নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

মহেরা

আরেফিন৩৩৬

একটি নেতৃত্বই পারে একটি জাতিকে পরিবর্তন করতে; আমি এ কথায় বিশ্বাসী।

আরেফিন৩৩৬ › বিস্তারিত পোস্টঃ

মে দিবসে বাংলাদেশের শ্রম অধিকারের কথা এবং নারী শ্রমিক

০২ রা মে, ২০২৪ রাত ২:৪৭


১।
আজ মে দিবস,আন্তর্জাতিক ভাবে স্বীকৃত শ্রমিক আন্দোলন দিবস। কিন্তু সবদেশেই আবার শ্রমিক আন্দোলন দিবস একই দিন নয়। কানাডা ও যুক্তরাষ্ট্রে শ্রমিক আন্দোলন ও শ্রম অধিকার আন্দোলন দিবস পালিত হয় সেপ্টেম্বর মাসে। ১৮৮৬ সালে হে মার্কেটে শ্রমিকদের ৮ ঘন্টা কর্ম সময় স্বীকৃতির দাবি আন্দোলন হয়,সেই আন্দোলন দমনের জন্যে পুলিশের সাথে শ্রমিকের সংঘর্ষ বাঁধে এবং পুলিশের গুলি ও শ্রমিকদের দাঙ্গায় ১০/১২ শ্রমিক-পুলিশ নিহত হয়। এরপর ফরাসি বিপ্লবের শতবার্ষিকীতে শিকাগো শহরের শ্রমিকদের আত্মত্যাগকে স্মরণে রাখতে এবং শ্রদ্ধা জানাতে পহেলা মে-কে শ্রমিক আন্দোলন দিবস হিসেবে স্বীকৃতি দেয়া হয়।

সমাজতান্ত্রিক দেশগুলো এবং বাম ঘরোনার দেশসমূহ এমন কি শিকাগো শহরের আত্মত্যাগকে যারা স্মরণ করে ও এ আত্মত্যাগকে ধারণ করে তারা পহেলা মে -কে শ্রমিক আন্দোলন দিবস হিসেবে গ্রহণ করেছে।
একমাত্র কানাডা ও যুক্তরাষ্ট্র দাঙ্গার পুনরাবৃত্তি রোধের কথা বলে শ্রমিক আন্দোলন দিবস পালন করে সেপ্টেম্বরের প্রথম সোমবার। মোটামুটি ভাবে শ্রমিক আন্দোলনের প্রেক্ষাপট এমনই। আর কমিউনিস্ট বিপ্লবের শুরুর দিকে একই সাথে পুঁজিবাদ প্রসারের সময়ে এবং পারস্পরিক দ্বন্দ্বে অনেক সিদ্ধান্তই পাল্টাপাল্টি গৃহীত হয়। শ্রমিক আন্দোলন দিবসও তেমনই।

