নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

ক খ গ

শামসুদ্দীন হাবিব

আমি অতি সাধারন একজন মানুষ,নিজকে নিয়ে খুব বেশি প্রত্যাশা নাই।পেশায় টেক্সটাইল ইঞ্জিনিয়ার,একসময় নাটকে ক্যামেরার পেছনে কাজ করেছি।টুকটাক লেখালেখি করি।হাসতে ভালোবাসি,ভালোবাসি হাসাতে।এই তো।

শামসুদ্দীন হাবিব › বিস্তারিত পোস্টঃ

বাই সাইকেল

২৬ শে ফেব্রুয়ারি, ২০২৪ সকাল ৮:৪২

বাছেদ হুজুর মাত্রই এশার নামাজ শেষ করে ঘরে ঢুকেছেন।শীত আসি আসি করছে কিন্তু আসছে না।গত কয়েকবছরের অবস্থা অনুযায়ী এবারও যে শীত খুব একটা কষে ধরবে বলে মনে হচ্ছে না।আমেনা বেগমের নামাজ এখনও শেষ হয় নাই।সে সবসময় পাশের ঘরে নামাজ পড়েন।
চাটমোহর শাহী মসজিদের ইমাম বাছেদ হুজুর গতানুগতিক ইমামদের মত না।তিনি স্ব শিক্ষায় সুশিক্ষিত।না জেনে কথা বলেন না বা উগ্রপন্থি না।তার সাংসারিক অবস্থা বেশ ভালো।আজকালকার হুজুরদের মত তিনি টাকার জন্য ইমামতি করেন না।তার বাসায় বেশ বড় একটা লাইব্রেরি আছে।অবসর সময়ে তিনি বিভিন্ন বিষয়ে পড়াশোনা করেন।রবীন্দ্র সংগীত বা লালন গিতী শোনেন।কট্টরপন্থি হুজুরেরা তাকে আড়ালে আবডালে ডিস্কো হুজুর ডাকে,এটা আসলে ইর্ষা থেকে আসে।একটা মানুষ ১০০ ভাগ খাঁটি হতে পারে না।কিন্তু এই বাছেদ হুজুরকে ভালো কোন কাজে সবার আগে পাওয়া যায়,আর হেটার্স থাকা সত্ত্বেও এলাকায় তার অগোচরে বা মুখের ওপরে কথা বলার সাহস করে না কেউ ই।
এই মফঃস্বলে বসে তিনি সারা পৃথিবীর কথা চিন্তা করেন।শুনলে হয়ত কল্পনার মত মনে হবে যে মফস্বলের একজন মানূষ এমন চিন্তা করতে পারে?চায়ের কাপে তিনি ঝড় তোলেন না,ইরাক বা ইরানে বোমা পড়ে মানূষ মারা যাওয়ার খবর পড়ে তিনি জিভ চুকচুক করে সাথে সাথে খাবার টেবিলে ভূরিভোজ করেন না।
অসাম্প্রদায়িকতার ছাপ মারা সর্বশরীরে সাম্প্রদায়িকতা ধারণ করা এই যুগে অবশ্যই এমন মানূষ খুঁজে পাওয়া যাবে না নিশ্চিত।
তবুও কি নেই?তবে পৃথিবী টিকে আছে কি করে?!
ঈশ্বরে ঈশ্বরে কি কথা হয় কে জানে?আমরা ঈশ্বরের নামে তলোয়ার ধরে কুরবানী বা বলিদান করি।
আবার এরাই একে অপরের দুঃখে এগিয়ে আসে,এক ঈশ্বরের তৈরী রক্ত মিশিয়ে দেওয়া হয় আর এক ঈশ্বরের তৈরী রক্তে।
ক্ষমতাধরেরা শোষণ করে আর শোষিতেরা ঈশ্বরের কাছে হাত পাতে,তাদের যে আর কিছুই নাই।ধর্ম হয়ত তাদের জন্যই।
ক্ষমতার আর ধর্মান্ধতার লড়াইয়ে ঝড়ে পড়ে নিরীহ প্রান।
আমরা কি বোকা আর মূর্খ,আহারে?!
এই অস্থিরতা আর অসহিস্নুতা কখনই স্বস্তি দেয় নি বাছেদ হুজুরকে।
আমেনা বেগমের নামাজ শেষ হয়েছে।
এই নিঃসন্তান দম্পতির কোন বাচ্চা নেই বলে কোন দুঃখ বোধ তাদের মধ্যে কাজ করে না।হয়ত তাদের দ্বারা আরও কোন ভালো কাজের লক্ষ্যে আল্লাহ নিঃসন্তান করে রেখেছেন।
আমেনা বেগম বললেন,খাবার দিব কি?
খেতে ইচ্ছে করছে না।
আপনার কি কোন কারনে মন খারাপ?
মন খারাপের অনেকগুলো কারন আছে আমেনা।এশার নামাজের আগে কেতাব ভাইয়ের বাড়িতে একটা দরবার ছিল।কেতাব ভাইয়ের কোন ছেলে তাদের দায়িত্ব নেবে না।অথচ ছেলেমেয়েদের মানুষ করতে গিয়ে সব শেষ করে দিয়েছেন তিনি।বৃদ্ধ দম্পতির আর কিছু অবশিষ্ট নাই যা দিয়ে তারা শেষ জীবন পার করবে।
আপনি কিছু বলেন নাই?
ধর্ম আর কেউ মানে না আমেনা।সমাজ যে কোথায় গিয়ে ঠেকবে তার কোন ঠিক নাই।সব ভেঙ্গে চুরমার হয়ে যাচ্ছে।কিছুতেই ঠেকানো যাচ্ছে না।এই ভাঙ্গনের শেষ নাই যতদিন না তারা সুশিক্ষায় শিক্ষিত হয়।
উঠতি বয়সের বাচ্চাগুলোও ভুল শিক্ষা পাচ্ছে,ধ্বংসের দিকে এগিয়ে চলেছে সবকিছু।
ইরানে হামলা হচ্ছে,ইরাকে,সিরিয়ায়,ফিলিস্তিন,আমেরিকা?সবখানে হিংসা আর অসহিস্নুতা।ছোট বাচ্চারা কি সব গেমস খেলে,অনলাইনে বাজে ভিডিয়ো দেখে বা তৈরি করে নিজেদের অসম্ভব সুন্দর সময়গুলো নষ্ট করছে।
আপনি একা এতকিছু ভেবে কি করবেন?
কিছুই করতে পারব না হয়ত কিন্তু মেনে নিতে পারি না।সৃষ্টির শ্রেষ্ঠ জীব হয়েও কেন আমরা এত নীচ, কেন এত বোকা, কেন এত নির্বোধ?!
এত চিন্তা করবেন না তো,খেয়ে নিন শরীর খারাপ করবে।
কি বল আমেনা?পৃথিবীতে কোটি কোটি মানূষ হয়ত একবেলাও খেতে পায় না,আর একরাত না খেলে আমার শরীর খারাপ করবে?
আসলে আমি এতটা ভেবে বলিনি।
আমি জানি আপনার প্রান ছটফট করে মানুষের কষ্ট দেখলে।কিন্তু এ ও তো মানতে হবে আপনি একা একা কিছুই করতে পারবেন না।
হয়ত খুব বড় কিছু করতে পারব না,কিন্তু ছোটখাট কিছু করা যেতেই পারে।
আপনি যা করছেন তা তো কম না,বিয়ের পর থেকেই তো দেখছি সারাসময় মানুষের ভালোর জন্য কাজ করে যাচ্ছেন।একটা দিনও দেখি নাই আপনি নিজের চিন্তা করেছেন।আমার যে কি গর্ব হয় আমি বলে বোঝাতে পারব না।
সবচেয়ে বড় সমস্যা কি জানো? এই গরীব দেশে?
আমেনা মাথা নাড়ায় না সে জানে না,অথবা জানে ঠিক ধরতে পারছে না।
আমাদের সমস্যা হল শিক্ষা,আমরা শিক্ষিত না।আর যারা শিক্ষিত তারা সুশিক্ষিত না।এই একটা কারনে আমরা এত সাফার করছি।মানুষ যত সুশিক্ষিত হবে,সে মানুষের বিবেকবোধ প্রবল থাকবে আর মানবিকতা তার ভেতরে সুউচ্চ স্থানে অবস্থান করবে।তাহলে এই সমাজ বা দেশের এই অবস্থা হত না।
আমেনা মাথা নাড়ায় ঠিকই বলেছেন।
বাড়িতে মানুষ নাই বলে দিনের ভেতর যতটা কথা হয় সবই বাছেদ হুজুরের সাথে।মাঝেমধ্যে অবিশ্যি পাশের বাসার ভাবীরা আসে।কিন্তু এই লোকটার কথা মন্ত্রমুগ্ধের মত শোনে।আর অস্থীর হয়ে থাকে কখন তিনি ফিরবেন,কখন আদর ভরা গলায় আমেনা বলে ডাক দিবেন।
আমেনার প্রায়শই মনে হয় আল্লাহ তাকে তার জীবনের সেরা পুরষ্কার দিয়েছেন।এই যুগে একটা মানুষ এত ভালো হয় কি করে?
১৭ বছরের বিবাহিত জীবনে কোনোদিন তাকে রাগ করতে দেখেননি,কারও বিষয়ে খারাপ কথা বলতে শোনেননি।
যেদিন ডাক্তার বলেছিল আমেনার সমস্যার কারনে কোনোদিন সে মা হতে পারবে না।সেদিনও লোকটা একটুও মন খারাপ করেননি।বরং সারারাত জেগে আমেনাকে কান্না করতে দেখে জেগে জেগে মাথায় হাত বুলিয়ে দিয়েছেন।সান্তনা দিয়েছেন নিজে শান্ত থেকে।
আসলেই এই যুগে এমন মানুষ পাওয়া যায়?
আমেনা ধীরে ধীরে নিজেও বাছেদ হুজুরের মত হওয়ার চেষ্টা করেছে।তাকেও এখন আর পার্থিব জীবনের নিজের কষ্টগুলো আর বিরক্ত করে না।
কি হল?কি ভাবছ এত?উদাসীন হয়ে।
কিছু না বললে মিথ্যা বলা হয়,তাই আমেনা জবাব দিল আপনাকে নিয়েই ভাবছিলাম।আমার জীবনে আপনাকে নিয়ে ভাবা ছাড়া আর কি আছে বলুন?
আছে আমেনা আছে,মানুষের কথা ভাববে!কি করে মানব জাতির কল্যাণ হয় তাই ভাববে।
আপনি তো ভাবেন আর আমি আপনাকে নিয়ে ভাবি,তাহলে তো আমিও মানব জাতির কল্যাণেই কাজ করছি না কি?
বেশ কথা শিখেছ দেখছি?লজিক!
আপনার লাইব্রেরীর বই কি শুধু আপনি একাই পড়েন?আমিও পড়ি আমিও লজিক জানি।আপনার স্ত্রী হয়ে অশিক্ষিত থাকি কি করে?তাহলে যে মানূষ বলবে হুজুরের নিজের বউই তো অশিক্ষিত!
