নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
ইস্টিশন ব্লগের মাধ্যমেই জানতে পারলাম রাহী আর উল্লাসের গ্রেফতার আর কারাবরণের খবর। ধর্ম অবমাননার দায়ে তাদের ৫৭ ধারায় গ্রেফতার করে কারাগারে প্রেরণ করা হয়েছে। ওদের দুইজনের গ্রেফতারের পর অনেক ব্লগারই অনেক লেখা লিখেছেন। অনেকেই অনেক প্রতিবাদি মন্তব্য করে ফেসবুক আর ব্লগ মুখর করে তুলেছেন।
রাহী, যে কিনা ’অঘূর্ণায়মান ইলেকট্রন’ নামে বিভিন্ন ব্লগে লিখতো, এবং উল্লাস সম্পর্কে এবং তাদের অনলাইন এক্টিভিটি সম্পর্কে আমার খুব বেশি ধারণা এর আগে ছিলোনা। আমি গত কয়েকদিন অনলাইনে বসে ওরা আসলেই মারাত্মক কিছু করেছে কিনা, সেটা বোঝার চেষ্টা করলাম।
উত্তর পেলাম -- না, ওরা আসলেই মারাত্মক কিছু করে নাই। ওরা ধর্ম অবমাননা হয়, এমন কিছু উগ্র প্রতিক্রিয়াশীল কথা বলে নাই বা কোন ধর্ম বা এর প্রবক্তাদের নিয়ে অশ্লীল কিছু লেখে নাই। বিশেষ করে রাহী যুক্তি-তর্কের মাধ্যমে, শালীন ভাষায় ধর্মের কোন কিছু তাদের কাছে ভুল বা মন্দ মনে হলে, সেই ব্যাপারগুলো বেশি পক্ষে তুলে ধরতো। তাই, রাহীর গ্রেফতার শুধু মুক্তচিন্তার উপরই আঘাত বা মানবাধিকার লঙ্ঘনকারী একটি কাজ নয়, এটা শুভ বুদ্ধি এবং সুস্থ ব্লগিং-এর জন্যও বিশাল আঘাত।
অনেকে অনেক কথাই হয়তো ইসলাম ধর্মের প্রবর্তক হযরত মোহাম্মদ সম্মন্ধে বলবেন। যে যাই বলুক, আমি যখন তাকে নিয়ে চিন্তা করি, তখন তার ভাল কাজগুলোকেই আমি বেশি গুরুত্ব দেই। তাকে অন্তর থেকেই সম্মান করি।
এখন তারা যদি, কিছু মানুষের মতো, সত্যিই ইসলাম অবমাননা করেছে এমন কিছু লিখতো, বা ধর্ম নিয়ে কোন অশ্লীল চটি সাহিত্য তৈরি করতো, তাহলে আজ আমি তাদের স্বপক্ষে এই লেখাটা লিখতাম না।
উগ্র আস্তিক শফিউর রহমান ফারাবীর স্ট্যাটাসে রাহীর মন্তব্য করার জের ধরেই সে নাকি গ্রফতার হয়েছে জানলাম। (লিঙ্কঃ Click This Link ) কিন্তু, ফারাবীর স্ট্যাটাসে সে যে মন্তব্যগুলো করেছে, সেখানে সে অত্যন্ত যুক্তি সহকারে ইসলামের কিছু লুপহোল দেখিয়ে দেয়ার চেষ্টা করেছে; এবং আমার ধারণা এটা করতে গিয়েই রাহি ফাঁদে পড়েছে।
রাহী আর উল্লাসকে ফাঁদে ফেলে, গ্রেফতার করিয়ে, জেলে প্রেরণ করিয়েই ধর্মান্ধ গোষ্ঠী ক্ষান্ত হয়নি। তাদের বিরুদ্ধে অনলাইন আর অফলাইনে চালিয়ে যাচ্ছে নানারকম ভিত্তিহিন প্রচারণা। এমনকি যারা এই ন্যাক্কারজনক কাজের বিরুদ্ধে প্রতিবাদী হয়েছে, তাদের বিরুদ্ধেও তারা বিষোদ্গার চালিয়ে যাচ্ছে। নিচের লিঙ্ক-এ ক্লিক করলেই ব্যাপারটা বুঝতে পারবেনঃ
Click This Link
স্পষ্টতই বোঝা যায় যে, পরিস্থিতি ক্রমেই মুক্ত-চিন্তার এবং উদারপন্থি মানুষের বিরুদ্ধে চলে যাচ্ছে। ভন্ড অসাম্প্রদায়িক সরকার আওয়ামী লিগের আমলেই যদি এই অবস্থা হয়, তাহলে বিএনপি-জামাত যদি ভবিষ্যতে ক্ষমতায় আসে তখনই বা কি হবে?
