেখী।উঠতি বয়সের তরুনেরাও দেদারছে মারে,ওরা মনে করে এটাই আমাদের বিয়ার এটাই আমাদের ভদকা।অনেক জ্ঞানের কথা বললাম এবার আসি আসল কথায়।তো এই ড্রিঙ্কসের ব্যাবসায় প্রচুর লাভ,কোটিপতি ব্যাবসায়ী চিন্তা করল সে নতুন ব্র্যান্ডের এনার্জী ড্রিঙ্কস বাজারে ছাড়বে।শুরু হল কাজ ট্রেড লাইসেন্স আগেই করা ছিল,এবার লাগবে পন্যের অনুমোদন,গেলেন বি এস টি আই তে ওখানে বসে আছে এক একটা পেট মোটা কুমীর।তারা আপনার স্যাম্পল দেখে কাউ কাউ শুরু করল এইসব জিনিস বাজারে ছাড়া যাবে না,আরও বিভিন্ন কথা আর পেট মোচড়ানি।আপনি ব্যাবসায়ী,এই দপ্তরের ব্যাপারটা ভালোই বুঝেন তাই ব্রিফকেস ভর্তি টাকা গিলিয়ে নিয়ে নিলেন অনুমোদন।
এবার সম্পুর্ণ অন্য প্রসংগ।আমার মামাতো বোনের ভাষুর আবু সাইদ যার ছোট বেলার নাম ছিল সাইদ কানা।লেখাপড়ায় খুব একটা ভাল ছিল না,তবে চাপা দিত বেশ ভালো।মাষ্টার্স পাশের পর ঘুষের বিনিময়ে সে কাষ্টমসে চাকুরী নিল চিটাগং পোর্টে,ওখানে কিছুদিন থাকার পর বি এস টি আই তে ঢাকায় পোষ্টিং হল তার।আমরা কমবেশী ম্যাজিষ্ট্রেট রোকনউদদৌলার কথা সবাই জানি,ভেজালবিরোধী কর্মকান্ডের জন্য সে বিখ্যাত।তো আবু সাইদ ঢাকায় এসে ভাগ্যক্রমে এই লোকটার সংস্পর্শে আসে,ভেজালবিরোধী অভিযানে,তার সঙ্গী হন এবং পত্র পত্রিকা টিভিতে তাকে দেখা যেতে থাকে।তারপর এই লোকটা হয়ে গেল সহকারী পরিচালক (মাননিয়ন্ত্রণ) বি এস টি আই। অঢেল টাকার মালিক হলেন খুব অল্প সময়ের মধ্যে।মিরপুরে করলেন আলিশান বাড়ি,সে বাড়িতে ঢুকলে আপনি বুঝতে পারবেনই না আপনি বাংলাদেশে না আমেরিকায়,এলাকায় চল্লিশ বিঘার বাগানবাড়ি কিনল,ব্যাঙ্ক ব্যালেন্সের খবর আমি জানি না।এটা জানার কথাও না তবে সেটা কি পরিমান হতে পারে তা আপনারা অনুমান করে নেন।এই আবু সাইদকে নিয়ে আমার একটা লেখা আছে”পাপ”নামে একটু চেষ্টা করলে খুজে পাবেন। পাপ গল্পটা আমার কল্পনায় লেখা,কিন্তু এই লোকটা পাপের শাস্তি একটু হলেও পেয়েছেন।দুই কন্যা রেখে তার বউ পালিয়ে গেছে অন্য ছেলের সাথে।মিরপুরের বাড়ির অর্ধ্যেক আবার ছিল তার বউয়ের নামে।
আসল কথায় আসি,শুধু ড্রিঙ্কস আর জুস না টমেটো সস,তেতুল সস,চাটনী,মাঠা,চিলি সস প্রভৃতির একই হাল।ম্যাংগো জুসে আছে মিষ্টি কুমড়া,যতটুকু আম দেওয়া হয় সেখানে পচা,ভালো,পোকা লাগা কিছুই দেখা হয় না,আর চকলেট চুইংগামে আছে এমন কিছু পদার্থ যা বাচ্চাদের ক্ষুধা নষ্ট করে ধীরে ধীরে অপুষ্টির দিকে নিয়ে যায়।বাচ্চারা এগুলো খাবে,অসুস্থ হবে নিতে হবে ডাক্তারের কাছে।
জুস চকলেট,এনার্জী ড্রিঙ্কসের চার্জ= ১১ টাকা।
