![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
Doctor, Photo-enthusiast, Movie-buff, Music-addict, Pluviophile, Poetry-lover, Cat-Person, Nyctophile, Traveloholic
আজ পবিত্র আশুরা’র রাত। আমরা জনসাধারণ মনে করি, আশুরায় আমাদের মহানবী (স.) এর দৌহিত্র হযরত ইমাম হুসাইন (রা.) শাহাদাত পালন করেন, এইজন্যে দিনটি অনেক তাৎপর্যপূর্ণ। কিন্তু সত্যিকার অর্থে, শুধু এ ঘটনাই নয়, বহু ঘটনার স্মৃতি বিজড়িত মুহাররমের দশম দিবস। আরবী ও ইসলামের ইতিহাসে এ দিনকে “ইয়াওমে আশুরা” বা আশুরা দিবস হিসেবে নামকরণ করা হয়েছে।
আজ এ লেখায় আশুরায় সংঘটিত এরকম কয়েকটি ঘটনার কথা উল্লেখ করব মাত্র।
* বলা হয়, এ দিনেই অভ্যুদয় ঘটে এ পৃথিবীর। আবার এ দিনেই মহাপ্রলয়ের মধ্যে দিয়ে পৃথিবী ধবংস হবে।
* সর্ব প্রথম বৃষ্টি হয় এ দিনে।
* এ দিনেই বহু পয়গম্বর জন্মগ্রহণ করেছেন। এদিনেই বহু পয়গম্বরের দোয়া আল্লাহ তা’য়ালা কবুল করেছেন।
* আদি পিতা হযরত আদম (আ.) কে এ দিনে সৃষ্টি করা হয়েছিল এবং এ দিনে তাঁর দোয়া কবুল হয়েছিল। এ দিনে তাকে বেহেস্তে প্রবেশ করান হয়েছিল।
* হযরত নুহ (আ.) মহাপ্লাবণ থেকে এ দিনে মুক্তি পান।
* হযরত ইউনুস (আ.) মাছের পেট থেকে মুক্তিপান এ দিনে।
* হযরত আইয়ূব(আ.) কঠিন রোগ থেকে আরোগ্য লাভ করেন এ দিনে।
* আল্লাহ তা’য়ালা এদিনে হযরত ইব্রাহিম (আ.) কে সৃষ্টি করেন এবং পাপিষ্ট নমরুদের অগ্নিকুন্ড হতে ৪০দিন পর নিষ্কৃতি দেন।
* হযরত মুসা (আ.) তুর পর্বতে আল্লাহ তা’য়ালার সাথে কথা বলেন এবং তাওরাত কিতাব লাভ করেন আশুরার দিনে।
* এ দিনে ফেরআউনের দলবলকে আল্লাহ নীল নদে ডুবিয়ে মেরেছিলেন এবং মূসা (আ.)এর অনুসারীদের নাযাত দিয়েছিলেন।
* হযরত ইয়াকুব (আ.) বহু শোক-তাপ করার পর প্রিয় পুত্র ইউছুফ (আ.) কে ফিরে পেয়েছিলেন।
* হযরত দাউদ (আ.) এর তওবা কবুল করেন আল্লাহ।
* হযরত সুলাইমান (আ.) কে অঢেল ধন সম্পত্তি দান করেন।
* হযরত ঈসা (আ.) কে আসমানে উঠিয়ে নেয়া হয় এ দিনে।
* হযরত জিব্রাইল (আ.) হযরত মুহাম্মদ (স.) এর নিকট কারবালাবিষয়ক ভবিষ্যতবাণী ওহী নিয়ে আসেন এবং মাটিও ধরে দেখেন জিবরাইলের থেকে।
* মহানবী (স.) এর জীবদ্দশায় এ দিনে কাবা' শরীফের গিলাফ পরিবর্তন করা হয় প্রতি বছর। মহানবী ((স.) এর হাদিস অনুযায়ী, এ দিনেই পূর্বে সর্বপ্রথম কাবার গিলাফ পরানো হয়েছিল।
