নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
**রিতু**
‘আপনাকে আমি বিয়ে করতে চাই।’
শামীমের কথাটা শুনে একরাশ বিস্ময় নিয়ে ওর দিকে তাকাল রিতু। যেন অপ্রত্যাশিত ও উদ্ভট কিছুর মুখোমুখি হয়েছে ও। দুই সেকেন্ড পরই বিরক্তি খেলা করল ওর চোখেমুখে।
‘মানে কি,’ একটু চড়া গলায় প্রশ্ন করল রিতু।
‘মানে আমি আপনাকে বিয়ে করতে চাই। আপনার সাথে সারাজীবনটা কাটিয়ে দিতে চাই।’ বিস্ময় ও বিরক্তির যুগপৎ অভিব্যক্তি আবার খেলা করল রিতুর মুখে।
‘এখন এটা বলার মানে কি?’ বিরক্তিভরা স্বরে বলল রিতু। ‘আপনি কি মজা করছেন? এই ব্যাপারে আমি আর আমার পরিবার তো সিদ্ধান্ত জানিয়ে দিয়েছি।’
‘হ্যাঁ, তা ঠিক আছে,’ বলল শামীম। ‘কিন্তু, সেটাই তো সব নয়। আমি আপনাকে আমার জীবনে চাই। আপনাকে দেখার পর আমি আপনাকে ভালোবেসে ফেলেছি। আমি আপনাকে ভালোবাসি, রিতু!’
বিরক্তির অভিব্যক্তিটা রিতুর মুখ থেকে অদৃশ্য হয়ে গেল। বিস্ময়ের অভিব্যক্তিটা চরম মাত্রায় দেখা দিল। যেন এইমাত্র ভিনগ্রহের কোনো প্রাণী ওর সামনে দাঁড়িয়ে, আর সেটাকেই দেখছে ও।
কি বলবে বুঝতে পারছে না রিতু। মনে ঘুরে ফিরে আসছে গত কিছুদিনের ঘটনা।
কেবলই স্নাতক শেষ করেছে রিতু। স্বাভাবিকভাবেই পরিবার থেকে ওকে বিয়ে দেওয়ার জন্য ছেলে দেখা হচ্ছিল। ওর আর ওর পরিবারের পক্ষ থেকে দেখা প্রথম ছেলে নয় শামীম। এর আগেও একটা ছেলে অরা দেখেছে। দেখা মানে তো ছেলে সপরিবারে মেয়েটার বাসায় আসবে। ছেলেপক্ষ বসে থাকবে। আর প্রধান অতিথির মতো সবার শেষে পরিবারের কারও সাথে সেখানে এসে উপস্থিত হবে রিতু। সেরকমই ব্যাপারটা।
প্রথম যে ছেলেটা দেখতে এসেছিল রিতুকে তাকে একটু রাফ এন্ড টাফ ছেলে মনে হয়েছিল রিতুর। প্রথম দেখাতে রিতুর খুব একটা পছন্দ হয়নি ছেলেটাকে। ওর পরিবারেরও না। পরে, বিশ্বস্ত সূত্রে খবর পেল ওদের গুষ্টি মানে বংশও খুব একটা ভালো না। তাই শেষ পর্যন্ত সম্মন্ধটা আর হয়নি।
এর পরপরই শামীম আর ওর পরিবার ওকে দেখতে আসে। শামীমকে প্রথম দেখায় খারাপ লাগেনি রিতুর। শামীম যেন ওকে হাঁ করে দেখছিল। শামীম বেশ আগ্রহ নিয়ে কথা বলছিল ওর সাথে। শামীম ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়য় থেকে পাস করেছে জেনে একটু আগ্রহ বোধ করেছিল রিতু। ছেলেটা তাহলে বেশ এডুকেটেড। আর বাইরে থেকে দেখে ভালোই মনে হচ্ছিল ওর শামীমকে।
বেশ কিছুদূর এগিয়েছিল কথাবার্তা। পরে এক আত্মীয় রিতুর বাবা-মাকে জানাল, শামীমদের পারিবারিক ব্যাকগ্রাউন্ড খুব একটা ভালো নয়। ওর বাবা-মায়ের ব্রেকআপ হয়েছিল। মা ও বাবা দুজনই পরে আরেকবার বিয়ে করেছিল। ওর বাবা এখন মৃত। শামীমের মায়ের এক আত্মীয়ের সাথে রিতুর পরিবারের সখ্যতার সূত্র ধরে রিতুকে দেখতে এসেছিল ওরা। কিন্তু, পরে রিতুদের এক আত্মীয় ওর