** ও আওয়ার গড! দেখেছেন অতি প্রয়োজনীয় দুধের কথা বলতেই ভুলে গেছি।গাভী কিন্তু দুধ দেয় খাঁটি,সাথে কিছু পানি মেশানো হয় আর কি ওটা গাভী জানে না আবার বোঝেও না।গাভীকে যদি প্রশ্ন করা হয় দশ লিটার দুধকে বারো লিটার দুধে পরিনত করবে কিভাবে? গাভীর সোজাসাপ্টা উত্তর কিভাবে আর!আরও দুই লিটার দুধ মিশিয়ে!আর গোয়ালার উত্তর কি হবে তা আপনেরাই বুঝে নেন।আর প্যাকেটের তরল দুধ যখন বিভিন্ন গ্রাম অঞ্চলের মিলে পাস্তুরিত করা হয় দুধের ভেতরের সব ননী,ছানা আলাদা করে ভিন্ন কাজে লাগানো হয়।এই পরিবারের দিন দুধ লাগে ১.৫ লিটার।প্রতি লিটারে দুর্নিতী হয় ১.৭৫ টাকা
দুধ বাবদ দুর্নিতীর চার্জ মাসিক=(১.৫*৩০)*১.৭৫=৭৮.৭৫ টাকা।
তাহলে খাদ্য বাবদ মোট চার্জ দাঁড়াল মাসিক=৫৩১.২৫ টাকা।
বস্ত্রঃ
** খাওয়া দাওয়া তো মোটামুটি শেষ হল,ভাইরে লেংটা হয়ে থাকব নাকি?কাপড় চোপড় তো দরকার।
আমি পেশায় একজন টেক্সটাইল ইঞ্জিনিয়ার সুতার মারপ্যাঁচ মোটামুটি বুঝি আরকি?এই পরিবার কাপড় কিনতে গিয়ে প্রতি মাসে কত টাকার দুর্নিতীর শিকার হয় তা তুলে ধরবার চেষ্টা করি।
ছোটবেলায় যখন বাবার সাথে কাপড় কিনতে যেতাম,বাবা কাপড় ধরেই বলত কি নরম মোলায়েম কাপড় আহ! পড়তে বেশ মজা হবে।ঐ কাপড় দিয়ে শার্ট বানানোর মাস পাঁচেক পর পিঠের ওপর রঙ জলে যাবে,বোগলের কাছে ফাটা দেখা দেবে,সারা শার্টে গোল গোল গুটির মত উঠবে,সবচেয়ে বড় কথা গরমের সময় বাবার কথা মিথ্যা হয়ে গায়ে চুলকাবে শার্টটা গায়ে দিলে। আরেকটা কমন ব্যাপার আছে তা হল জামা একবার পরে ধুয়ে দিয়েছেন তারপরে আর শরীরে ঢোকানো যাচ্ছে না(খেপে গেছে)।ছোট কাউকে দিয়ে দিতে হয়েছে।
গঠনগত দিক দিয়ে কাপড় কয়েকধরনের হয় ওভেন,নিটেড,নন ওভেন,লেস,ব্রেইড,স্পেশাল ফেব্রিক এই আর কি?আমি ওভেন কাপড়ের মারপ্যাঁচ দেখাচ্ছি।
ধরেন কাপড়ের বায়ার রিকোয়ারমেন্ট দিছে ৪০x৪০/১২০(প্রতি ইঞ্চিতে ওয়ার্প এর সুতার সংখ্যা )x৭০(প্রতি ইঞ্চিতে ওয়েফট এর সুতার সংখ্যা ),৬০”(কাপড়ের প্রস্থ) এই গঠনের কাপড় লাগবে,জি এস এম,সফট ফিনিশ।সুতা লাগবে কম্বের।এখন কোম্পানীর লাভের জন্য ওয়ার্পের ১২০ সুতার যায়গায় দিছে ১১৮ সুতা আর ওয়েফটের ৭০ সুতার যায়গায় দিছে ৬৫ সুতা,১১৮ সুতা দেওয়ার কারনে কাপড়ের প্রস্থ গেছে কমে, ফিনিশিং্যে বায়ারের রিকয়ারমেন্ট ফিলাপ করার জন্য মেশিনে কাপড় টেনে বাড়ানো হয়েছে।আবার কম্বের সুতার দাম বেশী বলে দিছে কার্ডের সুতা।শুধু ফিনিশের যায়গায় সফট ফিনিশের যায়গায় দেওয়া হয়েছে সিল্কি সফট ফিনিশ এক্সট্রা ট্রীটমেন্টের কারনে কাপড় গেছে দুর্বল হয়ে।কাপড়ের হ্যান্ডফিল ভালো হয়েছে।কিন্তু আসল যায়গায় মানে কাপড়ের লনজিভিটি কমে গেছে।যে কাপড় একবছর অনায়াসেই পড়া যেত সেই কাপড় এখন সাত মাস পরে আর পড়া যাচ্ছে না।কাপড় টেনে বাড়ানোর কারনে বাড়িতে এনে একবার ধোয়ার সাথে সাথে তা খেপে যাচ্ছে।