২।
কারোনাকাল বাংলাদেশে মুখোশের অন্তরালে প্রতিষ্ঠিত নানা শ্রমিক ট্রেড ইউনিয়ন এবং শ্রমিক কল্যাণ সমিতিগুলো যে শুধু চাঁদা আদায় করে আর ভোগ করে হাওয়ায় মিশিয়ে দেয় তার জ্বলন্ত দৃষ্টান্ত তৈরি করে। শত শত নীতি কথা এক নিমেষে ভেঙ্গে পড়ে। পোশাক শ্রমিক, পরিবহন শ্রমিক, কলকারখানা-র শ্রমিক, সেবাখাত শ্রমিক প্রতিটি শ্রমিকেরই আছে শ্রমিক কল্যাণ সংগঠন। আছে কাড়ি কাড়ি টাকা আদায়ের মহাযজ্ঞ শুধু কল্যাণের ফান্ড নেই। করোনাকালে কাজ বন্ধ টাকা দাও,খেতে দাও,ফান্ড থাকলে ফান্ড দাও;কিন্তু কিছুই নাই। কই গেলো? কেউ জানে না!
করোনাকালে তাই শ্রমিকগণ বুঝে যায় এ এক শুভংকরের ফাঁকি, তবুও কি ঠিক হয়েছে কিছু? এক দানবীয় শাজাহান খান হলো শ্রমিক কল্যাণ সংগঠনেরও সভাপতি, আবার মালিক পক্ষেরও সভাপতি। আপনি এ সার্কাস খেলা পৃথিবীর কোথাও পাবেন না। তাহলে কি এ সার্কাস খেলা বন্ধ হবে না? চিন্তাশীল এবং ভবিষ্যৎ বাংলাদেশ বিনির্মানে সারথিদের প্রশ্ন রেখে দিলাম।
৩।
নারী শ্রমিক শব্দটি বহুল প্রচলিত তৃতীয় বিশ্বের দেশে এবং অবশ্যই বাংলাদেশে। কম মজুরি বেশি কাজ করানোর অপর নাম নারী শ্রমিক। ছোটবেলায় স্কুলে যাওয়ার সময় রাস্তায় কাঁচা রাস্তা মাটি দিয়ে বাঁধানোর কাজ করতো নারী শ্রমিকগণ সাথে কিছু পুরুষ। বুদ্ধি করে বেশি নারী নেয়া হতো গারো সম্প্রদায়ের নারীদের। এরা যেকোনো পুরুষের তুলনায় দ্বিগুণ কাজ করার সামর্থ্য রাখেন। করতোও তাই। আর পুরুষ শ্রমিক বিঁড়ি খেতো, খোশগল্প করতো, আবার এদিকসেদিক চলে যেতো হঠাৎ এসে অনেক কাজ করতো। হয়তো সেটি আধাঘন্টা-একঘন্টা। এবার মজুরি? নারী পেতো ১৫০ আর পুরুষ পেতো ২০০/২৫০/৩০০।
আবার বাবা মানুষ খাওয়ানো লোক, আম্মা ও দাদীর কাছে গল্প শুনেছি দাদা আরো বেশি ছিলো। বড় দুর্ভিক্ষে দাদা খাওয়ানোর জন্যে লঙ্গরখানা খুলেছিলো। সেই লঙ্গরখানায় মানুষ খেতে এসে নাকি হঠাৎ খেয়ে কিছুক্ষণ পর মানুষ মারা যেতো। আগে আবার যার খাওয়ার দরকার নেই তিনি আসতেন না, শুধু যার ঘরে খাবার নেই তিনিই আসতেন। এখন যেমন সব হুমড়ি খেয়ে পড়ে ব্যাপারটা তেমন ছিলো না। আমাদের লঙ্গরখানায় যারা রান্না করতেন তাদের এত সুঠাম দেহ কল্পনার বাইরে, এতেই বোঝা কাজটা অনেক পরিশ্রমের ছিলো। কিন্তু উনাদের মুখে শুনেছি উনাদের আত্মতৃপ্তির কথা।
যাই হোক, আব্বা আমাদের বাড়ির আশেপাশে এমন কেউ কাজ করলে ডেকে ডেকে বাড়ি নিয়ে আসতো খাওয়ার জন্যে। সেই সুবাদে নারী শ্রমিকদের আম্মা জিজ্ঞেস করতো তোমাদের কম দেয় কেন? বেডাগুলা তো ফাঁকিবাজ এসব বলতো৷ যিনি শ্রমিক সাপ্লাই দিতো তিনিও আসতেন খেতে আমাদের বাড়ি, আম্মা তখন বলতো এই নারীগুলোকে মজুরি কম দেও কেন? তখন সেই লোককে বলতে শুনতাম আম্মাকে, মামী আপনি তো আমাকে লস করাবেন। তখন আমরা ছোট বাহিনী চাচাতো,মামাতো,ফুপাতো মিলে সবাই বলতাম লস হবে না, উনাদের বাড়ায় দেন। তখন আম্মা বলতো লস হবে না, তোমার অতিরিক্ত লাভ হবে না। তুমি অতিরিক্ত লাভের আশা ছাড়ো। তখন উনি ৫০ টাকা করে বাড়িয়ে দেয়। গারো নারীগণ এত খুশি হয় চিত্রটি এখনো আমার চোখে লেগে আছে।