বাবা-মার কাছে এটাও জানাল যে দেশের বাড়িতেও তেমন কোনো নামডাক নেই শামীমদের। আর ওদের দেশের বাড়িটা সৎ মা ও ভাই-বোনদের সাথে ভাগাভাগি করে থাকে শামীমরা। শামীম সম্প্রতি ভালো একটা এনজিওতে চাকরি করলেও ধনী তো ও আর ওর পরিবার নয়। আর ওদের পরিবারের এই অবস্থা! এমন পরিবারের সাথে সম্মন্ধ স্বাভাবিকভাবেই করতে চায়নি রিতুর বাবা-মা। কারণ রিতুদের পারিবারিক বন্ধন যথেশ্তই ভালো। রিতুর বাবা সরকারি চাকুরে। কিছুদিন পরই সে রিটায়ারমেন্টে যাবে। তবে, রিতুদের কখনোই খারাপ রাখেনি ওর বাবা। ঢাকায় ভাড়া করা ফ্ল্যাটে থাকলেও দেশের বাড়িতে ওদের গুষ্টির অবস্থা ভালোই। ওর বাবা জানিয়ে দিল, শামীমদের আগ্রহ থাকলেও তারা এই সম্মন্ধে আগ্রহী নয়। শুনে রিতুর কেবল একটু মন খারাপ লেগেছিল শামীমের জন্য। বেচারা শামীম! আমাকে পছন্দ করে ফেললেও বেচারা আমারে পাইল না- এটুকুই কেবল ভেবেছিল রিতু। এছাড়া শামীমের ভাবনা ওর মনে একটুর জন্যও ছিল না।
তারপর ৪-৫ দিন কেটে গিয়েছিল। আজ সকালে ও এক বান্ধবীর সাথে দেখা করতে বাসা থেকে নেমেছিল। বাসা থেকে নেমে একটু সামনে এগোতেই ওকে পাকড়াও করল শামীম। শামীমকে হঠাৎ দেখেই বেশ অবাক হয়েছিল রিতু! অবাক হয়ে ওর দিকে তাকিয়েছিল রিতু। তবে শামীমই প্রথম কথা বলে উঠল।
‘রিতু কেমন আছেন?’
‘আছি ভালো, তা হঠাৎ কি মনে করে?’
‘আপনার সাথে কিছু কথা ছিল। ১০টা মিনিট সময় হবে?’
দুটো মুহূর্ত শামীমের দিকে তাকিয়ে রইল রিতু। তারপর বলল, ‘বলুন কি বলতে চান?’
তারপরই শামীম ওকে আবারও বিয়ে করার কথা বলল। তাতেই বিরক্ত ও অবাক- দুটোই হয়েছিল রিতু। আর এখন কিনা শামীম বলছে, ওকে সে ভালোবাসে! কি বলবে কিছুই বুঝতে পারছে না রিতু। পরস্পরের মুখের দিকে ওরা বেশ কয়েক মুহূর্ত তাকিয়ে রইল। শামীম কিছু বলছে না দেখে রিতুই মুখ খুলল, ‘দেখুন, আপনার এই কথায় আমি বিব্রতবোধ করছি। বিয়ে তো শুধু আপনার-আমার ব্যাপার না! আমার পরিবারের সম্মতি, ইচ্ছা-অনিচ্ছারও এখানে দাম আছে। আমাকে এসব বলে এখন কি লাভ?’
‘মানছি বিয়েটা দুই পরিবারের ভিতরও একটা বন্ধন! কিন্তু বিয়ে তো আসলে হয় একটা ছেলে আর একটা মেয়ের ভিতরে। ছেলে আর মেয়ে যদি একজন আরেকজনকে পছন্দ করে, তাহলে সেই সম্পর্কের ক্ষেত্রে কারও তো আপত্তি থাকা উচিত নয়, তাই না?’ বলল শামীম। রিতু চুপ করেই রইল। কি বলবে ভেবে পাচ্ছে না ও। শামীম যে এভাবে এই বিষয়টা নিয়ে এতদূর চলে আসবে, এভাবে দেখবে, সেটা ভাবেনি ও।
‘রিতু, আমি জানি আমাকে আপনার অপছন্দ হয়নি। আমার পারিবারিক ব্যাকগ্রাউন্ড হয়তো ভালো নয় খুব একটা। কিন্তু ওতে তো আমার কোনো হাত ছিল না। কিন্তু সংসার তো করব আমি। আপনাকে নিয়ে জীবনটা পার করে দেওয়ার স্বপ্ন কি আমি বাস্তব করতে পারব না? আমার কি সেই সামর্থ্য নেই, রিতু?’
