![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
মক্কা মদিনা সফর নিয়ে এর আগেও অনেক ভ্রমন কাহিনী বের হয়েছে। আমি নিজেকে সবসময় একজন আধুনিক মানুষ উদার পন্থী মুসলমান ভাবি। আমার চোখে মক্কা মদিনা দেখতে এই সফর নামাটি পড়ে দেখতে পারেন। কয়টি কিস্তি হবে আপাতত বলতে পারছিনা। তবুও ৮/১০ কিস্তি লিখার ইচ্ছে আছে। মক্কা মদিনা ছাড়াও খুব কাছ থেকে দেখা বাংলাদেশীদের দুঃখ দূর্দশা কিছু লেখার চেষ্টা করবো। আল্লাহ আমাদের সহায় হোন।
আমার এক খুব কাছের মানুষ ইব্রাহীম খলিল ভাইয়ের সাথে ২/১ দিন পর পর রাতের বেলা বিভিন্ন বিষয়ে আমার মোবাইলে কথা হয়। আলোচনার এক পর্যায়ে ইব্রাহীম ভাই ওমরা পালনের প্রস্তাব দিলেন।আমি কিছু না ভেবে বললাম চলুন যাই। সৌদি সরকারের নিয়ম অনুসারে ৪০ বছরের নিচে কেউ ওমরায় যেতে পারবেনা আর যদি যায় তবে অন্য কোন মহিলার মুহরিম বা অভিবাবক হিসাবে যেতে পারে।
কিন্তু আমি সেই মহিলা কই পাই? হজ্ব এজেন্সি বললো সময় লাগবে ব্যবস্থা করে দিতে। মনটা ততক্ষনে মদিনার আহবান শোনা শুরু করেছে। সারারাত ভাবছি হায়রে মদিনায় বুঝি আর যাওয়া হবেনা।একটি নাত খুব স্মরনে আসছিলো-- মনে বড় আশা ছিলো যাবো মদিনায়............
সকাল বেলা আমার এক খালা বাসায় আসলেন।খালা আমাকে বলছেন তিনি তার বাচ্চা সহ ওমরা করতে যেতে চান কিন্তু খালু সাহেব পুলিশের চাকরী হবার কারনে যেতে পারছেন না,খালা একা মানুষ কার সাথে যাবে? মনে মনে ভাবলাম ও কামলে ওয়ালা তোমার ডাক তাহলে এসেই পড়েছে। আমি খালাকে বললাম খালা আমিও যাবো চলেন যাই।
১৭ই মে বাংলাদেশ বিমানের বিজি ০০৩৬ ফ্লাইটে আমার যাত্রা শুরু। বাংলাদেশ বিমানের প্রতি আমার বিশেষ ভীতি আছে,অনেকে ভাবছেন আমার দেশপ্রেমের করুন দশা। আসলে তা না একবার বাংলাদেশ বিমানে ঊঠার বাজে অভিজ্ঞতার কারনেই এমনটি হয়েছে,যাই হোক সে অনেক বড় ইতিহাস। এয়ারবাসে উঠার পর মনে হলো না আমার আগের ধারনার সাথে এই বিমানের কোন মিল নেই। ৪৩০ সিটের এই এয়ারবাসটি উন্নত বিশ্বের যে কোন এয়ার বাসের সঙ্গে তুলনীয়। সবচেয়ে বড় কথা হলো এসব কিছু ছাপিয়ে আমার মন মদিনা দেখার জন্য ব্যকুল হয়ে গেলো।
আট বছর আগে যে মদিনাকে দেখেছি যে কাবাকে দেখেছি তা আজ আবার দেখার ভাগ্য আমার হচ্ছে এই ভেবে মনটা খুশি হয়ে উঠলো। মনে পড়ে গেলো আলা হযরতের সেই নাত ফির কারাম হো গ্যায়া মে মাদিনে চালা...আবারো কামলে ওয়ালার করুনা হয়েছে আমি মদিনায় যাচ্ছি।
ফ্লাইট যখন সৌদি আরবের জেদ্দা বিমান বন্দরে ভিড়লো ততক্ষনে স্থানীয় সময় রাত চারটা। অনেকটা ক্লান্ত হয়ে ইমিগ্রেশনে দাঁড়িয়ে আছি,আমার সাথে ইব্রাহীম ভাই, আমার খালা ও তার বাচ্চা। ইব্রাহীম ভাইকে আরো কিছু দায়িত্ব পালন করতে হচ্ছে তিনি যাদের মুহরিম হয়ে এসেছেন তাদের এরাইভাল কার্ড লিখে দিতে হচ্ছে।
