নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

......

শরীফ ভূঁইয়া

হ.য.ব.র.ল......

শরীফ ভূঁইয়া › বিস্তারিত পোস্টঃ

ভোট এবং গনতন্ত্র

২৪ শে জুন, ২০১৬ বিকাল ৫:৫৮

ভোট একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ন বিষয়। বিশেষ করে গনতান্ত্রিক ব্যবস্থাপনায় এর গুরুত্ব অপরিসীম। এই ভোটের দ্বারাই রাষ্ট্র পরিচালনার দায়িত্ব অর্পিত হয় এবং জাতীর কর্নধার নির্বাচিত হয়। তাই ইসলামের দৃষ্টিতেও ভোটের যথেষ্ট গুরুত্ব রয়েছে।
মুফতী মুহাম্মাদ শফী (রহঃ ) লিখেছেন,ইসলামের দৃষ্টিতে ভোট হচ্ছে তিনটি বিষয়ের সমষ্টি-
(১ ) সাক্ষ্য প্রদান।
(২ ) সুপারিশ ।
(৩ ) প্রতিনিধিত্বের ক্ষমতা প্রদান।
- জাওয়াহিরুল ফিকহ ৫ / ৫৩৩।
(১ ) সাক্ষ্য প্রদানঃ
কাউকে ভোট দেওয়ার অর্থ হল। একথার সাক্ষ্য প্রদান যে , অমুক লোকটি যোগ্য এবং ভালো। কাজেই অযোগ্য লোককে ভোট দেওয়ার অর্থ হল মিথ্যা সাক্ষ্য দেওয়া। যা শরীআতের দৃষ্টিতে অনেক বড় গোনাহে কবীরা। পবিএ কুরআনে আল্লাহ তাআলা ইরশাদ করেন -
ﻳَﺎ ﺃَﻳُّﻬَﺎ ﺍﻟَّﺬِﻳﻦَ ﺁﻣَﻨُﻮﺍ ﻛُﻮﻧُﻮﺍ ﻗَﻮَّﺍﻣِﻴﻦَ ﺑِﺎﻟْﻘِﺴْﻂِ ﺷُﻬَﺪَﺍﺀَ ﻟِﻠَّﻪِ
অর্থঃ হে ঈমানদারগন তোমরা ন্যয়ের উপর প্রতিষ্ঠিত থাক ,আল্লাহর ওয়াস্তে ন্যয়সঙ্গত সাক্ষ্যপ্রমাণ দান কর। - সূরা নিসা ,আয়াত ১৩৫।
অন্যত্রে ইরশাদ হচ্ছে –
ﻭَﺃَﻗِﻴﻤُﻮﺍ ﺍﻟﺸَّﻬَﺎﺩَﺓَ ﻟِﻠَّﻪِ
অর্থঃ তোমরা আল্লাহর ওয়াস্তে সঠিক সাক্ষ্য দান কর। - সূরা তালাক , আয়াত - ২।
হাদীস শরীফে বর্নিত আছে , রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম একদা এক জায়গায় হেলান দিয়ে বসা অবস্থায় তিন বার সাহাবীদেরকে জিজ্ঞাসা করলেন আমি কি তোমাদেরকে কবীরা গুনাহগুলোর মধ্যে বড় কবীরা গোনাহের কথা বলব? সাহাবায়ে কেরাম হ্যা বললে তিনি বললেন আল্লাহর সাথো কাউকে শরীক করা ,পিতা মাতার অবাধ্যতা। এর পর তিনি হেলান দেওয়া থেকে সোজা হয়ে বসে বললেন শুনে নাও, মিথ্যা সাক্ষ্য অনেক বড় কবীরা গোনাহ। - সহীহ বুখারী হা: ২৬৫৪।
(২ ) সুপারিশঃ
ভোটের দ্বিতীয় অবস্থান হল তা সুপারিশ। অর্থাৎ কেউ কোন প্রার্থীকে ভোট দেওয়ার অর্থ হল সে উক্ত প্রার্থীকে নির্বাচিত হওয়ার এবং যোগ্য হওয়ার সুপারিশ করছে। আল্লাহ তাআলা ইরশাদ করেন –
ﻣَﻦْ ﻳَﺸْﻔَﻊْ ﺷَﻔَﺎﻋَﺔً ﺣَﺴَﻨَﺔً ﻳَﻜُﻦْ ﻟَﻪُ ﻧَﺼِﻴﺐٌ ﻣِﻨْﻬَﺎ ﻭَﻣَﻦْ ﻳَﺸْﻔَﻊْ ﺷَﻔَﺎﻋَﺔً ﺳَﻴِّﺌَﺔً ﻳَﻜُﻦْ ﻟَﻪُ ﻛِﻔْﻞٌ ﻣِﻨْﻬَﺎ
অর্থঃ যে লোক সৎকাজের জন্য কোন সুপারিশ করবে তা থেকে সেও একটি অংশ পাবে। আর যে লোক সুপারিশ করবে মন্দ কাজের জন্য সে তার বোঝারও একটি অংশ পাবে।- সূরা নিসা, আয়াত - ৮৫