‘দেখুন, আমি...আমি এক ফ্রেন্ডের বাসায় যাচ্ছি! আমার কাজ আছে। আমাকে যেতে হবে।‘ বলে সামনের দিকে হাঁটা দিতে শুরু করল রিতু। শামীমও ওর সাথে সাথে হাঁটা ধরল।
‘রিতু, আমি আপনাকে সত্যিই ভালোবেসে ফেলেছি। আপনি যদি সত্যিই রাজি থাকেন আমাকে গ্রহণ করতে, আমার মনে হয় আপনার পরিবার আমাকে গ্রহণ করতে আপত্তি করবে না।’
‘তো আমি কি করতে পারি?’ একটু রাগ দেখিয়ে বলল রিতু। ওর মেজাজ খারাপ হচ্ছে শামীমের এরকম একগুঁয়েমিতা দেখে। কেন জানি একটু লজ্জা-লজ্জাও করছে। ছেলেটা যে এভাবে কাচ্ছি-কামড় দিয়ে ধরবে, ও ভাবতে পারেনি। ওর পরিবারের পক্ষ থেকে শামীমের পরিবারকে ‘না’ বলার পর কখনও চিন্তাই করতে পারেনি রিতু যে শামীম এধরনের কিছু করতে পারে। ভেবেছিল, চুপচাপই শামীম আর ওর পরিবার এটা গ্রহণ করবে।
‘রিতু, আপনি রাজি থাকলে সংসার তো করব আপনি আর আমি, তাই না?’ বলল শামীম। ‘আপনি যদি আপনার পরিবারকে বলেন যে আপনি সত্যিই আমাকে জীবনসঙ্গী করে চান, ভালো করে যদি আপনার-বাবা-মাকে আবার ব্যাপারটা বোঝাতে পারেন, আমার মনে হয় তাঁরাও আর অমত করবেন না। ওঁনারা তো যথেষ্ট বড়মনের মানুষ। অন্তত, আমি সেটাই মনে করি।’ একটু বিরতি। তারপর আবার শামীম বলল, ‘রিতু আমি সত্যিই আপনাকে চাই! মনেপ্রাণে চাই!’
রিতু হাঁটতে থাকল, শামীমও তার পাশাপাশি হাঁটছে। আশেপাশে তাকিয়ে দেখল রিতু। কেউ আবার ওদেরকে দেখছে না তো! ‘রিতু, আমি কি পজিটিভ কিছুর আশা করতে পারি আপনার কাছে?’
‘ঠিক আছে, ঠিক আছে!’ আপাতত শামীমকে ঠাণ্ডা করে এড়ানোর বিকল্প দেখছে না রিতু। সেজন্য এটাই বলল। ‘আমরা ভেবে দেখব। আপনি এভাবে আমার সাথে সাথে আসবেন না! বিষয়টা ভালো দেখাচ্ছে না!’
