![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
আমি অতি সাধারন একজন মানুষ,নিজকে নিয়ে খুব বেশি প্রত্যাশা নাই।পেশায় টেক্সটাইল ইঞ্জিনিয়ার,একসময় নাটকে ক্যামেরার পেছনে কাজ করেছি।টুকটাক লেখালেখি করি।হাসতে ভালোবাসি,ভালোবাসি হাসাতে।এই তো।
চাকুরীতে আর বেতনে আমি সবেমাত্র থিতু হয়েছি মানে কোনমতে মাস আনি মাস খাই টাইপের,অন্যের কাছে হাত পাততে হয় না।আমরা সাভারের ব্যাংক কলোনীতে দুই রুমের ছোট ফ্লাটে সংসার পেতেছি।আমি অফিসে যাই ও একা একা থাকে,দিনে অন্তত পাঁচ ছয়বার ফোনে কথা হয়।এমনিতেই বয়স কম,কখনো বাইরে থাকে নি,বড় হয়েছে গ্রামে।সারাদিন শেষে বাসায় ফিরে মেয়েটার মুখ দেখলে হাহাকারে বুকটা ফেটে যায়।।কিছুই বলতে পারে না,কিন্তু চোখের দিকে তাকালে হাজার অভিব্যাক্তি ফুটে বেড় হয়।মনে হয় শালার চাকুরী ছেড়ে রাস্তায় গিয়ে থাকি,তবুও ওকে সারাদিন নিজের কাছে রাখি।সে উপায় নাই বাবার সাথে আমার সম্পর্ক নাই,আমার বিয়ের দুই মাসের মাথায় সে দ্বিতীয় বিয়ে করে,নাহলে তার কাছ থেকে টাকা নিয়ে কিছুদিন দেশান্তরি হওয়া যেত।বিয়ের দেড় বছর পার হল এভাবে।সিদ্ধান্ত নিলাম বাচ্চা নেব এভাবে আর মেয়েটাকে কষ্ট দেওয়া যায় না।তাছাড়া চারিদিকে যা দেখছি দেরী করে বাচ্চা নিতে চাইলে অনেকেরই বাচ্চা হচ্ছে না।এই রিস্ক নেওয়া যায় না।এই মেয়েটার মনে একটা বদ্ধমূল ধারণা ছিল সে কখনো মা হতে পারবে না(সেটা ওর সমস্যায়ও হতে পারে বা আমার সমস্যায়)।কেন এমন মনে হত আমি বলতে পারব না,হয়ত মেডিক্যাল সাইন্সে এর কোন ব্যাখ্যা থাকতে পারে।
আমরা বাচ্চা নেওয়ার জন্য চেষ্টা করতে থাকি,দিন যায়,সপ্তাহ যায়,মাস যায়,বছর যায় কিন্তু ভালো সংবাদ আসে না।মেয়েটা আরও মনমরা হয়ে পড়ে।আমি অনেক চেষ্টা করি ওকে হাসিখুশি রাখার কিন্তু ও কেন জানি মজা পায় না।শেষ পর্যন্ত সিদ্ধান্ত নিলাম ডাক্তার দেখাব।ডাক্তার দেখাতে যে পরিমান খরচ হবে তা করে তা উঠতে বেশ সময়য় লাগবে।আর অপেক্ষা করা যাবে না।ধার দেনা করে হলেও ডাক্তার দেখাতেই হবে।
আমাদের বিয়ের বয়স তখন সাড়ে তিন বছর চলছে।আমি অফিস থেকে ফিরছি এমন সময় ও ফোন দিল,বলল একটা প্রেগনেন্সী টেষ্টের স্টীক নিয়ে আসতে।আমি একটা না ছয়টা কিনে নিয়ে গেলাম।টেষ্টের রেজাল্ট পজিটিভ।আমাদের কারও বিশ্বাস হচ্ছে না।পরপর চারবার টেষ্ট করালাম,পজিটিভ।ও বিশ্বাসই করতে পারছে না ও কনসীভ করেছে।মেয়েটা পাগলের মত আচরন শুরু করল,কি করবে ও নিজেই বুঝে উঠতে পারছিল না।আমার কেবলই মনে হতে লাগল মা হওয়াতে এত আনন্দ!ও সারারাত ঘুমালো না।সকালে উঠে বাকি দুটো ষ্টীক দিয়ে আবার টেষ্ট করালো।পরে নিজেকে নিজেই বুঝালো ছয় ছয়টা টেষ্ট তো আর ভুল হতে পারে না।একটু থামল যেন মেয়েটা।
