নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

কবিতায় ক্ষুধার্ত প্রজন্ম এসেছে সেই কবেও। কিন্তু এখনো তার শেষ হচ্ছেনা। বস্তুবাদি লোকেরা কবি ও কবিতা দেখলেই অভাবি ও পাগলামি ভাবে..আজব..!!!

শাশ্বত০০৭

আমি মানুষ । আর মানবিকতাই আমার শ্রেষ্ঠ গুণ। মানুষ হিসাবে আমি অন্য মানুষ কে ভালোবাসতে চাই। কোন প্রকার স্বার্থ ও অর্থ ব্যতীত নিখাঁদ ভালোবাসা দিতে চাই।

শাশ্বত০০৭ › বিস্তারিত পোস্টঃ

অভিভাবকীয় চাহিদা

২৪ শে অক্টোবর, ২০১৩ সকাল ১১:১২

‘কথাটা যেন মনে থাকে ...না হলে আবার মেরে চামড়া তুলে নেব।’

রাজ্জাক সাহেব তার সপ্তম শ্রেণী পড়ুয়া ছেলেকে খুব একচোট মেরে, শেষে উপরোক্ত কথাটা বলে ক্ষান্ত দিলেন আজকের মত। উনার স্ত্রী এবং ছোট মেয়েটা অন্য রুমে দরজা বন্ধ করে আছেন। প্রথম দিকে ছেলেটাকে মারার সময় তিনি এসে বাঁধা দিতেন। কিন্তু এতে রাজ্জাক সাহেব আরো চটে যেতেন। ছেলটার মার ঠেকানো যেতই না বরং আরো বাড়তো। এই নির্মমতা তিনি সহ্য করতে পারেন না। তাই ঠেকাতে না এসে, মারা শুরু হলে মেয়েটাকে নিয়ে একটা রুমে গিয়ে বসে চোখের জল ফেলেন।

খুব সামান্য বিষয় নিয়ে রাজ্জাক সাহেব ছেলেকে মারেন। ছেলে ঠেঙিয়ে উনি মনে হয় পিতৃত্বের অধিকার জাহির করেন। আজকের মারার কারণটা একদমই মেনে নেওয়ার মত নয়। ছেল স্কুলে না গিয়ে জেলা স্টেডিয়ামে বি.কে.এস.পি. তে চান্স পাওয়ার আশায় পরীক্ষা দিতে গিয়েছিল। সেখানে তিনি তার এক বন্ধুর ছেলের পরীক্ষা দেখতে এবং উত্সাহ দিতে যান। গিয়ে দেখেন নিজের ছেলে বল হাতে দৌড়াচ্ছে, ব্যাট চালাচ্ছে। মাথায় রক্ত চড়ে যায়! উনি তখন কিছু বলেন নি বটে, তবে সেই থেকেই দাঁতে দাঁত পিষে রেখেছিলেন। এমন হলে চলে কি করে। বন্ধুর ছেলেকে উত্সাহ আর নিজের ছেলেকে বেদম পিটুনি! উনার যুক্তি হল, ‘আমাদের বংশে এসব কখনো হয়নি। পড়ালেখা রেখে খেলা... হুহ্.. খেলোয়াড় হবেন... দেশ উদ্ধার করবেন বড়।’

তাহলে অন্যের ছেলেকে কেন উত্সাহ যোগান তিনি। এরও যুক্তি আছে, ‘দেশের সবাইতো আর পড়ালেখা শিখে জজ-ব্যরিস্টার হবে না। দু’একজন খেলোয়াড় হলে দোষ কি? চাকরির কম্পিটিটর কমবে তাহলে।’ বাহ্! চমত্কার যুক্তি।

উনার খুব শখ ছেলে বড় অফিসার হয়ে গাড়িতে চড়ে ঘুরবে অথবা ব্যরিস্টার হয়ে বংশের মুখ উজ্জ্বল করবে। তিনি নিজে পারেন নি। ছাত্রও তেমন একটা ভাল ছিলেন না। অনেক কষ্ট করে কোন মতে ডি.সি. অফিসের কেরাণীর চাকরিতে বহাল আছেন। তাই তার মনে গজিয়েছে ছেলে পড়েলেখে একবার প্রশাসনে যেতে পারে তো কেল্লাফতে! কি ইচ্ছা! বলিহারী!

নিজেদের ব্যর্থতার দায়ভার ছেলে-মেয়ের জীবন দিয়ে উশুল করাতে আমাদের দেশের অভিভাবক সমাজ বদ্ধপরিকর। তার ইচ্ছাই মূলকথা। ছেলে মেয়ের স্বইচ্ছা থাকতে নেই। বেয়াদবি! এতটা বরদাস্ত হয় না উনাদের!

