নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

কবিতায় ক্ষুধার্ত প্রজন্ম এসেছে সেই কবেও। কিন্তু এখনো তার শেষ হচ্ছেনা। বস্তুবাদি লোকেরা কবি ও কবিতা দেখলেই অভাবি ও পাগলামি ভাবে..আজব..!!!

শাশ্বত০০৭

আমি মানুষ । আর মানবিকতাই আমার শ্রেষ্ঠ গুণ। মানুষ হিসাবে আমি অন্য মানুষ কে ভালোবাসতে চাই। কোন প্রকার স্বার্থ ও অর্থ ব্যতীত নিখাঁদ ভালোবাসা দিতে চাই।

শাশ্বত০০৭ › বিস্তারিত পোস্টঃ

টিউব লাইট

১২ ই নভেম্বর, ২০১৩ রাত ১০:১৩

‘আচ্ছা, একটা প্রশ্ন করি তোমায়..?’

‘কর....’

‘তুমি এত সিগারেট খাও কেন?’ প্রশ্নটা টুক্কি ছুড়ে দিল তার বন্ধুর দিকে।

বন্ধুর নির্লিপ্ত হাসি। আবার প্রশ্ন এল, ‘হাসছো কেন?’

‘সিগারেট খাই কেন এর কোন মানে নেই। বুঝলে...।’

মাথা ঝাঁকিয়ে টুক্কি প্রতিবাদ করলো, ‘উহু...তোমার এটা নেশা হয়ে গেছে। তাইনা...?’

আবার হাসি। ছোট্ট করে বলল, ‘হয়তো...’

‘এটা ছাড়তে হবে। জান যে এত সমস্যা হয়, তবু গিলে যাবে...!’

‘দেখি...’

‘দেখি-টেখি না, ছাড়তেই হবে। আর আমার সামনে এত কায়দা করে ধোঁয়া ছাড়বে না। যতসব রাবিশ স্টাইল...!’

‘ধুর...কায়দা কোথায় করলাম। কি যে বল...’

‘ওঠ...এটা ফেল। আর কখনো আমার সামনে সিগারেট খাবেনা। মনে থাকে যেন...না হলে ভাল হবেনা...।’

‘আচ্ছা বাবা...কোথায় যাবে শুনি..?’

‘জানিনা...’

‘পাগলামিতে পেয়েছে...?’

‘হু..’

‘মুভি দেখতে যাবে...?’

‘কোথায়...?’

‘বলাকাতেই চল...?’

‘মার দিব বুঝলে। কোনদিন গিয়েছি তোমার সাথে ওখানে...?’

‘যাওনি, যাবে...’

‘না...’

‘তাহলে কোথায় যাবে ?’

‘জাহান্নামে !’

‘আমাকে সাথে নিয়ে...?’

‘অবশ্যই...’

‘কেন আমি তোমার কি হই ?’

‘ফ্রেন্ড...’

বন্ধু চোঁখ দুটো বড় বড় করে, ‘শুধুমাত্র...’

টুক্কি বন্ধুর মুখের দিকে তাকিয়ে, ‘হ্যা, তা নয়তো কি...?’

‘না..আমিতো ভেবেছিলাম অন্য কিছু’

টুক্কি চটপট বলে ফেলল, ‘অন্য কিছু বলছো কেন? লাভার, তাইনা...?’

‘তাহলে তো আমি শেষ...।’

সামান্য একটু হেসে টুক্কির জবাব, ‘গাধা, তুমি আসলেই একটা গাধা!’

বন্ধুটিও হেসে বলল, ‘আরো একটা জিনিস বাদ থেকে গেল...’

‘মনে রেখেছো বলে ধন্যবাদ’

‘না রেখে উপায় আছে...দিনে কম করে হলেও পাঁচবার শুনি তোমার মুখে।’

‘যেটা সত্যি সেটাতো শুনবেই।’

‘অন্য কেউ বললে ফাটাফাটি কান্ড বাঁধিয়ে দিতাম...!’

‘আমাকে ফাটাবে না...?’

‘ধুর.. কি যে বল...। তা হয় নাকি...’

‘কেন, তা হবেনা কেন? ফেন্ডইতো হই। এক ফ্রেন্ডকে ফাটাতে অন্য ফ্রেন্ডইতো ওস্তাদ...।’

‘তুমি ফাটানোটা কত সহজে বলে ফেললে। লোকে শুনলে অশ্লীল ভাববে...!’

