নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

লেখালেখি করি শখের বসে। তাই এর বিনিময়ে চাই ভালোবাসা এবং আপনাদের অনুপ্রেরণা। ভালোবেসে সাথে রাখবেন।

শাহরিয়ার হাসান চৌধুরী

শাহরিয়ার হাসান চৌধুরী › বিস্তারিত পোস্টঃ

মোবাইলটা বেজেই চলছে.....

০৪ ঠা আগস্ট, ২০১৭ রাত ১:০৩

ক্রিং ক্রিং... ক্রিং ক্রিং... ক্রিং ক্রিং.. ক্রিং ক্রিং...
মাঝরাত। মোবাইলের টিউনের শব্দে ঘুমটা ভেঙ্গে গেলো।
বাড়ির ভেতরটা যেন ঠান্ডায় জমে আছে। বাড়িতে আমি এখন একা, নাবিহা মানে আমার বউ আমার মেয়ে সীমানা সহ এখন বাপের বাড়িতে! অনেকদিন থেকেই আছে। মোবাইলটা বেজেই চলছে.....
ঘুম ঘুম চোখে কলটা রিসিভ করলাম।
'হ্যালো'!!
'হ্যালো, সৌমিক নাকি রে???' অপরপ্রান্ত থেকে ভেসে এল একটা কন্ঠস্বর। চেনা চেনা মনে হলেও ঠিক চিনতে পারলাম না কন্ঠস্বরের মালিককে।
'জ্বী, কে বলছেন??' আমার চোখে এখনো ঘুম।
'তুই কি চিনতে পারিস নি নাকি আমাকে??? আমি রাসিক বলছি... তোর জানের দোস্ত ইশহাম রাসিক। ভুলে গেলি নাকি আমাকে? তাও এতো জলদি???'
ঠান্ডাটাকে মনে হচ্ছে আরো গভীর হয়ে যাচ্ছে। মোবাইলটাকে মনে হচ্ছে বরফের তৈরী।
চোখ থেকে ঘুম ছুটে গেলো আমার... আমি কি স্বপ্ন দেখছি!!?? নাকি ভুল শুনছি!!!
'কি.. কিন.. কিন্তু রাসিক তো মারা গেছে এক মাস হলো!!'
নিজেকে সামলে নিয়ে একটু কড়া ভাবে বললাম,
'আপনি কি বলবেন কে আপনি আর কি চাই আপনার?'
অপরপ্রান্তে একটা চাপা হাসি। মনে হলো এই শুকনো চাপা হাসি আমি আগেও শুনেছি। অনেকবার!
'তুই আমাকে চিন্তে পারছিস না দোস্ত? নিজের বন্ধুর কন্ঠস্বর চিনতে এতো অসুবিধা হচ্ছে তোর?'
'আপনি এই মাঝরাতে আমার সাথে মস্করা করছেন??'
'মজা নয় দোস্ত, আমি সত্যি রাসিক! মোবাইলের একপ্রান্তে তুই আছিস কিন্তু বেঁচে। আর এই প্রান্তে আমি আছি কিন্তু মৃত!
দোস্ত, এবার একটা কথা শোন। কাজটা করে এখন কিন্তু আমি খুব খুশি।
'কাজ.. কি কাজ?'
'আত্নহত্যা! মরণ নিয়ে যা ভেবেছিলাম, পুরোটাই সত্যি! সুন্দর... কালচে নীল.. চারদিক নীরব।
নিজের উপর কোনও চাপ নেই। খুব শান্তি!'
'আপনি কি মনে করেন যে আপনি আমাকে যা বলবেন আমি তাই মেনে নেবো?
রাসিক তো Car Accident এ মারা গেছে, সে আত্নহত্যা করেনি।'
'আমি ইচ্ছে করেই Accident টা ঘটিয়েছিরে গাধা। গাড়ির গতি বাড়িয়ে দিয়েছিলাম আর স্টিয়ারিংটাও ছেড়ে দিয়েছিলাম, যেনো রাস্তার ২ ধারের বড় বড় গাছগুলোর সাথে জোরে ধাক্কা লেগে আগুন লেগে যায় গাড়িতে। আমি মরতে চেয়েছিলাম... এবং মরেছি। মরার পর এখন আর কোনো দুঃখ নেই মনে।'
আমি হাসার চেষ্টা করছি কিংবা তার চাপা হাসির সাথে নিজের হাসিটা মেলাতে চেষ্টা করছি। একটু সাহস নিয়েই বললাম..