এই যে মুক্তচিন্তা ও বিজ্ঞান-চেতনার উপর এতবড় একটা আঘাত আসলো, তারপরও ব্লগার আর অনলাইন এক্টিভিস্টদের মাঝে যে প্রত্যক্ষ প্রতিবাদ দেখবো বলে আশে করেছিলাম, তা কিন্তু বলতে গেলে একেবারে অনুপস্থিতই দেখছি। মিডিয়াগুলোও এই ব্যাপারে কোন প্রতিবাদী ভূমিকা নিয়ে এগিয়ে আসে নাই।
১৮ বছরের নিচের দুজন ছেলেকে ধরে, প্রাপ্তবয়স্ক অপরাধীদের মত তাদের জেলে প্রেরণ, জামিন না মঞ্জুর এবং তাদের শিক্ষাজীবনকে হুমকির মুখে ফেলে দেয়ার মত চরম অমানবিক কাজের বিরুদ্ধে যে ধরণের প্রতিক্রিয়া সবার মধ্যে আশা করেছিলাম, তা অবশ্যই দেখতে পাচ্ছিনা।
আমাদের মিডিয়ার রকম-সকম বুঝতেছিনা কিছুই। At least প্রথম আলো, সমকাল, যায় যায় দিন তো এই ব্যাপারে নিউজ ছাপতে পারতো। তারাও নির্বিকার! তারাও এই ব্যাপারে কোন নিউজ করে নাই।
বড়ই রহস্যজনক!
ফারাবীর হুমকিতে রকমারির মালিক সোহাগ যে নতজানু মনভাব দেখিয়েছিল, এসব যেন তারই ‘চমৎকার ধারাবাহিকতা’ !
আসলেই বুঝতে পারছিনা, সবাই বেশ খানিকটা নির্লিপ্ত আর চুপচাপ কেন? কোন প্রতিবাদী কর্মসূচির উদ্যোগও চোখে পরলোনা কোথাও।
আসলে, আমরা যারা মুক্ত আর উদার চিন্তা-চেতনায় বিশ্বাসী এবং সেই আদর্শকে ধারন করে লেখালেখি করি, তারা কি বুঝতে পারছিনা এখনো যে এইসব ঘটনা কিসের ইঙ্গিত?
ভবিষ্যতে আমরা যে কেউ এই ন্যাক্কারজনক কালাকানুনের স্বীকার হতে পারি। তাই সবার প্রতি আমার একটাই আর্জি ও দাবি –“আপনারা যত তাড়াতাড়ি সম্ভব এই দুই ব্লগারের গ্রেফতার এবং এই ন্যাক্কারজনক ৫৭ ধারার বিরুদ্ধে প্রতিবাদী হয়ে প্রতিবাদী কর্মসূচি নিয়ে রাজপথে নামুন।“
অনেকেই বলতে পারেন, মাঠে নেমে আর কি-ই বা হবে? আমি বলবো মাঠে না নামলে পরিস্থিতি আরও খারাপ হবে। র্যাব কতৃক অন্যায়ভাবে লিমনকে যখন সন্ত্রাসি হিসেবে চিহ্নিত করে পঙ্গু করে দেয়া হলো, তখন সুশীল সমাজ আর সাধারণ মানুষ এর বিরুদ্ধে চরমভাবে প্রতিবাদী হয়েছিল বলেই র্যােব লিমনের বিরুদ্ধে সুবিধা করতে পারে নাই। যদি প্রতিবাদ কর্মসূচি নিয়ে মানুষ রাজপথে না নামতো, তাহলে পঙ্গু লিমন এখনো জেলের ভিতরই পচে মরতো।
অনলাইনে যারা মুক্তচিন্তার ব্লগার আর এক্টিভিস্ট আছেন, তারা এক হলে মিলিত শক্তির মাধ্যমে অনেক কিছুই করা সম্ভব। এটলিস্ট মানব বন্ধন, র্যা লী বা প্রেস ক্লাবের সামনে অবস্থানের মত কিছু জিনিসতো করা যায়ই।
ধর্মান্ধতা, উগ্রবাদিতা আর সরকারি প্রহসনের বিরুদ্ধে প্রতিবাদি হওয়ার এখনি সময়। সময় এখনই একটু সাহসী হওয়ার। এটা করতে ব্যর্থ হলে সামনে হয়তো আরও খারাপ সময় অপেক্ষা করছে; আমরা কেউই হয়তো ভবিষ্যতে নিরাপদ থাকবোনা। বাংলাদেশ পাকিস্তান বা আফগানিস্তানের মত উগ্র মৌলবাদীদের দেশে পরিণত হওয়ার দিকে ধাবিত হবে।
নিজেকে প্রশ্ন করে দেখুন, আপনারা কি সেটাই চান ? নাকি আপনাদের ব্লগারদের সব যোগ্যতা আর ক্ষমতা ব্লগে লেখা, ব্লগর ব্লগর, মুন্ডুপাত আর গালি-গালাজের মধ্যেই সীমাবদ্ধ?
©somewhere in net ltd.