![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
Doctor, Photo-enthusiast, Movie-buff, Music-addict, Pluviophile, Poetry-lover, Cat-Person, Nyctophile, Traveloholic
একটা ছেলের গল্প বলি...
ছেলেটি দিন রাত স্বপ্ন দেখে, একদিন না একদিন তার হবে।
তার একাকী এই জীবনে আসবে আরেকজন। তার ড্রিমগার্ল।
হাঁটু সমান লম্বা চুলে মাঝে মাঝেই সুগন্ধ খুজবে ছেলেটা।
তার গভীর কাল চোখের মাঝে সাঁতরাতে চাইবে।
ছেলেটার যখন শরীর খারাপ, চুলে হাত বুলিয়ে পানি ঢেলে দিবে রাতে।
হঠাৎ ঘুম ভাঙলে যেখানেই থাকুক না কেন, ফোন করে জিজ্ঞাসা করবে ওষুধ ঠিকমত খেয়েছে কিনা।
ছেলেটির ভাল-মন্দ সব কৌতুকে মজা করে হাসবে। যখন হাসবে, হাসির আওয়াজেই ঘর ভরে থাকবে ওর।
ভরবে তার জীবন।
নার্ড ছেলেটার আগডুম-বাগডুম সব কথা মনোযোগ দিয়ে শুনবে। মুভি, কার্টুন, গেমস, স্পোর্টস- সবকিছুতে প্রবল ইন্টারেস্ট থাকবে মেয়েটির। তার সাথে বসে বসে খেলা দেখবে। সমালোচনা করবে। তর্ক-বিতর্ক করবে।
মাঝে মাঝে মজাদার ডেসার্ট বানিয়ে খাওয়াবে। সেই ডেসার্ট খেয়ে আবার ছেলেটির ফ্রেন্ডরা বাহবা দিবে তাকে।
মেয়েটি ক্রমশ বকবে তাকে রুটিন ফলো করার জন্য। ঘর গুছানোর জন্য।
সাথে জীবনটাও।
এলোমেলো ছেলেটি মানতে চাইবে না ঠিক। তবুও, ভাল লাগবে তার। কেউ না কেউ তো তাকে কেয়ার করে!
তার ড্রিমগার্ল হবে ১০০% পারফেক্ট।
এদিকে সেই ছেলেটিকে তার ক্লাসের একটি মেয়ে বেশ পছন্দ করে। খুব আহামরি সুন্দর না। তার কল্পনার প্রিন্সেসের মত চুল, গায়ের রঙ, হাসি-কিছুই নেই। কিছু হলেই খালি পড়ার ছুতো করে তার সাথে কথা বলতে আসত মেয়েটি। কারনে-অকারণে ফোন দিত। কথা বলতে চাইত। খোঁজ নিত পড়ালেখার। ছেলেটি বুঝতে পারে, মেয়েটি তার উপর ক্রাশড।
এজন্য, মাঝে মাঝে অবশ্য ছেলেটি ফোনে কথা বলে। জাস্ট ঘুরাচ্ছে আর কি!!
মাঝে মাঝে পাত্তা দেয়।
তাছাড়া তার এত পাত্তা দেয়ার সময় কোথায়? সে তখনও তার ড্রিমগার্লের আশায় আশায় দিন ফেলে। স্বপ্নে স্বপ্নে রাত পার করে।
ছেলেটি এখনো স্বপ্ন দেখে, তার ১০০% পারফেক্ট প্রিন্সেসের।
এখন একটি মেয়ের গল্প শুনুন...