'মৃত মানুষ মোবাইলে কথা বলতে পারেনা।'
আবার ওপাশ থেকে একটা চাপা হাসি।
'দেখ দোস্ত বাস্তব দৃষ্টিকোণ থেকে দেখলে আসলে আমি মোবাইল ব্যবহার করছিনা। আমি শুধু এভাবে তোর সাথে কথা বলতে চেয়েছিলাম, তাই ই হচ্ছে! এটাকে সাইকিক ইলেক্ট্রিসিটি বলতে পারিস। আমার দেহ থেকে বিচ্ছিন্ন হওয়া আত্নাটা মহাজাগতিক কম্পনের সাথে সমন্বয় করে মোবাইলের নেটওয়ার্কটাকে ব্যবহার করছে। খুবই সহজ একটা কাজ!'
'কিভাবে বলি এটা একটা সহজ কাজ?'
'আমাকে তুই সন্দেহ করবি এটা আমি জানতাম দোস্ত আচ্ছা তুই তাহলে কিছু কথা মনোযোগ দিয়ে শোন.....'
বাড়ির ভেতরটা আরো ঠান্ডা হয়ে গেছে। মোবাইলটা শক্ত হাতে ধরে আছি আর শুনছি ওই পাশের কন্ঠস্বর যা যা বলছে... কিন্তু এসব কি করে সম্ভব!! যা যা বলল তা শুধুই রাসিকের জীবনেই ঘটা সম্ভব। প্রায় ১২ বছরের বন্ধুত্ব আমাদের। এই সময়ে রাসিকের জীবনে যা যা হয়েছে তার সবকিছুর সাক্ষী রাসিক নিজে এবং একমাত্র আমি। আর কেউ এতো কিছু কিভাবে জানবে? এটা এক কথায় অসম্ভব।
আমি এখন নিশ্চিত। রাসিকই কথা বলছে!
'কিন্তু কিভাবে দোস্ত... আমার মাথায় কিছুই ঢুকছে না।'
'মোবাইলের নেটওয়ার্কটাকে একটা মাধ্যম হিসেবে ধরে নে যেখানে আছে অনেক তরঙ্গ শক্তি। এই শক্তি কাজে লাগিয়েই আমি তোর সাথে যোগাযোগ করতে পেরেছি। দেখ তোর মোবাইলের স্ক্রিনে, অপারেটরের কোনো নাম্বার নেই একদমই খালি....!!! সত্যিই তো! মোবাইল স্ক্রিনের দিকে আমি আরও অবাক হলাম সত্যি কোনো নাম্বার নেই। কি হচ্ছে এসব! আবার সেই শুকনো হাসির শব্দ।
বিছানায় বসেই কথা বলছিলাম, ভেতরে ভেতরে এতটাই ভয় পাচ্ছি যেন মনে হচ্ছে বিছানার সাথেই মিশে যাই। মোবাইলটাকে এমনভাবে ধরে আছি যেন সাত রাজার ধন। নিঃশ্বাস নিতেও যেন ভুলে যাচ্ছি। বড় একটা নিঃশ্বাস নিয়ে বললাম,
'ঠিক আছে... আমি ভুতে বিশ্বাস করিনা কিন্তু এখন যা ঘটছে সেটা যে বুঝতে পেরেছি সেটাও বলবনা। তবে ব্যাপারটা আমি গ্রহণ করেছি বা করতে বাধ্য হচ্ছি।'
'শুনে খুশি হলাম রে, সৌমিক! কারণ তোর সাথে আমার জরুরী কথা আছে।' এরপর অনেকক্ষণ নীরবতা। কন্ঠস্বরটা আরো মোলায়েম হয়ে গেলো,
'দোস্ত, আমি জানি, তোর সময় খুব একটা ভালো যাচ্ছে না।'
'কি বলতে চাস তুই??'
'আমি জানি তোর বর্তমান অবস্থা। তাই বন্ধু হিসেবে সাহায্য করতে চাই।'
'কিন্তু আমি তো....'
'নিজেকে খুব হতাশ মনে হয় না তোর? মানে যা চেয়েছিলি তার সব তো..'
'হ্যাঁ, একটু তো হতাশ। তবে সবার বেলায় এমনটা ঘটে।'
'হ্যাঁ, বেশিরভাগের ক্ষেত্রেই, তবে এই জন্য তোকে আমি কোন দোষ দিচ্ছিনা। হতাশ হবার যথেষ্ট কারণ আছে। এই যেমন, টাকা-পয়সার সমস্যা।'
'খুব তাড়াতাড়ি আমার প্রমোশন হবার কথা আছে। বস আমাকে কথা দিয়েছেন। কয়েক সপ্তাহের মধ্যেই বেতন বাড়বে আশাকরি। এরপরেই সব ঠিক করে ফেলবো আমি!!'