বাহ!তুমি তো আসলেই ভালো যুক্তি দিতে শিখেছ!আমরা বেশীরভাগ লোক কোনো যুক্তি মানি না বা দিতে পারি না।কিন্তু যুক্তিবিদ্যা খুবই প্রয়োজনীয়।মানুষকে সঠিক পথে ধাবিত করতে শেখায়।
আচ্ছা চল খেয়ে নেই।
ভেবেছি একটা ছোট কাজের পদক্ষেপ নিব।
কি পদক্ষেপ?
আমার অর্ধাঙ্গী হিসাবে তোমার সেটা অবশ্যি জানা উচিত।অনেকদিন ধরেই ভাবছি ব্যাপারটা নিয়ে।কাল পত্রিকায় দেখলাম আমি যেমনটা ভেবেছিলাম ঠিক সেরকম কিছুই ঘটেছে তুরষ্কে।তারপর থেকে মনে আরও সাহস পাচ্ছি।
চল খানা খাই,তারপর বলা যাবে।
এশার নামাজ শেষ করে বাছেদ হুজুর খাবার খান।খাওয়া শেষ করে কিছু সময় আমেনার সাথে গল্প বা বিভিন্ন বিষয়ে পরামর্শ করেন।তারপর কিছুক্ষন হালকা স্বরে গান ছেড়ে বই পড়েন,যতক্ষন তার ঘুম না আসে।এইসময়টাতে আমেনাও কিছু না কিছু বই পড়ে,বেশীরভাগই হাদিসের বই।বই পড়তে পড়তে ঘুমিয়ে যায় বই বুকের ওপর রেখেই।বাছেদ হুজুরের চোখ ধরে এলে বিছানায় তাকিয়ে দেখেন আমেনা গভীর ঘুমে মত্ত।পরম মমতায় কিছুক্ষন আমেনার মুখের দিকে তাকিয়ে থেকে লজ্জায় মুখ নামান আর তার বুকের ওপর থেকে বই নিয়ে নামিয়ে রাখেন।
বিছানায় গিয়ে তিনি ভাবেন তার জীবনে কোন দুঃখ নাই।আসলে তিনি জীবনটাকে এইভাবেই সাজিয়ে নিয়েছেন।চারিদিকে শুধু হাহাকার আর দুঃখ!তার নিজেকে নিয়ে কোনো দুঃখ নাই,কিন্তু অন্যের ব্যাথায় ব্যাথিত হন তিনি।
তিনি মনে করেন পৃথিবীর সবচেয়ে নরম যায়গা হল তার হৃদয়।এই হৃদয়টাকে তিনি কখনো যেনো কঠিন না হয়ে যায় সে ব্যাপারে আল্লাহর কাছে সবসময় নামাজে বসে দোয়া চান।
হুজুর কট্টরপন্থি না।সব ধর্মের মানুষের প্রতি তাঁর ভালোবাসা আছে।তিঁনি মনে করেন এবং দৃঢ় ভাবে বিশ্বাস করেন ভালোবাসা আর মমতা দিয়ে সবকিছু জয় করে নেওয়া যায়।
আসছে জুম্মাবারে তিনি কি ভাবনা নিয়ে কাজ করতে চান,সেটা আমেনার সাথে আলোচনা করলেন।আমেনা বরাবরই তার স্বামীর কাজে বিস্মিত হন।এবারও তার ব্যাতিক্রম হলো না।
২০২০,এর সেপ্টেম্বর।জুম্মার নামাজের শুরুতেই বাছেদ হুজুর সবাইকে অনুরোধ করলেন নামাজ শেষে কিছুক্ষণ সময় দেওয়ার জন্য।তিনি কিছু গুরুত্বপুর্ণ কথা সবার সাথে আলোচনা করতে চান এবং সবার সঠিক মতামত আশা করেন।
সবাই বিষয়টা খুব আগ্রহের সাথে নিলেন,কারন এই লোকটাকে অপছন্দ করে এমন লোক খুব কমই আছে।
বাদ জুম্মা সুন্নত নামাজ শেষে বাছেদ হুজুর সংক্ষিপ্ত আকারে তার গুরুত্তপুর্ন বক্তব্য শুরু করলেন।
সারা পৃথিবীজুড়ে চলছে ইসলামের নামে প্রহসন(কিছু সুবিধাভোগীদের কারনে)।ইসলামকে ভিন্নধারায় প্রবাহিত করা হচ্ছে।সবাই একমত থাকলে বাছেদ হুজুর একটা প্রতিযোগীতার আয়োজন করতে চান এবং তা এই শীতের সময়েই।
বাছেদ হুজুরের পরিকল্পনা শুনে সবাই খুব খুশি হলেন,সবার চোখ চকচক করে উঠল।শান্তির ধর্ম ইসলাম রক্ষার্থে সবাই কাজ করবে।বাচ্চারা তাদের সঠিক জীবনধারনের দিক নির্দেশনা পাবে।
পরেরদিন বাদ মাগরিব মসজিদ পরিচালনা কমিটিসহ এলাকার গন্যমান্য ব্যাক্তিদের নিয়ে একটা খসড়া করা হল কিভাবে প্রতিযোগিতা সফল করা যায়।
প্রতিযোগীতা হবে শিশু কিশোরদের নিয়ে।এই শীতের সময়ে একটানা চল্লিশ দিন ফজরের নামাজ এবং নামাজ পরবর্তি সময়ে ইসলামের সঠিক দিকনির্দেশনার বয়ানে উপস্থিত থাকলে যারা প্রতিযোগীতায় বিজয়ী হবে সবাই একটা করে বাই সাইকেল পুরস্কার পাবে।যদিও পার্থিব কোনো কিছুর আশায় ইসলামের পক্ষে কাজ করা ইসলাম সমর্থন করে না,তবুও সবাই বিশ্বাস করতে বাধ্য হলো অন্তত তাঁদের পরবর্তি প্রজন্ম সঠিক শিক্ষা পাবে।প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষার পাশাপাশি ইসলামের দিকনির্দেশনায় জীবনযাপন অবশ্যই মঙ্গল ছাড়া অন্য কোনো সম্ভাবনার কথা বলে না।
ইসলামের জন্য চরম দুঃসময় চলছে।ইসলাম ধর্মকে চিরতরে শেষ করে দেওয়ার যে পাঁয়তারা চলছে,অন্তত কিছুটা হলেও তাদের গালে চপেটাঘাত করা যাবে।
প্রতিযোগীতাকে কেন্দ্র করে একটা কমিটি করা হল যারা এই প্রতিযোগীতার স্বেচ্ছাসেবক হিসেবে কাজ করবে।খুব সতস্ফুর্ততার সাথে শুরু হল কার্যক্রম।এবং প্রতিযোগীতা শুরু করার জন্য স্থানীয় প্রশাসনের অনুমতি নেওয়া হল।সবাই খুব প্রশংসা করলেন সেই সাথে যেকোনো সাহায্য লাগলে যেকোনো সময় জানালেই হবে!
ব্যাপারটা এলাকায় চরম প্রভাব বিস্তার করলো।ঈদের চেয়ে আনন্দ কোনো অংশে কম হলো না,বরং অনেকসময় ধরে চলবে ভেবে সবাই শিহরিত হলো।সবাই বাছেদ হুজুরের পরিকল্পনার প্রশংসা করতে লাগলেন।যদিও সবাই জানেন বাছেদ হুজুরকে দ্বারাই এরকম গঠনমূলক কাজ সম্ভব,তাই কেউ খুব বেশী বিস্মিতও হলো না।
কার্যক্রম শুরু হল শীতের একদম শুরুর দিকে!এবার শীত বেশ জমিয়ে দেবে মনে হচ্ছে।গত কয়েকবছরে এমন শীত এই প্রকৃতিতে কুয়াশায় মোড়ায়নি।
নিম্নমান তাপমাত্রা স্বেচ্ছাসেবক দলকে ঘায়েল করতে পারল না,তাঁদের ভেতর কাজ করছে মানবকল্যানের পথে সত্যি কিছু করার,শরীরে আদিম উচ্চমান তাপমাত্রা।দুই হাজার মত লিফলেট ছাপানো হয়েছে,এলাকার প্রতি কোনায় কোনায় যেন খবরটা পৌছানো যায়।চাটমোহর থানায় যদি এটা ইফাক্টিভলি শেষ করা যায় তবে সারা দেশব্যাপি একটা রেভ্যুলশন ঘটানো যাবে।হতে পারে সরকারের কাছে বা ধর্ম মন্ত্রনালয়ে এই পদক্ষেপ সারা দেশে ছড়িয়ে দেওয়ার জন্য অনুরোধ করা যেতে পারে।যদিও বাংলাদেশ অসাম্প্রদায়িক দেশ,এই সাব কন্টিনেন্টে মনে হয় না বাংলাদেশের মত কোথাও ধর্মে ধর্মে সম্প্রিতী কোথাও আছে।এই দেশে ধর্মের অবমাননা খুব কমই হয়েছে। ৫৬ হাজার বর্গমাইলের এই ছোট্ট ভূখন্ড তাই সবার কাছে অসাম্প্রদায়িকতার খুব ভালো উদাহরন হিসেবে দেওয়া যেতে পারে।যেখানে পাশের আর সব দেশে অসাম্প্রদায়িকতার কথা বলে সাম্প্রদায়িকতায় ডুব মেরেছে,চোখের উপরেই ঘটে চলেছে তা।
সারা এলাকায় মাইকিং করা হলো,লিফলেট বিতরন করা হলো।একটি পরিবারও যেন বাদ না থাকে এই খবর থেকে।
বাছেদ হুজুর খুবই ব্যাস্ত,বাড়িতে খুব কমই সময় দিতে পারছেন।আমেনার সাথেও তার খুব বেশি আলাপ হচ্ছে না,যা হচ্ছে খেতে বসে।বাছেদ হুজুর যে কাজ হাতে নিয়েছেন,সেটা যে কোন মুল্যেই হোক উঠিয়ে আনতে হবে,এবং সফল করতে হবে।বাছেদ হুজুর আজ একটু সকাল সকাল বাড়ি ফিরেছেন,এশার নামাজ শেষ করে সরাসরি কমিটির আরও তিনজনসহ বাড়িতে এসেছেন।রাতের খাবার শেষে কিছু অসমাপ্ত কাজ নিয়ে বসবেন তাঁরা।
এই রাতে আমেনার সাথে তাঁর কিছু কথা হল।পুরো পরিকল্পনা আবার করে ঝালাই করে নিলেন আমেনার সাথে।আমেনা বরাবরের মতই লজ্জা আর আনত চোখে স্বামীর কথা মন্ত্রমুগ্ধের মত শুনে গেলো।এই মানুষটা এত ভালো কেনো?বাছেদ হুজুর কি জানে আমেনা তার মুখের কথা শোনার জন্য প্রায় পাগলের মত হয়ে থাকেন? আমেনার দৃঢ় বিশ্বাস বাছেদ হুজুর সেটা জানেন।


