![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
দিহান এবং মৌনতা দুজন বন্ধু । ঢাকা শহরের একটি প্রাইভেট মেডিক্যাল কলেজের স্টুডেন্ট। মৌনতা আর দিহানের বন্ধুত্বের শুরুটা খুব একটা ভালো ছিলোনা। দিহানের কথা বলা চলা ফেরা সব কিছুতেই ডোন্ট কেয়ার টাইপের ভাব। তার কথা বলার প্রিয় বিষয় হলো সিনেমার নায়িকা আর পলিটিক্স। মৌনতা আর দিহান একই ব্যাচের। দিহানকে অনেকে পটাশ ডাকতো। এর কারন দিহান মোটামুটি রুটিন কাজের মত করে মেয়ে পটাতে চেষ্টা করতো। আসলে এসবের পিছনে দিহানের তেমন কোন খারাপ উদ্দেশ্য থাকতোনা, শুধু কিছুক্ষন মজা করা আর তারপর ভুলে যাওয়া। কলেজের অনেক মেয়ের মত মৌনতাও দিহানকে ভাবতো যাচ্ছেতাই টাইপের ছেলে। মাঝে সামান্য বিষয়ে মৌনতা আর দিহানের ঝগড়া লাগতো। আর সেই ঝগড়া থামাতে হতো আশে পাশের সবাই এসে।
কিন্তু অপছন্দ করতে করতে এক সময় মৌনতার দিহানকে ভালো লাগতে শুরু করলো। সেই ভালোলাগা বন্ধুত্বের ভালোলাগা। একসময় মৌনতা দিহানের দিকে বন্ধুত্বের হাত বাড়িয়ে দিলো। দিহান সাদরে সে বন্ধুত্বের প্রতি শ্রদ্ধা জানালো। মৌনতা আর দিহান সারা দিন একসাথে ঘুরে বেড়ায়। মৌনতার প্রেমিক রনী মৌনতার দিহানের সাথে চলাফেরা পছন্দ করেনা। মৌনতা রনীর সাথে দেখা করতে আসলে শুধু দিহানের গল্প করে। একদিন দিহান এসে রনীর সাথে দেখা করে। রনী অবজ্ঞা ভরে দিহানের দিকে তাকায় কিন্তু এর কিছু সময় পরে দিহানের গল্প বলা আর মজা করায় রনী মুগ্ধ হয়।রনী মৌনতাকে বলে তুমি দিহানের সাথে মিশতে পারো। দিহান নিয়মিত ডেটিং চালিয়ে যাচ্ছে আজ নীলা কাল মিতু পরশু শিলা। কিন্তু ঐ ডেটিংই শেষ কোন কিছু আর সামনে আগায় না। ঐ মেয়ের নাক ভোচা সেই মেয়ের ভ্রু ছোট এইসব কাহিনী। দিহান কোন ডেটে কি করে সব এসে শুনায় মৌনতাকে। মৌনতা বলে গাদা তোর কপালে দুঃখ আছে।
তারপরের গল্প আরো সুন্দর। কোন এক অজানা কারনে রনির সাথে মৌনতার সম্পর্কে ছেদ পড়ে। তাদের ব্রেক আপ হয়ে যায়। দিহান অনেক ভাবে রনীকে বুঝাতে চায় কিন্তু রনি আর কোন ভাবেই মৌনতার সাথে সামনে আগুতে রাজি নয়। ভেঙ্গে পড়ে মৌনতা। বরাবরের মতই পাশে এসে দাঁড়ায় দিহান। মৌনতার সুখ দুঃখ সব কিছুই দিহানের সাথে মিশে একাকার।
গুরু হুমায়ুন আহমেদ বলেছিলেন ছেলে এবং মেয়ে বন্ধু হতে পারে,কিন্তু তারা অবশ্যই একে অপরের প্রেমে পড়বে।হয়ত খুবই অল্প সময়ের জন্য, অথবা ভুল সময়ে। কিংবা খুবই দেরিতে, আর না হয় সব সময়ের জন্য।
জ্বি হ্যাঁ আমাদের মৌনতা আর দিহান ও না বুঝে প্রেমে পড়ে গেছে। দিহানের মনে হলো এসব সে কি ভাবছে না এটা ঠিক না। তারা ভালো বন্ধু অন্য কিছু না। যে মৌনতার সাথে দিহানের খামছি কাটার সম্পর্ক, যার সাথে দিহান সারাদিন এডাল্ট জোক আর সানি লিয়নের নতুন ছবির ব্যাপারে আলাপ করে তাঁর সাথে বসে পুতু প্রেমের গল্প করা রীতিমত ভয়ঙ্কর। অন্যদিকে মৌনতার ভাবনা দিহান হলো তার আত্মার সম্পদ তার সাথে প্রেম করা আর তাকে জানেমান, হানি এগুলো ডাকা। ছি কি বিশ্রি ব্যপার।
আগ্নেগিরী যেমন ঢেকে রাখা যায়না ঠিক তেমনি প্রেম নামের এ অগ্নিশিখা ও ঢেকে রাখা যায়না। দিহান জানিয়ে দিলো মৌনতা তোকে ছাড়া বাচবোনা। মৌনতা বললো গাদা প্রেম এভাবে নিবেদন করতে হয়না। দিহান বললো আর সিষ্টেম জানা নাই। তুই ইয়েস বললে বল নাইলে ফুট। মৌনতা দিহানের চোখের দিকে তাকাতে পারেনা। সে খুশিতে কেঁদে ফেলে। মৌনতা বলে দিহান এতো ভালোবাসা জমা করে কিভাবে পাথরের মত ছিলি এতোদিন।