‘ঠিক আছে! ঠিক আছে!’ যেন রিতুর কথারই পুনরাবৃত্তি করল শামীম। থেমে গেল সে। ‘ভালো কিছুর আশায় থাকলাম আমি।’
রিতু হেঁটে যেতে লাগল। পিছনে দাঁড়িয়ে ওর গমনপথের দিকে চেয়ে রইল শামীম। বেশ খানিকটা সামনের গেছে রিতু। পিছন থেকে শামীমের ডাক শুনতে পেল ও। ‘রিতু!’ গলা উঁচিয়ে ওকে ডাক দিয়েছে শামীম। পিছনে তাকাল ও। চোখদুটো বড় বড় করে। ‘আই হোপ ফর দ্য বেস্ট!’ চেঁচিয়ে বলছে শামীম। কিছু না বলে দ্রুত বাসস্ট্যান্ডের দিকে এগোল রিতু।
শামীম
বাইরে থেকে কেবল বাসায় এসেছে শামীম। আজ সকালেই রিতুর সাথে দেখা করেছিল সে। নিজের মনের কথা জানিয়েছে ও। কিন্তু বুঝতে পারছে না রিতুর মনোভাব।
রিতুর কথা ভাবছে শামীম। এক দূর সম্পর্কের মামার মাধ্যমে রিতু ও ওর পরিবারের তালাশ পায় শামীমরা। তার মাধ্যমেই রিতুর একটা ছবি শামীমদের কাছে আসে। রিতুর ছবি দেখেই কেমন এক ধরনের ভালোলাগা কাজ করে শামীমের ভেতর। দুটো ছবি পেয়েছিল তারা। একটা প্রোফাইল ছবি আর একটা পা থেকে মাথা পর্যন্ত ছবি। প্রোফাইল বা ক্লোজআপ ছবিটাতে রিতু একটা হাত আড়াআড়ি কাঁধে রেখে মৃদু হাসছে। একটু ঠোঁট বাঁকিয়ে। ছবিতে দেখে মনে হচ্ছে মেয়েটা শ্যামলা। সেটা সমস্যা নয় শামীমের কাছে। নিজেকে শামীম কালোই মনে করে। মেয়েটার হাসিটা বড়ই মনকাড়া। মায়াময়। তবে, রিতুর ফুল ছবি দেখে ৫ ফুট ৯ ইঞ্চি উচ্চতার শামীমের মনে হলো ওর হাইটটাও ভালো। ৫ফিট ৩ইঞ্চির কম হবে না। শারীরিক সৌন্দর্যের দিক দিয়েও ওকে নজরকাড়াই লাগল শামীমের কাছে। সেইদিন রাতে রিতুর ছবি বারবার ঘুরে-ফিরে দেখে শামীম। মনের ভিতর যেন স্বপ্ন বাসা বেঁধে চলেছে ওর। কেমন একটা মায়ায় ফেলেছে মেয়েটার ছবিটাই – ভাবছে শামীম। কবে দেখা হবে মেয়েটার সাথে, ভাবছিল ও।
এর তিনদিন পরেই এল সেই শুভক্ষণ, অন্তত শামীমের কাছে। শুক্রবার বিকেলে শামীম, ওর মা, ওর ছোট ভাই, সেই দূর সম্পর্কের মামা – সবাই হাজির রিতুদের বাসায়।
ওদের দুই পরিবারের সদস্যদের মধ্যে বিভিন্ন আলাপচারিতা চলছিল। যেরকম আলাপচারিতা সম্মন্ধের সন্ধানে থাকা দুটো পরিবারের সদস্যদের মধ্যে হয় আরকি! একটু পরই এক খালাত বোনের সাথে রিতু প্রবেশ করে। ছবিতে যেমন দেখেছিল, রিতুকে অনেকটাই সেরকমই লাগল শামীমের। যদিও অনেকে মেয়েকেই ছবিতে লাগে একরকম, বাস্তবে আরেকরকম।
অনেক আগ্রহ নিয়ে রিতুর দিকে তাকিয়েছিল শামীম। মুখে একটুখানি হাসি ঝুলিয়ে। হাসলে তোকে খারাপ লাগে না – বলেছিল ওর বন্ধুরা। রিতু হাসি দিয়ে প্রতিউত্তর না দিলেও নিজের পরিচয় দিয়েছিল, ‘স্লালামালেকম, আমি রিতু!’
‘আমি শামীম!’ প্রতিউত্তরে শুধু এটাই বলেছিল শামীম। এরপর আর ওদের মধ্যে খুব একটা কথা হলো না। রিতুর সাথে যা কথা বলার বলল ওর মা আর সেই মামা। আর শামীমের সাথে কথাবার্তা বলল রিতুর বাবা-মা। এরপর এক ফাঁকে রিতুর বাবাই বললেন, ‘কিরে রিতু! তোদের চা-টা বারান্দায় দিতে বলি? তুই আর শামীম চা খেতে খেতে আলাপ কর।’
এরপর রিতুর আবা আর ওর মা রিতু ও শামীমকে বারান্দায় পাঠিয়ে দিলেন। বিষয়টা শামীমের কাছে হাস্যকর লাগছিল খুব। বারান্দায় বসে ওরা আর কতক্ষণ ধরে একে অপরকে জানতে পারবে? আধা ঘণ্টা, এক ঘণ্টা! দুটো ছেলেমেয়ের পরস্পরকে জানার জন্য এটুকু সময়ই কি যথেষ্ট!?! ব্যাপারটা খুব হাস্যকর লাগে শামীমের কাছে। হায়রে সামাজিক রীতি! হায়রে অ্যারেঞ্জড ম্যারেজ! মনে মনে বলছিল শামীম।
বারান্দায় দাঁড়িয়ে খুব বেশি কথা অবশ্য যে হয়েছিল শামীম আর রিতুর মধ্যে, তা নয়। শামীমই রিতুর কাছে জানতে চাচ্ছিল ওর পছদ-অপছন্দগুলো। রিতু বলেছিল ও একটা ন্যাচার কনজারভেটিভ প্রতিষ্ঠানের সাথে আছে। তাই ঘুরতে পছন্দ করে ও। প্রকৃতির সান্নিধ্যে। শামীম দেখল এই বিষয়টা ওর সাথে মিলে গিয়েছে। সেটা জানাল ও রিতুকে। বলল, ‘যদি বিয়ে হয়েই যায় আপনার সাথে, তাহলে কোথায় ঘুরতে যাওয়া যায়?’
