![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
কাজী সিরাজ
হাওয়া ভবন-হাওয়া ভবন আর তারেক রহমান-তারেক রহমান শুনতে শুনতে মানুষের কান প্রায় ঝালাপালা হওয়ার জোগাড়। যত দুরাচার-অনাচার, দেশ থেকে যত অর্থপাচার সব কিছুর মূলে ওই হাওয়া ভবন আর তারেক রহমান। আওয়ামী কলের গানে অবিরাম বেজেছে সেই একই গানের কলি; এখনো বেজেই চলছে বিরতিহীন। সেই কলের গানে কণ্ঠ আছে প্রধানমন্ত্রীর, আছে লীগ সরকারের মন্ত্রী-মিনিস্টারের, এমনকি শাসক লীগের গুরুত্বপূর্ণ-গুরুত্বহীন নেতা, আতিনেতা-পাতিনেতার।এখন হাওয়া ভবন নেই, তারেক রহমানও নেই। কিন্তু দুর্নীতি-দুরাচার-দুঃশাসন আছে, অনাচার আছে, আছে বিদেশে অর্থপাচার। শুধু আছে নয়; রেকর্ড বলছে সব কিছু আরও বেড়েছে। কেমন করে লীগের 'পুণ্য'-'পবিত্র' শাসনে এসব ঘটছে? কোন সে দুরাত্দা, এসব 'অপকর্ম' করে শাসক লীগের খোলস উন্মোচন করে দিচ্ছে? গত ক'বছর ধরে যেভাবে 'ঢোলক' বেজেছে, তাতে তো এটাই মনে হওয়ার কথা যে, শাসক লীগের সবাই কামেল পীর-ফকির কিংবা দরবেশ! শয়তান গোত্রের কারও এখানে প্রবেশ বা অনুপ্রবেশ নিষিদ্ধ। তাহলে এদের রাজত্বকালে বর্ধিত হারে 'শয়তানীগুলো' করছে কে বা কারা? জনমনে এই প্রশ্ন জাগা অমূলক নয়, অস্বাভাবিকও নয়।মাত্র তিন দিনের ব্যবধানে বাংলাদেশ থেকে অর্থপাচার কেলেঙ্কারির তিনটি ভয়ঙ্কর বোমার বিস্ফোরণ ঘটেছে। একটি বোমা ফাটিয়েছে সুইজারল্যান্ডের কেন্দ্রীয় ব্যাংক 'সুইস ন্যাশনাল ব্যাংক' (এসএনবি) এবং গত ২৫ জুন বাংলাদেশি মিডিয়ায় দ্বিতীয় যে বিধ্বংসী বোমাটি ফেটেছে তা ইউএনডিপির। সুইস ব্যাংকের 'ব্যাংকস ইন সুইজারল্যান্ড-২০১৩' শীর্ষক প্রতিবেদনে বলা হয়, সুইস ব্যাংকগুলোয় বাংলাদেশিদের গচ্ছিত অর্থের পরিমাণ এক বছরের ব্যবধানে বেড়েছে ৬২ শতাংশ। এতে জানানো হয়েছে যে, ২০১৩ সাল থেকে সুইস ব্যাংকগুলোয় বাংলাদেশিদের কমপক্ষে ৩৭ কোটি ১৯ লাখ সুইস ফ্রাঁ গচ্ছিত রয়েছে, যা প্রায় ৪১ কোটি ৪০ লাখ ডলার। বাংলাদেশি মুদ্রায় তা তিন হাজার ১৬২ কোটি ৩৭ লাখ টাকা। এর আগে ২০১২ সাল শেষে সুইস ব্যাংকগুলোয় বাংলাদেশিদের অন্তত ২২ কোটি ৮৯ লাখ সুইস ফ্রাঁ বা ২৪ কোটি ৫০ লাখ ডলার গচ্ছিত ছিল, যা বাংলাদেশি টাকায় এক হাজার ৯০৮ কোটি টাকার সমান। অর্থাৎ শেখ হাসিনার বিগত লীগ সরকারের শেষ বছরেই (২০১২-২০১৩) 'সাধু-সন্ন্যাসীরা' একমাত্র সুইজারল্যান্ডের ব্যাংকগুলোতেই সরিয়েছে আগেকার তুলনায় এক হাজার ২৫৪ কোটি টাকা বেশি। যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, কানাডা, ভারত, মালয়েশিয়াসহ অন্যান্য দেশে লুকানো টাকার বাইরের এই হিসাব। পর্যবেক্ষকদের ধারণা, ওই সব দেশেও বাংলাদেশের টাকা পাচার হয়েছে। আবার সুইস ব্যাংকগুলোতে বাংলাদেশি কোনো নাগরিক বা প্রতিষ্ঠান নিজের নামের বদলে যদি অন্যের নামে কোনো অর্থ গচ্ছিত রাখে তাহলে তা এই হিসাবের মধ্যে আসেনি। সব সময় এটা ধারণা করা হয় যে, লুটেরারা অধিকাংশ পাচারকৃত অর্থই বেনামে গচ্ছিত রাখে। সেই টাকার হিসাব নাকি কখনোই জানার উপায় নেই। বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, বেনামে জমানো অর্থ যোগ করলে সুইস ব্যাংকগুলোতে বাংলাদেশি দুর্বৃত্তদের আরও বিপুল অর্থ লুকোনোর খবর পাওয়া যেত। বলা হয়ে থাকে, নানা কারণে নিজের টাকা পাচারকারীরাও ভোগ করতে পারে না। বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর সালেহউদ্দিন বলেছেন, সুইস ব্যাংকগুলোতে গচ্ছিত সব টাকাই পাচার হওয়া টাকা নয়। বিদেশে কর্মরত অনেক বাংলাদেশিও তাদের বৈধ টাকা সুইস ব্যাংকে রাখেন। কিন্তু সাবেক গভর্নর এই বিষয়টি পরিষ্কার করেননি যে, সেই বৈধ টাকা গচ্ছিত টাকার কত পার্সেন্ট হতে পারে! বড়জোর আট-দশ-পনেরো পার্সেন্ট। বাকিটা?এবার দ্বিতীয় বোমা প্রসঙ্গ। উন্নয়নশীল ৮টি দেশ থেকে অর্থ পাচারবিষয়ক জাতিসংঘ উন্নয়ন কর্মসূচির (ইউএনডিপি) এক গবেষণা প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বাংলাদেশ থেকে প্রতি বছর গড়ে পাচার হচ্ছে ৬২৪০ কোটি টাকা। শেখ হাসিনার ১৯৯৬-২০০১ এবং ২০০৮-২০১৩ ওই দশ বছরের একটি বছরও নেই, যে বছর টাকা পাচার হয়নি। স্বাধীনতার পর থেকেই এই অর্থপাচার চলছে। গত প্রায় ৪০ বছরে বাংলাদেশ থেকে এভাবে পাচার হয়ে গেছে তিন লাখ কোটি টাকা। এই অর্থ মোট দেশজ উৎপাদনের ৩০ দশমিক ৪ শতাংশ। চার দশকের এই হিসাব অনুযায়ী বেগম খালেদা জিয়ার দশ বছরের শাসনকালও বাদ নেই। দুই আমলেই পাচারের পরিমাণ গড়ানুপাতে সমান সমান। এদিকে তৃতীয় বোমাটি গত বছরের শেষ দিককার। ফাটিয়েছিল ওয়াশিংটনভিত্তিক গবেষণা প্রতিষ্ঠান 'গ্লোবাল ফিনান্সিয়াল ইন্টেগ্রিটি (ডিএফআই)। তাতে বলা হয়, ২০১১ সালে বাংলাদেশ থেকে ২৮০ কোটি ৫০ লাখ ডলার, যা বাংলাদেশি মুদ্রায় ২২ হাজার ৪৪০ কোটি টাকা পাচার হয়েছে। ২০১০ সালে পাচার করা হয়েছিল ২১৯ কোটি ১০ লাখ ডলার, যা বাংলাদেশি মুদ্রায় ১৭ হাজার ৫২৮ কোটি টাকা। এক বছরে দেশের টাকা বিদেশে পাচারের দুর্বৃত্তায়নে 'উন্নতি' হয়েছে ২৬ শতাংশ। বাংলাদেশ থেকে টাকা পাচারের অন্যতম পথ হচ্ছে আমদানি ও রপ্তানির ক্ষেত্রে পণ্যের মূল্য কম বা বেশি দেখানো। এই মাধ্যমে দেশ থেকে অর্থপাচারের হার হচ্ছে ৫৮ দশমিক ২ শতাংশ। এ কাজটি সরকারের সর্বোচ্চমহল, মন্ত্রী-মিনিস্টার এবং সংশ্লিষ্ট আমলারা ছাড়া আর কে করতে পারে? বাকি ৪৭ দশমিক ৮ শতাংশ পাচার করা হয় হুন্ডির মাধ্যমে। বিভিন্ন দেশের এজেন্টের মাধ্যমে এই হুন্ডি ব্যবসা পরিচালিত হচ্ছে।বিএনপি-জামায়াত জোট সরকারের আমলে অর্থপাচার হয়নি, শেখ হাসিনার লীগ সরকারের আমলেই এই সব দুষ্কর্ম হয়েছে এটা বলা এই লেখার উদ্দেশ্যে নয়, উদ্দেশ্য এটা প্রমাণ করা যে, টাকা পাচার শুধু বেগম জিয়ার আমলেই নয়, শেখ হাসিনার আমলেও হয়েছে, হচ্ছে। বিভিন্ন বিশ্বাসযোগ্য আন্তর্জাতিক প্রতিষ্ঠানের প্রতিবেদনে দেখা যাচ্ছে, ক্ষেত্রবিশেষে বর্তমান আমলে তা বেড়েছে। বিএনপি-জামায়াত জোট সরকারের বিরুদ্ধে, বিশেষ করে হাওয়া ভবন ও তারেক রহমানের বিরুদ্ধে শাসক লীগের অন্যতম প্রধান অভিযোগ ছিল, তারা লুটেপুটে দেশটাকে ফোকলা করে দিয়েছে এবং সব লুটের টাকা বিদেশে পাচার করে দিয়েছে। তারা ক্ষমতায় গেলে সব 'লুটের মাল' দেশে ফেরত আনবে এবং নিজেরা লুটপাটে জড়াবে না। কিন্তু ইউএনডিপি যে হিসাব দিয়েছে তাতে শেখ হাসিনার গত ১০ বছরে পাচার হয়েছে ৬২ হাজার ৪০০ কোটি টাকা। ইউএনডিপি তাদের প্রদত্ত গড় হিসাবে এটা কোথাও বলেনি যে, এই ১০ বছরে অর্থপাচার হয়নি বা কম হয়েছে। সুইস ব্যাংকের হিসাব তো বলে, শেখ হাসিনার আমলে সুইজারল্যান্ডের ব্যাংকগুলোতে বাংলাদেশিদের টাকা গচ্ছিত রাখার হার আতঙ্কজনক বেশি। হিসাবটা তো ওপরে দেওয়াই আছে। টাকা পাচারের নিরাপদ পথ আমদানি-রপ্তানি খাতের কথাও আগেই উল্লেখ করেছি। দেশের বিশিষ্ট অর্থনীতিবিদ ড. এবি মির্জ্জা আজিজুল ইসলাম বলেছেন, 'বিদেশ থেকে যন্ত্রপাতি আমদানির নামে ব্যাপকভাবে টাকা পাচার হয়েছে। গত বছর দেশে বিনিয়োগ হয়নি। শিল্প