'তোর প্রমোশন হবেনা, সৌমিক! হারামজাদা তোকে মিথ্যা আশা দিয়ে রেখেছে, ও আসলে তোকে চাকরি থেকে বাদ দিতে চাইছে। তোর জায়গায় ওর শালাকে বসাবে!'
'তুই কিভাবে জানলি???!'
'ভুলে যাসনা দোস্ত, আমি তোদের দুনিয়ায় নেই। যে দুনিয়ায় আছি সেখান থেকে অনেক কিছুই জানা যায় যা তোদের দুনিয়ায় লুকানো থাকে।'
'হতে পারে! কারণ বস আমাকে শুরু থেকেই পছন্দ করতো না শুধু খ্যাচ খ্যাচ করতো আমার সাথে। হঠাৎ করেই ভালো ব্যবহার শুরু করেছে কোনরকম কারণ ছাড়াই।'
'হুম, এবার তাহলে নিজেই বুঝে নে। আর তাছাড়া নাবিহার কথাও বলতে হচ্ছে... তোদের মধ্যে প্রায়ই ঝগড়া লেগে থাকে, গত ২ সপ্তাহ থেকে তো সীমানাকে নিয়ে নাবিহা বাবার বাড়িতেই আছে। যোগাযোগ করেছে কোনও? নাকি তোকে করবার সুযোগ দিয়েছে? এটা একটা প্যাটার্ন রে দোস্ত। কিছু একটা ঘটার পূর্বলক্ষণ। তোর বিবাহিত জীবন শেষ রে দোস্ত। অচিরেই নাবিহা তোর থেকে ডিভোর্স চাইবে।কারণ ওর পরিবার ওর জন্য নতুন করে বিয়ে ঠিক করেছে, নিজেদের পছন্দের ছেলে! তোর মত নাবিহার পছন্দ করা ছেলে নয়। ছেলে দেখতে শুনতে অনেক ভালো। নাম জোহান, একটা মাল্টিন্যাশনাল কোম্পানির জিএম।'
'কি বলছিস কি?! পাগল নাকি! নাবিহা আমাকে অনেক ভালোবাসে, আমিও ওকে অনেক ভালোবাসি। এটা অসম্ভব। আর আমাদের মেয়ে আছে একটা। কিভাবে এসব... এসব কি বলছিস তুই!!''
'হ্যাঁ, ভালো তো বাসতোই। তার জন্যেই তো নিজের সব কিছু ছেড়ে তোর কাছে চলে এসেছিলো ৪ বছর আগে। তোর সাথে নতুন করে জীবন সাজাবে বলে। কিন্তু তুই কি পেরেছিস ওর জীবনটা সাজিয়ে দিতে?'
'আমি তো চেষ্টা করছি রে দোস্ত কিন্তু কিছুই গুছিয়ে নিতে পারছিনা.. কিন্তু খুব তাড়াতাড়িই পারবো!'
'হ্যাঁ, ঠিক এটা ভেবেই নাবিহা তোকে সব সময় সাহস দিয়ে গেছে, ভালোবাসা দিয়ে গেছে, তোর পাশে থেকেছে। কিন্তু তুই কি করেছিস??? তুই দিনের শুরুতে বাসা থেকে বের হতিস ওর সাথে ঝগড়া করে, দিনের শেষে মেয়েটা যখন না খেয়ে তোর জন্য বসে থাকতো তুই তখন ফিরে এসে তোর সব হতাশা আর জীবনের সব রাগ ঝেড়ে দিতি ওর ওপর। যাকে বুক দিয়ে আগলে রাখবি বলে কথা দিয়েছিলি তার গায়েই তুই হাত পর্যন্ত তুলতে ছাড়িস নি। তুবও মেয়েটা নিজের সখ, আহ্লাদ ভুলে সব মুখ বুঝে সহ্য করতো তোর কষ্টটা বুঝতো কিন্তু তুই তোকে নিয়েই পড়ে আছিস! আর কতো সহ্য করবে বল?? তোদের ২ বছরের মেয়েটাকে জড়িয়ে ধরে ও সারাটাদিন কাঁদে। আর কত দোস্ত, ভালো থাকতে তো সবাই চায় রে। আর জোহান নাবিহাকে অনেক ভালোও রাখবে সাথে সীমানাকেও। জোহান সীমানাকেও অনেক ভালোবাসে ঠিক যেন সীমানা ওরই মেয়ে। সবই ঠিক আছে, সৌমিক! এতো কিছু যেখানে ভালো সেখানে নাবিহার মনে তোর জন্য কষ্ট হলেও বিয়েতে রাজি সে। মনই তো, মানিয়ে নেবে ঠিক। তুই আর কিছুই গোছাতে পারবিনা দোস্ত!!'