সলাজ হাসি চলে এসেছিল রিতুর মুখে। ‘আগে বিয়েটা হোক তো,’ একদিকে তাকিয়ে বলেছিল ও।
টুকটাক আনুষ্ঠানিক কথাবার্তা শেষে রিতুদের বাসা থেকে ফিরে এসেছিল শামীমরা। রিতুকে শামীম আর ওর পরিবারের পছন্দ হলেও বোঝা গিয়েছিল ওদের ফ্যামিলি ‘হার্ড নাট টু ক্র্যাক’। শামীমের মনে মনে ধারনা হচ্ছিল শেষ মুহূর্তে না আবার রিতু আর ওর পরিবার বেঁকে বসে। সেই শঙ্কাই বাস্তবে পরিণত হলো। রিতুর পরিবারের পক্ষ থেকে শামীমদের সেই মামাকে জানিয়ে দেওয়া হলো, শামীমদের নিয়ে আর নাকি ভাবছে না ওদের পরিবার।
শুনে একটু নয়, বেশ মনে খারাপ হয়েছিল শামীমের। সাথে সাথে মেজাজটাও খারাপ হয়েছিল একটু। আসলে মেজাজ খারাপ হয়েছিল ওর অ্যারেঞ্জড ম্যারেজ ব্যাপারটার প্রতিই। এটা সত্য যে ওর জীবনে প্রেম জিনিসটা সেভাবে আসেনি। তবে, অ্যারেঞ্জড ম্যারেজের বিষয়টা ওর কাছে হাস্যকর লাগত। বলা নাই কওয়া নাই, একদিনের পরিচয়ে দুজন নারী-পুরুষের বিয়ে হয়ে যায়। সম্পূর্ণ অচেনা, অজানা একটা মানুষের সাথে শুতে হয়! বিষয়টা কেমন!!! ভালোবাসা নেই, কিছু নেই, এরকম দুজন মানুষ দুদিনের পরিচয়ে সেক্স করছে! পতিতাবৃত্তির এক সুশীল ও মার্জিত রুপ বলেই এটাকে মনে হয় শামীমের। তাই, অ্যারেঞ্জড ম্যারেজের প্রতি এক ধরনের বিবমিষা ছিল শামীমের। কজেই ওর মা যখন ওকে একটা মেয়ে দেখার কথা বলেছিল, ও খুব একটা গা করতে চায়নি। তবে ফ্যামিলির সদস্যদের পীড়াপীড়িতে অবশ্য ও শেষ পর্যন্ত রাজি হয়েছিল। ছেলে ৪৫,০০০ টাকা সেলারির চাকরিতে ঢুকেছে, এখন যদি বিয়ের জন্য পাত্রী না দেখে তবে কখন!