এরপর শুরু হল দিনগোনা।আমি ওর এক্সট্রা কেয়ার নিতে শুরু করলাম।অফিস থেকে আগে বেড় হতে চেষ্টা করি।বাসায় সারাক্ষণ ওর সাথে খুনসুটি করি।তার পরেও চিন্তা করলাম সারাদিন একা একা থাকে কখন কি দুর্ঘটনা ঘটে যায়।সিদ্ধান্ত নিলাম বাড়ি পাঠিয়ে দেব।গ্রামের মুক্ত পরিবেশও পেল আবার লোকজনের সংস্পর্শেও থাকতে পারবে মন খারাপ হবে না।ওর যখন সাড়ে তিনমাস চলে,ওকে শ্বশুর বাড়ি রেখে এলাম।২০১৪ সালের ফেব্রুয়ারী মাস সেটা।
অফিসে যাই মন টেকে না,বাসায় আসি একা একা খুবই খারাপ লাগে।সবচেয়ে বড় অসুবিধা হল রাতে রান্না করে খেতে হয়।এর মাঝে আমার নতুন চাকুরীর অফার আসল।ভালো বেতন,ভালো পোষ্ট,বাসা ফ্রি আর কি লাগে?আপ্রিলে জয়েন।আমি দিন গুনতে থাকি।আল্লাহর কাছে দোয়া করতে থাকি আল্লাহ আমার প্রথম সন্তান যেন মেয়ে হয়।নামও ঠিক করে ফেলি।আমি মোটামুটি বই পড়তে পছন্দ করি।হুমায়ুন আহমেদের লীলাবতী উপন্যাস পড়ে লীলাবতী নামটা আমার খুব পছন্দ হয়ে যায়।ঠিক করে ফেলি আমার মেয়ের নাম হবে লীলাবতী।এর মাঝে হুমায়ুন আহমেদের আর একটি আর্টিকেল পড়ি লীলাবিতীর মৃত্যু নামে।হুমায়ুন আহমেদ আর শাওনের প্রথম সন্তানের মৃত্যুর কাহিনী।
আমি ওকে বাড়িতে রেখে আসার ঠিক সতের দিন পর,ওর তলপেটে ব্যাথা শুরু হল।আমার পরিচিত ডাক্তারদের কাছে জানলাম প্রেগনেন্সী অবস্থায় তলপেটে ব্যাথা খুব খারাপ। আমি দিশাহারা হয়ে ছুটে গেলাম।ডাক্তার দেখানো হল।পরীক্ষায় ধরা পড়ল প্রস্রাবে ইনফেকশন আছে এ কারনে পেট ব্যাথা হয়েছে।আমি সাভারে ফিরে এলাম।
মার্চ মাসের ১১ তারিখ সকাল ৯:১০ আমি মাত্রই অফিসের গাড়ী থেকে নেমেছি।এমন সময় শাশুড়ীর ফোন।রিয়ার পেটে অসহ্য ব্যাথা নাটোর নিয়ে যাচ্ছি।আমি স্যারকে বলে সাথে সাথে রওনা দিলাম।
রিয়ার মুখ দেখে বুঝতে পারলাম ওর কতটুকু যন্ত্রনা হচ্ছে।সারা মুখ যন্ত্রণায় কালো হয়ে গেছে।
আল্ট্রাসনো করানো হল,রিপোর্টে দেখা গেল বাচ্চা নেই।শুধু ডিওডেনাল স্যাক আছে,সেখানে ভ্রুণ প্রবেশ করার আগেই মিস্কারেজ হয়েছে।রিয়াকে জানানো গেল না কিন্তু ও আন্দাজ করতে পেরেছিল বারবার বলছিল বাচ্চা নেই না?আমি বলছিলাম বাচ্চা ঠিক আছে।
