![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
আমি অতি সাধারন একজন মানুষ,নিজকে নিয়ে খুব বেশি প্রত্যাশা নাই।পেশায় টেক্সটাইল ইঞ্জিনিয়ার,একসময় নাটকে ক্যামেরার পেছনে কাজ করেছি।টুকটাক লেখালেখি করি।হাসতে ভালোবাসি,ভালোবাসি হাসাতে।এই তো।
১
শ্যামগঞ্জ থেকে পুর্বধলা সাড়ে চার কিলো পথ। কাঁচা রাস্তার ওপর ভাঙ্গা ইঁটের টুকরো ফেলে রাস্তার সৌন্দর্য্যটাই মেরে দিয়েছে। এই সময়ে কাঁচা রাস্তা খারাপ লাগছে না অবিশ্যি! পাকা না হোক হেরিংবন্ড থাকতে পারত অন্তত। এলাকাটা যে প্রত্যন্ত বোঝা যাচ্ছে। আজ থেকে ঠিক ৮০ বছর আগে এই যায়গা কেমন ছিল তাহলে? রিগ্যান চিন্তা করে খুব কিনারা করতে পারল না।
রাস্তার দুইপাশে বিস্তীর্ণ সবুজ ধানের ক্ষেত, তার মাঝখানে পথটা যেন রুপসীর সাদা জর্জেটের ওড়না। রাস্তাটা উঁচুনিচু না, আঁকাবাঁকাও না। শীত শুরুর হালকা বাতাস ধানগাছে আলতো স্পর্শ ছাড়ছে। ফুলে ফেঁপে ওঠা ধানগাছের কেউই সে বাতাসের তোয়াক্কা করছে না। এবার ফলন ভালো হবে বোঝা যাচ্ছে।
রিগ্যানের শ্যাওলা রঙয়ের টয়োটা কারিনা যখন পাকা রাস্তা ছেড়ে রুপসীর ওড়নার ওপর নেমে এল, সুর্য কুয়াশায় ঢাকা পড়ে গেছে। খানিক পরেই মাগরিবের আজান শোনা যাবে।
রিগ্যান তার প্রীয় কারিনা ইঁটের টুকরো দেখে সাবধানে এগিয়ে চলেছে। গুগল ম্যাপ তাকে সঠিক স্থানে নিয়ে যাচ্ছে কি না কে জানে? রাস্তাটা বেশ চাপা, এতক্ষনে রিগ্যানের খেয়ালে আসে। তার চোখের আন্দাজ এত খারাপ হয়ে গেছে? তার বয়স বাড়ছে? না কি অত্যাধিক চাপের কারনে এমন হচ্ছে? নিজের ওপর যথেষ্ট বিরক্ত লাগা দরকার, তারপরেও রিগ্যান হয় না। নিজে ছাড়া তার কে আছে? বিপরীত দিক থেকে একটা গাড়ি আসলে তারা দুইজনই আটকে যাবে নিশ্চিত। বড় রাস্তায় গাড়িটা ছেড়ে আসা উচিত ছিল। চারিদিকের নীরবতায় বোঝা যায় অন্য দিক থেকে কেউ আসবে না হয়ত। কারিনাকে খুব সাবধানে চালাতে হচ্ছে, একটু এদিক ওদিক হলেই তার কারিনা সবুজ ধানক্ষেতে গড়াগড়ি খাবে। যদিও যুক্তি তা বলে না। রাস্তা আর ক্ষেত সমান তলে আছে, বড়জোড় কাঁদায় ফেঁসে যেতে পারে কারিনার চাকা।
কি মনে করে রিগ্যান এসি বন্ধ করে ডোর গ্লাস খুলে দিল। সে নিজেও জানে না কেন এমন শীতল পরিবেশে এসি চালু রেখেছিল। এটা তার অভ্যাস! ঢাকার বাতাস তার সহ্য হয় না, প্রচুর ধুলো, বালি, ময়লা! কি গরম, কি শীত, কি বৃষ্টি রিগ্যানের কারিনার ঠান্ডা বাতাস বন্ধ হয় না। একদল ঝিঁ ঝিঁ পোকার করুন সুরে কারিনার শব্দ চাপা পড়ে গেল। কি অদ্ভুত মায়াময়তা! শেষ কবে রিগ্যান এমন পরিবেশে এসেছিল সে নিজে মনে করতে পারে না।
