নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

চিন্তায় মুক্ত - ভাষায় প্রকাশে ভীত , কল্পনার সীমানা মহাকাশ ছাড়িয়ে - বাস্তবতায় পা বাড়াই না সীমানার বাহিরে

শান্তনু চৌধুরী শান্তু

কবিতা লিখি , গল্প লিখি , মুভি রিভিউ লিখি , বুক রিভিউ লিখি , ফিচার লিখি । এই তো আমার লিখিময় জীবন ।

শান্তনু চৌধুরী শান্তু › বিস্তারিত পোস্টঃ

বুক রিভিউ :\'জীবন যে রকম\' - আয়েশা ফয়েজ

১৫ ই মার্চ, ২০১৮ রাত ১০:১২



ভূমিকা - বইটা হঠাতই পাওয়া । তারপর এক নিঃশ্বাসে পড়ে ফেলা । যতক্ষণ পড়েছি ততক্ষণ আশে পাশে তাকাতে পারিনি । এই অটোগ্রাফির প্রতিটা শব্দে খুব পরিচিত এক মানুষকে যেন দেখতে পাচ্ছিলাম । দেখাটা স্বাভাবিক । একজন মানুষের জীবন কতটা বৈচিত্রময় হতে পারে বইটা তার উৎকৃষ্ট প্রমাণ।



মুখবন্ধঃ বইটির মুখবন্ধতে লেখিকা উল্লেখ করেন ১৯৯১ সালে তিনি আমেরিয়া নিজের ছেলের কাছে বেড়াতে গিয়েছিলেন তখন নেহায়ত খেয়ালের বশে এটা লিখেছিলেন । বহু বছর পর (২০০৮) সালে তার ছেলে মেয়েরা এই পান্ডুলিপি খুঁজে পায় আর প্রকাশের উদ্যোগ নেয় । মুখবন্ধের শেষে তার মনের কিছু খেদ পায় - '১৯৯১ সাল পর্যন্ত যা যা ঘটেছিল তার সবই এখানে আছে - এর পরেও আমার পরিবারে আরো অনেক কিছু ঘটেছে , কিছু আনন্দে কিছু বেদনার , তার কিছুই এখানে নেই । সেগুলো আবার নতুন করে লিখতে পারবো মনে হয় না - তাই আর চেষ্টা করছি না ।
.
মূল বইয়ের প্রতি কিছুটা আলোকপাত - বই থেকে রেফারেন্স নিয়ে প্রথম সন্তান জন্ম পর্যন্ত লেখিকার জীবনে ঘটে যাওয়া ঘটনার উপর আমি কিছুটা আলোকপাত করছি । এখানে কিছুটা স্পয়লার এর্লাট আছে । বাকিটা নিজ দায়িত্বে পড়ে নিবেন ।


