নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

কবিতায় ক্ষুধার্ত প্রজন্ম এসেছে সেই কবেও। কিন্তু এখনো তার শেষ হচ্ছেনা। বস্তুবাদি লোকেরা কবি ও কবিতা দেখলেই অভাবি ও পাগলামি ভাবে..আজব..!!!

শাশ্বত০০৭

আমি মানুষ । আর মানবিকতাই আমার শ্রেষ্ঠ গুণ। মানুষ হিসাবে আমি অন্য মানুষ কে ভালোবাসতে চাই। কোন প্রকার স্বার্থ ও অর্থ ব্যতীত নিখাঁদ ভালোবাসা দিতে চাই।

শাশ্বত০০৭ › বিস্তারিত পোস্টঃ

তেলাপোকা বাড়ি

১৩ ই নভেম্বর, ২০১৩ সকাল ৮:৪৫

জানালার পর্দা সরাতে গিয়ে জোরে চিত্কার করে উঠলো মিশু। তার সবচেয়ে অপছন্দের জিনিসটি উড়ে এসে তার গায়ে বসেছে। ‘তেলাপোকা।’ ছোটবেলায় পেত ভয়, এখন ভয়ের সাথে ঘিনঘিনে ভাবটাও জুটেছে।

চিত্কার শুনে তার মা দৌড়ে এলেন। ‘কি হয়েছে’ জানতে চাইলে সে গজগজ করে উঠলো ‘বাসায় তেলাপোকা, ইদুঁর এসব মারার ওষুধ কি শেষ হয়ে গেছে? দিনে দিনে উতপাত বেড়েই যাচ্ছে। পর্দার ওপাশে একগাদা তেলাপোকা..। ভেবেই পাই না এরকম একটা বাসায় এসব থাকে কি করে...অসহ্য!’

তার মা এবার নিশ্চিন্ত হলেন। বললেন, ‘তোরওতো দিন দিন ছুঁতছুঁতোমি বাড়ছে। এত জোরে কেউ চিতকার করে..? হিম হয়ে যেতে হয় একদম।’

তার জবাব, ‘গায়ে উড়ে এসে বসলো। দুচোঁখে দেখতে পারিনা...।’

এবার তার মা গজগজ শুরু করলেন, ‘সব বাসাতেই এরা থাকে, শহর হোক আর গ্রাম। আমাদের বাসায় একটু বেশি..এই যা...।’

‘তাই বলে এমন বাসায়..?’

‘তেলাপোকার আবার বাসা...! সবখানেই থাকে...এমন করে আর চিল্লাবি না। মনে থাকে যেন...।’

তিনি রুম থেকে বেরিয়ে গেলেন। মিশুদের বাসাটা সুন্দর! ধানমন্ডিতে। চারতলার ‘সি’ ইউনিটে। এখানে এমন উত্পাত হবে তা কল্পনার বাইরে। হরেক রকমের তেলাপোকা এ বাসায়। রান্নাঘরে বড়বড়, আলমারিতে ছোটছোট, বাথরুমে মাঝারি সাইজের! উত্পাত ছোট গুলোরই বেশি। অনেক চেষ্টা করা হয়েছে এদের শেষ করার। কিন্তু হয়নি। উপরন্তু বেড়েই চলছে। তাই এটাকে তেলাপোকার বাসা বলা চলে! অন্তত মিশুর কাছে তাই মনে হয়।

এই বাসাতে গেস্ট বা তার বন্ধুদের নিয়ে আসতেও তার ভয়। মান সম্মান থাকে না। এমন হয় যে, গেস্ট বসে আছে সোফায়, তেলাপোকা উড়ে তার গায়ে এসে বসেছে। পিলপিল করে হেটে যাচ্ছে টি-টেবিলের উপর দিয়ে। সোফার ফোম ফুঁড়ে উঠছে দু’একটা! এতে বাইরের লোক কি মনে করে?