যাহোক অনেক ভীড় ঠেলে আমরা বের হতে হতে সকালের আলো ফুটে গেছে। কিন্তু এয়ারপোর্ট থেকে বের হতে হতে আরেক বিপত্তি। একদল লোক এসে আমাদের পাসপোর্ট চাইছে। আমি বললাম হু আর ইউ এন্ড হাউ কুড ইউ সিজ আওয়ার পাসপোর্ট। আমার তো রাগে গা জ্বলতেসে। আল্লাহ তায়লার ইচ্চায় এই পিচ্ছি বয়সে অনেক দেশের ঘোরাঘুরি শেষ। কোথাও এমন হেনেস্তা হতে হয়নি। আমি তর্ক চালিয়ে যাচ্ছি। সবচেয়ে বড় কথা হলো এরা আমাদের সাথে এমন আচরন করছে যেন আমরা ভয়ঙ্কর কোন অপরাধ করে ধরা পড়া আসামী।
পড়া লেখার নাম গন্ধ তেমন একটা এদের নাই তবু শেখ শেখ ভাব এই অফিসারগুলো হম্বি তম্বি করে বেড়াচ্ছে ,আমার প্রশ্নের উত্তর দিতে গিয়ে ইংলিশ শব্দ খুজে বেড়াচ্ছে। যাইহোক এক বাংলাদেশীর মাধ্যমে জানতে পারলাম অনেক বাংলাদেশী নাকি ওমরাহ ভিসায় এখানে এসে থেকে যায় আর যেতে চায়না,তাই এ ব্যবস্থা।ওরা ওমরাহ শেষে পাসপোর্ট ফেরত দেবে। কি আর করা চুপ করে মেনে নিলাম। বাসে করে জেদ্দাহ থেকে ৮০ কিমি দূরে মক্কা নগরীতে যাচ্ছি। বাসে বসে ভাবছি আমি সেই নগরীতে যাচ্ছি যে শহর কে নিয়ে আল্লাহ কোরআনে শপথ করেন। এখানে একটা কথা বলে রাখা ভালো আল্লাহ তায়লা এই শহরের শপথ করেছেন । হাজারো বছর আগ থেকে এই শহরকে বিশেষ লালন করেছেন এমন কি এই শহর আবাদ এর জন্য ইব্রাহীম আঃ এর স্ত্রী পুত্রকে পরীক্ষায় ফেলেছেন। কেন বলতে পারেন?
এতো ভালোবাসা দিয়ে এই শহরকে লালন পালনের উদ্দেশ্য আল্লাহ তায়লার একটাই তা হলো এই শহরে জন্ম নিবেন জগতের রহমত রাহমাতাল্লিল আলামিন প্রিয় নবী হযরত মুহাম্মদ দঃ ।
এসব ভাবতে ভাবতে ক্লান্ত আমি ঘুমিয়ে পড়লাম বাসের মধ্যেই। ঘুম ভেঙ্গে দেখি আমি চলে আমি এক অচেনা শহরে চলে এসেছি। আট বছর আগের সেই শহরের সাথে নতুন মক্কার কোন মিল পাচ্ছিনা। তবুও মনে প্রশান্তি লাগলো এই ভেবে আমি আমার কামলে ওয়ালার জন্মভুমিতে এসেছি, আমি মুসলমানের কাবার শহরে এসেছি। প্রতি ওয়াক্ত নামজে যে কাবাকে সামনে রেখে মহান স্রষ্টাকে সিজদা করি সেই কাবা।
আমরা যেহেতু কোন এজেন্সিকে আমাদের থাকা খাওয়ার দায়িত্ব দেইনি তাই নিজেরাই হোটেল খুজে বের করলাম। হেরেম শরীফের পাশে বুর্জ আল সুলতান।হোটেলে এসে কিছুটা ফ্রেশ হয়ে ওমরা সম্পন্নের প্রস্তুতি নিচ্ছি যেহেতু ওমরা সম্পন্ন না হলে আমরা ইহরাম খুলতে পারছিনা।
লাব্বাইক তালবিয়া পড়তে আমরা হাজির হলাম খানায়ে ক্বাবার দিকে। প্রথমে যখন ক্বাবা চোখে পড়লো আমি চোখের পানি ধরে রাখতে পারছিনা। ক্বাবায় যখন প্রথম চোখ পড়লো দুনিয়া কি জিনিস ভুলে গেলাম,ভুলে গেলাম নিজেকে। আমার সর্বশক্তি দিয়ে আমি বলে উঠলাম লাব্বাইক ইয়া আল্লাহ। শুরু হলো হাজরে আসওয়াদ থেকে কাবার তাওয়াফ। হজ গাইড হাতে নিয়ে একটার পর একটা দোয়া পড়ছি। প্রতি তাওয়াফে আলাদা আলাদা দোয়া। আবার হাজরে আসওয়াদে ফিরে নতুন চক্কর শুরু করি। মনে প্রবল ইচ্ছা আসয়াদ পাথরকে একটু চুমু দেবো।কিন্তু সেখানের ভীড়ে সাহসে কুলায় না। অপেক্ষায় থাকি হয়তো কোনদিন আমার কামলে ওয়ালার দয়া হবে,আমাকে আসওয়াদ পাথরে চুমুর ব্যবস্থা করে দেবেন।
