![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
আমাদের বাসায় টিভিতে নাটক চলছে। নিপ্পন কোম্পানীর সাদাকালো টিভি।আশেপাশের বাসার প্রায় ২৫/৩০ জন এসে বসে আছে সেই সন্ধ্যা থেকে। আমাদের ড্রয়িংরুমকে সিনেমার হাউজফুল শো বললে অত্যুক্তি হবেনা। সবার প্রতীক্ষা একটি নাটকের জন্য। নাটকের নাম কোথাও কেউ নেই। আজকের পর্বে বাকের ভাইয়ের মামলার রায় হবে। সবাই উত্তেজনায় আক্রান্ত, কি হবে বাকের ভাইয়ের। অবশেষে আসলো সেই মাহেন্দ্রক্ষন, বিচারক ফাসির আদেশ দিলেন। আমরা সবাই কাঁদছি আমাদের বাড়িতে নেমে এলো শোকের ছায়া। অতিশোকে কাতর কেউ কেউ চিৎকার করে কাঁদছেন, আমাদের শোক আর মনের মধ্যে গেথে না রেখে রাস্তায় নেমে পড়লাম। হাতে মশাল নিয়ে। আমাদের এলাকার আলাল ভাই মিছিলের নেতৃত্ব দিচ্ছেন। শ্লোগান চলছে বাকের ভাইয়ের কিছু হলে জ্বলবে আগুন ঘরে ঘরে, হুমায়ূনের চামড়া তুলে নেবো আমরা। আমি তখনো জানতাম না এই হুমায়ূন কে? তবে জানি বাকের ভাইয়ের ফাসির জন্য এই লোকটাই দায়ী। কারন তিনিই এই নাটকের নাট্যকার। পরদিন শুক্রবার এলাকার জুমার নামাজের পর দোয়া মাহফিল করানো হলো যাতে বাকের ভাইয়ের ফাঁসি না হয়। ইমাম সাহেব কেন্দে কেটে বাকের ভাইয়ের জন্য দোয়া করলেন। ( পরে অবশ্য জানতে চাইলেন এই বাকের ভাই কে?)
বাংলাদেশে আর কোনদিন কি এমন নাট্যকার আসবেন ? যার চরিত্রের জন্য মানুষ কাঁদবে,
মসজিদে সিন্নি দিবে ? এখন পর্যন্ত মনে হচ্ছে না।ভবিষ্যতের কথা ঠিক বলতে পারছিনা।
এই নাটক প্রচারের কিছুদিন পর আমার হাতে সেই কুক্ষ্যাত নাট্যাকারের একটি বই আসলো বইয়ের নাম পিপলী বেগম। পড়াশোনার বাইরে পুরো বই শেষ করা এটিই আমার প্রথম বই। আমি অবাক হয়ে পিপলি বেগম পড়ছি। পিপলী বেগম নামের এক মেয়ে পিঁপড়াকে গড়ে উঠা সেই গল্প আমি এখনো পুরোটা বলে দিতে পারবো।
এরপর থেকে দৃষ্টিভঙ্গি পাল্টে গেল।আমি হুমায়ূন আহমেদ নামের মানুষটার বই পড়ার জন্য আকুল হয়ে থাকতাম।ঈদে কাপড় কেনার টাকা বাচিয়ে বাবার পকেট কেটে বই কিনতে লাগলাম।এরপর হুমায়ূন সাহিত্যের এমন কোন বই নেই যা আমার কাছে নেই।
হুমায়ূন আহমেদ আমাকে জীবনের মানে বুঝিয়েছেন।জীবনকে দেখতে উপলব্ধি করতে,দেখতে শিখিয়েছেন।বৃষ্টিকে ভালোবাসতে শিখিয়েছেন।জোছনাকে যে অনুভব করা যায় এটা বুঝেছি তার বই পড়ে।মানুষের কাছে যেতে,ভালোবাসতে শিখেছি তার কাছে থেকে।আমার চেতনা,দৃষ্টিভঙ্গি সব কিছুরই পরিবর্তন করে দিয়েছেন তিনি।
একঅশ্রু ভেজা ভালোবাসা আমার কবি রাজার রাজা আপনার জন্য। আপনি কি জানেন ? শুভ্ররা এখনো মোটা লেন্সের চশমা পরে বিরস বদনে ঘুরে বেড়ায়। নিঃসঙ্গ হিমু চাঁদের আলোয় উদ্দেশ্যহীন ঘুরে বেড়ায়, পাড়ার নেড়ি কুকুর এখনো হিমুর পিছু নেয়। আনিস কথা বলতে গেলে এখনো তোতলায়। মিসির আলী সিগারেট হাতে পায়চারি করতে করতে আস্ত একটি রাত কাটিয়ে দেন। বেসুরো চটুল হিন্দি গানের তালে তালে মাথা ঝাঁকায় কতশত বাকের। নিঃশব্দ কষ্ট সহ্য করে চলে রাবেয়া। 'তুই রাজাকার' বলে শত শত তোতা পাখি রাজপথের বিভিন্ন মোড়ে জড়ো হয়। গাজীপুরের শালবনে দিগম্বর হিমু তার দলবল নিয়ে মাটির গর্তে ডুবে থাকে। এখনো চারিদিকে প্রবল হাহাকার ছড়িয়ে চাননিপসর রাত আসে। চন্দ্রকারিগর তাঁর সব কেরামতি সাজিয়ে বসে থাকেন, কিন্তু যার জোছনায় ভেজার কথা, সেই চন্দ্রাহত লোকটি নেই। গত দুটি বছরের সব কটি পূর্ণিমা তাই বিষণ্ণ ঠেকেছে।
আমাকে স্বপ্ন দেখতে শিখিয়ে আমার স্বপ্নদ্রষ্টাই আজ না ফেরার দেশে।তবু হুমায়ূন আহমেদ মিশে আছে আমার অনুভূতিতে,অন্তরে।স্বত্তার গভীর থেকে অনুভব করি তাকে। মানুষের স্রষ্টা যেন তার কোলে আপনাকে তুলে নেয় এই কামনা।
©somewhere in net ltd.
১|
১৪ ই নভেম্বর, ২০১৩ রাত ৩:০৪
বোকামন বলেছেন:
মন ছুঁয়ে গেলো লেখাটি ...