![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
আমি মানুষ । আর মানবিকতাই আমার শ্রেষ্ঠ গুণ। মানুষ হিসাবে আমি অন্য মানুষ কে ভালোবাসতে চাই। কোন প্রকার স্বার্থ ও অর্থ ব্যতীত নিখাঁদ ভালোবাসা দিতে চাই।
অফিস থেকে বাড়ি ফেরার পথে রোজ একটা করে গোলাপ কেনে সে। কাউকে দিতে বা সত্তেন দত্তের কবিতাকে স্বার্থক করতে নয়। শখে কেনে। বাসায় এসে ফুলদানিতে রেখে দেয় এবং শুকিয়ে যাওয়া ফুল যত্ন করে কাঠের বাক্সে রাখে। ধূসর হয়ে যাওয়া পাপড়িতে ভরা ওটা। এগুলো কার জন্য জমায় তা জানে না। শুধু ভেবে রাখে তার অনাগতা স্ত্রীকে দেখানোর কথা!
সে প্রেম করেছিল কিন্তু মেয়েটির অন্যস্থানে বিয়ে হয়ে গেছে। তখন চাকরি ছিল না। বিয়ে করার যোগ্যতা ছিল না। এসব নিয়ে আক্ষেপ করেনা। যে গেছে তাকে নিয়ে ভেবে সময় নষ্ট করার সময় নেই একদম। তবু একটা অভ্যাস রয়ে গেছে ফুল কেনার।
একটা জিনিস সে প্রতিদিন লক্ষ্য করে। গত তিন-চার মাস ধরে বাসায় ঢোকার আগে তাদের বিল্ডিং এর সামনের বিল্ডিং-এ তিন তলার বেলকোণিতে একটা মেয়ে তাকিয়ে থাকে। সম্পূর্ণ তার দিকে। প্রথম প্রথম এটা খেয়াল করেনি। কিন্তু একদিন মনের মাঝে কৌতুহল হওয়ায় পর্যবেক্ষণ করে নিশ্চিত হয়েছে ব্যাপারটা।
এমনিতে সে অফিস ছুটি হলে কোথাও যায়না। রোজ সাড়ে ছয়টার দিকে ফেরে। এবং মেয়েটিকেও একই সময়ে দেখা যায়। প্রতিইন একই সময়ে তার পথ চেয়ে কেউ বসে থাকে ভাবতেই মুচকি হাসি আসে ঠোঁটের কোণে! কোন সম্পর্কই নেই তাদের মাঝে। তাহলে কেন?
মেয়েটি কি তাকে কিছু বলতে চায় বা ভালোবাসে?
এটা অসম্ভব। ওকে দেখে মনেই হয়না ও এমন প্যানপেনে বা পুতুপুতু প্রেমে বিশ্বাসী মেয়ে।
কোনদিন মেয়েটির হাতে থাকে একটা বই, কোনদিন ফোন, কোনদিন সুন্দর করে সেজে থাকে আবার কোনদিন আটপৌরে। শুক্রবারে সে বসে না। অনেকদিন শুক্রবার বা ছুটির দিনে বের হয়ে দেখেছে মেয়েটি নেই।
কৌতুহলের মাত্রা দিনদিন বেড়েই চলছে। কাউকে এখন পর্যন্ত এটা শেয়ার করা হয়নি। অবশ্য এমন একটা ব্যাপার নিয়ে এখন কিছু বলাও শোভা পায়না। কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়ের সেই জীবনটা হলে কবেও বন্ধুদের মাঝে শেয়ার করা হয়ে যেত! তবে নিজের এই আগ্রহ নিয়ে বসে থাকাও যায়না। অবশ্যই খোঁজ নেওয়া দরকার।
মেয়েটি দেখতে বেশ সুন্দর। অন্তত চেহারায় তাই ফুটে ওঠে। তাকে হাসতে বা কথা দেখেনি আজ পর্যন্ত। শুধু তাকিয়ে থাকতে দেখেছে। এ দেখে তো আর বেশি কিছু অনুমান করা যায়না।
যাই হোক, একদিন অফিস থেকে ইচ্ছা করেই আগে চলে এল সে। বাসায় বসে থাকলো। ঠিক ছয়টা বাজলে একবার উঁকি দিয়ে দেখলো মেয়েটি এসেছে কিনা।
মেয়েটি ছয়টা পাঁচের দিকে এল। নিজের রুমের জানালা দিয়ে একটু কোণ করে তাকালে তাদের বেলকোণিটা নজরে আসে। এভাবেই দেখতে লাগলো। কি করে মেয়েটি?