পরে অধিকাংশেই দেখা যায়, পিতার ইচ্ছা পুত্রের উপর চাপাতে গিয়ে দুই মানসিকতায় ফারাক তৈরি হয়। অশান্তি-আক্ষেপ সৃষ্টি হয়। পিতা আক্ষেপ করেন, ‘ছেলেটা বখে গেল...এত চেষ্টা করলাম, মানুষ হল না।’ আর পুত্র আক্ষেপ করে, ‘আমি এটা হতে পারলাম না।’

‘আজকাল ছেলে খেলোয়াড় হলে খারাপ কি?’ রাজ্জাক সাহেবের স্ত্রীর যুক্তি এটা। তিনি বেশ ভালই খোজ খবর রাখেন। এখন খেলোয়াড়েরা কত দেশ ঘুরছে সরকারি খরচে, প্রচুর অর্থ তাদের, বাড়ি-গাড়ির কোন অভাব নেই, দেশের সম্মান বয়ে আনছে, সবাই ভালবাসে ওদের। একবার ভালো খেলোয়াড় হতে পারলে একটা সরকারি বড় আমলা বা জজ-ব্যারিস্টার থেকেও তার মূল্য হাজার গুণ বেশি হয়। ছেলের ঘুষ খেতে হবেনা, দুর্নীতি করতে হবেনা অথচ সম্পদ বাড়ি-গাড়ি সবই থাকবে। থাকবে লোকের শ্রদ্ধা ও ভালোবাসা। কোন বড় অফিসারটা পাচ্ছে একালে? সম্পদ, অর্থ পেলেও ভালোবাসা পাচ্ছেনা।

রাজ্জাক সাহেবকে এগুলো বলা যায়না। উনি খেলা দেখেন। সব বোঝেন। খেলোয়াড়দের এত সুযোগ-সুবিধা দেখে চোঁখ কপালে তোলেন তবুও ছেলেটা খেলোয়াড় হতে চায় এটাকে অত্যান্ত অপরাধ বলে মনে করেন। আসলে উনার জিততে হবেঅন্য কলিগদের সাথে চাটুকারিতায়। প্রতিদিন অফিসে বা চায়ের দোকানে গিয়ে ছেলে স্কুলে ফার্স্ট হয়েছে, ফার্স্ট হয়েছে বলে যদি ভাষন দিতে পারতেন অন্যদের মনে হিংসা ধরিয়ে, তো উনার মন চাঙ্গা হত, সেই সাথে উনার মৃত সাত পুরুষের দিলে’ও বাতাস লাগতো। লোকের কাছে এই সকল বাগাড়ম্বরকে উনি জীবনে সবচেয়ে মূল্যবান বলে ধরে থাকেন।

চায়ের দোকানে উনার মত কেরানীরা বসে নিজের নিজের ভবিষ্যত ও ছেলেপুলের তথাকথিত ভালছাত্রত্ব নিয়ে চায়ের কাপে ঝড় তুলে ফেলেন। যেদিন এস.এস.সি বা এইচ.এস.সি-র রেজাল্ট বেরোয় তার পরের দিনতো কথাই নেই। পেপারের রেজাল্ট বিষয়ক প্রতিটি খবর যেমন পড়েন তেমনি সবাইকে শুনিয়ে পড়েন কোন পানওয়ালার ছেলে, কোন রিক্সাওয়ালার মেয়ে, কোন রাজমিস্ত্রির নাতি শত অভাবের মধ্যেও জি.পি.এ-৫ পেয়েছে। নিজের অবস্থা বিচার করে তখন আক্ষেপে বসে যান। সে এমনি আক্ষেপ যে, উনারা এত খরচ করছেন তবুও ছেলেমেয়েরা রেজাল্ট ভাল করছে না। তাদের ছেলেপুলেরতো তুলনামূলক জি.পি.এ-৮ পাওয়া উচিত! এই আক্ষেপের জ্বালা বাড়ি বয়ে নিয়ে আসেন। এবং যথারীতি ছেলে মেয়েদের পিটিয়ে উপশম করেন। তাছাড়া চায়ের দোকানে আরো একটি বিষয় বেশ লক্ষ্য করার মত যে, উনারা গাল-গল্পের তোড়ে দিব্যদৃষ্টি দিয়ে নিজের অনাগত সুখের ছায়া দেখতে পান। এক্ষত্রেও যারা পাননা তারা অন্যেরটা শুনে হিংসায় জ্বলেন, দীর্ঘশ্বাস ছাড়েন।

রাজ্জাক সাহেব যেভাবে তার ছেলটাকে ঠেঙ্গাচ্ছেন প্রায় রোজই, তার নেতিবাচক দৃষ্টি যেদিন গোচর হবে সেদিন তিনি দেখবেন, ছেলেটি যা হতে চেয়েছিল তা হয়নি বরং উনার সেই ইচ্ছার গুড়ে বালি পড়েছে। হয়তো বখে গেছে বা পোষ্য কোটায় কোন মতে নিজের চাকরিটা ছেলেকে দিতে পেরেছেন কিংবা বড়জোর সে ছোট একটা ব্যবসায় খুলেছে। যে ব্যবসায়ের নাম শুনলে উনি বা উনার মত চাকরিজীবীরা “জীবনের ক্ষেত্রে এটা ভাল কিছু নয়” বলে ঠোঁট উল্টান।

শাশ্বত

১৪.০৭.১৩



মন্তব্য ০ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (০) মন্তব্য লিখুন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.