![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
Doctor, Photo-enthusiast, Movie-buff, Music-addict, Pluviophile, Poetry-lover, Cat-Person, Nyctophile, Traveloholic
আজই ওদের প্রথম মাংস খেতে হবে। মা কয়েকদিন ধরেই তাড়া দিচ্ছে।
তাও যেন-তেন প্রাণির মাংস তো নয়। মানুষের মাংস।
জ্যান্ত নয় অবশ্য, মৃত।
তবুও তো সৃষ্টিরাজ মানুষের মাংস। অন্যরকম স্বাদ। খেতে না জানি কত মজা!!
মাংস খাওয়া কিন্তু অত সহজ ব্যাপার নয়। তাদের শরীর থেকে তো আর খুলে খুলে মাংস খাওয়া যায় না।
যেখানে মানুষের মড়ক হয়, সেখানে গিয়ে কয়েকদিন আগে থেকে অপেক্ষা করতে হয়। উড়ে বেড়াতে হয়।
বাতাসে মৃত্যুর গন্ধ ভাসে।
অবশেষে মানুষ মারা যায়। তারপর তার দেহ হতে মাংস খুবলে খুবলে নিতে হয়।
অনেক কঠিন কাজ। কিন্তু, আজ ওদের দু’ভাইকে পারতেই হবে। মা কিছুদিন ধরেই ওদের খাওয়া শেখাচ্ছে।
মানুষের মাংস এখন চাইলেই পাওয়া যায়। কিন্তু পঞ্চাশ বছর আগে তো এরকম ছিল না। তখন শুধু দুর্ভিক্ষতেই মাংস মিলত।
তখন এ নিয়ে শকুনের কয়েকটি বড় বড় সম্মেলন হয়ে গেছে। মা বলেছে ওদের সে গল্প।
প্রথমটি হয়েছিল বহুদূরের দেশে। সেখানে সূর্যোদয় সর্বপ্রথম দেখা যায়, সে দেশে। একবার ঐ দেশে কি একটা বিষ বোমা ছড়ানো হয়েছিল। হায়রে! মানুষের কি মড়ক! সমানে মানুষ মরছে। গা হতে মাংস ঝরছে।
কিছু জ্ঞাতি ভাইও গিয়েছিল ওদের মাংস খেতে।
ঐখানেই বাঁধল সমস্যা। কিছু শকুন মাংস খেয়ে অসুস্থ হয়ে পড়ল। তাও ভাল ছিল। কিন্তু এরা শকুন রাজ্যে যে সন্তান-সন্ততি রেখে গেল তাতেই সমস্যা বাড়ল। সমানে এ রোগ ছড়িয়ে পড়তে লাগল। কত যে শকুন মারা গেল তার সীমা নেই।
প্রথম বিশ্ব শকুন সম্মেলনে এ সমস্যা সমাধানের জন্য বহু আলোচনা চলল। একজন প্রস্তাব করল, সবাই মিলে মানুষের কাছে বিষ বোমা ব্যবহার না করার আহবান জানাতে হবে।
অন্য সবাই সাথে সাথে এ প্রস্তাব বাতিল করে দিল।
অন্য আরেকজন বলল, তাহলে চল, লোকালয়ে গিয়ে পচা মাংস নিয়ে হামলা করি।
অনেকের মনঃপূত হল না বলে সেই প্রস্তাবও অগ্রাহ্য করা হল।
আরেকজন দাড়িয়ে বলল, তাহলে মানুষের মাংস খাওয়া বন্ধ করে দেওয়া হোক। শুধু মরা গরু, ছাগল, উট এগুলো খাওয়া হবে।
মিটিংয়ে উপস্থিত মুরুব্বী সবাই মানুষখোর। তারা প্রথম প্রথম ইতস্তত করে, অবশেষে এ প্রস্তাব সমর্থন করল।
এরপর কিছুদিন মানুষের মাংস খাওয়া কমে গিয়েছিল। কিন্তু শকুনের তো আর বাছ-বিচার করলে চলে না। মানুষের মাংসে যে স্বাদ পাওয়া যায়, তা অন্য মাংসে মিলবে না।
তাই সবাই আবার খাওয়া শুরু করল।
কিন্তু কিছুদিন পর মানুষের পক্ষ থেকেই যেন কি একটা প্রস্তাব তোলা হল। তারা নাকি একটা সংঘ গড়ে তুলবে। তাতে সব দেশ সদস্য হবে। বিষবোমার বিরুদ্ধে আন্দোলন হবে। যুদ্ধ-বিগ্রহ বন্ধ হবে।
এ খবর শুনে আবার শকুনদের দ্বিতীয় বিশ্ব সম্মেলন বসল।
যুদ্ধ থাকবে না, দুর্ভিক্ষ থাকবে না। শোনা যাচ্ছে মানুষদের ঐ সংঘ নাকি যুদ্ধ বন্ধ করে, দুঃস্থ মানুষের মাঝে খাদ্য পাঠাবে। হায় হায়! তাহলে মানুষের মাংস কোথায় পাওয়া যাবে?
তাহলে শকুনরা খাবে কি?