‘কেন, আমি মেয়ে বলে..?’

‘তাই হয়তো...’

‘যারা নিজেরা কোন কাজে বা কথায় সংকুচিত থাকে তারাই শুধু এমন ভাবে, সব কিছুতে অশ্লীলতা খোঁজে...।’

হা হা।

‘হাসছো কেন...?’

‘কেন আবার, তোমার কথা শুনে...।’

‘কেন?’

‘তুমি স্ট্যাটে পড়তে গেলে কেন? কথা যেভাবে বল তাতে তোমার মনোবিজ্ঞানে পড়া উচিত ছিল।’

‘একটা ভাল কথা বললাম আর তুমি টেনে আনলে মনোবিজ্ঞান? সহজে কোন কথার মানে বুঝতে পারনা। টিউবলাইট একটা!’

হা হা।

‘হাসবে না...’

হা হা হা।

‘আবার...?’

‘কেন হাসছি বুঝতে পারছো...?’

‘না...।’ মেজাজ খারাপ হয়ে গেছে টুক্কির।

‘মনোবিজ্ঞানের কথা বললামতো তাই। তোমার সেই রুমমেটের কথা মনে পড়ে গেল। মনোবিজ্ঞানের। যে তোমাকে নানা বিষয়ে অযথা উপদেশ দিয়ে রাগিয়ে দিত।’

‘তুমিও কিন্তু রাগিয়ে দিচ্ছ...।’

‘ওকে..আর রাগাবো না...’

‘চল, উঠি...’

‘যাবেটা কোথায় শুনি?’

‘যে দিকে দুচোঁখ যায়...’

‘কেন, জাহান্নামে যাবে না !?’

‘ধুর..চলতো...।’

হেটে হেটে বুয়েটের সামনে দিয়ে শহীদ মিনার পর্যন্ত এল। বন্ধুটির বেশি হাটতে ইচ্ছা করছেনা। বলল, ‘চল, ওখানে বসি।’ হাত দিয়ে মিনারের সিঁড়ি নির্দেশ করলো।

টুক্কির এখানে বসার ইচ্ছা নেই। বলল, ‘নাহ্...তারচেয়ে বরং হাটতে থাকি চল...।’

‘আশ্চর্য..! হেটে কোথায় যাবে ?’

‘কোথায়, ঊ....চল, জিমনেশিয়ামের দিকে যাই।’

‘পাগলী একটা...। জিমনেশিয়াম দেখে কি করবে?’

‘যাবে না..তাহলে চল দোয়েল চত্ত্বর হয়ে টি.এস.সি যাই।’

‘তারপর..?’

‘তারপর আর কি...ওখানে বসে গল্প করবো।’

‘ও..তা গল্প কি যেখানে ছিলাম বা এখানে বসে করা যায় না?’

‘যায়, কিন্তু আমার ভাল লাগছে না।’

‘তোমার যে কি ভাল লাগে আর কি খারাপ লাগে তা বুঝলামনা।’

‘তোমাকে বুঝতে হবেনা।’

‘আমাকে কষ্ট দিতে ভাল লাগে, না?’

‘হু..’

‘কতটুকু..’

‘অনেক..’

‘তাই..’

‘হু..’

‘যদি সহ্য করতে না পারি...?’

‘আমার কি...’

‘তাহলে কষ্ট দিতে ভাল লাগে কিন্তু আমার কষ্টে কোন অনুভূতি নেই...?

‘একদম না।’

বাংলা একাডেমির কাছে এসে গেল। মাঝখানে কিছু পথ নিরবে হেটেছে তারা। টুক্কি মুখ খুললো আবার, ‘এই, তুমি যাদুঘরে গিয়েছো...?’

‘কোন যাদুঘর..?’

‘উহ্...টিউবলাইট বলি কি সাধে...সামনে, জাতীয় যাদুঘর...।’

বন্ধু অবাক হয়ে তাকালো, ‘হু..কিন্তু এ প্রশ্ন কেন বলতো...!?’

‘আমি যাইনি এখনো পর্যন্ত, তাই...।’

‘বলো কি..! যার পাশ দিয়ে প্রায় প্রতিদিনই চলাচল কর, দেখ, কিন্তু যাওনি..?’

‘নাহ্..একবারো না।’

‘যাবে..?’

‘কবে..?’

‘তুমি যেদিন চাইবে..’