সৎকাজের সুপারিশ হল ,যোগ্য দ্বীনদার লোকের জন্য সুপারিশ করা। যে আল্লাহ এবং বান্দার হক যথাযথভাবে আদায় করে। মন্দ কাজের সুপারিশ হল অযোগ্য কোন ফাসেক বা জালেমকে ভোটের মাধ্যমে জাতীর উপর বোঝা ও যন্ত্রনা হিসাবে চাপিয়ে দেওয়া। উপরোক্ত আয়াত স্পষ্ট বুঝে আসে যে , আমাদের ভোটের দ্বারা নির্বাচিত প্রার্থী ভালো মন্দ যা কিছু করবে তা আমাদের আমল নামায় যুক্ত হবে। এবং আমরাও তাতে শরীক গন্য হব।
(৩ ) প্রতিনিধিত্বের ক্ষমতা প্রদানঃ
ভোটের তৃতীয় আর একটি দিক হল প্রতিনিধিত্বের ক্ষমতা প্রদান অর্থাৎ কেমন যেন ভোটার , প্রার্থীকে জাতীর সেবার প্রতিনিধি বানাচ্ছে। আর এই প্রতিনিধিত্ব যদি ব্যক্তিবিশেষে সীমাবদ্ধ থাকে তবে তার দায়ভার ব্যক্তির উপর বর্তায়। অথচ এখানে বিষয়টি ব্যক্তির মধ্যে সীমাবদ্ধ নয়। বরং এখানে তার প্রতিনিধিত্বের বিষয়টি পূরো জাতীর সাথে সম্পৃক্ত। কাজেই সে যখন কোন অযোগ্য জালেম পাপাচারীকে প্রতিনিধিকে বানাবে তথা ভোট দিবে তখন উক্ত প্রতিনিধি দ্বারা যাদের হক নষ্ট হবে , তার গোনাহের একটি অংশও তার উপর বার্তাবে।
ভোট দেওয়া জরুরীঃ
উপরের আলোচনা থেকে স্পষ্ট হয়ে যায় যে , ভোট মূলত সাক্ষ্য দেওয়া। আর যেমনিভাবে মিথ্যা সাক্ষী দেওয়া হারাম তেমনিভাবে প্রয়োজনের সময় সাক্ষী গোপন কারাও হারাম। আল্লাহ তাআলা ইরশাদ করেন -
ﻭَﻟَﺎ ﺗَﻜْﺘُﻤُﻮﺍ ﺍﻟﺸَّﻬَﺎﺩَﺓَ ﻭَﻣَﻦْ ﻳَﻜْﺘُﻤْﻬَﺎ ﻓَﺈِﻧَّﻪُ ﺁﺛِﻢٌ ﻗَﻠْﺒُﻪُ
অর্থঃ তোমরা সাক্ষ্য গোপন করো না। আর যে সাক্ষ্য গোপন করে তার অন্তর গোনাহগার। - সূরা বাকারা,আয়াত ২৮৩।
রাসূলে কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেন “কাউকে সাক্ষীর জন্যে ডাকা হলে সে তা গোপন করলে তা মিথ্যা সাক্ষীর ন্যয় ” -তাবারানী আওসাত ,হাদীস নং ২৭০।
অর্থাৎ ভোট না দেওয়া সাক্ষ্য গোপন করান ন্যয়। যা স্পষ্ট হারাম। কাজেই ভোট দেওয়া জরুরী। এক্ষেত্রে অনেকে এমন ধ্যান- ধারনা পোষন করে যে , রাজনীতি,ভোট এগুলোতো চরম গান্দা জিনিস। ভালো মানুষ এগুলোর সংস্পর্শে আসতে পারে না। অথচ এই ধারনার পরিনাম অত্যন্ত ভায়াবহ। যে ভয়াবহতা পূরো জাতীকে বহন করতে হয়। কেননা ভালো মানুষ যদি ভোট দেওয়া থেকে বিরত থাকে তবে খারাপ মানুষের ভোটে খারাপ মানুষ নির্বাচিত হবে। তাহলে তো ঐ অঙ্গন চিরদিন খারাপই থেকে যাবে। এই খারাবী শুধু তার মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকে না। বরং সামগ্রীকভাবে তা অভিশাপরূপে ছাওয়ার হয়।
অনেকে মনে করে আমার একটি ভোটের দ্বারা কি আসে যায় ? অথচ একথা সবার জানা প্রচলিত গনতন্ত্রে একটি ভোটের গুরুত্বও অনেক বেশী। যখন ভাল ও মন্দ দুই জন প্রতিদ্বন্দী সমান সমান ভোট পায় তখন মাত্র একজন ভোটারই (চাই সে সবচে নিকৃষ্ট হোক বা সবচে উত্তম ) পূরো জাতীর ভাগ্য নির্ধারন করে। তারা মাযলুম,নিপিড়ীত হবে নাকি তাদের সকল অধিকার সংরক্ষিত হবে ? সুতারাং একজন ভোটার বা একটি ভোট গনতন্ত্রে অনেক বড় ভুমিকা পালন করে।