ডাক্তার ছালমা আক্তার জানাল ডি এন সি করাতে হবে।ডি এন সি ব্যাপারটার সাথে এই প্রথম আমার পরিচয়।এবং এই প্রথম অনুধাবন করলাম একটা মেয়ে হলে তার কতটা কষ্ট,একটা মা হতে গেলে তার কতটা কষ্ট।ডি এন সি করানো হল।রিয়াকে যখন কেবিনে দেওয়া হল।ওর অজ্ঞান শরীর আর ব্যাথা মাখা মুখ দেখে নিজেকে ঠিক রাখতে পারি নাই।আমার লীলাবতীর মৃত্যু হল ভ্রুণেই।
জ্ঞান ফেরার পর সবাই যখন বাসায় ফিরে গেল,আমি আর রিয়া একা হাসপাতালের কেবিনে।মেয়েটা সারারাত কাঁদল আমি কোনভাবেই তাকে শান্ত করতে পারলাম না।শেষ পর্যন্ত হাল ছেড়ে দিলাম।গর্ভধারিনীর যে কষ্ট সেটা আমার মত অভাগার বোঝার কথা না।আমি শুধু এটুকু বলি আমাদের অপরিপক্ক ভ্রুণ লীলাবতী যেখানেই থাক ভালো থাক,সুস্থ হয়ে উঠুক তার গর্ভধারিনী।
০৯ ই এপ্রিল, ২০১৫ দুপুর ১২:১৭
শামসুদ্দীন হাবিব বলেছেন: ধন্যবাদ,আপনার হৃদয়ের স্পর্শও নিশ্চয়ই আমার লীলাবতী অনুভব করল,এতেই আমার ভাললাগা।
২| ০৯ ই এপ্রিল, ২০১৫ বিকাল ৫:৩৯
লামাজ বলেছেন: ভাল লাগল আপনার লীলাবতী’র গল্পগাথা, হৃদয় ছুয়ে যাওয়ার মতো করেই লিখেছেন, কিন্তু পড়তে গিয়ে একটা জায়গায় আমার কানে খুব বাজল আর সেটা হলো লীলাবতী’র মাকে আপনি উপস্থাপন করেছেন ‘‘মেয়েটি” হিসাবে, লীলাবতী’র মাকে আপনি অন্য কোন শব্দে উপস্থাপন করলে আরো বেশী প্রানবন্ত ও গ্রহণযোগ্য মনে হতো [এটা আমার একান্ত ব্যক্তিগত মতামত], সর্বোপরি সুন্দর লখার জন্য ধন্যবাদ
১০ ই এপ্রিল, ২০১৫ সকাল ৯:২২
শামসুদ্দীন হাবিব বলেছেন: ধন্যবাদ লাহাজ অনুপ্রেরনা আর পরামর্শের জন্য।ওর নাম কিন্তু আমি শেষের দিকে এনেছি।প্রথমে আমি আর সব মেয়ের মতই তাকে একই অনুভুতিতে মাপতে চেয়েছি(কারন আমার ধারনা সব মেয়েরই এরকম অনুভুতি থাকে)।যখন রিয়া চুড়ান্ত অসুস্থ হল তখন আমি ওকে সবার সামনে নিয়ে এলাম।
৩| ১০ ই এপ্রিল, ২০১৫ রাত ১২:০৮
সুমন কর বলেছেন: মন ছুঁয়ে গেল। এটা কি সত্য ঘটনা? (না বললেও চলবে)
২য় প্লাস।
১০ ই এপ্রিল, ২০১৫ সকাল ৯:২৫
শামসুদ্দীন হাবিব বলেছেন: ধন্যবাদ সুমন কর।এটা আমার জীবনেরই অংশ।ঘটনা বললে ভুল হবে কারন আমি এই অংশ টা ভুলে যেতে চাই না।আমার লীলাবতীকেও না।
৪| ১০ ই এপ্রিল, ২০১৫ রাত ১২:৩৭
আরণ্যক রাখাল বলেছেন: অসাধারণ লিখেছেন।
জানিনা এটা সত্যি কি না, চাই না এটা সত্য হোক।
আপনার জন্য অনেক শুভকামনা।
১০ ই এপ্রিল, ২০১৫ সকাল ৯:২৭
শামসুদ্দীন হাবিব বলেছেন: ধন্যবাদ আরণ্যক রাখাল, এটা সত্য না হলে হয়ত আমি এভাবে লিখতে পারতাম না।
৫| ১০ ই এপ্রিল, ২০১৫ সকাল ৮:৪৬
বঙ্গভূমির রঙ্গমেলায় বলেছেন:
হৃদয়স্পর্শী লিখা।++
মন ছুলে গেল। ভাল থাকুক লীলাবতী।
১০ ই এপ্রিল, ২০১৫ সকাল ৯:২৮