ইদানিং তাদের দাপট মাত্রাতিরিক্ত ভাবে বেড়েছে। আগের বাসায় এই ঝামেলা ছিল না। লালমাটিয়ার ঐ বাসায় কখনো তেলাপোকার উতপাত হয়নি বলে তার মনে এটা সম্পর্কে ভয় তৈরি হয়েছিল যা এখনো রয়ে গেছে এবং তার সাথে যোগ হয়েছে ঘিনঘিনে ভাবটা।

পড়ালেখায় সে বিজ্ঞানের ছাত্রী নয়। যদি বিজ্ঞান বিভাগে পড়তো তাহলে তার কি হত কে জানে? ওখানেতো কত কিছুর ব্যবচ্ছেদ করতে হয়। ‘ন্যাট জিও’ বা ‘হিস্ট্রি’ জাতীয় চ্যানেলগুলোতে অনেক সময় পোকা-মাকড়ের জীবনযাপন দেখায়। শিক্ষা মূলক জিনিস। তবে সে এড়িয়ে যায়। এমন ছুঁত-ছুঁতে হলে কি চলে? দেখাচ্ছেতো টি.ভি.তেই। সরাসরিতো নয়? তাদের বাসার অন্য সকলে কিন্তু মজা করে এই প্রগ্রামগুলো দেখে। জীববৈচিত্র সম্পর্কে জানার কোন শেষ নেই। তার সাথে যে ছেলেটার ভাব-ভালোবাসার সম্পর্ক আছে সেই ছেলেটাও এ প্রগ্রামগুলো দেখে উতসাহ নিয়ে। তাহলে কার কাছে যাবে সে?

এই ঢাকা শহরে যদি ‘হ্যামিলনের বাশিওয়ালা’র মত ‘ঢাকার বাশিওয়ালা’ সৃষ্টি হত! তাহলে বেশ হত। এই বাশিওয়ালার হ্যামিলনেরটার মত শুধু ইদুঁর নয়, সাথে তেলাপোকা, টিকটিকি ও যত পোকামাকড় আছে তা নিয়ে বুড়িগঙ্গায় নামা উচিত। সারা ঢাকা শহর বাদ দিলাম না হয়, অন্তত তাদের বাসা থেকে তার দু’চোঁখের বিষ তেলাপোকা খেদিয়ে নদীতে ঝাপ দিলে পারে!

তাদের এই বিল্ডিং-এ সুযোগ সুবিধার কি নেই? একটা আধুনিক বাসস্থানের সব রকম সুবিধাই আছে কিন্তু যে প্রাণী এখানে সবচেয়ে বেশি বাস করে তা প্রাগৈতিহাসিক! টিকতেও পারে এরা..বাব্বাহ..!

নাহ্, আর নয়। আজ বাবা ফিরলেই এ বাসা চেঞ্জ করার কথা বলতে হবে। আর কত সহ্য করা যায়। রাতে ঘুমালে শরীর বেয়ে ওঠে। ধড়মড় করে জেগে যায়। ঘুমের দফারফা হয়। সেই রাতে আর ঘুম হয়না।

তার অনেক সময় মানসিক দিকটা নিয়ে ভাবনা হয়। ছুঁতছুঁত ভাবটা কি সিরিয়াসের দিকে গড়াচ্ছে? সে কি মানসিক রোগী হয়ে যাবে এমন চলতে থাকলে? হতেও পারে। অপছন্দ বা ভয়ের কোন নির্দিষ্ট বস্তু বা প্রাণী বা ঘটনা নেই। যে কোন মানুষ যে কোন কিছুতে ভয় বা খারাপ লাগায় ভুগতে পরে। ভয়ের গল্প নিয়ে রেডিও ফুর্তিতে একটা অনুষ্ঠান হয়। প্রতি শুক্রবারে। তার ভাল লাগেনা। কিন্তু তার ভালবাসার মানুষটির প্রিয় একটির অনুষ্ঠান এটা। তাই প্রতি সপ্তাহে একবার এ বাবদ ঝগড়া হয় তাদের মাঝে। কারণটা এখানে বলেই দেই। শুক্রবার রাত রারোটার পরে ছেলেটি এফ.এম নিয়ে ভূতের গল্প শুনতে বসে যায়। তাদের মাঝে স্বাভাবিক যে বাত জেগে কথা বলার প্রচলন, তাতে ছেঁদ পড়ে। এটা মিশুর কাছে মেনে নেওয়া কষ্টকর ব্যাপার। শুধু কি ভূতের গল্প শোনাটা মেনে নেওয়া কষ্টকর না আরো কিছু আছে? আছে, ভূতের গল্প শুনতেই পারে কিন্তু তাকে উপেক্ষা করে গল্প শোনাটা মেনে নেওয়াই সে হজম করতে পারে না। তাই তার মেজাজ সপ্তমে চড়ে যায়। এব যা হবার তাই হয়।