ভাঙ্গুরা,চাটমোহরের পাশের থানা,ওসি নাসির আজ ডিউটিতে নাই।এস আই মুজিব আজ সর্বময় ক্ষমতার অধিকারী।এস আই মুজিবের বাড়ি গোপালগঞ্জে,নাম মুজিব!পুরাই খাপে খাপ আবুলের বাপ!ওসি নাসির থাকলেও এস আই মুজিবের ক্ষমতার বড়াই বেশি!সে শেখ হাসিনার এলাকা আবার তার বাপের নামে নাম।টাকা খাওয়ার ব্যাপারে তার মত সিদ্ধহস্ত এই এলাকায় নাই।তার মুখ দেখতেও না কি টাকা লাগে।কথা বলা ত অনেক দূরের ব্যাপার।
সকালে অফিসে ঢোকার সময় এক পরিবারকে থানা কম্পাউন্ডের ভেতর বসে থাকতে দেখে এসেছে,দুপুরে লাঞ্চে যাওয়ার সময়ও একই ভাবে বসে ছিলো।

দালাল শরীফকে অনেকক্ষণ তাদের থেকে একটু দূরে কনস্টেবল নূরের সাথে ঘুসঘুস করতে দেখা গেলো।শরীফ সেই ঝানু দালাল,তার হাত ফসকে যায় এমন ভিকটিম খুব কমই আছে।রতন আর শিখা রানী এসেছে তাদের একমাত্র ছেলে রাজীব এর মিসিং কেস ফাইল করাতে।শরীফ অনেক চেষ্টা করেও রতনের পকেট থেকে এক পয়সাও খসাতে পারে নাই।আসলে রতনের সামর্থ্যই নাই এক পয়সা দেওয়ার।বড়ালব্রীজ ষ্টেশনের ঢালে উদ্বাস্তু হিসেবে তার বসবাস!চেয়েচিন্তে খাওয়া।সে কিভাবে পলাশ আর থানার সাহাবকে ঘুষ দেবে।বরং যতদিন লাগে তারা থানার কম্পাউন্ডে বসে থাকবে,তাতে যদি কারও নজরে পরে দয়া পরবশ হয়ে তার হারানো ছেলের খোঁজ নিতে পারে বা কেস ফাইল করতে পারে!
শরীফ নূর কনস্টেবলকে দিয়ে বারকয়েক ধমক দেওয়ালেও তারা সরতে নারাজ।যা হয় হবে,তারা কেস ফাইল না করে যাবে না বা নড়বে না এখান থেকে।তাতে যদি লাঠির গুঁতাও খেতে হয় তারা খাবে।
রতন,শিখা আর রাজিব একটা ভাওর(গ্রাম্য ভাষায় অস্থায়ী ঘর) এ ঠাসাঠাসি করে থাকত।রতনের মূল পেশা ছিলো মূচিগিরী করা।চামড়া কিনে বিক্রি করে তার সংসার কোনোমত হাঁপানী রোগীর মত চলছিল,ইদানিং চামড়ার যে দাম যাচ্ছে তাতে তার টিকে থাকা রিতীমত দুঃসাধ্য হয়ে গেছে।রাজীবকে মুকুলের চায়ের দোকানে কাজ নিয়ে দিছিল সে অনেক হাতে পায়ে ধরে।দিন পাঁচেক হলো তাকে খূঁজে পাওয়া যাচ্ছে না।মুকুল এ ব্যাপারে কিছুই জানে না।
থানার উল্টোদিকে বড়াল নদীর পাড়ে মাচার ওপর মুকুলের চা এর দোকান।তাই রাজীবকে চা খেতে গিয়ে দেখার সম্ভাবনা প্রবল।তাই বেশ আশা নিয়ে থানার দুয়াড়ে বসে আছে রতন আর শিখা দম্পতি।
সাধারন মানুষ রতনকে দেখলে তার ভেতরে দয়ার হাহাকার তৈরি হবে এটা শতভাগ সত্য।
রতন প্রথমে এলাকার মেয়র চেয়ারম্যান সবার কাছেই ধর্না দিয়েছিল।কাজ হয় নাই।সবাই বলেছে কোথাও গেছে হয়ত,চলে আসবে!কেউ কেউ আবার ভয় দেখিয়েছে!ছেলেধরা নিয়ে যায় নি তো!শেষে একজনের উপদেশে শরীফের হাত ধরে থানায় এসেছে।
রাজীবের বয়স ১১ বছর।বয়ঃসন্ধি অপেক্ষা করছে তার ভেতরে নতুন জীবনের সঞ্চার করতে,রক্তে নতুন ঢেউ তুলতে।এমনিতেই রাজীব খুব ভীতু আর ঠান্ডা।এর একটা কারন হতে পারে,সে দলিত অতি নিচু সম্প্রদায়ের মানুষ,তাদেরকে এভাবেই জীবন পাড় করতে হয়।মাথা উঁচু করে বাঁচা তাদের জন্য বেশ বড় একটা অপরাধ!তাদের চাওয়া পাওয়া থাকতে নাই,কোনো বড় আশা করতে নাই।শুধু সারাদিন পেটে খাবার পড়লেই হলো।
মাঝে মাঝে মনে হয় সৃষ্টিকর্তা এই জাতটা তৈরি করেছেন আপেক্ষিকতার জন্য যেন পূজিবাদী মানূষগুলো তাদের দেখে নিজেদের ক্ষমতা বা পজিশনের একটা পরিমাপ করতে পারে।
মূকুলের দোকানে তার কাজ ছিলো পানি নিয়ে আসা আর চা বিলানো।সারা ভাঙ্গুড়া বাজারে মূকুলের দোকানের চা বেস্ট।সবসময় কাস্টমারের চাপ থাকে।সকাল থেকে মধ্যরাত পর্যন্ত চলে রাজীবের ডিউটি।বিনিময়ে সে তিনবেলা পেটভরে খাবার পায়।প্রাইমারী স্কুলে সে ক্লাস ফোর পর্যন্ত পড়েছে।তারপরে পড়ালেখা বাদ দিয়ে নিজের খাবার যোগাতে বাধ্য হয়েই চায়ের দোকানে কাজ নিয়েছে।এতে অবিশ্যি তার খুব একটা খারাপ লাগে না।পড়াশোনা,স্কুল তার কখনোই তার ভালো লাগে নাই।এখন কি মুক্ত স্বাধীন একটা জীবন।
দুইদিন অনবরত চেষ্টার পর ওসি নাসিরের চেষ্টায় মিসিং কেস ফাইল হলো।দায়িত্ব পড়লো এস আই মুজিবের ওপর। খুঁজে খুঁজে রাজীবের অনেক আগের একটা ছবি পাওয়া গেলো যেটা মুজিবের কাছে রক্ষিত থাকল।রতন আর শিখাকে আশ্বস্ত করা হল খুব দ্রুতই তাদের সমস্যার সমাধান করা হবে।
পাবনা ৩ আসনের এম পি ভাঙ্গুড়ার মকবুল হোসেন,তৃতীয়বারের মত নির্বাচিত হয়ে এলাকায় রাজত্ব করছেন।তার ছেলে রাসেল ভাঙ্গুড়া পৌরসভার মেয়র।এই মেয়রের কাছেই রতন গিয়েছিল কোনো কাজ হয় নাই।এস আই মুজিব এম পি,মেয়র দুইজনেরই খুব কাছের লোক।