শামসুদ্দীন হাবিব বলেছেন: ধন্যবাদ বঙ্গভূমির রঙ্গমেলায়।আমার বিশ্বাস সে ভালো আছে।
৬| ১০ ই এপ্রিল, ২০১৫ সকাল ৯:৪১
বঙ্গভূমির রঙ্গমেলায় বলেছেন: আমারও বিশ্বাস লীলাবতী ভাল আছি।
সেই সাথে পৃথিবীর জীবিত লীলাবতীরাও ভাল থাকুক। আনন্দে থাকুক।
৭| ১০ ই এপ্রিল, ২০১৫ সকাল ১০:১৪
আরণ্যক রাখাল বলেছেন: এটা সত্য না হলে হয়ত আমি এভাবে লিখতে পারতাম না।
ভালো থাকুক আপনার লীলাবতী। অনেক অনেক ভালো
৮| ১০ ই এপ্রিল, ২০১৫ বিকাল ৪:০৮
আমি ইহতিব বলেছেন: লীলাবতী ও আপনাদের জন্য খারাপ লাগছে। দোয়া করি আপনাদের জীবন শীঘ্রই অন্য এক লীলাবতীর হাসিতে মুখর হয়ে উঠুক।
দারুন লিখেছেন, আসলেই মা হতে পারা মেয়েদের জীবনে আল্লাহ্র সবচেয়ে বড় উপহার। শত কষ্ট সত্ত্বেও যখন নিজের শরীরে আরেকটি প্রাণের অস্তিত্ব টের পাওয়া শুরু করি তখনকার অনুভূতি ব্যক্ত করার মত ভাষা আসলে জানা নেই। ২য় বারের মত মা হতে যাচ্ছি দোয়া করবেন। ভালো থাকবেন।
১০ ই এপ্রিল, ২০১৫ সন্ধ্যা ৬:০৬
শামসুদ্দীন হাবিব বলেছেন: ধন্যবাদ আমি ইহতিব,আপনার জন্য দোয়া এবং শুভকামনা,বারবার মা হন।লীলাবতীর মা,নয়মাস হল নতুন প্রাণ নিজের শরীর এবং অস্তিত্তে ধারণ করে আছে,দোয়া করবেন আমাদের জন্য।এই তো আর মাসখানেক তাহলেই লীলাবতী পাবে নতুন ভাই অথবা বোন।
৯| ১০ ই এপ্রিল, ২০১৫ বিকাল ৫:৫৮
শামছুল ইসলাম বলেছেন: শামসুদ্দীন হাবিব ভাইয়ের লেখাটা পড়ে, মনটা বেদনায় ভরে গেল। দোয়া করি অচিরেই একজন মায়াবতী লীলাবতী এসে আপনাদের সংসারটা সুখে ভরে তুলুক।
১০ ই এপ্রিল, ২০১৫ সন্ধ্যা ৬:১১
শামসুদ্দীন হাবিব বলেছেন: ভাই শামছুল ইসলাম ধন্যবাদ আপনাকে।আপনাদের দোয়ায় লীলাবতীর মা শীঘ্রই আবার মা হতে যাচ্ছে।মিষ্টি পাওনা রইলেন,সাক্ষাতে খাইয়ে দেব।চাটমোহরের বিখ্যাত প্যাঁড়া।
১০| ১০ ই এপ্রিল, ২০১৫ রাত ৮:০০
আহমেদ জী এস বলেছেন: শামসুদ্দীন হাবিব ,
স্পর্শ করে গেছে আপনার জীবনের ভুলতে না পারা অংশটুকুর কাহিনী ।
উপরের সকল মন্তব্যকারী ব্লগারদের কথাই আমারও কথা ।
ভালো থাকুন ।
১১ ই এপ্রিল, ২০১৫ সকাল ১১:৫০
শামসুদ্দীন হাবিব বলেছেন: ধন্যবাদ আহমেদ জী এস
১১| ১৩ ই এপ্রিল, ২০১৫ বিকাল ৪:৫৭
কলমের কালি শেষ বলেছেন: খুব কষ্ট লাগলো । লীলাবতি যেখানে থাকুক ভাল থাকুক ।
১৫ ই এপ্রিল, ২০১৫ দুপুর ১২:৩০
শামসুদ্দীন হাবিব বলেছেন: আমার বিশ্বাস সে ভালো আছে, কলমের কালি শেষ।
©somewhere in net ltd.
১|
০৯ ই এপ্রিল, ২০১৫ রাত ২:৫৪
পয়গম্বর বলেছেন: লেখাটি হৃদয় স্পর্শ করে গেল।