তেলাপোকার আচরণ নিয়ে সুন্দর একটা প্রবন্ধ সে লিখতে পারতো, যদি তার লেখার হাত থাকতো! একগাদা অভিযোগ, কর্মকান্ডের ফিরিস্তি, প্রকারভেদ ও তার মানসিক অস্বস্তি নিয়ে সত্যিই ‘তেলাপোকা চরিত’ হয়ে যায়! এমনও পাগলামি করতে ইচ্ছা করে যে, বেশ বড় একটা সাইনবোর্ড টানিয়ে দেয় নিচে! যাতে লেখা থাকবে ‘তেলাপোকা বাড়ি। প্রাগৈতিহাসিক প্রাণীসদনে আপনাকে স্বাগতম!’

হা হা। তাদের চারতলার অন্য ইউনিটগুলোরও এমনই হাল। তবে তাদেরটায়ই বেশি। অন্য তলার খবর সে জানে না। এ বাড়ির হাউজ ডেভোলপার ও ফ্লাটের মালিকগণ নাকি অনেকবার বসেছে এই সমস্যা নিয়ে। কোন সুরহা হয়নি। তার মনে হয়, একটা পদক্ষেপ নেওয়া যেতে পারে। পুরো বিল্ডিংটা ফাকা করে দুই টন কীটনাশক স্প্রে করা যেতে পারে! এটা যেন সত্যই জঙ্গল! না, তার চেয়েও খারাপ। দুই টন কীটনাশক কোন জঙ্গলেও দিতে হয় না পোকামাকড় মেরে বসবাস করার জন্য।

এই ভবনের অন্য সবার মনে হয় সয়ে গেছে। একটা খারাপ জিনিস প্রথমেই খুব খারাপ লাগে, এরপর ধীরে ধীরে তা সয়ে যায়। এক পর্যায়ে খারাপটাই ভালো হয়ে ওঠে এবং প্রকৃত ভালোর মাঝে গেলে বরং খারাপ লাগে। কিন্তু তার হচ্ছে না। তার খাপ খাইছে না। তেলাপোকার সাথে খাপ খাওয়ানো! অসম্ভব ব্যাপার। বাবাকে আজ বলতেই হবে। অন্যস্থানে বাসা নিলে এই বিপদতো আর থাকবে না। ধানমন্ডিরই কোথাও গেলেই হল। তার ভর্সিটিটা যে এখানেই। কিন্তু বাবা বাসা সহজে বদলাতে চান না। বাসায় কি একটা-দুটো মালামাল? এসব টানা হেঁচড়া করতে গেলে তাদেরও ক্ষতি হয়। লেবারগোলো সব ‘ধরো তক্তা, মারো পেরেক’ থিওরিতে কাজ করে। তাই কষ্টের টাকার সাধের আসবাব হেলায় নষ্ট হোক তা উনি চান না। কিন্তু আর নয়। একটা হেস্ত নেস্ত করতেই হবে।

তাদের এই ইউনিট কে সে ‘এনসিয়েন্ট জু’ হিসাবে দেখতে শুরু করেছে! বন্ধুদের কাছে বলবে এটা একটা ‘প্রাগৈতিহাসিক চিড়িয়াখানা।’ আর নিজের পরিচয় দেবে চিড়িয়াখানার ‘কিউরেটর’ হিসাবে!

যতদিন না তারা বাসা বদল করছে তত দিন এই পরিচিতিই থাকবে।

----শাশ্বত

মন্তব্য ০ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (০) মন্তব্য লিখুন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.