![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
এক নিশ্বাসে শেষ করলাম হরিশঙ্কর জলদাসের লেখা ‘’রামগোলাম’’ । এ এমন এক কাহিনি যা আমাদের চোখের সামনে থেকেও সামনে ছিল না, দৃষ্টির আড়ালে থেকে গেছে সব সময়। তাদের দেখে নাই এমন মানুষ পাওয়া ভার কিন্তু তাদের সম্বন্ধে জানে এমন মানুষ পাওয়াও দুষ্কর।এখন মনে হচ্ছে সাম্যের কথা বলে, সমান অধিকারের কথা বলে গণত্রন্ত্রের কথা বলে যখন গলা ফাটাই আমরা তখন এরা বোধহয় আমাদের দিকে তাকিয়ে অট্টহাসি দেয়। কারন আমাদের সাম্যের বানীতে, আমাদের সমান অধিকারের প্রশ্নে কখনই তাদের কথা থাকে না।তাদের চোখে আমরা প্রত্যেকে এক একজন আপদমস্তক ভণ্ড।আপনি আমি তুই তুমি সবাই। হরিশঙ্কর জলদাস এমন এক শ্রেণী নিয়েই লিখেছেন। বলেছেন সমাজের অচ্ছুৎ, যাদের ঘৃণা করতে হিন্দু মুসলিম এক হয়ে যায় তাদের কথা, মেথরদের কথা। যাদের আমরা মানুষ বলে মনে করি না।
লেখক মেথরদের আদি থেকে বর্তমান সব কথাই প্রায় সমান ভাবে বলে গেছেন। হিন্দু পুরাণ মতে ব্রহ্মা নাকি শুধু বিষ্ঠা সাফ করানোর জন্য নিজের শরীরের ময়লা থেকে মহীথর সৃষ্টি করেছিলেন । তাদের নিযুক্ত করলেন মানুষের ময়লা পরিষ্কারের কাজে। সেই থেকে তারা এই কাজ করে যাচ্ছে। আর তারা হয়ে রইল অচ্ছুৎ হিসেবে। বইয়ের পাতায় পাতায় এসেছে ধর্মের দোহাই দিয়ে কিভাবে তাদের কে বন্দি করে রাখা হয়েছে তার বিবরন। মনুসিংহতায় কিভাবে তাদের ছোট করা হয়েছে তা বর্ণনা হয়েছে দারুন সুনিপুন ভাবে। মনুসিংহতার প্রতি তীব্র কটাক্ষ করে গুরুচরনের জবানীতে লেখক লিখেছেন - “ওই মনু লিখেছে ব্রাম্মণের ঘর থাকবে পাঁচটা, ক্ষত্রিয়দের ঘর হবে চারটা, বৈশ্যরা তিনটি ঘর বাঁধতে পারবে, ইচ্ছে করলে বা সামর্থ্য থাকলেও দুইটার বেশী ঘরের মালিক আমরা হতে পারবোনা ’’। কি অব্যাক্ত কষ্ট ফুটে উঠেছে এ কথায় তা হয়ত আমাদের মত তথাকথিত ভদ্র সন্তানরা বুঝে উঠতে পারব না।
ময়লা পরিষ্কার করার জন্য কানপুর, এলাহাবাদ প্রভৃতি জায়গা থেকে এই সম্প্রদায়কে মোগল নবাব আর ইংরেজরা এ দেশে এনেছিল।কর্ণফুলী নদির তীরে পাঁচ তালা দুইটা বিল্ডিং। মেথর কলোনি। আর এই কলোনি ঘিরেই উপনাসের কাহিনী এগিয়েছে। তাদের আবাসন সঙ্কট,তাদের ধর্মের উপরে হস্তক্ষেপ, তাদের মদে চূর হয়ে থাকা, বঞ্চনা, প্রতারণা প্রেম সব উঠে এসেছে উপন্যাসে। তাদের জীবনের কাহিনী বর্ণনা হয়েছে দারুন মুনশিয়ানায়। মেথরদের সঙ্গে থেকে, একদম কাছ থেকে দেখে লিখেছেন লেখক হরিসঙ্কর জলদাস।