হাজরে আসওয়াদ নিয়ে প্রায় আমরা সবাই জানি তবুও আমার জানা কিছু জ্ঞান আপনাদের সাথে শেয়ার করার লোভ সামলাতে পারছিনা। হাজরে আসওয়াদ বাংলায় কালপ্রস্তর আরবীতে الحجرالأسود ইংরেজীতে Al-Hajaru-l-Aswad র্পূব নামঃ হাজরে আস-আদ বা সাদা প্রস্তর
হাজরে আসওয়াদ মূলতঃ কোন পাথর নয়, প্রকৃত পক্ষে হাজরে আসওয়াদ একজন ফেরেশ্তা ছিলেন। আর হাজরে আসওয়াদ খালেছ নিয়তে চুম্বনকারী ব্যক্তির গুনাহ্ চুষে নেয়। একটি পাথর যার রং শুরুতে এক হাদীস অনুযায়ী দুধেরমত বা বরফের চেয়েও সাদা ছিল। পরে আদম-সন্তানের পাপ তাকে কালো করে (তাফসীরে ইবনে কাসীর সূরা বাকারা ১২৭ নং আয়াতের তাফসীর)হাজরে আসওয়াদের ঠিক নিচ থেকে একটি পানির ধারা যমযম কুপে প্রবেশ করেছে।বিশ্ব মুসলিম নর-নারীর কাছে এ পাথর অতি মূল্যবান। তিরমিজী শরীফের হাদীস শরীফে বর্ণীত হয়েছে, হাজরে আসওয়াদ যখন (হযরত আদম আলাইহিস সালাম -এর সঙ্গে) জান্নাত থেকে অবর্তীণ হয় তখন তা দুধের চেয়েও সাদা ছলি; কিন্তু আদম সন্তানের গুনাহ একে কালো করে দিয়েছে। তিরমিজি, ইবনু খুযাইমা, ইবনু হিব্বান ও হাকেম র্বণতি সহি হাদীস শরীফে র্বণীত হয়েছে যে, এ পাথরের একটি জিহ্বা ও দুটি ঠোঁট রয়েছে, তা দ্বারা কিয়ামতের দিন চুম্বনকারীদের পক্ষে সাক্ষ্য দেবে।
চলবে.....................
৩০ শে মে, ২০১৩ রাত ১১:৪৩
শরীফ মহিউদ্দীন বলেছেন: ওয়ালাইকুম সালাম ভাই। লিখার চেষ্টা করছি।দোয়া কামনা করছি
২| ৩০ শে মে, ২০১৩ রাত ১১:৪১
আদনান ফায়সাল বলেছেন: হাজরে আসওয়াদ মূলতঃ কোন পাথর নয়, প্রকৃত পক্ষে হাজরে আসওয়াদ একজন ফেরেশ্তা ছিলেন - আপনার এই কথার ভিত্তি কি?
৩০ শে মে, ২০১৩ রাত ১১:৪৩
শরীফ মহিউদ্দীন বলেছেন: তাফসীরে ইবনে কাসীর সূরা বাকারা ১২৭ নং আয়াতের তাফসীর
৩| ৩০ শে মে, ২০১৩ রাত ১১:৪৬
খাটাস বলেছেন: আপনি সৌভাগ্যবান। লেখা তে আরও অনেক কিছু জানতে পারব আশা করছি। অপেক্ষা করব পরের পর্বের জন্য।
৩১ শে মে, ২০১৩ রাত ১২:২২
শরীফ মহিউদ্দীন বলেছেন: আপনাকে ধন্যবাদ ভাই,লেখার চেষ্টা করছি।দোয়াগো
৪| ৩১ শে মে, ২০১৩ রাত ১২:১২
এম আর ইকবাল বলেছেন: "এয়ারপোর্ট থেকে বের হতে হতে আরেক বিপত্তি। একদল লোক এসে আমাদের পাসপোর্ট চাইছে।"
আমি গত রমজানে মক্কায় গিয়েছি ।
এয়ারপোটের্র বাইরে যারা পাসপোর্ট কেড়ে নিচ্ছে, তারা আদতে ধান্ধাবাজ বলে আমার মনে হয়েছে ।
আমাদের জন্য একজন পার্কিং এ গাড়ী নিয়ে অপেঞ্খায় ছিল । কিন্তু ওই বদমাস গুলো সেখানে যেতে দেবেনা । আমি এবং আমার স্ত্রীসহ তিন জন এবং গ্রামের একজন বৃদ্ধ মানুয ছিলেন যিনি ছেলের কাছে আসছিলেন, যিনি একাই আসছিলেন, একে তো ভাযার সমস্যা, আমরা ক্লান্ত, এয়ারপোটের্র কমরর্ত একজন বাংলাদেশী আমাদের সাহায্য করতে এসেছিলেন , তিনি আরবী ভাযায় অনেক বোঝাবার চেয্টা করে ব্যার্থ হলেন । বাসের পাকিস্হানী কমীর্র মাধ্যমে ফায়শলা হলো , এই আরবীয় নিজে ২০০ রিয়েল নিয়ে পাসপোর্ট ফিরিয়ে দিলেন , পার হয়ে গেল এক ঘণ্টার উপর ।
আপনার পাসপোর্ট কিভাবে ফেরত পেলেন ?