শাহী মসজিদে ঈদ লেগেছে যেন!
রেজিস্ট্রেশন প্রায় শেষের দিকে।মেয়র দুলাল মির্জার ছোট ছেলেও অংশগ্রহন করেছে।রেজিস্ট্রেশনের সময় দুলাল মির্জা বাছেদ হুজুরকে ডেকে বলে গেলেন হুজুর আমার ছেলেটাকে দেখে রাখবেন!বাছেদ হুজুর সাধারণ ভাবেই বললেন অবশ্যই।এটা যে সূক্ষ একটা ইঙ্গিত ছিলো,তা বাছেদ হুজুর ধরতে পারলেন না।
সাধারন কিছু নিয়ম করা হল প্রতিযোগীতার,কি কি করলে প্রতিযোগীতা থেকে বেড় করে দেওয়া হবে বা প্রতিযোগীতায় টিকতে পারবে না।
প্রতিযোগীতা শুরুর দিন ঈদের দিনের চেয়েও বেশী আনন্দ হলো।এই এলাকার লোক গত কয়েক দশকে এমন আনন্দিত বা বড় ঘটনা ঘটতে দেখে নাই।এলাকার পত্রিকা তো বটেই,জাতীয়ভাবেও এর প্রচার হলো।সেদিন চাটমোহরের ইউ এন ও সহ থানার ওসি,মেয়র,চেয়ারম্যান,গন্যমান্য ব্যাক্তিবর্গ উপস্থিত ছিলেন।সবাই জ্ঞান গর্ভ বকৃতা দিলেন।এসব লোকজন শুধু শুক্রবারে জুম্মার নামাজ আদায় করে।তারা বেশিরভাগই রাজনৈতিক বক্তব্য দিলেন,ধর্মের ভেতরে রাজনিতী নিয়ে এলেন,আসল উদ্দেশ্যের কাছ দিয়েও গেলেন না।বাছেদ হুজুর খুবই সংক্ষিপ্ত কিন্তু বিনয়ী আর শিক্ষনীয় বক্তৃতা দিলেন।