ইতিহাসের ধারায় পবিত্র আশুরার সাথে সর্বশেষ যে হৃদয়বিদারক ঘটনা সংযোজিত হয়েছে তা-হল ঐতিহাসিক কারবালায় ইমাম হুসাইন (রা.) সত্য ও ন্যায়ের জন্য স্বপরিবারে শাহাদাত বরনের মত মর্মান্তিক ঘটনা।
এরকম আরো বহু জানা-অজানা ঘটিনার সাক্ষী এই আশুরা। যার বেশিরভাগই আমরা জানিনা।
সুতরাং, আমরা দেখতে পাচ্ছি, এ দিনটি শুধু শোকের দিনই নয়, বরং মানবজাতির ইতিহাসে দোয়া কবুল, নবীদের আগমণসহ নানা ঘটনার সাক্ষী। এ দিনটি সত্যিই আল্লাহর রহমতের একটি দিন। এ দিনে রোযা রাখার ব্যাপারেও কিছু কথা আছে। রাসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আশুরার দিনের সাওমকে অত্যন্ত গুরুত্ব দিয়েছেন।
"আশুরার দিনের সাওম পালন করলে মহান আল্লাহ পাক বিগত এক বছরের সাগীরা গুনাহ ক্ষমা করে দেন।" [সহীহ মুসলিম : খন্ড - ৬, হাদীস ২৬০৩]
তবে রাসুলুল্লাহ (সাঃ) বলেছেন শুধু ১০ মহররম সাওম পালন না করে, তার আগে অথবা পরে একটি দিন মিলিয়ে সাওম রাখতে। অর্থাৎ ৯ ও ১০ মহররম, বা ১০ ও ১১ মহররম সাওম পালন করাই উত্তম। এর কারণ হিসেবে জানা যায়,
হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ (স.) মদীনায় এসে দেখলেন যে, ইহুদীরা আশুরার দিনে সওম পালন করছে। তিনি তাদের জিজ্ঞেস করলেন -এটা কোন দিন যে তোমরা সাওম পালন করছ? তারা বলল - এটা এমন এক মহান দিবস যেদিন আল্লাহ হযরত মুসা (আঃ) ও তার সম্প্রদায়কে নাজাত দিয়েছিলেন এবং ফেরআউনকে তার দলবলসহ ডুবিয়ে মেরেছিলেন। হযরত মুসা (আঃ) শুকরিয়া হিসেবে এই দিনে সাওম পালন করেছেন। এ কারণে আমরাও সাওম পালন করে থাকি। এ কথা শুনে রাসূলুল্লাহ (সাঃ) বললেন : “তোমাদের চেয়ে আমি/আমরা হযরত মুসা (আঃ) এর অধিকতর ঘনিষ্ট ও নিকটবর্তী।” অতঃপর রাসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়া সাল্লাম) সাওম পালন করলেন ও অন্যদেরকে সাওম পালনের নির্দেশ দিলেন। [সহীহ বুখারী : খন্ড ৩১, হাদীস ২২২; খন্ড ৫৫, হাদীস ৬০৯]
যেহেতু ইহুদীরা শুধুমাত্র আশুরার দিন (১০ মুহাররাম) সাওম পালন করতেন, তাই রাসূলুল্লাহ (সাঃ) এই দিনের সাথে অতিরিক্ত একদিন যুক্ত করে সাওম পালন করার নিয়ত করেছিলেন এবং সাহাবীদের অনুরূপ বলেছিলেন। এই অতিরিক্ত একদিন' যুক্ত করার কারণ ছিল, যাতে ইহুদীদের কাজের অনুরূপ কাজ না করে শুধুমাত্র একদিন সাওম পালনের বিরোধিতা করা যায়।
আসুন এই মহান রাতে আমরা আল্লাহ তায়ালার কাছ থেকে অনুগ্রহ প্রার্থনা করি। এ রাতের ফযীলত আমরা যাতে আদায় করতে পারি। আমিন...
©somewhere in net ltd.