দিহান এসে তার মাকে সব খুলে বলে। মা মৌনতাকে ভালোবাসি। দিহানের মা মুখ কালো করে অন্য ঘরে চলে গেলেন। একটু পর দিহানকে ডেকে নিয়ে গেলেন নিজের রুমে। মাথায় হাত দিয়ে দিহানকে শপথ করান তিনি যা বলবেন তা যেন দিহান মেনে নেয়। বাবা মায়ের বাধ্য দিহান অবলিলায় বলে দেয় ঠিক আছে মা বলো কি হয়েছে।
মা দিহানকে বললো দিহানের বাবার বন্ধু আকবর সাহেবের কথা। আকবর সাহেবের একমাত্র মেয়ে আলিয়ার সাথে দিহানের বিয়ের কথা দিহানের বাবা মা বলে রেখেছেন ছোট বেলা থেকে। সেই থেকে দুইপরিবারের সবাই জানতো দিহান আলিয়ার বিয়ে হচ্ছে। দিহান টুকটাক শুনতো কিন্তু তেমন পাত্তা দিতোনা। বরং পার্ট টাইম আলিয়ার সাথে কিছুক্ষন মজাও করতো। দিহানের মা জানালেন আলিয়ার বাবা আকবর সাহেব মেয়েকে তাদের ঘরে দিবেন এই আশায় দিহানের বাবাকে সব সময় নানা ব্যপারে সাহায্য করতেন । এমনকি দিহানের বাবার বর্তমান ব্যবসাও নাকি আলিয়ার বাবার বড় শেয়ারে করা। আর আলিয়া নাকি সেই ছোট বেলা থেকেই দিহানকে পছন্দ করে। আসলে দিহান মৌনতাকে এতোই মেতে ছিলো যে আশে পাশে কে কি ভাবছে তা নিয়ে ভাববার সুযোগই হয়নি। মায়ের কথা শুনে দিহান সারারাত কাঁদলো। পরদিন ফজরের নামাজের সময় মায়ের জায়নামাজের পাশে গিয়ে দিহান বলে মা ঠিক আছে।
দিহান মৌনতার সঙ্গে দেখা করতে এলো। আসলে বিদায় নিতে এলো। দিহান মৌনতার হাত ধরে বললো মৌনতা আমি তোর কাহে একটা জিনিস চাই দিবি? বললো কি চাও বলো। আমার জীবন চাও? দিহান হাল্কা হেসে বললো লাইলি মজনুর ডায়ালগ কই থেইকা শিখলি? মৌনতা কিছু না বলে নিচের দিকে তাকিয়ে আছে। দিহান বললো মৌনতা আমি দুঃখিত। মৌনতা কি জন্য তোর এই দুঃখ। দিহান মৌনতা চেয়েছিলাম তোকে নিয়ে সুন্দর সংসার সাজাবো কিন্তু তা আর হচ্ছেনা। আমাকে ক্ষমা করে দে মৌনতা। মৌনতা আকাশের দিকে তাকিয়ে আরে পাগল এর জন্য ক্ষমা চাওয়ার কি আছে? যা তুই মুক্ত।
পশ্চিমের সূর্য লাল হয়ে আসছে দিহান ফিরে আসছে। একটু পরেই আধার নেমে আসবে সে আধারে দিহানকে আর দেখা যাবেনা। দেখা যাবেনা মৌনতার চোখের পানি। দিহান হয়তো এক সময় মৌনতাকে ভুলে যাবে আর কিন্তু খুব তাড়াতাড়ি ক্ষমা করে দিলাম বলা মৌনতা কি পারবে দিহানকে ভুলতে? পারবে কি দিহানের সাথে কাটানো সেই সুন্দর সময় গুলোর স্মৃতি ভুলে থাকতে??
মৌনতা আজ হৃদয় শূন্য আত্মাশূন্য একজন মানুষ। আর দিহান নিঃস্ব জগতের বাসিন্দা।
মোরাল অফ দ্যা ষ্টোরীঃ বাবা মা অনেক সময় না বুঝে সন্তানের জীবনের এমন কিছু সিদ্ধান্ত নেন যে সিদ্ধান্ত একমাত্র মানুষের নিজের নেয়ার কথা। আমার ফ্রেন্ড লিষ্টে অনেকগুরু জন এবং সম বয়েসী ( যারা ভবিষ্যতে পিতামাতা হবেন) আছেন তাদের কাছে শরীফ কাদেরীর অনুরোধ দয়া করে আপনার কোন সিদ্ধান্ত জোর করে সন্তানের ওপর চাপিয়ে দিবেননা। এতে করে সন্তানের জীবন বিভিষীকা ময় হয়ে ঊঠতে পারে।
[ এই গল্পের প্রতিটা লাইন সত্য কাহিনী থেকে নেয়া, শুধু মাত্র সময়কাল ও পাত্রপাত্রীর নাম ভিন্ন]
২| ২৬ শে ফেব্রুয়ারি, ২০১৩ রাত ১১:৩৫
টুটুল২০০৮ বলেছেন: সংরক্ষিত থাকলো ।
৩| ২৭ শে ফেব্রুয়ারি, ২০১৩ রাত ১:০৮
হাসিবুল ইসলাম বাপ্পী বলেছেন: সুন্দর লেখার জন্য ধন্যবাদ।
+++++++++++++++++++
©somewhere in net ltd.
১|
২৬ শে ফেব্রুয়ারি, ২০১৩ রাত ১০:৫০
প্রিয়তমেষূ বলেছেন: মন খারাপ করে দেয়া গল্প!!!!