ধরি এই পরিবারের বছরে কাপড়(জামা,প্যান্ট,শাড়ি,ব্লাউজ,পেটিকোট,বাচ্চাদের কাপড়,অন্তর্বাস,লুংগী,বেডশীট,পিলো কাভার,টাওয়েল ইত্যাদি) লাগে ১৫ হাজার টাকার,এর মধ্যে মারপ্যাঁচ হয়েছে ১৫০০ টাকার।তাহলে মাসে এই পরিবারকে কাপড়ের দুর্নিতী চার্জ দিতে হচ্ছে
১৫০০/১২=১২৫ টাকা।
** শুধু শরীর ঢাকলেই ত হবে না,পায়ে জুতা লাগবে,স্যান্ডেল লাগবে।এর মধ্যেও আছে মারপ্যাঁচ।ধরেন আপনি যে জুতা তিন বছর পরবেন বলে ভাবছেন তা দেড় বছর চলার পর একদিন জুতার তলা খসে দৌড় দিল।প্রব্লেম কোথায়,রাফ ইউজ করেছেন?আদতে না বাড়ি থেকে অফিস পর্যন্ত আপনি জুতা পরেন।অফিসে যান গাড়ীতে করে নাহলে রিকশায়।যারা অফিসে জুতা পরে অভ্যাস্ত তাদের বেশীরভাগই অন্যসময় পা খোলা রাখতে পছন্দ করেন,খোলামেলা স্যান্ডেল পরেন।তাহলে কেন তলা খুলে দৌড় দিল।সমস্যাটা সেলাইয়ে অথবা নিম্নমানের আঠা ব্যাবহারের কারনে।চামড়াতেও আছে মারপ্যাঁচ গ্রেড অনুযায়ী চামড়া সঠিকভাবে ডিস্ট্রিবিউশন হয় না।ভালো মানের চামড়া চলে গেল বিদেশ।নিম্ন মানের চামড়া দিয়ে তৈরী পন্য ব্যাবহার করি আমরা।ধরেন আপনি কিনেছেন এ ক্লাস মানের চামড়া মনে করে বিক্রেতাও তাই বলেছে আসলে আপনি কিনেছেন সি ক্লাস মানের চামড়ার জুতা।কারন আমি আপনি কেউই চামড়া চিনি না।যারা লেদার ইঞ্জিনিয়ার,অথবা চামড়া ব্যাবসার সাথে জড়িত তাদেরকে এ দলে টানছি না।এরাও যে চিনবে তাও বলি না,আমার ক্ষেত্রেই ধরা যাক আমি সুতার মিস্ত্রী কিন্তু প্রতিবারই কাপড় কিনতে গিয়ে আমি ঠক খাই।
ধরা যাক এই পরিবারের জুতা স্যান্ডেলে চার্জ মাসিক=২৩ টাকা
বস্ত্রের কথা আসলে আমরা মোটামুটি জামাকাপড় আর জুতা স্যান্ডেলই বুঝি।এর বাইরেও কিছু জিনিস আছে যেমন চশমা,ব্রেসলেট,ঘড়ি এসব আলোচনার বাইরে থাকুক।
একটা বিষয় সবাই ভাবতে পারেন সর্নের অলংকার কোথায় গেল!আরে ধৈর্য ধরেন ওসব বিলাসজাত দ্রব্যের মধ্যে আসিতেছে।
বস্ত্র আর পাদুকা বাবদ মোট চার্জ=১৪৮ টাকা
বাসস্থানঃ