আমরা কেন গারো নারীদের পক্ষে বললাম? পিঠে কিউট কিউট বাচ্চা নিয়ে আসতো, আমাদের সাথে খেলতো। খেলার সাথী একটি মারাত্মক সামাজিক মিথস্ক্রিয়া ও প্রভাব। নিরংমা, সাংমা, আড়েং, বলিন, সিরু সাংমা, ডালেম আড়েং, সাংসা,মাংসা যতটুকু মনে পড়ে তাদের কথা। আরো অনেকেই ছিলো। আরো ছিলো বর্মনবৃন্দ৷ একটা সমৃদ্ধ শৈশব বলতে যা বোঝায়, কোন বৈষম্য নেই। আমাদের সাথে কেউ অন্যায় করলে বিচার হতো আমাদেরই, আম্মা বলতো তোমার সাথে সে ঝগড়া করে কেন? তার মানে তুমি ভালো করে কথা বলো না! বুঝতাম বাড়ি এসে লায় পাবো না তাই সবার সাথে ভালো আচরণ করতাম।
ছোট ছোট বাচ্চাও নিয়ে আসতো, খুব সুন্দর শুনাতো তাদের কথা।
দ্বিতীয় কারণ গারো নারীগণ আমাদের আইসক্রিম কিনে দিতো তপ্ত গরমে। সে এক নস্টালজিক স্মৃতি৷

তৃতীয় কারণ যাবার সময় আম্মা চাল দিয়ে দিতো সবাইকে। আর বলতো দেখছো ওরা কত কষ্ট করে? তোমার দাদা তো সবার সেবা করতো! তোমরা ভালো করে পড়াশোনা করো তোমরাও সেবা করতে পারবা, আমার মনে আছে আমি বলতাম সেবা করলে তাই কি হয়? আম্মা বলতো আল্লাহ বালামুসিবত দেয় না আর তোমরা হাতেম তাঈ হতে পারবা, দানবীর মহসিন হতে পারবা। আমাদের অন্তরে গেঁথে থাকতো চরিত্রগুলো।
আমাদের একটা হের ছিলো, ঐ হে'রে করে এক হে'র চালতো দিতো। হেরেটা ছিলো বেতের সেটাও একটা দারুণ স্মৃতি।
আরেকটা কারণ ছিলো উনাদের পক্ষে বলার, আমভর্তা। গরমে আমগাছের নিচে বাসনকোসন, কলাপতা বিছিয়ে মুর্হুতের ভেতর কতগুলো আম ভর্তা করে ফেলতো। আমরা সবাই খেতাম। আখের গুড় দিয়ে মিশিয়ে ভর্তা, শুধু কাঁচা মরিচ দিয়ে, লবণ দিয়ে ভর্তা। আমরা ছোট-রা খেতাম গুড় দেয়াটা। গারো মহিলারা খেতো টক বেশি গুলো।
কি এক দারুণ মেলবন্ধন তৈরি হয়েছিলো এ সামাজিক মিথস্ক্রিয়ায়!
মামীদের কাছে কাছে শুনতাম, এমন কি টিপনিও কাটতো উনারা৷ বলতো ছোটবেলার বিয়ে তো তাই তোমার আব্বা-আম্মা-র বোঝাপড়া ভালো ও অনেক মিল। আমাদের ফুপাতো বোনেরা আসতো ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ে বয়স ত্রিশের কাছাকাছি; তখনও বিয়ে হয়নি। বলতো মামা-মামীর টুনটুনি সংসার। একদম ছোটবেলাতেও নাকি এমনই আসতো আর বলতো। আম্মার তেমন শিক্ষা ছিলো না, তাই আম্মা উনাদের কাছে গণিত শিখতো, ইংরেজি শিখতো। উনারা বলতো মামী তুমি এসব শিখে কি করবা। আম্মা নাকি বলতো আমার পোলাপানদেরও তো তোমাদের মতো শিক্ষিত করতে হবে। এসএসসি পর্যন্ত আম্মাই আমাদের পড়াইছে।
একটা নারীর স্বপ্ন কত বড়! তিনি আমার মা। তিনি আবার নারীদের অধিকার নিয়েও চিন্তা করে, কথা বলতো! কিন্তু তিনি কিন্তু আবার এসব কেতাবি অধিকারের কথা জানতো না।
যাই হোক, নারী শ্রমিকের অনেক মজুরি কম আছে অনেক জায়গায়, সেখানে পুরুষ বেশি সার্ভিস বেশি দেয় এমন নয়।