দেখলো একটা বই নিয়ে পাতা উল্টোচ্ছে এবং মাঝে মাঝে ফোন টিপছে। মনে হয় গান শুনছে। রাস্তার দিকেও চোঁখ বুলাচ্ছে। এক সময় ওখানে একজন মহিলা এলেন। বোধ হয় তার মা। কিছু একটা বললেন। মেয়েটি সামান্য মাথা নাড়ল।সাড়ে ছয়টা বেজে গেছে। ও রাস্তার দিকে আঁড় চোঁখে তাকাচ্ছে। বারবার। এভাবে দশ মিনিটের মত হয়ে গেল। বইটা বেলকোণিতে একটা মোড়াতে রেখে সে চলে গিয়েছে। এবার সত্যিই মনে হচ্ছে মেয়েটি তার আসা কে ফলো করে। তাহলে অফিসে যাওয়াটা ফলো করেনা? তা তো জানা হলো না। কোনদিন যাওয়ার পথে তাকে নজরে পড়েনি। এমনকি রাস্তায়ো কখনো মুখোমুখি দেখা হয়নি।
মেয়েটির এমন পথ চেয়ে বসে থাকার কারণ জানতেই হবে। অন্যথায় মনে চেপে ভারী হয়ে যাবে। সেই কথা চিন্তা করেই বুকে অনেক সাহস নিয়ে ওই বাসার উদ্দেশ্যে পা বাড়ালো। আন্দাজ করে নিল ওটা থ্রি বি ফ্লাট হবে। তবে কি পরিচয় দিবে বা কাকে চাই বা মেয়েটির নাম পর্যন্ত জানেনা। কি করে হবে?
তবুও লিফটে চড়ে থার্ড ফ্লোরে চলে এল।
বুকে একটা ফু দিয়ে থ্রি বি এর দরজায় গিয়ে কলিং বেল চাপলো। কিছুক্ষণ পরে ভিতর থেকে একটা বাচ্চা মেয়ের কন্ঠ, বোধ হয় কাজের মেয়ে জিজ্ঞাসা করলো, ‘কে?’
সে বলল, ‘আমি সামনের বাসায় থাকি ..একটু খুলবেন?’
মেয়েটি হয়তো তাকে আগে দেখেছে। তাই খুলে দিল। সে বলল, ‘আপা বাসায় আছেন?’
মেয়েটি মাথা নেড়ে বলল, ‘আছে.. ডাকি?’
‘হ্যা..’
সে দরজার ওখানেই দাড়িয়েছিল। সেই মহিলাটি এলেন। যাকে সে মেয়ের মা বলে ধরে নিয়েছে। তিনি বললেন, ‘আপনি ওখানে দাড়িয়ে কেন? ভিতরে আসুন...’
সে ‘ওকে’ বলে ভিতরে এল।
ড্রইংরুমটা চমত্কার! পরক্ষণেই মেয়েটি এল। এক দৃষ্টিতে তার দিকে তাকানো। সে উঠে দাড়াতে গেল কিন্তু মেয়েটি বাঁধা দিয়ে বলল, ‘বসুন, বসুন...আপনি আমাদের বাসায় আসবেন ভাবিনি।’
‘কেন?’
‘এমনি..অপরিচিতের বাসায় বেশ সাহস করেই ঢুকে পড়েছেন। তাও ধারণা করে...’
সে হাসল, বলল, ‘হ্যা তাই..আমার কৌতুহল হচ্ছিল..এটা মেটাতে এলাম..’
‘কৌতুহল...! উ...ভাল, কিন্তু কেন?’