‘ওকে, পরশু চল..।’

‘হু’

টি.এস.সি.-র কাছে এসে দেখলো ভীড় অনেক। কোন একটা ফাংশান হবে মনে হয় সন্ধ্যায়। বন্ধুটি বলল, ‘ কি হবে এখানে, জান নাকি...?’

এদিক-ওদিক তাকিয়ে টুক্কির উত্তর, ‘না...এখানেতো প্রতিদিনই অনুষ্ঠান লেগে থাকে। কয়টার খোঁজ রাখা যায় বল?’

‘এখানে না এলেই ভালো করতাম। ভীড় আর শব্দ...।’

‘তাহলে কি করবে, চলে যাবে?’

‘তুমি কি বল?’

‘যেতে চাইলে যেতে পার...’

‘আমার থাকা না থাকাতে তোমার কোন মত নেই?’

‘থাকলে ভাল হত...’

‘তাই..?’

‘জ্বী জনাব।’

‘তাহলে থাকছি...।’

হি হি..। ‘চল, কলাভবনের দিকে যাই।’

‘চল।’

‘তোমার সাথে বের হলে ভালই লাগে। একটু হাটা হয় বেশি এটাই যা..।’

‘আমি কি হাটতে বলি..? এক জায়গায় বসে গল্প করলেইতো ভাল হয়।’

‘তা হয়। কিন্তু সব সময়তো হাটা হয় না। আমার অন্য বন্ধুরা সব একেক ধ্যানে থাকে। ধ্যানটা বসে ছাড়া হয়না। হাজারবার বললেও ওঠেনা...। তুমিই যা আমার সাথে একটু হাট...।’

‘তোমার অন্য বন্ধুদের চেয়েতো আমি খারাপ। রেপুটেশান ভাল না! তুমি আমার কথা তাদের মাঝে এড়িয়ে যাও। ভয়েও থাক যে আমার সাথে ঘুরছো কিন্তু তারা দেখে ফেলে কিনা...।’

‘হিংসা হচ্ছে?’

‘তা একটু...’

‘হিংসা থাকা ভাল না। আমি তোমাকে ওদের সাথে মিশাতে চাইনা। ওরা তোমাকে মেনে নিবেনা। কিন্তু তোমাকে আমি আলাদা চোঁখে দেখি তাই তোমার সাথে ঘুরি।’

‘পানসে ঘোরা, তাই না?’

‘একটু পানসে তবে ভালো লাগে বললামতো...।’

‘তোমাকে বোঝা সত্যিই কষ্টকর টুক্কি...।’

‘কেন..?’

‘কোনটা হেয়ালি আর কোনটা সিরিয়াস বুঝতে পারিনা, তাই?’

‘এতে আমার দোষ কোথায় মি. টিউবলাইট?’

‘তোমার দোষ কি দিচ্ছি? আমি শুধু বললাম।’

‘আমিও শুধু শুনলাম..।’

‘চল, আম গাছটার নিচে বসি...।’

‘না, ওখানে বসবোনা।’

‘কেন?’

‘অনেক ঝামেলা। বাদামওয়ালা আসবে, ফুলওয়ালা আসবে, ছোট-ছোট পিচ্চিরা এসে ওড়না ধরে টানবে টাকাদেন-টাকাদেন করে, সিগারেটওয়ালা আসবে আর তুমি তা কিনবে।’

‘হা হা.. এত দিকে সমস্যা হলে এই শহরে কোন পার্কে বা খোলা জায়গায় বসা যাবেনা টুক্কি পাখি।’

‘ঊঁ.. মাইন্ড ইয়োর ল্যাঙ্গুয়েজ...পাখি বলবে না..।’

‘ও.. ভুল হয়ে গেছে...। ওটাতো শুধু তোমার ইয়ের জন্য তুলে রাখা...।’

‘ইয়েস...।’

‘রাতে এফ.বি.-তে কি বসবে?’

‘বসতে পারি দু মিনিটের জন্য।’

‘মাত্র দু মিনিট..!’

‘হু..কাল এক্সাম আছে, পড়তে হবে।’

‘তাহলে দুমিনিটের জন্যও ঢোকার দরকার নেই।’

‘শোন..দুমিনিট ওখানে থাকলে তেমন ক্ষতি হবেনা, বুঝলে..?’

‘হু..’

‘তাহলে...?’

‘তাহলে আর কি...যারা অপেক্ষায় থাকবে আপনার, তাদের আক্ষেপ ও অপেক্ষা শুধু বাড়বে।’

‘যারা বলছো কেন...? বল, যে...’