'হয়তো তুই ঠিকই বলছিস দোস্ত! আমি হয়তো সত্যি হেরে গেলাম রে। সব শেষ আমার!!!'
'হ্যাঁ দোস্ত সব শেষ!'
'কিন্তু আমার কি কিছুই করার নেই? কোনো উপায় তো নিশ্চয় আছে!'
'আর কোন উপায় নেই রে দোস্ত। তোর নাবিহা আর সীমানা ছাড়া আপন তো আর কেউ নেই রে, তোর পাশের দাঁড়াবার কেউ নেই!'
রাসিকের কথাগুলো শুনে আমার নিজেকে আরও হতাশ মনে হচ্ছে, অস্থির অস্থির লাগছে খুব! নিঃশ্বাসটাও কেমন আটকে আটকে যাচ্ছে...
'তবে হ্যাঁ দোস্ত, একটা সমাধান আছে কিন্তু এই হতাশা থেকে বের হবার!!'
'আছে দোস্ত.. আছে??? কি দোস্ত বল আমাকে!'
'তোর রান্নাঘরে আছে সমাধান, রান্না ঘরে যা সৌমিক। সেখানে ছুরিটা রাখা আছে দোস্ত। বেশি কিছু করতে হবেনা শুধু তুই তোর বাঁ হাতের কব্জির শিরাটায় খুব জোর দিয়ে ছুরিটা বসাবি আর আস্তে করে একটা টান শুধু একটা টান দোস্ত, এটাই তোর সমাধান! আর একমাত্র!'
'না.. না আমি এটা করতে পারবো না... না!!!!
'কেন পারবিনা? তোর সমস্যা সমাধানের আর কোনও পথ তোর সামনে খোলা আছে? ছুরিটাই হচ্ছে একমাত্র সমাধান। রান্নাঘরে যা, ছুরিটা হাতে নে, মাত্র কয়েক সেকেন্ডের কাজ দোস্ত! যা ছুরিটা ব্যবহার কর! ব্যস! সব সমস্যার সমাধান। আমি তোর জন্য অপেক্ষা করব। এখানে তুই একা থাকবিনা। আগের মত আবার আমরা একসাথে থাকবো, গল্প করব। মৃত্যু আসলেই খুব সুন্দর দোস্ত.. রান্নাঘরে যা সৌমিক... ছুরিটা নে.. কব্জির শিরাটা কেটে ফেল.. যা দোস্ত ছুরিটা নে.. কব্জির শিরাটা কেটে ফেল দোস্ত....'
এক মাস হলো আমি মারা গেছি। রাসিকের কথাটাই ঠিক। মৃত্যু আসলেই সুন্দর। কোনও চাপ নেই, দুশ্চিন্তা,হতাশা কিছুই নেই। কালচে নীল, শান্ত আর নীরব.......

আমি জানি, আপনার জীবনের অনেক কিছুই আপনার নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে গেছে। নানারকম দুশ্চিন্তা আর হতাশাবোধ আপনাকে তিলে তিলে শেষ করে দিচ্ছে। তবে আপনাকে বলছি, অবস্থার কোনও পরিবর্তন হবেনা, আপনি পারবেন না কিছুই গুছিয়ে নিতে। হয়না আসলে, অবস্থা শুধুই খারাপের দিকে যায়!!!

ক্রিং..... ক্রিং..... ক্রিং....
আপনার মোবাইলটা বাজছে!! বেজেই চলেছে....
আর দেরি করবেন না ধরুন।
আপনার সাথে আমার অনেক জরুরী কথা আছে। হতাশা এবং সমস্যা নিয়ে আর চিন্তা করবেন না। সব সমস্যার সমাধান আছে। হ্যাঁ....হ্যাঁ বলবো, আমার সাথে কথা বললেই সমাধান পেয়ে যাবেন!!!!!
তারপর শুধু শান্তি আর নীরবতা!

মন্তব্য ০ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (০) মন্তব্য লিখুন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.