.
- ১৯৪৪ সালের ফেব্রুয়ারী আট তারিখে আয়েশা ফিরোজের বিয়ে হয়ে যায় এক বেকার ছেলের সাথে । ছেলেটাকে তার বাবা দেখা সাথে সাথে পছন্দ করে ফেলেন মূলত দুটো কারণে - এক ছেলেটি সুদর্শন ও দুই ছেলেটির বাবাও শিক্ষিত । লেখিকার যখন বিয়ে হয় সে যুগে বছর ঘুরতেই বাচ্চা হত তবে বিয়ের ৪ বছর পর লেখিকার বাচ্চা হচ্ছিল না । এই নিয়ে শ্বশুরবাড়িতে প্রথমে চাপা দুশ্চিন্তা এবং শেষের দিকে অশান্তি শুরু হয়ে গেলো ।
.
লেখিকার প্রাণের বন্ধু ছিল তার ছোট ননদ হামিদা । একদিন সে কোথা থেকে শুনে এলো আয়েশা নামের মেয়েদের বাচ্চা হয় না । উদাহারণ সরূপ তার ফুফু আয়েশার কথা টানা হলো । তারও বাচ্চা হচ্ছে না । এত বড় (!) প্রমাণ পেয়ে লেখিকার অস্থিরতা আরো বেড়ে গেলো ।
.
অথচ এই নিয়ে তার স্বামীর কোন মাথা ব্যাথা ছিল না । উল্টো তিনি মাঝে মাঝে বলতেন গ্রামের মানুষ সাদাসিধে হয়, যখন যেটা মুখে আসে বলে ফেলে ! তুমি মন খারাপ কোরো না । একটা চাকরী হোক তখন তোমাকে নিয়ে বাহিরে চলে যাব । লেখিকা সাহস পান । তবে স্বামীর চাকুরী হয় না ।
.
অবশেষে লেখিকার বাবা বেকার জামাইয়ের জন্য পুলিশের চাকুরীর কাগজপত্র নিয়ে আনলেন । কিন্তু তার স্বামী পুলিশের চাকুরী করবেন না । মাষ্টারী করবেন । লেখিকা এমন এক যুগের কথা বলছিলেন যে যুগে চাইলেই সকলের সামনে স্বামীর সাথে কথা বলা যেত না । রাত হলেও পারা যেত না যতক্ষণ না শ্বাশুড়ি শুতে যেতে বলতো । ততক্ষণ রান্নাঘরে কাজ করতে হতো । অবশেষে অনুমতি পেয়ে লেখিকা তার স্বামীকে জানালেন - আব্বা স্বপ্নে দেখেছেন তোমার রিজিক পুলিশের মাঝে । লেখিকার স্বামী চোখ কপালে বললেন - 'এর মাঝে এক রাউন্ড স্বপ্নও দেখা হয়ে গেছে ! কোথায় যাই আমি এখন ?' শেষ পর্যন্ত তিনি ইন্টারভিউ দিতে গেলেন এবং চাকুরী হয়ে গেলো ।
.
সিলেটে পোষ্টিং পড়লো তাদের নিজেদের জীবন শুরু হলো । হঠাৎ একদিন লেখিকার শরীর খারাপ হয়ে গেলো । কিছু খেতে পারেন না ,বমি আসে । ডাক্তার বললেন - 'তুমি মা হবে' । খবর শুনে পুলিশ সাহেবের খুশি দেখে কে । সে যুগে সন্তানের জন্মসংক্রান্ত আবুল হাসনাতের বিখ্যাত বইটি তার কিনে আনা হলো । বিস্ময় , রোমাঞ্চ আর কৌতুহল নিয়ে দুজন রাত জেগে জেগে বইটি পড়েন । শিহরিত হন । নতুন জীবন আসছে ।
.
.

.
আজমীর শরীফ থেকে আনা ফুলটি ভিজিয়ে দেয়া হলো । লেখিকা বুঝতে পারলেন আর দেরী নেই । এই ফুলের আছে অলৌকিক ক্ষমতা , পানিতে ভিজিয়ে রাখলে ফুটে উঠে আর ফুল ফোটা মাত্র বাচ্চার জন্ম হয় । কিন্তু ১২ ঘন্টা পার হয়ে গেলো বাচ্চা হবার নাম নাই । কিছুক্ষণ আগেও আনন্দে ঝলমল করা বাড়িটা থমথমে । ডাক্তার চিন্তিত মুখে বসে আছেন । সিদ্ধান্ত নিতে পারছেন না । তবে বহুজনকে কাঁদিয়ে অবশেষে সন্তান হলো ।
.
লেখিকার বিছানা করা হলো । প্রথমে খড় বিছিয়ে তার ওপর তোষক । কাছে একটা মালসার পাঠের পাতা , হলুদের গুঁড়া , সরিষা আর ধূপ পোড়ানো হচ্ছে , যেই ভেতরে আসব এই আগুনে গা হাত পা সেঁকে আসতে হবে । বাচ্চাকে আনা হলো । মাথাভরা কাল চুল , টকটকে ফর্সা গায়ের রং , চোখ বড় বড় করে তার দিকে তাকিয়ে আছে । ছেলেটার নাম রাখা হল কাজল । লেখিকা তখনো জানতেন না এই নাম একদিন চাপা পড়ে যাবে এক বিখ্যাত নামের আড়ালে । -'হুমায়ূন আহমেদ'
.
পরিশেষে - হুমায়ূন আহমেদ, জাফর ইকবাল ও আহসান হাবীর - এর জননী আয়েশা ফয়েজ । শহীদ ফয়জুর রহমানের স্ত্রী । তাঁদের বহু লিখায় আমি এই রত্নাগর্ভা সর্ম্পকে পড়েছি এবং অসংখ্য পাঠকের মত নিজের অজান্তেই একটু একটু করে তাঁর একটি জলছবি নিজের মানসপটে এঁকেছি । বইটি পড়ে সেই জলছবিটি আরো পরিস্কার হলো । বিশেষ করে বইয়ের শেষ কটা পাতার অনুভূতিগুলো বুকে দাগ কাটার জন্য যথেষ্ট । প্রয়াত এ রত্নগর্ভার প্রতি আমার আকুন্ঠ শ্রদ্ধা ও সালাম রইলো ।