প্রতিযোগীতার শুরুর দিনের সকল কিছু খবরের কাগজে এলো।
তিনি ফজর পরবর্তি সময়ের জন্য ৪০ দিন কি কি শিক্ষা দিবেন সেটা তিনি লিষ্ট করে নিয়েছিলেন।খুব সুন্দর করে সাজানো ইসলামের মূল কথা গুলো।বিজ্ঞানের সাথে ইসলামের বা কোরানের কি সম্পর্ক সে বিষয়েও একটি লেকচার দিবেন।কুসঙ্গস্কার থেকে বেড়িয়ে এসে কি করে সামনে এগিয়ে যাওয়া যায় সে বিষয়ে দুটো লেকচার রেখেছেন।
আগের রাতে আবার নতুন করে নিজেকে ঝালাই করলেন।কিভাবে শিশুদের মনস্তত্তের সঠিকভাবে পরিচর্যা করা যায় সে বিষয়ে অনেক বই পড়েছেন,ভিডিও দেখেছেন।নিজের সন্তান নাই বলে তাকে একটু বেশিই প্রস্তুতি নিতে হয়েছে।আমেনাকে সবগুলো লেকচার শোনানো হয়ে গেছে,বেশ কয়েকবার।তার মুখস্ত হয়ে গেছে এবং স্বামী যখন পড়তে থাকেন আমেনা নিজেও স্বামীর সাথে গলা মেলায়।
প্রথম ফজরের নামাজের পরে শিশুদের লেকচার দিতে গিয়ে তার পা কাঁপছে!কত বড় বড় মানুষের সামনে তিনি বক্তব্য পেশ করেছেন কোনোদিন তার এমন হয় নি।বাচ্চারা হলো পৃথিবী/স্বর্গের সবচেয়ে পবিত্রতম সদস্য।তাদের সামনে খুব মেপে কথা বলতে হবে।শত শত ছেলেমেয়ে,তাদের সামনে চমৎকার বক্তব্য দিলেন বাছেদ হুজুর।তিনি যতটা খারাপ ভাবেছিলেন ঘটলো তার উল্টো।শিশুর দল বাছেদ হুজুরকে নিজের কর দিলেন,কারন প্রথম লেকচারই ছিলো তার বন্ধুত্ত বা রিলেশনের ওপরে।শিষ্টাচারের লেসনও আজ ছিলো।
তিনি হয়ে উঠলেন শিশুদের বন্ধু!অল্প সময়ে বাছেদ হুজুর সবার মন জয় করে নিলেন।
বাছেদ হুজুর মসজিদে পাঁচ ওয়াক্তই নামজের ইমামতি করেন।সকালের/ফজরের সময় ছাড়াও তাকে আরও চারবার মসজিদে আসতে হয়।ওয়াক্তের নামাজে সাধারনভাবেই নামাজী কম আসে।
এর মাঝেই হঠাত লক্ষ্য করলেন একটা শিশু সব ওয়াক্তেরই নামাজ পড়ছে।এমনকি রাতে মাসজিদের রক্ষণাবেক্ষণ এর কাজে নিয়োজিত (গোলাম রসূল) লোকটার সাথে রাতে মসজিদেই ঘুমায়।
বাছেদ হুজুর জানতে পারলেন সে পাশের গ্রাম থেকে এসেছে।সে খুব গরীব তাই এখানে থেকে প্রতিযোগীতায় জিতে সাইকেল নিয়ে সে ফিরবে।
বাছেদ হুজুর তাকে নিয়ে এলেন বাড়িতে।
আমেনার চোখে জল এসে গেলো এক অসহায় ছেঁড়া ফাটা চাহারা দেখে!আহারে!মানুষ কেনো এত গরীব হয়?
ছেলেটাকে দেখে কোনরকম দ্বিধা ছাড়াই নিজের সন্তানের মত করে বুকে আগলিয়ে নিলেন!বাছেদ হুজুরের চোখেও জল আসল।কিন্তু উপরে আল্লাহ তায়ালা আর বাছেদ হুজুর ছাড়া কেউ জানলো না।
মাঝের ঘরে তার বিছানা করা হল!তাকে জিজ্ঞাসা করা হয়েছিলো সে কি খেতে বা পরতে ভালবাসে!সে জবাবে কোনো উত্তর দেয় নি!আসলে সে জানেই না সে কি খেতে পছন্দ করে বা সে যা খেয়ে এসেছে এতকাল সেগুলোর ভেতর কোনো স্বাদই ছিলো না।
রাতে খুব কম ঝোলে ভাজা ভাজা করে গরুর মাংস, তেলাপিয়া মাছ ভাজি,ডিমের দোপেয়াজা, বেগুনের চাক ভাজি আর মুসুরের ডাল করা হলো,ছেলেটা কোনোদিন গরুর মাংস খায়নি,সে জানত তাদের ধর্মে গরু খাওয়া নিষেধ আছে।ছেলেটা জানতই না যে এটা গরুর মাংস ছিলো,সে জানত না গরুর মাংস রান্না খেতে কেমন,ছেলেটার মনে হতে লাগল সবর্গ এর চেয়েও কি ভালো?! ।ছেলেটার খাওয়া দেখে আমেনা,বাছেদ দম্পতির চোখে আরেকবার জল এল।
মাঝের ঘরে শুতে দিয়ে আমেনা বা বাছেদ হুজুর কাররই মনে সায় দিচ্ছিল না!কিন্তু তাকে এ ঘরে আনাটাও ঠিক হবে বলে মনে হয় না,ছেলেটা কি মনে করে বসে কে জানে?
তার পর থেকে প্রতিদিন ৫ ওয়াক্ত নামাজ পড়তে যায় বাছেদ হুজুরের সাথে।এলাকার মানুষ দেখল কিশোর একটা ছেলের হাত ধরে বাছেদ হুজুর নামাজে যাচ্ছেন!বাছেদের ছেলাটাকে কাছে রাখার কারন সবাই বুঝল এবং দোয়া ও আক্ষেপ করল আহারে কার না কার পোলা হুজুরের নিজের ছেলের মত হাত ধরে হাঁটতেছে!হুজুরের কেনো একটা সন্তান নাই সবাই বরাবরই আক্ষেপ করে এসেছে!যাক কিছুদিনের জন্যে হলেও তো একটা হয়তো অনাথ শিশুকে নিজের সন্তান মনে করে নিয়েছেন
একদিকে বাছেদ হজুরের প্রতিযোগিতা নিয়ে ব্যাস্ততা!অন্যদিকে ছেলেটাকে নিজের ছেলের মত করে মাতৃত্ব উজাড় করে দেওয়ায় ব্যাস্ত আমেনা!কী খাবে?কী করলে সে খুশী হবে?ছেলেটা এমনিতেই কম কথা বলে!ছেলেটা অন্যের মত লাজুক মনে হলেও আসলে সে খাবার ব্যাপারে খুব মুখরা,কোনোদিন ভালো কিছু খায় নি!মন্দ কিছু ছাড়া!তাই এই চল্লিশদিনে কি কি খাওয়া যায় তা বাড়তি!কোন দেবী তাকে এমন ভাগ্য দিলো ছেলেটা তার কিছুই জানে না।
শুধু এটুকু জানে,তার কপালে কিছু লেখা থাক বা না থাক সে এই আদর আর আপ্যায়নকে সর্গীয় হিসেবেই বেছে নিয়েছে!পৃথিবীতে তার আর বেশি কিছুর দরকার নাই।এখন শুধু লাল রঙয়ের সাইকেলটা হলেই চলবে!
দূরত্ব কমে আসে ছেলেটা আর আমেনা,বাছেদ দম্পতির ভেতরে।
প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহনের পরে ১০ দিনের মাথায় প্রতিযোগীদের সংখ্যা অর্ধ্যেক হয়ে গেলো।প্রচন্ড শীত বাচ্চাদের কাবু করে ফেলছে।২১ দিনের মাথায় মেয়রের ছেলে আসতে পারল না!