উৎপাদনও বাড়েনি। তারপরও শিল্পের যন্ত্রপাতি বেড়েছে (দৈনিক যুগান্তর, ২৫ জুন ২০১৪)। পাঠক, এটা কী করে সম্ভব? বিনিয়োগ হলো না, উৎপাদনও বাড়ল না, অথচ কল-কারখানায় যন্ত্রপাতি বেড়ে গেল কীভাবে? উত্তর খুবই সোজা। ক্ষমতাসীন প্রভাবশালী এবং তারা বা তাদের ঘনিষ্ঠ সহযোগী কমিশনখোররা দেশের ক্ষতি করে অপ্রয়োজনে যন্ত্রপাতি আমদানি করে, কম দামে কিনে বেশি দাম দেখিয়ে বাড়তি টাকাটা পাচার করে দিয়েছে। মির্জা আজিজুল ইসলাম যে একটি মাত্র বছরের কথা উল্লেখ করেছেন, তা ২০১৩ সাল- শেখ হাসিনার লীগ সরকারের গত টার্মের অন্তর্গত শেষ বছর। এই দুষ্কর্মটি কে বা কারা করেছে তাদের চিহ্নিত করতে কি পাঠক আপনাদের খুব অসুবিধা হচ্ছে? নিশ্চয়ই এই জন্য 'হাওয়া ভবন' আর তারেক রহমানকে দোষারোপ করা যাবে না। সুইস ব্যাংকের প্রতিবেদনে ২০১৩ সালে এক বছরের ব্যবধানে যে ৬২ শতাংশ বেশি টাকা গচ্ছিত রাখার হিসাব দেওয়া হয়েছে, অনুমান তো করাই যায় যে, তার সঙ্গেও বর্তমান ক্ষমতাসীন দলের লোকজনই জড়িত। তারেক রহমান ও তার ভাই কোকোর নামে গত ৭-৮ বছরে যে পরিমাণ টাকা পাচার (সিঙ্গাপুরে তারেক রহমানের টাকা জমানোর যে ব্যাংক অ্যাকাউন্টের কথা বলা হয়েছে, তারেক রহমানের আইনজীবী ব্যারিস্টার মাহবুব উদ্দিন খোকন দাবি করেছেন সেই অ্যাকাউন্টটি তারেক রহমানের নয় এবং সেই অ্যাকাউন্ট থেকে তারেক নিজ স্বাক্ষরে কোনো টাকা তোলেননি) ও জমা-উত্তোলনের পরিমাণ জাতিকে শোনানো হয়েছে তা তো আওয়ামী লীগের শাসনামলে ২০১২ ও ২০১৩ সালে পাচারকৃত অর্থের তুলনায় কোনো পার্সেন্টেজের মধ্যেও পড়ে না। তাই বলে এ কথা বলতে চাচ্ছি না যে, তারা 'ধোয়া তুলসী পাতা।' তবে আওয়ামী লীগ যত গর্জন করেছে, বর্ষণ তেমন দেখাতে পারেনি জাতিকে। আওয়ামী লীগ আমলেরটা কিন্তু সুইস ব্যাংক 'লেজার বই' খুলে সারা বিশ্বকে দেখিয়ে দিয়েছে। ভুয়া হিসাবপত্রে 'চুদুর-বুদুর' করা যায়, ব্যাংকের হিসাবে কিন্তু তা করা যায় না। ওয়াশিংটনভিত্তিক গবেষণা প্রতিষ্ঠান 'গ্লোবাল ফিনান্সিয়াল ইন্টেগ্রিটি (ডিএফআই) তো গবেষণা করে লীগ শাসনের ২০১০ ও ২০১১ সালের হিসাবটা স্পষ্ট করে দেখিয়ে দিয়েছে কী বিশাল পরিমাণ অর্থ পাচার করে দেওয়া হয়েছে। বুঝতে অসুবিধা হওয়ার কথা নয়, এ বিপুল পরিমাণ অর্থের উৎস ক্ষমতাসীন ও তাদের সঙ্গে