তাছাড়া সমস্ত ভালো মানুষ যদি মনে করে যে , আমার একজনের ভোটের দ্বারা আর কি হবে তাহলে তো খারাপ মানুষের রায় প্রাধান্য পাবে। এর দ্বারা সমাজের পরিবর্নত কোন দিন সম্ভব নয়। বরং প্রত্যেকে তার রায়কে (ভোটকে ) প্রকাশ করে অযোগ্য লোকের অভিশাপ থেকে জাতীকে রেহাই দিবে। আর প্রত্যেক বিবেকসম্পন্ন লোক যদি তাদের ভোটারাধিকার যথাযথ ভাবে প্রয়োগ করে তবে অযোগ্য লোক নির্বাচিত হওয়ার রাস্তা বন্দ হয়ে যাবে।
এক্ষেত্রে আরো একটি ভ্রান্ত ধারনা কাজ করে। তাহল গনতন্ত্র একটি কুফরীতন্ত্র। আর নির্বাচন গনতন্ত্রের একটি অংশ। কাজেই ভোট দেওয়া গনতন্ত্র সমর্থনের নামান্তর। এর জবাব হল , ভোট দেওয়া আর গনতন্ত্রের সমর্থন করা এক জিনিস নয়। বরং গনতন্ত্রের প্রতি ঘৃনা রেখেই জাতীয় কল্যণের দিকে লক্ষ্য করে যোগ্য লোককে বসানোর চেষ্টা করবে। যেমন কেউ অনন্যপায় অবস্থায় শুকর খেলে সে শুকর পছন্দ করে, তা বলা যায় না। অনুরূপভাবে শুধুমাত্র ভোট প্রদানই গনতন্ত্রের উপর সন্তুষ্টি বুঝায় না।
এখানে আরেকটি আপত্তি আসতে পরে যারা নির্বাচনে দাড়ায় তাদের মধ্যে তো অধিকাংশ ক্ষেত্রে একজনও যোগ্য হয় না। এর জবাব হল যখন কারো সামনে দুটো ক্ষতির দিক আসে তখন শরীআতের মূলনীতি হল , যার মধ্যে তুলনামুলক ক্ষতি কম তা এখতিয়ার করতে হয়। কাজেই যার দ্বারা ইসলামের ক্ষতি হবে তার বিপরীত লোককে ভোট দিয়ে তাকে প্রতিহত করতে হবে।
উপরোক্ত আলোচনা থেকে প্রতীয়মান হয় যে , প্রত্যেককে তার ভোটারাধিকার প্রয়োগ করতে হবে। আর কোন ভালো মানুষকে ভোট না দেওয়ার কারনে অযোগ্য লোক নির্বাচিত হলে এর দায়ভার তার উপর বার্তাবে। বরং সমগ্র জাতীর যে ক্ষতি হবে এর জন্যও সে দায়ী।
মোটকথা ভোট দেওয়া প্রত্যেকের জন্য জরুরী। না দেওয়া হারাম । আর কোন অযোগ্য লোক নির্বাচিত হলে ভোট না দেওয়ার ভয়াবহতা আরো কয়েকগুনে বেড়ে যায়।আর পূর্বেই উল্লেখ করা হয়েছে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম সাক্ষ্য না দেওয়া বা গোপন করাকে মিথ্যা সাক্ষীর সাথে তুলনা করেছেন ,যা জঘন্যতম অন্যায়। বরং সাক্ষ্য দেওয়ার ক্ষেত্রে উত্তম পন্থা হল তার কাছে সাক্ষ্য চাওয়ার পূর্বেই সে সাক্ষ্য দিয়ে দিবে। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেন , আমি কি তোমাদেরকে উত্তম সাক্ষী দানকারীদের সম্পর্কে বলব না ? যে তার সাক্ষ্য তার কাছে তলব করার পূর্বেই আদায় করে। - মুসলিম শরীফ হা: ১৭১৯।
অন্য দিকে অযোগ্য লোককে ভোট দেওয়া অনেক বড় গোনাহের কাজ। অনুরূপভাবে টাকার বিনিময়ে বা অন্য কোন পার্থিব জিনিসের কারনে সাক্ষ্য বিক্রি করাও জঘন্যতম অন্যায়। আল্লাহ তাআলা আমাদের প্রত্যেককে সঠিক ভাবে সাক্ষ্য প্রদানের তাওফীক দান করুন। আমীন !

মন্তব্য ০ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (০) মন্তব্য লিখুন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.