রিগ্যান এখানে এসেছে অদ্ভুত এক কাজে। যে কাজের কোন উপসংহার নাই সে নিজেও জানে, তারপরেও কিসের টানে তাকে আসতে হয়েছে। তার ক্ষুধার্ত মনের খাবার যোগাতে? হতে পারে! অথবা সে যথেষ্ট অপমান বোধ করেছে সে কারনে? হতে পারে এর অনেক কিছুই। তবে রিগ্যানের মত যৌক্তিক লোক শেষ পর্যন্ত এখানে আসবে কেউই ভাবে নাই। কেউ বলতে আনন্দ এবং রিগ্যান নিজে । একটা প্রশ্নের উত্তর খুঁজতে তাকে আসতে হয়েছে। সাধারন লোক সেটা শুনলে রিগ্যানকে পুরোপুরি পাগলের লিষ্টে ঠেলে ফেলে দেবে। আনন্দ আর রিগ্যান ছাড়া ব্যাপারটা কেউই তাই জানে না। রিগ্যান যাকে নিয়ে রহস্যভেদ করতে এসেছে তার নাম শুনলে খোদ পাগলও তাকে পাগলের দল থেকে বাদ দিয়ে নতুন কোনো শব্দ যোগে মানবপ্রকারের বাইরে নিয়ে ফেলবে।
হ্যাঁ তার নাম “এ্যাডলফ হিটলার”।
এক অমিমাংসিত প্রশ্নের উত্তর খুঁজতে সে পুর্বধলায় এসেছে। ডি জি এফ আই এর অফিসার রিগ্যান তিন মাসের ছুটিতে আছে। লিরার সাথে ছাড়াছাড়ির পর তার ডিপ্রেশন কাটানোর জন্যে খোদ ডিরেক্টর তাকে ছুটি দিয়েছেন।
গাড়ির গ্লাস খোলার পর অসম্ভব ভালোলাগায় ভরে ওঠে তার মন। গত পাচঁ মাস কি অবস্থায় সে গেছে কেউ জানে না। জীবনে প্রথমবারের মত কোন তদন্তে সে ফেল মেরেছে। মানসিক ভাবে পুরোপুরি ছিন্নবিচ্ছিন্ন অবস্থায় ছিল রিগ্যান।
হঠাত তার মনে হয়, আনন্দ কি ইচ্ছে করেই তাকে এখানে পাঠিয়েছে? মন ভালো করার জন্যে? হিটলার কিছু না!
আনন্দ ভালো করেই জানে সাধারন ভাবে রিগ্যানকে কোথাও পাঠানো যাবে না, সে জন্যে কি ইচ্ছা করে এক গল্প ফেঁদে রিগ্যানকে এখানে পাঠিয়ে দিয়েছে?
অমিমাংসিত জটিল সব কেসের রহস্য উদ্ঘাটনে রিগ্যানের সমকক্ষ বাংলাদেশে কেউ নাই। সকল গল্প উপন্যাসের চরিত্র এমনই হয়। কিন্তু রিগ্যানের ক্ষেত্রে ব্যাপারটা সে সবের উর্ব্ধে। দেখতে বিদঘুটে কালো, মাথায় চুল কম এমন একজনকে ঝানু অফিসার হিসেবে মেনে নিতে কষ্টই হয়। “অমিমাংসা” শবদটার সাথে রিগ্যানর কোথায় জানি বিশাল দ্বন্দ্ব আছে।
আশেপাশের প্রকৃতি তাকে বিমোহিত করে রাখার কথা। তার কিছুই হচ্ছে না, সে চায় সত্যি কি সেটা জানতে। আনন্দ যদি তার সাথে মজা করে তার গ্লক১৯ এর একটা বুলেট আনন্দের জন্যে বরাদ্দ রইল। সন্ধ্যা পুরোদমে কালো চাদড় গায়ে নেমে গেছে। কারিনার হেডলাইট জ্বালালে অসংখ্য পোকামাকড় উড়ে আসে লাইটের সামনে। কাঁচা রাস্তার মাথায় একটা ভাঙ্গা ব্রীজ দেখা যাচ্ছে। ওপাশে কি আছে তা অস্পষ্ট।
রিগ্যান ব্রীজ পাড় হলে ওপাশে রাস্তা আরও সরু হয়ে গেছে, গাড়ি নিয়ে যাওয়ার কোনও উপায় নাই।
ব্রিজের পাশে একটা কড়ই গাছের নীচে গাড়িটাকে পার্ক করায় সে।
ইচ্ছে করেই রিগ্যান তার গ্লক ১৯ গাড়ীতে রেখে যায়। এখানে নেওয়ার কোনও প্রয়োজন বোধ করে না। “বাজান” নামের এক লোকের সাথে তাকে দেখা করতে হবে। তার আসল নাম মমিন খান, এলাকার লোকজন তাকে সন্মান দিয়ে বাজান বলে ডাকে। বাজানের আড়ালে মমিন খান নাম চাপা পড়ে আছে। এলাকায় অনেক প্রভাব তার, যদিও খুব কম লোকই তার প্রভাব দেখেছে। মাটিতে লেপ্টে থাকা মানুষ সে। একরের পর একর জমি তার, সবই এলাকার লোক আবাদ করে নিজের জমি হিসেবেই। বাজান নিজের জন্যে কিছু রাখেন না, এদিন এর বাড়ি ওদিন ওর বাড়ি এভাবে খাওয়ার ব্যাপারটা চলে।