তবে, মেয়েটার ছবি ওর হাতে আসার পর শামীম কিন্তু নড়েচড়ে বসেছিল। এককাঁধে আড়াআড়ি হাত রেখে ওর বাঁকা হাসি শামীমকে যেন অন্য রাজ্যে ভাসিয়ে নিয়ে গিয়েছিল। শামীমের মনে হয়েছিল, এই মেয়েকেই ওর চাই। রিতুকে দেখে আসার পরও শামীমের মনে হয়েছিল এই মেয়েকে না হলে ওর চলবে না। এটাকে কি এক ধরনের প্রেম বলা চলে? ‘অ্যারেঞ্জড ম্যারেজের ভিতর আবার প্রেম!’ ভেবে মনে মনে হেসেছিল শামীম। হয়তো এটা এক ধরনের প্রেমই, ভাবছিল ও! পাশাপাশি এক ধরনের দুশ্চিন্তা কাজ করছিল। রিতু আর ওর পরিবার যদি না করে দেয়, তাহলে কি হবে? সেটা কি এক ধরনের ছ্যাকা খাওয়া হবে শামীমের জন্য? কাজেই রিতুর পরিবারের কাছ থেকে যখন নেতিবাচক সিদ্ধান্ত আসলো, শামীমের মন তাই স্বাভাবিকভাবেই বেজায় খারাপ হয়ে গিয়েছিল। টানা দুদিন ও মনমরা হয়ে থাকল। ওর মা ওকে বুঝিয়েছে, ‘তুই দুঃখ করিস না, বাবা...এর চেয়ে অনেক ভালো মেয়ে তুই পাবি।’ কিন্তু তাতে শামীমের অশান্ত মন শান্ত হয়নি। এর চেয়ে ভালো মেয়ে হয়তো পাবে সত্যিই ও, ভাবছিল শামীম। রিতুর বিকল্প কি আর কেউ হতে পারে। একজনের বিকল্প কি আরেকজন হতে পারে? ভালোবাসার কি সত্যিই কোনো বিকল্প আছে? সে সত্যিই এই কদিনে রিতুকে ভালোবেসে ফেলেছিল। ফেসবুকে খুঁজে খুঁজে রিতুর আইডি খুঁজে বের করে রিকুয়েস্ট পাঠিয়েছিল। রিতুও একসেপ্ট করেছে। রিতু প্রকৃতিকে সত্যিই ভালোবাসে। লাউয়াছড়া ন্যাশনাল পার্ক থেকে শুরু করে কাপ্তাই লেকের ঝুলন্ত সেতুর উপর তোলা রিতুর ছবিগুলো যেন শামীমকে আরও কাছে টানছিল রিতুর। রিতুরা না করে দেওয়ার পর সে আসলেই ছ্যাকা খেয়েছে। অস্বীকার করতে পারল না শামীম। তবে অ্যারেঞ্জড ম্যারেজের মধ্যে আবার ছ্যাকা!!! ভাবতেই আবারও হাসি পেল শামীমের। কিন্তু মেয়েটাকে ও যে সত্যিকারই ভালোবেসে ফেলেছে। ফেসবুকে রিতুর ছবিগুলো দেখছিল শামীম। ফেসবুকে কিছু বলে লাভ নেই। যা বলার ওকে সামনাসামনিই বলতে হবে। রিতুর সাথে আবারও কথা বলতে চায়।
ইন্টারন্যাশনাল এক এনজিওর ঢাকা অফিসেই চাকরি পেয়েছে শামীম। শুক্র-শনি দুদিন ছুটি ওদের। শনিবার সকালেই রিতুর বাড়ির সামনে একটু ঘোরাঘুরি করছিল শামীম। একটুক্ষণ বসেছিল কামরাঙ্গীরচরে রিতুদের বাসার সামনে এক এক চায়ের দোকানে। এমনিতে সিগারেট একটু কম খেলেও সেই চায়ের দোকানে বসে টানা তিনটা গোল্ডলিফ শেষ করল শামীম। কি করবে ভাবছিল। ২৬ বছরের শামীমের নিজেকে কোনো প্রেমপ্রত্যাশী টিনএজ রোমিওর মতোই লাগল। যেন সে কোনো স্কুল গার্লের প্রতীক্ষায় ওর বাসার সামনে এসে সে অপেক্ষা করছে। রিতুর প্রতি এই ভালোবাসা তাকে তো বেশ হাস্যকর অবস্থায় ফেলেছে, ভাবল শামীম।
এমন সময় মেঘ না চাইতেই বৃষ্টি। রিতুকে সে ওদের বাসা থেকে বেরোতে দেখল। মনে হয় বাইরে কোথাও যাচ্ছে ও। তখনি ওকে পাকড়াও করল ও। জানিয়ে দিয়েছিল মনের কথা।
এরপর অবশ্য রিতু ওর মনে আরও ভালো করে আসন গেঁড়ে বসেছে। বুঝতে পারছে শামীম, চাইলেই রিতুকে ও মন থেকে সরাতে পারবে না। আর মন থেকে সরানোটা কি এতই সোজা! রিতুই প্রথম মেয়ে যাকে শামীম সরাসরি বিয়ের কথা বলেছে। এর আগে ওর জীবনে অল্প কিছু সময়ের জন্য কিছু মেয়ে এসেছিল, তাদেরকে ভালোবাসার কথা বললেও বিয়ের কথা বলতে পারেনি। রিতুকে তো সে তা বলেছে। সেই মেয়েকে ভুলে যাওয়া কি এতই সহজ?!?