** খাওয়া পড়া গেল এবার লাগবে বাড়ি।এই পরিবারের কর্তা বাড়ি করছেন পেনশনের টাকায়।পেনশনের টাকা তুলতে গিয়ে তাকে উৎকোচ গুনতে হয়েছে ১০০০০০ টাকা।আসল কথাই ভুলে গেছি জায়গা ছাড়া বাড়ি হবে কেমন করে?বাড়ির কর্তা যায়গা পেয়েছেন উত্তরাধিকার সুত্রে,সে জমির আবার নানান ক্যারফা কেমন!কর্তার বাবার ছিল দুই বউ তার মানে তার বাবার মৃত্যুর পর দুই পক্ষই জমির সমান অংশীদার,তার বাপের দাদার ছিল তিন বউ,সেভাবে কোন জমি লেখাপড়া হয়নি। অগত্যা এলাকার গন্যমান্য ব্যাক্তিদের আর ওয়ারিশ সবাইকে ডেকে দফায় দফায় শালিস করে রফা হল।এবার রেজিষ্ট্রী।খরচ লাগল ওখানে ২৫০০০ টাকা।এরপর খাজনা খারিজ করতে হবে।বাড়ির কর্তা গেলেন ভুমি রেজিষ্ট্রী অফিসে।এই লোকটা জমি জমা সম্পর্কে তেমন কিছু বোঝেন না,শরনাপন্ন হলেন পিওনের।সে কি বেচারা অত সহজে ধরা দেয়!অগত্যা এক কাপ চা আর বেনসন সিগারেট(নিজের টাকায় শেখ খায়)খাইয়ে কর্তা কথা বলার সুযোগ পেলেন।আরো কিছু টাকার বিনিময়ে গেলেন নায়েবের কাছে।নায়েব আবার বদলী হবেন ,চরম কাজের চাপ,অসমাপ্ত কাজ সমাধা করতে হবে।দুই দিন ঘুড়েও নায়েবের ধারেকাছে ঘেঁষা গেল না।উপায়! আবার সেই পিওন,আবার টাকা।এবার নায়েবের সাথে কথা বলার সুযোগ হল।নায়েব জানাল আপনের ফাইল কোথায় আছে খুঁজে বেড় করতে বছর লেগে যাবে।এরপর কি বলবেন কর্তা খুঁজে পেলেন না।কার সাথে এসেছেন?নায়েব একটু নরম হলেন কর্তার মর্মাহত চেহারা দেখে।পিওনের সাথে।কিসের জমি? জী বাড়ির।বাড়ির জমির খরচ বেশী,জানেন তো?আগে জানতাম না এখন জানলাম।জমির পরিমান?দশ শতাংশ।বিশ হাজার লাগবে।দশ শতাংশ জমির জন্য এত টাকা!এই কাদের কি সব লোকজন নিয়ে আস ইশারা বোঝে না।যান আপনের জমি ইহজনমেও আর খারিজ হবে না।আমার ভুল হয়ে গেছে।২০০০০ টাকাই সই।অথচ খাজনার টাকা ছাড়া কোন টাকাই লাগার কথা না কর্তার,খাজনা তাও নামেমাত্র।নায়েবদের সরকার রেখেছেনই জনগনের জমি জমার ভ্যাজাল ঠিক করার জন্য।আর এরা কি করছেন!
টাকা জমা দেওয়ার দুই দিনের মাথায় ফাইল নামল বটে,কিন্তু নতুন খবর শুনে বাড়ির কর্তা খাবি খেলেন।জমির নামে নাকি কেস আছে।এই কেস ছাড়াতে হলে উকিলের কাছে যেতে হবে,সাথে থানায়ও।থানা আর উকিলেও নানান বাহানা,এই ডিটেইলসে আর গেলাম না এটা মোটামুটি সবারই জানা বিষয়।
বহু কষ্টে কর্তা জমিটাকে নিজের করতে পারলেন খরচ হল আরও ৯০০০০ টাকা।সাথে খরচ হল তার পাঁচ মাসের আয়ু।
জমি বাবদ মোট খরচ
১।দেনদরবার আমীন=২০০০টাকা
২।রেজিষ্ট্রী=২৫০০০টাকা
৩।পিওন=১২০০টাকা
৪।নায়েব/খাজনা/ডিসি আর=২০০০০টাকা
৫।উকিল/থানা=৯০০০০টাকা
৬।যাতায়াত=৯০০ টাকা