মমিন খানের বাবা কাদের খান পড়াশোনা জানা বিখ্যাত লোক ছিলেন। এ দেশে কাঁটাতারের বেড়া পড়ার আগে কাদের খান ভিয়েনায় গিয়েছিলেন পি এইচ ডি করতে। ময়মনসিংহ জেলার প্রথম মুসলিম যিনি এই অভুতপুর্ব সন্মান এনেছিলেন এলাকার জন্যে। শের এ বাংলা এ কে ফজলুল হক নিজে তার গলায় সোনার মেডেল ঝুলিয়ে দিয়েছিলেন।
কাদের খানের দিক বিবেচনা করলে আনন্দ যে গল্পটা বলেছে তার কিছুটা সত্যতা থাকতে পারে, তবে হিটলার যে পুর্বধলায় এসেছিলেন তা সম্পুর্ন মিথ্যা আর বানোয়াট। হতে পারে আনন্দ নিজের মত এক গল্প ফেঁদে দিয়েছে। হিসাবমতে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় কাদের খান ভিয়েনায় ছিলেন এবং ১৯৪৭ এ দেশে ফিরে আসেন তাই কাদের খানকে জড়িয়ে মিথ্যের মত সত্য গল্প দাঁড় করানোই যায়। যাকে নিয়ে এই রহস্য তার একটা বিখ্যাত উক্তিই তো আছে।
“মিথ্যাকে উঁচুস্বরে এবং বারবার বললে তা সত্য হিসেবে প্রতিষ্ঠা পায়”
রিগ্যান অবিশ্যি মিথ্যা ঘটনাকে প্রতিষ্ঠা করতে আসে নাই, সে সত্যটা জানতে চায়। আর সেটা যদি সত্য হয় তা যে কি হবে বাংলা ইংরেজী অভিধানে যুতসই শব্দ খুঁজে পাওয়া কঠিন হয়ে যাবে।
ব্যাপারটা খুবই হাস্যকর হবে লোকজনের কাছে, একসময়ের সবচেয়ে ক্ষমতাধর ব্যাক্তির রহস্য উদ্ঘাটন করতে চলেছে।
চলবে.....
২৮ শে ফেব্রুয়ারি, ২০২৪ সন্ধ্যা ৬:৩২
শামসুদ্দীন হাবিব বলেছেন: চলতে চলতে থেমে গেলে মাইর দিতে চায়েন না আবার!
২| ২৭ শে ফেব্রুয়ারি, ২০২৪ রাত ৯:৩২
শূন্য সারমর্ম বলেছেন:
টেক্সটাইলে আপনি কোথায়, কিসে আছেন? সেক্টরের অবস্থা কিরুপ?
২৮ শে ফেব্রুয়ারি, ২০২৪ সন্ধ্যা ৬:৩৫
শামসুদ্দীন হাবিব বলেছেন: সেক্টরের অবস্থা ভালো না, আমি আছি একটা বহুজাতিক কোম্পানীতে।
৩| ২৭ শে ফেব্রুয়ারি, ২০২৪ রাত ১০:০৭
রিয়াদ( শেষ রাতের আঁধার ) বলেছেন: বাহ ইন্টারেস্টিং, পরের পর্বের অপেক্ষায় রইলাম।। কিছু বানান ভুল আছে, ঠিক করে নিয়েন।
ব্লগে আরেকজন টেক্সটাইল ইঞ্জিনিয়ার পেলাম।
২৮ শে ফেব্রুয়ারি, ২০২৪ সন্ধ্যা ৬:৩৭
শামসুদ্দীন হাবিব বলেছেন: অনেক ধন্যবাদ, ঠিক করে নেবো।
৪| ২৮ শে ফেব্রুয়ারি, ২০২৪ বিকাল ৩:২৯
রাজীব নুর বলেছেন: একটু স্পেস দিয়ে লিখুন। তাহলে পড়তে আরাম হয়।
২৮ শে ফেব্রুয়ারি, ২০২৪ সন্ধ্যা ৬:৪৪
শামসুদ্দীন হাবিব বলেছেন: একগামলা ধন্যবাদ, আপনাদের মূল্যবান মতামত আমার চেষ্টার শিঁকড়ে পানির মত কাজ করবে। লেখার মান যদি খারাপ হয়, দয়া করে বলবেন। চাইলে থাপড়াতেও পারেন। শিখতে চাই। ভালোবাসা।
©somewhere in net ltd.
১|
২৭ শে ফেব্রুয়ারি, ২০২৪ রাত ৮:১৭
জ্যাক স্মিথ বলেছেন: চলুক দেখি।