.
বিঃদ্রঃ পুরো লিখাতে লেখিকা তার স্বামীর নাম নিজ মুখে উচ্চারণ করেননি । বিষয়টা অদ্ভুত রকম সুন্দর ।

মন্তব্য ১৩ টি রেটিং +৩/-০

মন্তব্য (১৩) মন্তব্য লিখুন

১| ১৫ ই মার্চ, ২০১৮ রাত ১০:৩০

সোহানী বলেছেন: আপনার রিভিউ বইটা পড়ার আগহ বাড়িয়ে দিল।

আমার মায়ের ওএরকম একটি লিখা ছিল এখন মনে পড়ে গেল কিন্তু সেটি মনে হয় আর খুঁজে পাওয়া যাবে না।

ধন্যবাদ বইটি শেয়ার করার জন্য।

১৫ ই মার্চ, ২০১৮ রাত ১০:৩৭

শান্তনু চৌধুরী শান্তু বলেছেন: কৃতজ্ঞতা রইলো

২| ১৫ ই মার্চ, ২০১৮ রাত ১০:৪১

প্রামানিক বলেছেন: রিভিউ পড়ে বইটি পড়ার আগ্রহ জন্ম নিল।

১৫ ই মার্চ, ২০১৮ রাত ১০:৪৮

শান্তনু চৌধুরী শান্তু বলেছেন: কৃতজ্ঞতা রইলো

৩| ১৫ ই মার্চ, ২০১৮ রাত ১১:৪৬

প্রতিভাবান অলস বলেছেন: আগ্রহ লাগছে, পড়তে হবে বইটা।

১৬ ই মার্চ, ২০১৮ রাত ২:৪৭

শান্তনু চৌধুরী শান্তু বলেছেন: কৃতজ্ঞতা রইলো

৪| ১৬ ই মার্চ, ২০১৮ ভোর ৪:৩৭

রুদ্র নাহিদ বলেছেন: পড়তে হবে। সুন্দর রিভিউ।

১৬ ই মার্চ, ২০১৮ সন্ধ্যা ৭:৫৬

শান্তনু চৌধুরী শান্তু বলেছেন: ধন্যবাদ ..

৫| ১৬ ই মার্চ, ২০১৮ বিকাল ৩:০০

ধ্রুবক আলো বলেছেন: বইয়ের রিভিউ পড়ে ভালো লাগলো। পড়তে হবে।

১৬ ই মার্চ, ২০১৮ সন্ধ্যা ৭:৫৭

শান্তনু চৌধুরী শান্তু বলেছেন: ধন্যবাদ ..

৬| ১৬ ই মার্চ, ২০১৮ বিকাল ৩:৫৯

হাসান জাকির ৭১৭১ বলেছেন: চমৎকারভাবে তুলে ধরেছেন।
ধন্যবাদ।
বইটি পড়ার সুযোগ পাওয়া যায় কিনা, দেখা যাক।

১৬ ই মার্চ, ২০১৮ সন্ধ্যা ৭:৫৭

শান্তনু চৌধুরী শান্তু বলেছেন: ধন্যবাদ ..

৭| ১৭ ই মার্চ, ২০১৮ রাত ১২:১৮

জাহিদ অনিক বলেছেন:

তিনি হুমায়ুন আহমেদের মা বলে নয়,মনে হয় তার লেখার গুনেই বইটি আপনার কাছে ভালো লেগেছে। লেখায় এক ধরনের সরলতা আছে। যা পাঠকের ভালো লাগে।


আপনার ছোটখাট শর্ট রিভিউ ভালো হয়েছে।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.