‘এই যে আপনি আমার অফিস থেকে ফেরার সময় রোজ বেলকোণিতে বসে থাকেন। ছুটির দিনে দেখিনা। শুধুমাত্র অফিস ডে’তেই। এটাই কৌতুহল।’
‘ও..খুব ফলো করেছেন তো....’ মেয়েটি হাসলো।
সেও হেসে বলল, ‘এটাই কি স্বাভাবিক নয়। একটা মেয়ে রোজ দাড়িয়ে থাকবে..তাও আমার জন্য। স্বভাবতই জানতে ইচ্ছা হয়।’
মেয়েটি বলল, ‘আমিও কৌতুহল নিয়ে আপনার ফেরা দেখি।’
সে চোঁখ ছোট করল, বলল, ‘কৌতুহল..আপনার..কেন?’
‘আপনি রোজ একটা করে গোলাপ আনেন। আর সেটা হলুদ গোলাপ। আপনি বিবাহিতও না আমার যতদূর ধারণা। তবে প্রতিদিন গোলাপ আনেন কেন?’
‘আমি অবিবাহিত তা বুঝলেন কি করে?’
‘আপনি আমার বাসার সামনের বিল্ডিং-এ থাকেন..রোজ অফিসে যান আসেন। সাথে কোন দিন কোন মেয়ে দেখিনি বা ফোনে বিজি দেখিনি হাটার সময়। একই স্টাইলে আপনাকে দেখে একঘেয়ে হয়ে গেছি। এসব থেকে ধারণা করেছি...’
‘আপনার ধারণাটা চমত্কার! তবে আপনি কি আসে পাশের বিল্ডিং-এ বাসকারি সবাইকেই এমন পর্যবেক্ষণ করেন নাকি?’
‘না তা কেন? আপনি শুধু রোজ একটা করে গোলাপ আনেন হাতে করে তাই আপনাকে পর্যবেক্ষণ করেছি..।’
‘এটা আমার গার্লফ্রেন্ডের জন্যও হতে পারে..’
‘তা পারে..তবে ওটাও আপনার নেই...’
‘কি করে বুঝলেন?’
‘বুঝলাম...আমার শুধু একটাই প্রশ্ন, আপনি গোলাপ আনেন এবং তা কি করেন?’
‘এটা শখে আনি। ভাল লাগে..জমিয়ে রাখি..এটুকুই...’
‘সুন্দর! হলুদ গোলাপ আমার খুব ভাললাগে। আপনি শুধু এই রংএর গোলাপই আনেন কেন?’
‘আমারও এটা পছন্দের তাই...’
‘হু..চা নেন..’
‘ও..হ্যা...’
কথার ফাকে কাজের মেয়েটি চা নিয়ে এসেছিল। চায়ে চুমুক দিয়ে সে বলল, ‘আজ অফিস থেকে একটু আগে ফিরেছি, যাতে আপনার ব্যাপারটা লক্ষ্য করা যায়।’
মেয়েটি শুধু একটু হাসলো। তার মা এলেন। কিছু সময় কথা হল।
চা শেষ হতেই উঠে দাড়ালো, বলল, ‘আসি..’
মেয়েটি বলল, ‘প্রতিদিন কিন্তু গোলাপ নিয়ে আসবে...’
সে হেসে বলল, ‘ওকে..। একটাতো আমি আনিই..এখন থেকে দুটো আনবো। একটা আমার, অন্যটা...’
‘অন্যটা...?’
‘অন্যদিন বলব..’
সে আর দাড়াল না। বাসায় এসে দেখল কাঠের বাক্স মোট চারটি হয়েছে। ওগুলো নিয়ে কুরিয়ার অফিসে ছুটলো। যাওয়ার আগে সামনের বিল্ডিং এর ঠিকানাটা দেখে গেল। প্রাপকের উদ্দেশ্যে ছোট্ট একটা কাগজে মেসেজ লিখল, ‘আমার জমানো যত গোলাপ তা আপনার জন্য। যদিও এগুলো বাহ্যিক ভাবে ধূসর, প্রাণহীন কিন্তু অন্তর্দৃষ্টিতে প্রাণময় ও সতেজ.....।’
©somewhere in net ltd.