মেয়র বাছেদ হুজুরকে একাকী ডেকে নিলেন এবং তার ছেলেকে আবার প্রতিযোগীতায় তার ছেলেকে বাদ না দেওয়ার জন্য অনুরোধ করলেন!বাছেদ হুজুর স্বভাবতই না করলেন!তবে সে বাকি দিন গুলো চাইলে প্রতিযোগীদের সাথে নামাজ পড়তে পারে,কিন্তু প্রতিযোগী হিসেবে আর কাউন্ট করা যাবে না!এতে করে রুলস ভেংগে ফেলা হবে!তাছাড়া আরও প্রতিযোগীরা প্রশ্ন তুলবে প্রতিযোগীতার স্বচ্ছতা নিয়ে!মেয়র বললেন সেটা আমি দেখব!ছেলেটা খুব ভেঙ্গে পড়েছে,আপনার ভাবী তো কান্নাকাটি শুরু করেছে।বাছেদ হুজুর খুব বিনয়ী হয়ে বললেন “ভাই আপনাকে আমরা সবাই সম্মান করি ভালোবাসি” আপনার টাকা আছে আপনি নিজেই একটা কিনে দেন না!
আমাকে এমন অনুরোধ করবেন না,ভাই!আমি ক্ষমা চাইছি!মেয়র হাসিমুখে চলে গেল।বুঝতেই দিল না সে কতটা খেপেছে বাছেদ হুজুরের ওপর।কোন কারন ছাড়া বাছেদ হুজুরকে কিছু বলাও যাবে না,এলাকার লোকজন ক্ষেপে যাবে!যেকোন একটা সুযোগ তাকে কাজে লাগাতে হবে!তিনি খুঁজতে থাকলেন কি নিয়ে তাকে ঘায়েল করা যায়!
বাছেদ হুজুর খুব স্বাভাবিক ভাবেই নিলেন ব্যাপারটা,তিনি অত কঠিন করে কখনও ভাবেন না!প্রতিযোগীদের বেশিরভাগই বাবার হাত ধরে আসে।এতে করে যাদের বাবাদের সকালে ওঠার অভ্যাস ছিল না তারা অভ্যাস্ত হয়ে উঠল!কেউ উঠতে না চাইলেও ছেলেরা বা ছেলের মায়েরা পীড়াপিড়ি করে উঠিয়ে দিতে শুরু করছে!অত্যান্ত রাগী স্বামীও পরাস্ত হল ছেলে আর বউয়ের চাওয়ার কাছে!অন্তত এতটুকু সফলতা তো প্রতিযোগীতায় এ পর্যন্ত পাওয়া গেছে!তাই বা কম কি?
আমেনা আর ছেলেটার রসায়ন খুবই চমৎকার কেউ দেখলে বলতে পারবে না,তারা আসলে মা ছেলে নয়।বাছেদ হুজুর ছেলেটার জন্য নতুন জামা কাপড় কিনে আনলেন!সাথে কিছু বই!চমৎকার সে বইগুলো কি সুন্দর করে ছবি আঁকা,গল্পের সাথে সাথে!ছেলেটার পড়ার প্রতি আগ্রহ দেখে খুবই ভালো লাগল বাছেদ হুজুর আর আমেনার।
বাছেদ আর আমেনা অনেকবার চেষ্টা করেও বেড় করতে পারে নাই সে কোন পরিবারের ছেলে!সে যে নাম বলে তা বছেদ হুজুরের কাছে পরিচিত নয়!তাতে কি এসে যায়!পাশের থানার সবাইকে বাছেদ হুজুর চিনবে সে কথা ঠিক না!বাছেদ হুজুর আর আমেনা বলেছিল তার বাবা মা কে একদিন নিয়ে আসতে!আসলে সে পরিচয় দিয়েছে রেল লাইনের বস্তিতে থাকা এক অনাথ শিশু হিসেবে।তাই,ব্যাপারটা খুবই দুঃখজনক বলে এ বিষয়টা তে আর বেশী প্রশ্ন বা ঘাঁটাতে যায় নাই তারা।
পৃথিবীতে প্রতিটা মানুষের আলাদা আলাদা গল্প আছে,আলাদা আলাদা রহস্য আছে আমরা তার কতটুকুই বা জানি?কি দরকার এত কিছু ঘাটানোর।ছেলেটার বাবা মা অবশ্যই খুব শিঘ্রই খোঁজ নিতে আসবে।তারা এসে ছেলেটাকে দেখবে আর আমেনা মুখে আঁচল গুঁজে বলবে “আমি হয়ত আপনাদের মত করে সমাদর করতে পারিনি আপনাদের সন্তানের!কিন্তু আমার সাধ্যের ভেতরে কমতিও রাখি নাই”।
এই ছেলেটা যখন চলে যাবে,কেমন অনুভূতি হবে আমেনার?সেটা চিন্তা করতে চায় না সে,কারন এই ছোট খাট আবেগে বড় কোন কাজকে অবহেলা করা যাবে না।আর এদের বাড়ি হয়ত কাছেই কোথাও হবে,যখন দেখতে ইচ্ছে হবে অনায়াসেই দেখতে যাওয়া যাবে।
ছেলেটাকে আমেনা যখন কাপড় বা জুতা পড়াতে যায়,সে ভয়ে কুঁচকে থাকে।সে বিশ্বাসই করতে পারে না তার জন্য এত ভালোবাসা থাকতে পারে।কি এক অদ্ভত অনুভুতি হয় তার।মাঝে মাঝে সে রাতে ভয়ংকর সব স্বপ্ন দেখে আঁতকে ওঠে।
তবুও সে এই সর্গের মত আদর আপ্যায়ন রেখে কোথাও যেতে চায় না।এই ছোট জীবনে আক্ষরিক অর্থে উল্লেখ করার মত কোন ঘটনাই তার ছিল না।এই আপ্যায়ন তাই তার কাছে বেহেশতের মতই লাগছে।আগেই তার মনে হয়েছে বেহেশত মনে হয় না এর চেয়ে বেশি সুন্দর।
ভবিষ্যতের কথা তার মত শিশুর মাথায় আসার কথা না বা আসেও নাই,তার কেবলই মনে হচ্ছে সে যতদিনই বেঁচে থাকুক না কেন!তার জীবনের শ্রেষ্ঠ সময় কাটাচ্ছে!এই সময়টুকু সে কোনদিনই ভুলতে পারবে না।
প্রতিযোগীর সংখ্যা কমে গেলেও উত্তেজনার কোন ঘাটতি নাই,ঈদের আনন্দ তো ২/৩ দিনেই শেষ হয়ে যায়;এই আনন্দ মনে হয় শেষ হওয়ার নয় কোনদিন।
প্রতিদিনই কোন না কোন টেলভিষনে,সংবাদপত্রে খবর প্রচারিত বা ছাপা হচ্ছে।স্বেচ্ছাসেবক বা কমিটির সবাই খুব ব্যাস্ত সময় পার করছে।সবাই যেন এক বিন্দুতে মিলিত হয়েছে তারা,পাহাড় ধসিয়ে দিতে পারবে সবাই মিলে।মনে হচ্ছে তারা কোন রেভুল্যুশন ঘটাতে যাচ্ছে।
আমেনা,বাছেদের সাথে ছেলেটার চমৎকার এক রসায়নের সূচনা হয়েছে যেন প্রকৃতি র নির্দেশেই তাদের ভেতরের এড্রোনালিনে ডোপামিন নিঃসৃত হচ্ছে।সেই ডোপামিন যেন এক মোহ,ঘোর বা নেশার উদ্রেক করেছে।কোন কিছু তারা ভাবার অবকাশ পাচ্ছে না।
হিসাব করতে গেলে আমাদের মানব জীবন খুবই অল্প সময়ের।এই সময়ের ভেতর সুখসৃতি আর কতটকুই বা থাকে।আর যা থাকে তা নিয়েই আমরা বাঁচতে চাই।অনেক দুঃখের ভেতরেও ছোট সুখের সৃতি গুলো মনে করেই জীবন চালিয়ে নিতে হয়।