বন্ধুটি শুধু এক পলক তাকালো, বলল; ‘যে বলতে কে তা শুধু তুমিই জান..’

টুক্কি আগ্রহ নিয়ে বলল, ‘আমি জানি...! ঊঁ...কে সে...?’

‘জানি না তো..। তোমার ফেসবুকের খবর আমি কি করে জানবো...?’

‘তাই বুঝি...? গত এক বছর ধরে কে প্রতিদিন আমার ওয়াল দেখছে, মেসেজ করছে, ছবি ট্যাগ করছে, শেয়ার-লাইক-কমেন্ট সবই দিচ্ছে, তা তুমি জান না? যাকে সম্পূর্ণ অপরিচিত থেকে বন্ধুতে এনে রেখেছি...?’

‘এমনতো হয়ই...ওখানে কি সবাই পরিচিত থাকে? শুধু ফেক আইডির ছড়াছড়ি আর অচেনা লোকজন এর গালগল্প..।’

‘হি হি হি...তা ঠিক, কিন্তু আমার পাশে বসা বন্ধুটির মত কি হয়...?’

‘ও আচ্ছা...’

‘টিউবলাইট...!’

‘সন্ধ্যা হয়ে আসছে, চল তোমাকে পৌছে দেই...।’

‘আর একটু থাকি...?’

‘ওকে...তুমি কোথায় থাকবে আজ, মোহাম্মদপুরে না তোমার বাসায়?’

‘আমার বাসায়..আর মোহাম্মদপুরে গেলে কি এখনো বসে থাকতে পারতাম, সন্ধ্যার আগেইতো ঢুকতে হয় , জান না..?’

‘জানি...কাল কি এই খারাপ ছেলেটা তোমার সাথে ঘুরতে আসতে পারে?’

‘কালতো আগে আসুক।’

‘জানতে ইচ্ছা করছে...’

‘আগে থেকে জেনে লাভ কি। একটু অপেক্ষায় থাক...’

‘আচ্ছা..এই আইসক্রিম খাবে?’

‘না’

‘তাহলে অন্য কিছু?’

‘উহু..চল উঠি..।’

অবাক হয়ে বন্ধুটি বলল, ‘সে কি...! তুমি না থাকবে বললে?’

‘বলেছিলাম..। কিন্তু ভাবছি যাই, কাল এক্সাম তো..এখন গিয়ে রান্না করে রেখে স্ট্যাডি করব।’

‘রান্না করতে হবে কেন? কিছু একটা কিনে নিয়ে গেলেই তো হয়। শুধু শুধু সময় নষ্ট।’

‘তা ঠিক বলেছো...চলতো...বাসার পাশে দোকান আছে, বিস্কিট-টিস্কিট কিনে নিব..।’

‘কি...! রাতে কেউ বিস্কিট খেয়ে থাকে?’

‘হু, আমি থাকি...অভ্যেস আছে।’

‘সত্যিই বলার কিছু নেই টুক্কি..।’

‘বলবেই বা কেন...?’

‘বলব না-ই বা কেন...?’

‘কোন অধিকারে...?’

‘অধিকার...এই যে বন্ধুত্ব...’

‘অন্য বন্ধুরাতো বলেনা...।’

‘আমি যে আলাদা, একটু খারাপ...তাই বলি।’

‘হি হি...’

‘হেসো না..নীলক্ষেত চল, তেহারী মনে হয় পাওয়া যাবে...’

‘প্লিজ...ওটা করো না, রাতে ওটা ঝামেলা করে।’

‘তাহলে ব্রেড কিনে দেই...?’

‘না...বলছিতো আমি...’

‘চুপ..কোন কথা হবেনা...।’

‘হবে...’

‘আবার...’

‘হুহ্.. একেতো টিউবলাইট, আবার ধমকাচ্ছে...হি হি..’

‘দুষ্টুটি..! কি যে করি তোমায় নিয়ে, চল...’

আবার হেটে নীলক্ষেত আবাসিক এলাকায় টুক্কির বাসার নিচে এল। মাঝে দোকান থেকে একটা কিটক্যাট ও এক বোতল ঠান্ডা পানিই কেনা হল। টুক্কি তার টিউবলাইটকে এরচেয়ে বেশি কিছু করতে দিল না।

-শাশ্বত

১৮-০৫-১৩

মন্তব্য ০ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (০) মন্তব্য লিখুন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.