৩১ শে মে, ২০১৩ রাত ১২:২১
শরীফ মহিউদ্দীন বলেছেন: না ভাই আপনি বুঝতে পারেন নি,সৌদি আরবে বাংলাদেশী হাজীদের সকল দায়িত্ব Dallah general service company এর। এই কোম্পানী আপনাকে জেদ্দাহ থেকে মক্কায় নিজস্ব বাহনে করে পৌছে দেয়ার দায়িত্ব সরকার থেকে পেয়েছেন। এর জন্য দেশ থেকে আপনি তাদের সার্ভিস চার্জ দিয়েছেন। কিন্তু তাদের শর্ত একটাই তারা পাসপোর্ট রেখে দেবে এবং মক্কা মদিনা হজ্ব শেষে এয়ারপোর্ট এ যাবার আগে পাসপোর্ট ফেরত দেবে। আমি ঐ কোম্পানীর গাড়িতে করেই মক্কা গিয়েছি। অবশ্য পরের দিন আমি সংশ্লিষ্ট অফিসে যোগাযোগ করে আমার চিকিতসক পরিচয় দেই এছাড়া আমার পাসপোর্ট নানা দেশের ভিসা দেখে তারা আস্বস্ত হয় যে এখানে থেকে যাবার কোন প্রকার সম্ভাবনা আমার নেই তাই পাসপোর্ট দিয়ে দেয়।
আপনি খামাখা ২০০ রিয়েল দিতে গেলেন। হজ্ব শেষে ওরা এমনিতেই ফেরত দিয়ে দিতো। এটা তেমন কোন বড় সমস্যা না। আর মক্কা মদিনায় পুলিশ আপনার পাসপোর্ট বা কোন বৈধ কাগজই চাইবেনা যদি আপনার হাতে dallah কোম্পানীর বেল্ট পরিহিত থাকে। ধন্যবাদ
৫| ০৩ রা জুন, ২০১৩ রাত ১১:০০
মোমের মানুষ বলেছেন: ভাই সুন্দর হচ্ছে চালিয়ে যান। আমি এক ট্রাভেল কোম্পানীর প্রতিনিধি হয়ে বায়তুল্লাহ যিয়ারতের সৌভাগ্য হয়েছে
০৮ ই জুন, ২০১৩ দুপুর ১২:২০
শরীফ মহিউদ্দীন বলেছেন: ধন্যবাদ ভাই
৬| ০৭ ই জুন, ২০১৩ ভোর ৬:১৪
খেয়া ঘাট বলেছেন: ফিরিশতা থেকে পাথর হলেন কীভাবে যদি একটু বলতেন?
০৮ ই জুন, ২০১৩ দুপুর ১২:০৫
শরীফ মহিউদ্দীন বলেছেন: আসলে ভাই এটি আল্লাহর একটি কুদরত,এর কোন ব্যাখ্যা হয়না মুসলিম হিসাবে দেওয়ার প্রয়োজন ও মনে করিনা। কারন আমরা হলাম আল্লাহর পক্ষ থেকে শুনলাম আর বিশ্বাস করলাম......এরই নাম ইমান
৭| ০৭ ই জুলাই, ২০১৩ বিকাল ৫:৫৯
গ্রীনলাভার বলেছেন: আলহামদুলিল্লাহ। আমরা গায়েবে বিশ্বাসী।
সুন্দর লিখেছেন।
©somewhere in net ltd.
১|
৩০ শে মে, ২০১৩ রাত ১১:৩২
বোকামন বলেছেন:
আস সালামু আলাইকুম
লিখুন ভাই।
সফর নামাটির সাথেই থাকবো ইনশাআল্লাহ।
অনেক অনেক ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা।