নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

কষ্ট করে হলেও সৎ থাকার চেষ্টা করো

শরীফ মহিউদ্দীন

অপেক্ষায় আছি সুন্দর সকালের.........

শরীফ মহিউদ্দীন › বিস্তারিত পোস্টঃ

মুগ্ধতায় আমার মা

১৮ ই অক্টোবর, ২০১৩ রাত ১১:৪০

আমাদের পাশের বিল্ডিং এ থাকেন আরিফ ভাই। বাবা মায়ের একমাত্র সন্তান। বাবা একটা ভার্সিটির বিজ্ঞান অনুষদের ডিন। তাদের মোটামুটি অনেকগুলো বাড়ি গাড়ি। আরিফ ভাই নিতান্তই গো বেচারা টাইপ মানুষ। পড়াশোনায় ভীষন মেধাবী। তিনি ছোট বেলা থেকে কিছুটা ঘরকুনো,মানুষের সাথে খাতির জমাতে পারেন না মোটেও। আপনি কোন বিষয়ে শুনতে চাচ্ছেন না তাও জোর করে শোনাবে। এ জন্য তার বন্ধু বান্ধবের সংখ্যাও নিতান্ত কম। সবাই পারলে তাকে এড়িয়ে চলে। আর আমি এই এড়িয়ে চলাদের মধ্যে প্রথম স্থানে আছি। আমার সাথে দেখা করতে চেয়ে ফোন করলে আমি বলি অনেক দূরে আছি ব্যস্ত আছি ইত্যাদি বিতং কথা।



গত বছরের মাঝামাঝি সময়ে আরিফ ভাইয়ের মা মারা যান। তাদের তিন হাজার ফিটের বিশাল ফ্ল্যাটে এখন শুধু বাপ বেটা দুইজন (উল্লেখ্য আরিফ ভাইয়ের গো বেচারা টাইপ আচরনের কারনে অনেক জায়গা থেকে তার বিয়ের প্রস্তাব ফিরিয়ে দেয়া হয়েছে) সে যাই হোক আরিফ ভাই ঈদের দিন বিকালে আমাকে আর ফোন না করে সরাসরি বাসায় চলে এলেন। আমি বাইরে বেরুনোর কথা কিন্তু একজন এলে তো আর খারাপ ব্যবহার করতে পারিনা। বসতে বললাম এরপর আম্মা লুচি পরটা আর মাংস খেতে দিলেন। আরিফ ভাই একে একে ছয়টা লুচি খেলো।



খাবার শেষে আমার রুমে এসে বিশ্রাম নিতে নিতে যা বললো তার জন্য আমি মোটেও প্রস্তুত ছিলাম না। আমাকে বললো তুমি নিশ্চয়ই ভাবছো আমি এতোগুলো পরটা কিভাবে খেলাম। আসলে আজ আমাদের বাসায় বুয়া আসেনি। দোকান থেকে খাবার আনিয়েছিলাম কিন্তু খেতে ইচ্ছে করছিলো না। ঈদের দিন খুব ইচ্ছে করছিলো ঘরের রান্না খাই তাই তোমাকে না বলে তোমার বাসায় চলে আসলাম।



তার এ কথা শুনে আমার চোখ টলটল করে উঠলো। কারন কিছুক্ষন আগে সামান্ন একটা বিষয় নিয়ে আম্মার সাথে তর্ক করেছি। কেউ হাজার টাকার মালিক হতে পারেন কিন্তু মনে রাখুন মা আপনার এ সব সম্পদের চেয়ে দামী। মা যে কি সম্পদ তা মা থাকলে বুঝা যায়না। মায়ের উপস্থিতি আমাদের কখনো এই বিষয়টি এতোটা ভাবায় না।