৪।
বাংলাদেশটা পোশাক শ্রমিকদের ভিতের উপর দাঁড়িয়ে, এখানে যতেষ্ট কাজ হয় শ্রমিক অধিকার নিয়ে সত্য কিন্তু অনেক অন্ধকার দিকও আছে। মাতৃত্বকালীন নারীদের কৌশলে ছাঁটাই করা হয় ব্যয় সংকোচনের নামে। যদিও যৌক্তিক ভাবে তারা অধিকার পায়৷ এবং আরেকটি ভয়াবহ দিক হলো বেশিদিন কাজ করা শ্রমিকদের নির্দয়ভাবে ছাঁটাই করা হয় বেশি সুবিধা দুতে হবে বলে। যে কয়টা সুনামধন্য গার্মেন্টস ছিলো শ্রমিক অধিকার দেখতো আওয়ামী স্বৈরাচার সরকার প্রতিষ্ঠিত হওয়ায় এবং ক্ষমতার বলয় তাদের হওয়ায় সেসব অধিকার বন্ধ। যেমন মেয়র আতিকদের ইসলাম গার্মেন্টসে এবারের মজুরি নিয়ে আন্দোলনে শ্রমিক হত্যা করা হয়। কারো কিছুই হয়নি। দীর্ঘ ক্ষমতার ফল এটি।

বহু শ্রমিক অধিকারের কথা বলেও ছাঁটাই। এগুলো সবই বাস্তবতা। যদিও বেশি সুবিধা ও অধিকার এবং মর্যাদা তাদের ভোগ করার কথা।
৫।
রেমিট্যান্স শ্রমিক, তাদের অসম্মান ও দুর্দশার কথা মহাকাব্যিক। অতিরিক্ত ফি, অতিরিক্ত বিমান ভাড়া, অতিরিক্ত মেডিকেল চেকআপ, অতিরিক্ত টাকায় বিদেশে প্রেরণ, নানা রকম প্রতারণা, বিমান বন্দরে দূর্ব্যবহার, তাদের কেনা, রেখে যাওয়া জমি দখল; কি হয়রানি হয় না? অথচ দেশের অর্থনীতির চাকা সচল করার এক সাধক কারিগর। দেশ ডিজিটাল হলো, এখন স্মার্ট হওয়ার পথে ; অথচ শোষণের দিক থেকে ব্রিটিশ-বেনিয়া, বর্গি,মারাঠি। লাগেজ চুরি তো বলার বাইরে। কবে তারা নায়কের সম্মান পাবেন? কবে আমরা মানুষ হবো? ত্রাতাকে চেনবো?
৬।
বেশি কথা হচ্ছে, শেষ করতে হবে৷ শেষটা করতে চাই পরিবর্তনের কথা বলে। দীর্ঘদিনের প্রতিষ্ঠিত দুর্নীতিবাজ সময়ের পরিক্রমায় দানবই হয়, তাই তো দ্রব্যেমূুল্যের নানা কৌশলে দাম বাড়ে, শ্রমিক পায় না ন্যায্য মজুরি ও মানবিক আচরণ। এমন কি বিচারহীনতায় মানুষ হয় বেপরোয়া। একটি শিশু ধর্ষিত হয়ে মারা গেলো কুমিল্লায় বর্ণনা করতে গিয়ে কান্না করলেন ব্রিফিংকারী Rab. অনেকের ব্যাপক আবেগ এসেছে, আমার কি মনে হয়েছে জানেন? একদম সত্যি কথা, পাছায় একটা লাত্থি মেরে দিতে৷ সেভেন মার্ডার, ক্রস ফায়ার, গুম,খুন করে বিরোধীদের সেই বাহিনী সাধারণ অপরাধী দমনে বিরত থেকে আবেগ দেখায়। অপরাধীর ধারাবাহিক রেকর্ড থাকলে এসব অপরাধ দমন করা যায়। তার জন্যে করতে হয় নিয়মিত গবেষণা ও নথিবদ্ধ করন। তারা এসব করে, শুধু বিরোধীদের নিয়ে। আবার মায়াকান্না করে খুনীগুলা। আন্তর্জাতিক স্যাংশনের আগে এরা মানুষ হয়নি৷ আবেগ নিয়ে খেলো!
বাংলাদেশে শ্রমিকের মূল্যায়ন এবং মানবিক মজুরি হোক। একটি আগামীর মানবিক বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠিত হোক।

সাথে যোগ করি দেশের পথ দেখানো নির্বাহী বিভাগ হলো সচিবালয়, সেখানে আজ কাজ করে শ্রমিক পায় না কোন সুবিধা। এ দেশ আবার কিভাবে শ্রমিকের অধিকার প্রতিষ্ঠা করবে পরিবর্তন ছাড়া?

মন্তব্য ০ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (০) মন্তব্য লিখুন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.