রতন আর শিখার অবস্থা বেশ খারাপ আজ সতের দিন হয়ে গেল রাজীবের কোন খোঁজ নাই।গ্রামের মানুষ একথা ও কথা বলে রতন শিখা কে আউলায়ে দেয়।কেউ বলে রাজীবরে ছেলেধরা ধরে নিয়ে বেচে দিছে,কিডনি,লাংস,চোখ এইগুলার খুব দাম তারওপর আবার কচি ছেলে।কেউ কেউ বলে পানিতে ডুবেছে মনে হয়,কেউবা বলে রোহিঙ্গা রা ধরে নিয়ে গেছে মনে হয়।শিখা আর রতন পুরো বেসামাল হয়ে যায়।তারা প্রতিদিন থানার দড়জায় বসে থাকে।এস আই মিজান দেখছি,দেখব বলে সময় নেয়।অনেকসময় বিরক্ত হয়ে বলে ওঠে আমার কি আর কাজ নাই?তোমরা যা পার করো আমি আর এই কেস দেখতে পারব না।শিখা আর রতন উঠে পরে,বিরক্ত করলে সমস্যা।গরীব মানুষের নানান ঝামেলা।ঝামেলা মিটাতে গিয়ে আরও ঝামেলা।গরীবরে কেউ সাহায্যও করতে চায় না এই যুগে।গ্রাম্য ভাষায় সবাই খালি হাইকোর্ট দেখায়।রাজীবের খোঁজ করতে কতজনের কাছেই না গেছে এরা।কোথাও কোন সুরাহা হয় নাই।হয়রানির শিকার হয়ে আহত হৃদয় নিয়ে হাহাকার করে যাচ্ছে শুধু।অথচ তারা জানেই না তাদের সন্তান,তার জীবনের শ্রেষ্ঠ সময় কাটাচ্ছে।


প্রতিযোগীতার চূড়ান্ত দিন দড়জায় টোকা দিতে থাকে।প্রতিযোগিতার শেষ পর্দা নামানোর জন্য পাবনা ৩ আসনের এম পি,ইউ এন ও,ও সি,মেয়র অনেক গন্যমান্য ব্যাক্তিকে আমন্ত্রন করা হয় এবং বাদ জুম্মা পুরষ্কার প্রদান শেষে বড় খাওয়ার আয়োজন করা হয় যেখানে অনেকাংশেই গরীব মিসকিনদের খাওয়ানোর পরিকল্পনা করা হয়।

৩রা ডিসেম্বর ২০১৬,শুক্রবার। সকালে এলাকার সকল মানুষ দেখল চাট্মোহর শাহী মসজিদ কি অপরুপ সাজে সজ্জিত হয়েছে।কেউ কখনো কল্পনাও করে নাই একটা মসজিদ এত সুন্দর করে সাজানো যায়।মনে হচ্ছে যেন উন্নত দেশে যেভাবে বাচ্চাদের জন্য আনন্দ আয়োজন করা হয়,পৃথিবীর বুকে ছোটখাট বেহেশত নামিয়ে আনা হয় যেন,ঠিক তেমনটাই।
চূড়ান্ত বিজয়িদের পাওয়া গেছে,১৭ জন কিশোর প্রতিযোগিতায় জিতে সাইকেলের দাবীদার হয়েছে।এর ভেতর বাছেদ হুজুরের বাসায় থাকা ছেলেটাও আছে।
সকাল থেকে আজও শিখা আর রতন থানার গেটে বসে ছিল।এস আই মুজিব আর ও সি নাসির খুব তড়িঘড়ি করে বেড়িয়ে যাচ্ছিল,থানায় সবাইকে বলে গেল চাটমোহরে একটা অনুষ্ঠানে যাচ্ছি ইউ এন ও স্যারের সাথে।ফিরতে দেরি হবে।আর এই রতন আর শিখাকে যেন না দেখি থানা কম্পাউন্ডে।আমারে বিরক্ত করে মারল।

বাছেদ হুজুরের চোখ চকচক করছে,সারা মুখে নূরের ঝলকানি।তার উদ্দেশ্য বেশ সফলভাবে শেষ হতে চলেছে।সে নিজেও কল্পনা করে নাই এতটা সফল হবে তার নেওয়া পদক্ষেপ।বাছেদ হুজুর আত্মতৃপ্তিতে ভেসে যেতে চান না।এটা খুবই ছোট একটা পদক্ষেপ।সারা দেশে এই আলোড়ন ছড়িয়ে দিতে হবে তাকে।একটা সুশিক্ষিত ভবিষ্যৎ দেশের জন্য প্রস্তুত করার লক্ষ্যে আজীবন কাজ করে যাবে সে।
একে একে চীফ গেষ্ট,মেয়র সবাই বক্তৃতা দিলেন।বাছেদ হুজুর বরাবরের মতই ছোট কিন্তু জ্ঞানগর্ভ কথা বললেন।