আমার মনে পড়ে ছোট বেলায় আমি খুবই অসুস্থ ছিলাম। পিজি হাসপাতালে মাসের পর মাস কাটিয়েছি তখন কত আত্মীয় স্বজন দেখতে আসতো,কিছুক্ষন হাসপাতালে থেকে চলে যেতো সবাই। ডাক্তারদের ডিউটী শিফট পরিবর্তন হতো আসতো নতুন ডাক্তার,নার্স,আয়া কিন্তু একজন সেবিকার কোন ডিউটি রোস্টার ছিলোনা। দিনরাত ২৪ ঘন্টা যিনি ম্যালেরিয়া জ্বর নিয়েও আমার পাশে বসে ছিলেন তিনি আমার মা। জানিনা জীবনে নানা টানাপোড়েনে হয়তো মাকে আমি সেই ভালোবাসা ফিরিয়ে দিতে পারবো কিনা? জানিনা তার প্রতি আমার দায়িত্ব পালন করতে পারবো কিনা।



আমাদের হসপিটালে কদিন আগে একজন হাজার কোটি টাকার মালিকের মা ভর্তি হলেন কোমা অবস্থায়। কিন্তু ছেলেরা মায়ের ঔষধ পত্র কিনে দিতে আগ্রহী না মোটেও তাদের ধারনা সব ই বৃথা যাবে একটু পর তো মরেই যাবে। তাই তারা হুজুর নিয়ে এসেছে কালেমা পড়িয়ে তওবা করাতে। রাগ সামলাতে না পেরে ঐ হুজুরকে আমি বললাম আপনি এই বৃদ্ধাকে তওবা পড়ান তার পাপের জন্য নয় বরং এই কুলাঙ্গার ছেলে জন্ম দেয়ার ভুলের কারনে। রোগীর ছেলে আমার উপর ক্ষিপ্ত হয়ে আসে আমি আর কথা না বাড়িয়ে সেখান থেকে চলে আসি। সে ঘটনা আজো প্রতিনিয়ত আমাকে আহত করে। বলুন মা হলে কি চিকিৎসার আশা চেড়ে দিয়ে বসে থাকতো? নাকি নিজের শেষ রক্তবিন্দু দিয়ে হলেও সন্তানের চিকিৎসার ব্যবস্থা করতো।



হে দুনিয়ার মানুষ তোমরা জান্নাতের জন্য আহাজারি করো কিন্তু তোমার মায়ের পায়ের নিচে যে জান্নাতের চাবি তা বেমালুম ভুলে বসে আছো?



শেষ করার আগে প্রিয় নবীর একটি বানী দিয়ে শেষ করতে চাই... একবার রাসুল দঃ বললেন, তার ধ্বংস হোক। তার ধ্বংস হোক। পুনরায় তার ধ্বংস হোক। সাহাবীগন প্রশ্ন করলেন ইয়া রাসূলাল্লাহ! কার কথা বলছেন? তিনি বললেন, যে তার পিতা-মাতা উভয়কে বা কোনো একজনকে বৃদ্ধাবস্থায় পেয়েছে, অথচ এরপরও সে (তাদের খিদমত করে) জান্নাতে যেতে পারে নি।



জানিনা আমার এই ভাবনার সাথে আপনাদের একত্রিত করতে পারলাম কিনা।আপনাদের ভাবনার জগতে কিছুটা নাড়া দিতে পারলে নিজেকে ধন্য মনে করবো।



উৎসর্গঃ লেখাটি আমার কাছের কিছু বন্ধুকে উৎসর্গ করছি যারা খুব অল্প বয়সে মাকে হারিয়েছে। মাকে ছাড়া যাদের দুঃখময় ঈদ কেটেছে। আল্লাহ রাব্বুল আলামিনের কাছে আমি আমার এ বন্ধুদের মায়ের নাজাতের প্রার্থনা করছি

মন্তব্য ২ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (২) মন্তব্য লিখুন

১| ১৯ শে অক্টোবর, ২০১৩ রাত ১২:০৪

রাজ্জাক রাজ বলেছেন: মা আমার মা। কত না মধুর নাম। আমার মা পৃথিবীর সবথেকে শ্রেষ্ঠ মা। আপনার মায়ের প্রতিও রইল বিনম্র শ্রদ্ধা ও হাজারও সালাম। মা তোমার পায়ের ধুলো আমার কাছে হিরে মানিক।

Typed with Panini Keypad

২| ১৯ শে অক্টোবর, ২০১৩ বিকাল ৩:২৭

কালোপরী বলেছেন: :)

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.