![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
শরিয়া আইন কে কিভাবে কত কুৎসিত ভাবে প্রয়োগ করা যায়, কত বাঁকা করে ব্যবহার করা যায় তার উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত হচ্ছে ২০০৮ সালে মুক্তি প্রাপ্ত ইরানি ছবি The Stoning of Soraya M।সত্য ঘটনা অবলম্বনে Cyrus Nowrasteh নির্মাণ করেন এই ছবি। ফরাসি সাংবাদিক Freidoune Sahebjam ১৯৯০ সালে নিজের অভিজ্ঞতা থেকে La Femme Lapidée. নামে এক বই লেখেন এবং সেই বইয়ের উপরে নির্ভর করেই নির্মিত হয়েছে অত্যন্ত সংবেদনশীল এই ছবি। এই বই প্রকাশের পরেই পৃথিবীর মানুষ জানতে পারে কি কুৎসিত অবস্থায় আছে ইরানের সাধারন মানুষ, সাধারন নারীরা।
ছবি শুরু হয় সাংবাদিক Freidoune Sahebjam কে দিয়ে। ইরানের এক প্রত্যন্ত এলাকা দিয়ে যাওয়ার সময় তার গাড়ি নষ্ট হয়। সে গাড়ি ঠিক করানোর জন্য কাছের এক গ্রামে যায়। সেই গ্রামেই তাকে এক মহিলা শোনায় ঠিক আগের দিনে ঘটে যাওয়া এক মর্মান্তিক ঘটনার ইতিবৃত্ত। শোনায় এক হতভাগীর গল্প যে যাহ্রা খানম নামের এই মহিলার নিজের ভাস্তি।শোনায় সোরাইয়া নামের সেই নারীর কথা যে শুধু মাত্র নিজের হক দাবি করার জন্য নিষ্ঠুর ভাবে মারা গেছে। তিনি শোনায় ধর্মের নামে যে ভণ্ডামি চলছে তার কথা, শোনায় লেবাসধারি মোল্লাদের কথা যারা নিজের রুটি রুজির জন্য আল্লার আইন, আল্লার রাসুল, স্বয়ং আল্লার সাথে নয় ছয় করতে পিছপা হয় না তাদের কথা।
সোরাইয়া সাধারন ঘরের একজন নারী। চার সন্তানের মা। দুই ছেলে দুই মেয়ে। হঠাৎ একদিন তার স্বামী তার কাছে আরেক বিয়ের জন্য অনুমতি চায়। সে ১৪ বছরের আরেক মেয়ে কে বিয়ে করতে চায়।সোরাইয়া রাজি হয় না।তার স্বামী আলী তখন গ্রামের মোল্লার কাছে যায়। মোল্লা কে তার আগের পাপের খবর ফাঁস করে দেওয়ার ভয় দেখিয়ে রাজি করায় যে সে তাকে সমর্থন দিবে।মোল্লার সাহায্যে এবং এলাকার মেয়র কে মোটামুটি ভুল বুঝিয়ে তারা প্রমান করে দেয় সোরাইয়া পরকীয়া প্রেম করছে। যার শাস্তি হিসেবে সোরাইয়া কে শরিয়া আইন অনুযায়ী পাথর ছুড়ে মারা হবে।সোরাইয়ার কপালে কি ঘটে বা পুরো গল্প শুনে কিভাবে ফরাসি সাংবাদিক সেই এলাকা ত্যাগ করে তা জানার জন্য,পুরুষত্রান্ত্রিক সমাজ কিভাবে নিজ ছেলেকেও মার বিপরীতে দাঁড়াতে শেখায় তা দেখার জন্য অবশ্যই অবশ্যই দেখতে হবে এই ছবি। তবে বেশি টুইস্ট আশা করা ঠিক হবে না।ইউটিউবেই সাবটাইটেল সহ ছবিটি আছে, যে কেউ চাইলে দেখে নিতে পারবেন ছবিটি।
ছবিটি আর(R) রেটেড। আর রেটেড দেওয়া হয় নগ্নতা, মাত্রাতিরিক্ত রক্তপাত, মারামারি,বীভৎস দৃশ থাকলে তাহলে। এই ছবিতে ৫/৭ মিনিটের এমন একটা অংশ আছে যা যে কোন দর্শকের পক্ষে চোখ মেলে দেখা অসম্ভব। এরচেয়ে ভয়াবহ দৃশ দেখার অভিজ্ঞতা হয়ত অনেকেরই আছে কিন্তু যখন পুরো ছবি দেখে ছবির চরিত্রের দুঃখ কষ্টের সাথে এক হয়ে যাবে কেউ তখন তার পক্ষে সম্ভব হবে না অসম্ভব রকম ভাবে ধারন করা সেই দৃশ দেখা।
ছবির অভিনেতা অভিনেত্রীরা সবাই এত দারুন অভিনয় করেছে যে ছবিটা অন্য সব বাদ দিয়ে শুধু অভিনয়ের কারনেই অসম্ভব রকমের সুন্দর ছবি হয়ে উঠেছে। পরিচালক কে কৃতিত্ব দিতে হবে পুরোপুরি।আইএমডিবি রেটিং এ ৮/১০ পাওয়া ছবিটা শুধু যে সমালোচকদের কে মুগ্ধ করেছে তা না, সবাই কেই মুগ্ধ করেছে।
পুরো ছবিতে নারীদের আর্ত চিৎকার ফুটে উঠেছে বারবার করে। যেমন মেয়র ইব্রাহিম যখন বলে যাহ্রা কে যে, “ একজন পুরুষ যখন নারীর চরিত্র নিয়ে প্রশ্ন তুলে তখন সেই নারীকেই প্রমান করতে হবে যে সে নির্দোষ, অন্যদিকে যখন কোন নারী পুরুষের চরিত্র নিয়ে প্রশ্ন তুলে তখন সেই নারীকেই প্রমান করতে হবে যে সেই পুরুষ চরিত্রহীন বুঝতে পারছ তুমি?” এর জবাবে যাহ্রা যা বলে তাই হচ্ছে সমাজে বর্তমান চিত্র, যাহ্রা বলে “হ্যাঁ আমি পরিষ্কার বুঝতে পেরেছি, সমস্ত নারী হচ্ছে অপরাধী আর সমস্ত পুরুষ হচ্ছে নিরপরাধী, ঠিক!!” কি দারুন সাহসী উচ্চারন!!!
ইরানের গল্প কিন্তু যখন সোরাইয়া কে মারার জন্য সবাই পাথর নিয়ে হাজির হচ্ছিল দল বেঁধে তখন আমার চোখে তাদের সাথে আমার দেশের মানুষের চেহার মিল খুঁজে পেলাম।একই রকম সবাই, এরাই সব জায়গায় ছড়িয়ে আছে। ধর্মের নামে যে যা দিচ্ছে তা অতি উৎসাহে খেয়ে ফেলছে এরাই। আমি এদের সাথে আমার দেশের যারা মোল্লা বা ধান্দাবাজের কথা শোনে মন্দির ভাঙ্গতে যায় বা পিটিয়ে অন্য ধর্মের মানুষদের কে মেরে ফেলে তাদের সাথে কোন পার্থক্য খুঁজে পাই না। এরা ধর্মের আফিম খেয়ে বুঁদ হয়ে আছে, আমার দেশেও যেমন আছে ভিন্ন দেশেও তেমনই আছে। অগ্রপশ্চাৎ বিবেচনা করা তাদের হয়ে উঠে না। তারা শুধু ভণ্ডদের কথা শুনে কাজ করে যায়।
এই ভণ্ডরা যুগে যুগে ছিল, থাকবে। ১৪শ শতকের ইরানি কবি হাফিজের কথা দিয়ে এই ছবি শুরু হয়েছিল। আমি তা দিয়ে শেষ করছি।এই কয় লাইনের পরে বা এর চেয়ে শক্তিশালী কথা বোধহয় আর হয় না। হাফিজ - Don't act like the hypocrite, who thinks he can conceal his wiles while loudly quoting the Koran!!
সবাই ভাল থাকবেন, ধর্মের নামে অধর্ম বন্ধ হোক আমার দেশে।
০৫ ই জানুয়ারি, ২০১৭ রাত ১:৩৮
শরিফ৭১ বলেছেন: দেখে ফেলুন জলদি করে। আমি লিখতে পারি নাই। জাস্ট হতভম্ব হয়ে যাবেন ছবি দেখে!!!
২| ০৫ ই জানুয়ারি, ২০১৭ রাত ১:৩৭
মোটা ফ্রেমের চশমা বলেছেন: মুভিটার লিঙ্ক দিতে পারবেন?
০৫ ই জানুয়ারি, ২০১৭ রাত ১:৩৯
শরিফ৭১ বলেছেন: আমি যতদূর জানি ইউটিউবেই আছে সাবটাইটেল সহ। খুঁজে দেখুন একটু ।
৩| ০৫ ই জানুয়ারি, ২০১৭ রাত ১:৩৭
রাফা বলেছেন: সমস্ত পৃথিবীর নারীরা অপরাধি আর পুরুষরা ঠিক ততটাই নিরপরাধী।চমৎকার।
এটাই হোচ্ছে মূল কথা আর এই নিতীতেই চলছে সারা বিশ্ব।
৪| ০৫ ই জানুয়ারি, ২০১৭ সকাল ৯:২৯
শাহাদাৎ হোসাইন (সত্যের ছায়া) বলেছেন: শরীয়াহ্ আইন হউক আর প্রচলিত আইন হউক। অপব্যবহার হলে সভ্য জাতির জন্য বেদনা দায়ক
৫| ০৫ ই জানুয়ারি, ২০১৭ রাত ১১:২৩
সুমন কর বলেছেন: রিভিউ পড়ে মুভিটি ভালো মনে হলো। দেখতে হবে।
ধন্যবাদ।
৬| ০৭ ই জানুয়ারি, ২০১৭ দুপুর ১২:৫৯
জুনায়েদ বি রাহমান বলেছেন: মুভিটা দেখতে হবে।
©somewhere in net ltd.
১|
০৫ ই জানুয়ারি, ২০১৭ রাত ১:৩৬
প্রবাসী পাঠক বলেছেন: মুভিটা দেখার আগ্রহ জন্মাল, সময় করে দেখতে হবে।