মেয়েটিও দিনরাত স্বপ্ন দেখে।
একদিন তার স্বপ্নের হ্যান্ডসাম প্রিন্স চার্মিং আসবে তার জীবনে।
তার গভীর কালো চোখ দিয়ে ফ্যালফ্যাল করে তাকিয়ে থাকবে মুগ্ধতার দৃষ্টি দিয়ে।
ছেলেটার লম্বা উশকো-খুশকো চুলগুলো মাঝে মাঝেই মেয়েটি আঙ্গুল দিয়ে আচড়িয়ে দিবে।
ছয় ফুট প্রিন্স মেয়েটাকে কোলে তুলে চুমু খাবে। চুমু খাওয়ার সময় কোমরে দুহাতে জড়িয়ে রাখবে তাকে।
প্রতি সকালে ঘুম থেকে ডেকে তাকে লাল গোলাপ দিবে।
জোছনার রাতে ছাদে নিয়ে নিজে গিটার বাজিয়ে শুনাবে গান।
মেয়েটা অভিমান করলে বা ঝগড়া হলে নিজে থেকেই হার্টস-অন ফায়ার থেকে ডায়মন্ডের নোসপিন বা জুয়েলারি গিফট করবে রাগ ভাঙ্গানোর জন্য।
লং ড্রাইভে নিয়ে যাবে শহরতলীতে।
কবিতা লিখবে তার জন্য।
বৃষ্টি হলেই তাকে নিয়ে বের হয়ে যাবে ভেজার জন্য। বার্থ ডে’র রাতে ১২টার সময় সারপ্রাইজ দেয়ার জন্য বাসার বাইরে কুপার’স থেকে কিনে আনা কেক নিয়ে দাঁড়িয়ে থাকবে।
গার্লস নাইট আউটে সবাই যখন যার যার বয়ফ্রেন্ডের কথা বলে বেড়াবে, মেয়েটির বয়ফ্রেন্ডের কথা শুনে তার বান্ধবীরা ঈর্ষায় মনে মনে পুড়বে।
তার হ্যান্ডসাম প্রিন্স হবে ১০০% পারফেক্ট।
এদিকে মেয়েটার জন্য আর একটা ছেলে রোজ দাঁড়িয়ে অপেক্ষা করে, গলির মোড়ে মোড়ে।
ফেসবুকের অনলাইনে, অফলাইনে।
ছেলেটার ফ্যামিলি স্ট্যাটাস ভালো না। আহামরি বড়লোকও না। দেখতে হ্যান্ডসাম না। বাইক নেই। ভালো স্মার্টফোন নেই। ফ্রেন্ডদের সাথে আড্ডা মেরে বেড়ায় পুরো ক্লাসে। আর সুযোগ পেলেই মেয়েটির বাসার সামনে এসে দাঁড়িয়ে থাকে।
আগে তো ফেসবুকেও বসতে পারত না। খালি নক দিত। ব্লকড ছিল। তাও ছেলেটির আক্কেল হয়নি। অদ্ভুত!!
মাঝে মাঝে নাছোড়বান্দা ছেলেটির জ্বালায় না পেরে মাঝে মাঝে মেয়েটি কথা বলে। আর বললেও কি! টাইম পাস করা যা বলে আর কি!! ঝুলিয়েই রাখছে তাকে। তার সাথে ফিউচার দেখেনা মেয়েটি। এজন্য, খুব একটা পাত্তাও দেয়না। তাছাড়া মেয়েটির এত পাত্তা দেয়ার সময় কোথায়?
সে যে এখনো অপেক্ষা করছে। তার ১০০% পারফেক্ট হ্যান্ডসাম প্রিন্সের।
এবার আসুন এক লোকের গল্প শুনি।
সে লোক প্রভুর কাছে দিনরাত প্রার্থনা করত। অবশেষে একদিন তার এই বান্দার উপর প্রভু সন্তুষ্ট হলেন। শুধু তাই না, তাকে বরও একটি দিলেন প্রভু।
“তবে, ওটা পাওয়ার জন্য তোমাকে পরিশ্রম করতে হবে। দিতে হবে একটা পরীক্ষা। ওই পরীক্ষায় তুমি যা পাবে, সেটাই তোমার পুরষ্কার।”
লোকটিকে এক গহীন বনের সামনে নিয়ে গেলেন তিনি।
“এই বনের এই প্রান্ত থেকে ওই প্রান্ত পর্যন্ত বিভিন্ন জায়গায় ৫০টা হীরা মাটির মাঝে লুকানো আছে। এদের কোনটাই এক সমান নয়। কোনটা বড়, কোনটা বা ছোট। তুমি এই প্রান্ত থেকে দৌড়ানো শুরু করবে। দৌড়াতে দৌড়াতে বনের বিভিন্ন জায়গার মাটি খুঁড়ে মাটির নিচে পুঁতে রাখা হীরাটা বের করে আনবে।
শর্ত হল, তুমি শুধু একটা মাত্র হীরাই এই বন থেকে নিতে পারবে। আর মনে রাখবে, তুমি কোন অবস্থাতেই পিছু হটতে পারবে না। এর অর্থ, একবার সামনের হীরাটা পেতে চাইলে তোমাকে আগের হীরাটা যথাস্থানে রেখে সামনের দিকে এগিয়ে যেতে হবে। পরের হীরাটা আর তুলতে পারবে না।
সেটা আগের হীরার চেয়ে ছোট হতে পারে, বা বড়ও হতে পারে- কিন্তু তুমি কোন অবস্থাতেই পিছনে এসে আবার ওটা তুলতে পারবে না।
এখন তুমি যদি একদম প্রথম হীরাটাই নিয়ে সন্তুষ্ট থাকতে চাও, তোমার ব্যাপার। কিন্তু, যদি বসে না থেকে ক্রমশ সামনের দিকে এগিয়ে যাও, সেটাও তোমার ব্যাপার।
যেটাই নাও না কেন, কেবল ওই হীরাটিই তোমার।
সময় হচ্ছে আজ সূর্যাস্ত পর্যন্ত। এর মাঝে তুমি যে হীরাটা নিতে চাও, নিতে পার। কিন্তু, সূর্য অস্ত যাওয়ার পর আর একটা কিছুও নিতে পারবে না, বলে দিলাম।”
সব শুনে লোকটি দৌড়াতে শুধু করল। কিছুক্ষণ যাওয়ার পরই মাটির নিচে একটু উঁচু জায়গা দেখতে পেয়ে মাটি খুঁড়তে শুরু করল সে।
বেশ বড়সর আকারের একটি হীরা!!
“সামনে যেটা আছে সেটা নিশ্চয়ই আরো ভাল হবে”, ভাবল লোকটি।
প্রথম হীরাটা তাই যথাস্থানে রেখে সামনের দিকে এগুতে থাকল সে।
কিছুদূর যাওয়ার পর আরেকটা হীরা পেল। এটা ঠিক আগেরটার সমান না। একটু ছোট- কিন্তু অনেক চকচক করছিল।
“সামনে যেটা আছে সেটা নিশ্চয়ই আরো উজ্জ্বল হবে”, ভাবল সে।
দ্বিতীয় হীরাটাও সে আগের মত যথাস্থানে পুঁতে রেখে সামনের দিকে এগুতে থাকল।
এভাবে, সকাল থেকে বিকেল পর্যন্ত দৌড়িয়ে এভাবে প্রায় শেষ প্রান্তে পৌঁছে গেল সে। এরই মাঝে সে প্রায় চল্লিশটার মত হীরা দেখে ফেলেছে। বনের একদম শেষ মাথায় পৌঁছানোর সাথে সাথেই সে আকাশের দিকে তাকিয়ে দেখল, সূর্য অস্ত যাচ্ছে দিগন্তে।
তার হাতে তখন একটিও হীরা নেই।
আরো হীরা খুঁজবে, সে সময়টিও তখন নেই।
জীবনটা ঠিক এরকম।
লোকটি লোভে ছিল। সে ভেবেছিল, পরের হীরাটি সম্ভবত আগেরটার থেকে বেশি ভালো হবে। এজন্য হাতে থাকা হীরাটিও সে অবহেলায় ফেলে যায়।
প্রথম ছেলেটিও এভাবে কাছের হীরার টুকরাটি ফেলে রেখে ১০০% নিখুঁত হীরার জন্য এভাবে অহেতুক স্বপ্ন দেখে যায়।
প্রথম মেয়েটিও এভাবে কাছের হীরার টুকরাটি ফেলে রেখে ১০০% নিখুঁত হীরার জন্য এভাবে শুধু স্বপ্ন দেখে যায়।
এদিকে কষ্ট পায় সেই সামান্য খুঁত থাকা দ্বিতীয় ছেলেটি কিংবা দ্বিতীয় মেয়েটি।
আকাশের রঙ্গিন রংধনুর স্বপ্নে বিভোর থাকলে বাগানের রঙ্গিন প্রজাপতিগুলোই কষ্ট পায় শুধু।
আশা করা আর স্বপ্ন দেখা এক নয়।
অতিরিক্ত আশা করা অনর্থক না।
কিন্তু, বাস্তবতার পৃথিবীতে অতিরিক্ত স্বপ্নের জগতে পড়ে থাকা অনর্থক।
শতভাগ নিখুঁত কিছুই হয়না। কোন হীরাও না।
কোন মানুষ তো না ই।
“If you look for perfection, you'll never be content. When you stop expecting people to be perfect, you can love them for who they really are.”
জানালা দিয়ে বাইরে তাকিয়ে দেখুন, এখন কিন্তু পড়ন্ত বিকেল।
আকাশের কোণে লালচে আভা।
পাখিরা সব ফিরতে শুরু করছে।
সময় কিন্তু গড়িয়ে যাচ্ছে।
সূর্য অস্ত যাওয়ার সময় ধীরে ধীরে এগিয়ে আসছে...
২৭ ১১ ১৪
ফেসবুকে লিঙ্কঃ Click This Link
©somewhere in net ltd.