সংশ্লিষ্টদের সীমাহীন দুর্নীতি ও লুটপাট। মজার ব্যাপার হচ্ছে, বাংলাদেশের প্রধান দুটি রাজনৈতিক দলের যারা যখন ক্ষমতায় থাকেন, তারা ক্ষমতায় যাওয়ার আগে প্রতিপক্ষের বিরুদ্ধে লুটপাট, দুর্নীতি, বিদেশে বিপুল অর্থপাচারের জোরালো অভিযোগে আন্দোলন শানালেও ক্ষমতায় গিয়ে পাচারকৃত অর্থ ফেরত আনার কোনো উদ্যোগই গ্রহণ করেনি। এমন কি অভ্যন্তরীণভাবেও দুর্নীতি ও দুর্নীতিগ্রস্তদের বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থাই গ্রহণ করেনি। একমাত্র ওয়ান-ইলেভেনের পরই এ ব্যাপারে বলিষ্ঠ একটা উদ্যোগ নিতে দেখা গেছে। দুর্নীতিবিরোধী টাস্কফোর্সের ভূমিকার কারণে বাংলাদেশ ব্যাংক ও দুর্নীতি দমন কমিশন জোরদার ভূমিকা পালন করে পাচারকৃত বেশ কিছু অর্থ ফেরতও এনেছিল। মহাজোট সরকার ক্ষমতায় এসে তাদের আস্থাভাজন ড. আতিউর রহমানকে বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর বানানোর পর তত্ত্বাবধায়ক আমলের এই সংক্রান্ত ভালো উদ্যোগগুলো আর এগিয়ে নেননি। উল্লেখ্য, সেই সরকারের আমলে দুর্নীতিবিরোধী টাস্কফোর্স কিছু ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের নাম ধরে অর্থপাচার বিষয়ে অনুসন্ধান চালাচ্ছিল। ধারণা করা হয়, সরকারের চাপে পাচারকৃত সব অর্থ উদ্ধারের প্রচেষ্টা ও উদ্যোগ অব্যাহত না রেখে বরং সরকারের রাজনৈতিক প্রতিপক্ষকে ঘায়েল করার জন্য তিনি কিছু অনুসন্ধান চালিয়েছেন। তারেক রহমানের অর্থের এখনো কোনো সন্ধান পাননি। আরাফাত রহমান কোকোর নামে সিঙ্গাপুরের এক ব্যাংকে রাখা ১৩ কোটি টাকা ফেরত আনার বাহাদুরি দেখিয়েছেন। কোকোর আইনজীবীরা প্রশ্ন তুলেছেন, কোকো গ্রেফতার হওয়ার পর ওই টাকা তার অ্যাকাউন্টে জমা হলো কী করে? এটা তো মিলিয়ন ডলারের প্রশ্ন। যদি টাকাটা কোকোরই হয়, সুইস ব্যাংকে গচ্ছিত ৩ হাজার ১৬২ কোটি ৩৭ লাখ টাকার, ইউএনডিপির হিসাবে প্রতিবছর ৬২৪০ কোটি টাকার এবং ডিএফআইর ২০১০ ও ২০১১ সালে পাচারকৃত যথাক্রমে ১৭,৫২৮ ও ২২,৪৪০ কোটি টাকার কত অংশ এই ১৩ কোটি টাকা? অথচ বাংলাদেশ ব্যাংক, দুদক, সরকার ও সরকারি দল এই ইস্যুতে বিএনপি ও তারেক-কোকোর বিরুদ্ধে প্রচার বা অপপ্রচার চালিয়েছে ১৩ লাখ কোটি টাকা মূল্য মানের। এটাকে পাচারকৃত অর্থ উদ্ধার বলে না, বরং বলা যায় প্রতিপক্ষের চরিত্র হননের অসৎ রাজনৈতিক কূটকৌশল।