রিতুকে ফোন করার সিদ্ধান্ত নিল শামীম। রিতুর কাছ থেকেই ও নাম্বারটা নিয়েছিল ওকে দেখতে যাওয়ার দিন। রাত সাড়ে ন’টা বাজে। রিতু নিশ্চয় এখন বিজি নয়। ওকে ফোন দেওয়াই যায়। ফোন দিল ও। রিতুর কণ্ঠ!
‘হ্যালো, স্লামালেকম! কে বলছেন?’
এক মুহূর্ত চুপ করে রইল শামীম। গভীর করে শ্বাস নিয়ে বলল, ‘রিতু, আমি শামীম!’
ওই পাশেও এক মুহূর্তের নিরবতা। তারপর অবশ্য রিতু কথা বলল। ‘ও, হ্যাঁ...বলেন!’
‘ফেসবুকে আপনার ছবিগুলো দেখছিলাম। খুব করে মন চাইছিল আপনার সাথে কথা বলি।’
‘ও আচ্ছা...!’ অপর প্রান্ত থেকে রিতুর খিলখিল হাসির শব্দ শুনতে পেল শামীম। মেয়েটার এই হাসি যেন ওর মধ্যে এক ঘোরলাগার পরিমাণটা আরও বাড়িয়ে দিচ্ছে।
‘রিতু, জানি না আজকের সকালে আপনাকে বলা আমার কথাগুলো কিভাবে নিয়েছেন। আমি কিন্তু যা বলেছি, সিরিয়াসলিই বলেছি।’
ওই পাশে আরেকটু নীরবতা। শামীমই তাই কথা চালিয়ে গেল, ‘আমি কি আশা করতে পারি? আশা করতে পারি যে আপনি আমার হৃদয়ের আকুতিটা বুঝবেন? আমার ইচ্ছেটাকে দাম দিবেন?’
আরেক মুহূর্ত নীরবতা ফোনের ওপারে। অবশেষে কথা বলল রিতু। ‘দেখুন, আপনি এত ইরিয়াস হয়ে যাবেন আমি ভাবিনি। এই দুনিয়ায় মেয়ের কি অভাব আছে? আপনি তো আমার চেয়েও ভালো মেয়ে পেতে পারেন। আপনি তো ছেলে খারাপ নন!’
‘আমার মাও তো এই কথা বলছে, ম্যাডাম,’ বলল শামীম। ‘কিন্তু আপনার বিকল্প কি অন্য কেউ হতে পারে। আরেকটা রিতুকে কি আমি চাইলেই খুঁজে পাব? বলুন?’
অন্যাপাশ থেকে রিতুর বড় করে শ্বাস নেওয়ার শব্দ শুনতে পেল শামীম। আরেক মুহূর্তের নীরবতা।
‘কিছু বলছেন না যে রিতু?’ অবশেষে শামীমই জিজ্ঞাসা করল।
‘না, কি আর বলব,’বলল রিতু। ‘আমার হাসি পাচ্ছে। আমি আসলে কখনোই ভাবিনি আমাকে দেখতে আসা কেউ এভাবে আমার ব্যাপারে সিরিয়াস হয়ে যেতে পারে।’
‘রিতু, আমার পারিবারিক ব্যাকগ্রাউন্ড হয়তো খুব একটা বলার অতো নয়। খুব একটা টাকাওয়ালাও আমরা নই। কিন্তু, আপনি তো বুঝেছেন, আমি আপনাকে কতটা চাই। আমি আপনাকে সত্যিই ভালোবেসে ফেলেছি। অনেক, অনেক ভালোবেসে ফেলেছি।’
এবারও রিতু খিলখিল করে হেসে উঠল। ‘আমাকে দেখতে এসে সবাই যদি এভাবে আমার প্রেমে পড়ে যায়, তাহলে তো আমার পরিবারকে বলতে হবে, আমি আর ছেলে দেখব না!’