** ইঞ্জিনিয়ারের কাছ থেকে বাড়ির নকশা নিয়ে কর্তা শুরু করলেন বাড়ির কাজ।ইঞ্জিনিয়ারকে খুব করে ধরেছিলেন বাড়ির কর্তা ভাই আমার শখের বাড়ি ভালো একটা ডিজাইন দিয়েন।ছাত্র থাকা অবস্থায় করা একটা ডিজাইন কপি করে দিলেন ইঞ্জিনিয়ার,টাকা কিন্তু একটাও কম নিল না।এই ডিজাইনের আবার অ্যাপ্রুভাল নিতে হবে এখানেও টাকা।
** এবার ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপনের দিন,এলাকা যাদের বাপের সম্পত্তি তারা আসল,কাকা বাড়ি করতেছেন ভালো কথা আমাদের খুশি করে দেন।বাবা দেখ আমি স্কুল মাষ্টার আমি তোমাদের পড়ালেখা করিয়েছি তোমাদের এই কাজ।ওই চল এমনে কাজ হইব না।পরদিন থেকে শুরু হল অত্যাচার,রড বাঁকা করে রাখা,ইঁট হারানো,রাতের বেলা বাড়িতে ঢিল এইসব।শেষপর্যন্ত দিতেই হল ৮০০০ টাকা।
** এবার লাগবে রড,ইঁট,বালি,সিমেন্ট।কর্তার বয়স হয়ে এসেছে।শেষ বয়সে এত কিছু সামাল দিতে পারবেন না এটাই স্বাভাবিক ।সাহায্যকারি হিসেবে নিলেন দুসম্পর্কের ভাগ্নেকে।ইঁট কেনার সময়য় নিজে থাকতে হয় নাহলে এক নম্বরের যায়গায় দুই নম্বর ঢুকিয়ে দেয়।ভাটার মালিক এই কাজটা সমাধান করল ভাগনের সহায়তায়।বালি,রডের বেলায়ও তাই হল।সিমেন্টের কথায় আসি সিমেন্টের মুল উপাদান হল ক্লিংকার আর অ্যাশ এখানেও কোম্পানীর মারপ্যাঁচ।শেষ পর্যন্ত বাড়িটা দাঁড়াল।
ধরি এই বাড়িটার আনুমানিক বয়সকাল ১০০ বছর তাহলে বাড়ি করতে নীট দুর্নিতী চার্জ মাসিক।
১। পেনশনের টাকার উতকোচ=১০০০০০টাকা
২।বাড়ি নিষ্কন্টক বাবদ দুর্নিতী=১৩৯১০০ টাকা
৩।বাড়ির ডিজাইন এবং অ্যাপ্রুভাল দুর্নিতী=১০০০০
৪।চাঁদা=৮০০০
৫।ভাগ্নে নগদ চুরি=১৮০০০(যদিও কর্তা তাকে মাসে মাসে টাকা দিয়েছে হাতখরচের জন্য)
৬।রড,ইঁট,বালি,সিমেন্ট,ফিটিংস,টাইলস,কেবলস,দড়জা,জানালায়দুর্নিতী এককালীন=৫০০০০ টাকা
তাহলে মাসিক দুর্নিতী চার্জ=৩২৫১০০/১০০/১২=২৭০.৯২ টাকা
** বাড়ি হল,শুধু শুধু তো আর বাড়িতে থাকা যায় না,ফার্নিচার লাগবে।পুরনো ফার্নিচার কেমন দেখায়?নতুন লাগবে।এখানে হিসাব আছে দুই ধরনের নিজের কাঠ দিয়ে বানালে আর মিস্ত্রী কাঠ নিজে কিনে নিলে।নিজে্র গাছের কাঠ অথবা নিজে কিনে দিলে দুর্নিতী কম,কিন্তু মিস্ত্রীকে কাঠ কিনতে দিলেই বিপদ আপনেকে খসিয়ে ছাড়বে।নিজে দিলে আবার বিপদ হল ভালো কাঠের মধ্যে এক টুকরা খারাপ কাঠ ঢুকিয়ে দিলে আপনি টেরও পাবেন না,আর বেছে বেছে ঐ কাঠের টুকরাতেই ঘুন ধরবে আগে,চুরি করা কাঠ টুকিয়ে সে রেডিমেড ফার্নিচার বানানোর কাজে ব্যাবহার করবে।মজুরীর ব্যাপারেও প্যানা চুক্তি দিলে সে চেষ্টা করবে খুব দ্রুত কাজ শেষ করার কাজের সৌন্দর্যের দিকে তার নজর থাকবে না।দিন হিসেবে দিলে এমন ঢিমেতালে কাজ করবে যে আপনাকে সে জন্য মাথার চুল ছিঁড়তে হবে,কিছু বলতেও পারবেন না আবার সহ্যও করতে পারবেন না।
ধরা যাক ফার্নিচার বাবদ দুর্নিতী চার্জ মাসিক=১৩.৭০ টাকা।
তাহলে বাড়ি আর ফার্নিচারের মোট চার্জ=২৮৪.৬২ টাকা
চলবে…….
©somewhere in net ltd.