উপন্যাসে বর্ণনা হয়েছে তিন প্রজন্মের কথা।এদের কথার মাঝেই উঠে এসেছে মেথর সমাজের ক্ষোভ ঘৃণা ভালবাসার কথা। দাদা গুরুচরন মেথর সমাজের সর্দার ছিলেন।তিনি তার ক্ষমতা হস্তান্তর করেন নাতি রামগোলামের হাতে। কর্পোরেশনের চাকরি সবার জন্য উম্মুক্ত করে দেওয়া হবে, এই কথা যখন প্রচার হয় তখন যে আন্দোলন তৈরি হয় তার মাঝেই রমাগোলাম কে দেখা যায় নেতৃত্ব দিতে।কিন্তু রামগোলামের আন্দোলন বা গুরুচরন যে আন্দোলন করছে তা অন্য কোন আন্দোলনের সাথে তুলনা করা চলে না। এখানে যাদের নিয়ে আন্দোলন, যাদের অধিকারের জন্য আন্দোলন তারা অতি সহজেই সব ভুলে যায়, ভুলিয়ে দেওয়া যায়, অতি সহজেই গলায় পা দিয়ে মেরে ফেলা যায় ন্যায্য আন্দোলন কে।ধর্মের আফিম এখানেও চলে দারুন ভাবে, এর ব্যাবহার সমান ভাবে কার্যকর । আরেক হাস্যকর ব্যাপার হচ্ছে সারা জীবন যে মেথরদের কে অচ্ছুৎ বলে দূরে দূরে রাখা হলো তাদের কাজ কে যখন উম্মুক্ত করে দেওয়া হলো তখন হিন্দু মুসলিম সবাই ঝাপিয়ে পরল এই চাকরি নিতে।শেষ পর্যন্ত তথাকথিত ভদ্রলোকরা তাদের চাকরিতে যোগ দিয়েছে কিন্তু এক অদ্ভুত নিয়মে। অর্ধেক বেতন নিয়ে নেয় আমাদের এক শ্রেণীর ভদ্রলোক আর মেথররা নেয় অর্ধেক বেতন।কাজ মেথররাই করে, কলোনিতে মেথররাই থাকে কিন্তু বেতন পায় অর্ধেক!! ঘৃণা আসলে কাদের করা উচিত?
রামগোলাম বইটি ২০১২ সালে একুশে বই মেলায় প্রকাশিত হয়েছিল। সিটি - আনন্দ আলো পুরস্কার প্রাপ্ত এই বইটি পাঠক মাত্রই অবশ্যই পাঠ্য বলে মনে করি।
২৫ শে নভেম্বর, ২০১৬ রাত ১২:০০
শরিফ৭১ বলেছেন: পড়ে ফেলুন তাড়াতাড়ি। অসাধারণ একটা বই।হরিশঙ্কর জলদাস জাস্ট মুগ্ধ করে দিবে আপনাকে।
২| ২৪ শে নভেম্বর, ২০১৬ বিকাল ৪:৪৮
ভ্রমরের ডানা বলেছেন:
এসব সমাজ থেকে কবেই উঠে গেছে। বাংলাদেশ এসব উত্রে এগিয়েছে আরো বহুদূর। আপনি পারলে ফ্রয়েডের সাইকোলজিক্যাল অ্যানালাইসিস নিয়ে রিভিউ দেন। তখন পড়ব।
মুক্তিযুদ্ধ বা ভাষা আন্দোলন হলেও ভাল হয়।
২৪ শে নভেম্বর, ২০১৬ রাত ১১:৫৯
শরিফ৭১ বলেছেন: সমাজ থেকে এসব উঠে গেছে? ভাই আপনি সমাজের যে অংশেই থাকুন না কেন এদের কে ছাড়া সমাজ চিন্তা করা অসম্ভব।সব কিছু পরিষ্কার ঝকঝকে দেখে থাকলে ভাববেন না তা জাদুর পরশে হয়ে গেছে। আপনার আমার ঘুম ভাঙ্গার আগে এরাই সব পরিষ্কার করে রাখে।ফ্রয়েডের সাইকোলজিক্যাল অ্যানালাইসিস নিয়ে আমার বিন্দু মাত্র আগ্রহ নেই। তবে মুক্তিযুদ্ধ ভাষা আন্দোলন নিয়ে লিখব হয়ত কোনদিন, আগ্রহ আছে।
৩| ২৫ শে নভেম্বর, ২০১৬ রাত ১২:০২
ভ্রমরের ডানা বলেছেন:
আপনার রিভিউ অনেক ভাল লেগেছে। খুব সুন্দর লেখেন আপনি। ধন্যবাদ!
২৫ শে নভেম্বর, ২০১৬ বিকাল ৩:২৮
শরিফ৭১ বলেছেন: ধন্যবাদ। ভাল থাকবেন।
©somewhere in net ltd.
১|
২৪ শে নভেম্বর, ২০১৬ বিকাল ৪:৪৮
বিজন রয় বলেছেন: আমার এখনো পড় হয়নি। অাপনার লেখা পড়ে উৎসাহ লাগছে।
কিনতে হবে।