সতেরটা সাইকেল চলে এসেছে মূল মঞ্চের পাশে।লাল রঙয়ের সাইকেলের দিকে সবার নজর।
ছেলেটা আগ্রহ নিয়ে সাইকেলের গায়ে হাত বুলাচ্ছে,চোখেমুখে উজ্জলতার স্পষ্ট ছাপ।
সাতজন প্রতিযোগির পরে ছেলেটার নাম ডাকা হল।সে মঞ্চে উঠেই আঁতকে উঠল,সাথে সাথে এস আই মুজিব।আরে এইতো সেই ছেলেটা,রাজীব শিখা,রতনের নিখোঁজ সন্তান।
এস আই সবার সামনে যখন বলে উঠল আরে এ তো হিন্দুর ছেলে একে কিভাবে মুসলমানের প্রতিযোগিতায় নেওয়া হয়,এ কিভাবে সাইকেল জিতে?
বাছেদ হুজুর এটার জন্য অবশ্যি প্রস্তুত ছিলেন না।কি বলে এই লোক?
মেয়র সাখাওয়াত এগিয়ে আসে,এস আইকে বলে কি হইছে বলেন তো?ঘটনা জানার পর সে চোখ বড় করে মাইকের দিকে এগিয়ে যায়।
ভাইসকল আপনারা মন দিয়ে শোনেন এই ছেলেটা হিন্দু!ইসলাম ধর্মকে নাস্তানাবুদ করার যে ষড়যন্ত্র তা আজ স্পষ্ট আর এজন্য প্রত্যক্ষভাবে দায়ী বাছেদ হুজুর।তার ছেলেকে বাদ দেওয়ার ঝাল বাছেদের জিভে ডলে দেওয়ার একদম সঠিক সময় পেয়েছে।
পুরো জমায়েত দ্বিধা বিভক্ত হয়ে যায়।ধর্মের চেয়ে মানুষ বাছেদ তাদের কাছে বড় হতে পারে না।ধর্মযুদ্ধে ভালোবাসা বড় হতে পারে না কখনোই।বাছেদ হুজুর জেনেশুনে এই কাজ করেছে নিশ্চিত হতে চায় তারা।
মেয়র কথা থামাতে চায় না,বলে চলে বাছেদ হুজুর এই ছেলেটাকে নিজের বাসায়ও নিয়ে তুলেছে,সে নিজে তো ধর্মের অবমাননা করেছেই আবার মসজিদে তাকে নামাজ পড়তে দিয়ে আমাদের সবার ধর্মকে কলুষিত করেছে।
মঞ্চে বসা শিক্ষিত অতিথিরাও কেমন জানি এক ঘোরের ভেতর দিয়ে এগিয়ে যাচ্ছে,কি হচ্ছে এগুলা?
এস আই মুজিব এর ভেতর রতন আর শিখাকে আনার জন্য থানার গাড়ি পাঠিয়েছিল!
রতন শিখা রাজিবকে দেখে তাদের কি অবস্থা হয় তা সহজেই অনুমান করা যায়।
বাছেদ হুজুরকে তার অবস্থান সম্পর্কে ব্যাখ্যা করতে বলা হয়।বাছেদ হুজুর অবশ্যই ছেলেটা হিন্দুত্ত সম্পর্কে জানত না।আর ছেলেটা তার শিশুমন নিয়ে সাইকেলের আশায় প্রতিযোগিতায় অংশ নিয়েছে।তাই এই সাইকেল তার প্রাপ্য।
হিন্দু সমাজের মাথাদের ডাকা হয়।সাধারন মানুষ এক সাক্ষাত সিনেমার সামনে পরে সিদ্ধান্ত নিতে পারে না সঠিকভাবে।
হিন্দু সমাজ এক ধরনের কথা বলে আবার মুসলিমরা এক ধরনের কথা বলে।গরু বিষয়ক প্রসঙ্গে বাছেদ হুজুর সত্য কথাই বলে।হিন্দু সমাজপতিরা সহজভাবেই তাদেরকে দোষী করে সমাজচ্যুত করে।
বাছেদ হুজুর বারবার তাদের বোঝাতে ব্যার্থ হয় যে রাজীবের কোন দোষ নাই সে একজন শিশু।
মেয়র আর সমাজের উঠতি নেতাদের রোষানলে পড়ে বাছেদ হুজুরকে কঠিন বাস্তবতার মুখোমুখি করে।
মুসলমানদের দাবি অই ছেলেকে ইসলাম ধর্ম গ্রহন করতে হবে নয়তো বাছেদ হুজুরকে একঘরে করা হবে।
বাছেদ হুজুর প্রতিবাদের কোন ভাষা খুঁজে পায় না।সে একঘর হওয়ার ব্যাপারেই মতামত পোষণ করে।
রাজীবের সাইকেল পাওয়া হয় না।সেই সাইকেল ক্ষমতাবলে মেয়র তার ছেলেকে পাইয়ে দেয়।

বাছেদ হুজুর রাজিবকে নিয়ে নিজের টাকায় সাইকেল কিনে দেয়।
পরেরদিন সকালে দেখা যায় বাছেদ হুজুরের বাড়িতে রতন,শিখা,রাজিব,আমেনা বাছেদ হুজুর সকালের খাবার খাচ্ছে।
বড় ঘরের দেয়ালে একটা সাইকেল রাখা।
অনেক বছর পর! দেখা যায় রাজিব প্রাপ্তবয়স্ক হয়েছে।নিজে একটা আশ্রম খুলেছে।সে বিয়ে থা করে নাই, বাছেদ হুজুরের স্বপ্ন বাস্তবায়নের জন্য সে প্রতিটা দিন কাজ করে যাচ্ছে।আর তার সঙ্গী সেই সাইকেল যেটা বাছেদ হুজুর কিনে দিয়েছিল।


শামসুদ্দিন হাবিব
৬/৫/২০২১

মন্তব্য ৬ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (৬) মন্তব্য লিখুন

১| ২৬ শে ফেব্রুয়ারি, ২০২৪ সকাল ৯:৪৭

রাজীব নুর বলেছেন: বিশাল পোষ্ট লিখেছেন।
বাছেদ আর আমেনার কথা লিখেছেন। রাজীব নামের একজনের কথা লিখেছেন। এছাড়া আরো অনেকের কথা লিখেছেন। লিখেছেন ধর্মের কথা।
সব মিলিয়ে পোষ্ট টি আমার ভালো লাগেনি।

২৮ শে ফেব্রুয়ারি, ২০২৪ সন্ধ্যা ৬:৪৮

শামসুদ্দীন হাবিব বলেছেন: ধন্যবাদ আপনার মতামতের জন্য। এটা কাল্পনীক গল্প, আপনার ভালো লাগে নি! সত্য মন্তব্যের জন্যে সাধুবাদ জানাই। চেষ্টা করছি! জানি না সফল হতে পারবো কি না। ভালো থাকবেন।

২| ২৬ শে ফেব্রুয়ারি, ২০২৪ সকাল ১১:০৬

শায়মা বলেছেন: খুব সুন্দর গল্প ভাইয়া।

তবে থানা জেলা এসবের নাম দেখে ভেবেছিলাম সত্য ঘটনা অবলম্বনে লিখেছো ভাইয়া।

আসলেই জাঁত পাত ধর্মের চাইতেও সব চেয়ে বড় মানব ধর্ম, মানুষ জাঁত ও পাত। :)


২৮ শে ফেব্রুয়ারি, ২০২৪ সন্ধ্যা ৬:৪৮

শামসুদ্দীন হাবিব বলেছেন: ধন্যবাদ আপু আপনার মন্তব্যের জন্যে। এটা কাল্পনিক গল্প।

৩| ২৭ শে ফেব্রুয়ারি, ২০২৪ বিকাল ৪:২৯

রাজীব নুর বলেছেন: আপনার পোষ্টে মন্তব্য এত কম কেন?

২৮ শে ফেব্রুয়ারি, ২০২৪ সন্ধ্যা ৬:৪৯

শামসুদ্দীন হাবিব বলেছেন: আমার লেখার মান ভালো না এজন্যই মনে হয়।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.