প্রকৃত সত্য হচ্ছে জাতীয় রাজনীতিতে লুটপাটতন্ত্র ও লুণ্ঠন-সংস্কৃতি দিন দিন প্রবল হচ্ছে। দুর্বৃত্তায়িত রাজনীতির সুবিধা ভোগ করে রাজনৈতিক দুর্বৃত্তরা এবং তাদের সহযোগীরা অবিরাম দেশের টাকা বিদেশে পাচার করছে। ইউএনডিপির চার দশকের হিসাব তো সে কথাই বলে। এসব নিয়ে যখন ঘাঁটাঘাঁটি হয়, সুইস ব্যাংক বা ইউএনডিপি অথবা গ্লোবাল ফিনান্সিয়াল ইন্টেগ্রিটিতে জলজ্যান্ত তথ্য-উপাত্ত প্রকাশ হয়ে যাওয়ার পর যখন আমাদের সমগ্র জাতির মাথা হেঁট হয়ে যায়, তখন মনে পড়ে বিএনপির পরলোকগত সাবেক মহাসচিব আবদুল মান্নান ভূঁইয়ার কিছু কথা। ২০০৭ সালের ৭ জুন তার উত্থাপিত রাজনৈতিক সংস্কার প্রস্তাবে তিনি স্পষ্ট করে উল্লেখ করেছিলেন, দুর্বৃত্তায়নের রাজনীতি নিমর্ূল করা না গেলে দুর্নীতি রোধ অসম্ভব। দুর্নীতি বন্ধ না হলে অর্থপাচারসহ জাতির অর্থনৈতিক সর্বনাশ রোধ করা যাবে না। এ জন্য রাজনৈতিক দলগুলোকে অরাজনৈতিক ব্যক্তি, কালো টাকার মালিক, অসাধু ব্যবসায়ী, পরিত্যক্ত আমলা ও পেশিবাজদের কবল থেকে মুক্ত করতে হবে। সব দলে প্রকৃত ও নিবেদিতপ্রাণ নেতা-কর্মী-সংগঠকদের মূল্যায়ন করে আদর্শবাদী রাজনীতির চর্চা করতে হবে। দলে প্রভুত্ববাদ পরিহার করে গণতন্ত্র চর্চা করতে হবে। দেশে কায়েম করতে হবে সুশাসন। তা হলেই দুর্নীতি-দুরাচার দূর হবে, গড়ে উঠবে একটি সমৃদ্ধ স্বদেশ। এসব কথা হাল আমলের বিএনপি-আওয়ামী লীগ কারোরই ভালো লাগে না। দু'দলই মুদ্রার এপিঠ-ওপিঠ। উভয় দলই পরিশুদ্ধ হয়ে রাষ্ট্র ও জনগণের কল্যাণে নিবেদিত না হলে দুর্নীতি ও অর্থপাচারের মতো গর্হিত অপরাধ রোধ করা সম্ভব নয়। নিজেদের আগে 'তওবা' করতে হবে। অন্যের গুনাহ নিয়ে গীবত গাওয়ার আগে নিজের গুনাহ'র কথা ভাবতে হবে। গত ক'দিনের যে তথ্য ও পরিসংখ্যান নিয়ে মিডিয়া সরব, লীগ সরকারের কর্তাব্যক্তিরা এবং শাসক লীগের নেতা-নেত্রীরা কী জবাব দেবেন, তাদের শাসনামলে এসব হলো কী করে, হচ্ছে কী করে? কে বা কারা করছে এসব?
লেখক : সাংবাদিক, কলামিস্ট।
ই-মেইল : [email protected]
তথ্য সূত্র: Click This Link
©somewhere in net ltd.
১|
০২ রা জুলাই, ২০১৪ সকাল ১১:১৩
দাকুড়াল বলেছেন: আগে ছিলো একটা হাওয়া ভবন। এখন আছে হাজার হাজার। আগে ছিলো তারেকের বন্ধু মামুন।এখন আছে জয় মামার বন্ধু আরাফাত।