সে সম্মেলনে কোন সমাধান বের হল না। মানুষের প্রথম বিশ্ব সম্মেলনেই মতই কাজের কাজ কিছুই হল না।
কিন্তু সেবার মানুষরা এতই শোরগোল করা শুরু করেছিল যে, মনে হচ্ছিল কিছু একটা হবেই।
কিন্তু দ্বিতীয়বারও হল না।
কিছুদিন মাংস পাওয়া যেত না। যুদ্ধ বন্ধ ছিল।
তারপর যেই লাউ, সে কদু।
আবার সেই যুদ্ধ শুরু হয়েছে। দুর্ভিক্ষও শুরু হয়েছে। মাংসও পাওয়া যাচ্ছে।
মায়ের মুখে এ গল্প কয়েকবার শোনা হয়ে গেছে ছানা দুটোর। মাংস খেতে ইচ্ছে না করছে না-এ কথা বললেই মা এ গল্প শুনিয়ে দেন।
সেই হতে ছানা দুটো মানুষের মাংস খাওয়ার জন্য বসে ছিল।
আজ সেই দিন।
মায়ের সাথে ছানা দুটো উড়াল দিল। একেবারে নামবে সেই মরুর দেশে। সেখানে এখন দুর্ভিক্ষ চলছে।
প্রতিদিনই একটা, দুটো করে মানুষ মারা যাচ্ছে।
‘মানুষের সংঘ করছেটা কি!!’ ভাবল ছানা দুটো।
ঐ যে দেখা যাচ্ছে কয়েকজন মানুষ। মাংসের লোভে ছানা দুটো নামতে শুরু করল। পিছন পিছন আসতে থাকল মা শকুন।
কিন্তু করছে কী তারা? হাতে কী ওটা?
তারা দেখল, দুটো মানুষ কয়েকটা মানুষকে ধারালো কি একটা দিয়ে পাহারা দিয়ে রেখেছে। হঠাৎ তারা তার মধ্যে একটা মানুষকে আক্রমণ করল। ফিনকি দিয়ে রক্ত ছুটল তার। এরপর ধারালো অস্ত্র দিয়ে মানুষটা ঐ মানুষের হাত দুটো কেটে দিল।
বাকি সবাই সে দৃশ্য দেখছে।
এরপর একটা পা কেটে নিল।
নিল দ্বিতীয় পাটাও।
এরপর দেখতে মানব দেহটা ছয়টা খন্ডে পরিণত হল।
এরপর একজন নলের মত কী একটা নিয়ে তাক করল ওই মানুষগুলোর দিকে।
বিকট শব্দে চিৎকার করে উঠল আরেকজন। পড়ে গেল মাটিতে।
লাল রক্ত গলগল করে বের হচ্ছে ক্ষতস্থান থেকে।
মা শকুনের চোখ চিক চিক করে উঠল। বললেন, “এই তো সুযোগ। মানুষগুলো চলে গেলে তোরা খেতে নামিস।”
গা গুলিয়ে উঠল ছানা দুটোর।
তারা তখন এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে।
একে অপরের দিকে চাওয়া-চাওয়ি করল তারা।
“না মা, এরকম হিংস্র জীবের মাংস খাবো না আমরা।”
“কি বলছিস! এরা সৃষ্টির সেরা জীব।”
“হতে পারে তারা সেরা। কিন্তু নিজদের জাতির প্রতি তাদের এমন আচরণ তো মানা যায় না। কখনো আমরা তো এভাবে জীবিত শকুনদের গা থেকে মাংস খুলে খুলে খাইনি, মারা তো দূরের কথা। যারা নিজেদের এভাবে মারতে পারে, তারা যাই হোক রাজা হতে পারে না।
তার থেকে মরা উট, মরা গরু, মরা ছাগল খাব। মানুষের মাংস খাওয়ার দরকার নেই।”, বলল ছানাগুলো মাকে।
ফিরে আসার সময় মনে মনে মানুষের মাংস আর না খাওয়ার শপথ নিল তারা।
এদিকে নিচে মানুষগুলো খেয়াল করল, কয়েকটা শকুন তাদের মাথার উপর দিয়ে উড়ে উড়ে আবার চলে যাচ্ছে।
মানুষগুলো শকুনের ভাষা বুঝেনা। যদি বুঝতে পারত, তারা উপলব্ধি করত, শকুনের ডাকগুলো তাদের উদ্দেশ্যেই দেয়া।
সে ডাকে ছিল ঘৃণা।
সে ডাকে ছিল করুণা।
[ আগেই বলে রাখি, এ গল্পটি ২০০৮ সালে লেখা। নটরডেমে ফার্স্ট ইয়ারে থাকতে। এখন থেকে প্রায় ৬ বছর আগে। আমার গল্পের বই ‘ফিরে এসো ঝরা পাতা’তে প্রকাশিত হয়েছিল। তখন তো আর এখনকার মত ইন্টারনেটের বহুল ব্যবহার ছিল না। এজন্য, আপলোড দেয়া হয়নি। তখন অনেক অপরিপক্ক ছিলাম। তাই, আশা করি, ভাষা, প্লট, শব্দের ব্যবহার মার্জনাযোগ্য।]
©somewhere in net ltd.