‘রিতু, আমি স্পষ্ট বুঝতে পারছি আপনি আপনার বাবা-মার অমতে বিয়ে করবেন না। কিন্তু, ভেবে দেখুন এই অ্যারেঞ্জড ম্যারেজ বিষয়টাই ক্যামন! আপনি হয়তো এরপর আপনার বাবা-মার পছন্দের ছেলেকেই বিয়ে করবেন। কিন্তু একবারও ভেবে দেখেছেন কি, যাকে আপনি বিয়ে করবেন তার প্রতি আপনার ভালোবাসাটা থাকবে কিনা? সেও কি আপনাকে ভালোবেসে বিয়ে করবে? নাকি কেবলই একটা যৌনসঙ্গীই খুঁজছে। বাসাবাড়িতে সৌন্দর্য বৃদ্ধি করার একটা উপকরণ হিসেবেই হয়তো আপনাকে দেখবে সে।’
রিতু চুপ করে থাকল। শামীম বলা চালিয়ে গেল। ‘আমি তো আপনার ব্যাপারে অনেক সিরিয়াস, সেটা তো বুঝতেই পারছেন। ভেবে দেখুন, আপনাকে দেখতে আসা অন্য কেউ কি এরকম সিরিয়াসলি আপনাকে চাইবে? তাদের কেউ কি বলবে, রিতুকে ছাড়া আমার চলবে না?’
রিতু চুপ করেই থাকল। শামীম বলা চালিয়েই গেল। ‘কিন্তু সেটা আমি বলল। বলব, রিতুকে ছাড়া আমার চলবে না। আমি কি তাই একটা সুযোগ আপনাদের কাছ থেকে পেতে পারি না।‘
আরেক মুহুর্তের নীরবতা। অবশেষে রিতু কথা বলল, ‘ধরুন, আমার সাথে আপনার শেষ পর্যন্ত হলো না। আপনি কি অন্য কোনো মেয়েকে বেছে নেবেন না? অন্য কাউকে কি বিয়ে করবেন না?’
এবার শামীম চুপ থাকল একমুহূর্ত। তবে তারপরই খুঁজে পেল কথা।
‘দেখুন, এটাই কি আমার ভবিতব্য হবে? আজ আমি আপনার কাছ থেকে না শোনার পর আরেকটা মেয়েকে দেখব। ধরুন সেও আমাকে না বলে দিল। অথবা আমার হয়তো তাকে পছন্দ হলো না। এরপর কি আমি আবার একটা মেয়েকে দেখব? এভাবে কি চলতেই থাকবে?’
একটু থামল শামীম। ‘রিতু, এই অবস্থাটা কারোই ভবিতব্য হতে পারে না। অ্যারেঞ্জজ ম্যারেজের এই বিষয়গুলো আমার কাছে খুবই হাস্যকর লাগে। আমি আপনাকে পছন্দ করি। ভালোবেসেও ফেলেছি। তাই বিয়ে করতে চাই। আর কিছু নয় রিতু!’
‘আসলে আমরা কেউই তো মনে হয় এভাবে চিন্তা করি না,’ বলল রিতু। ‘আমি আপনাকে বুঝি। আপনি সত্যিই আমাকে চান। কিন্তু একটা মেয়েকে কতটা সীমাবদ্ধতার ভিতর দিয়ে চলতে হয়, তা তো জানেন। আমরা চাইলেও অনেক সময় আমাদের পরিবারের সিদ্ধান্তের বাইরে যেতে পারি না।’
‘রিতু, আমার স্ত্রী হিসেবে আপনি সব ধরনের স্বাধীনতা পাবেন। আমরা হয়তো খুব সম্ভান্ত পরিবার বা টাকাওয়ালা নই। কিন্তু টাকা পয়সাই তো জীবনের সব নয়, তাই না?’
রিতু এর উত্তরে কোনো কথা বলল না। চুপ করে থাকল। এটাই চেয়েছিল শামীম। তার হৃদয় উজাড় করে বলা কথাগুল রিতুর চিন্তার জগতে নিশ্চয়ই আলোড়ন তুলেছে। ভাবছে ও।
‘রিতু, আমি জানি না শেষ পর্যন্ত আপনাদের সিদ্ধান্ত কি হবে। তবে, আমি বিশ্বাস করি সিদ্ধান্ত যদি আমাদের পক্ষে হয়, তাহলে আপনার-আমার দুজনের ভবিষ্যতই সুন্দর হবে।’
চুপ করেই রয়েছে রিতু। ‘আমি কি ভালো খবরের প্রত্যাশা করতে পারি, ম্যাডাম?’ টেনশনের মধ্যেই হেসে বলল শামীম।
‘আমি জানি না কি হবে। তবে, আমি চাই আমাকে না পেলে আপনি ভালো কোনো মেয়ে খুঁজে নিন। আপনার জন্য সবসময় শুভ কামনা থাকবে আমার।’
‘রিতু, শুধু আপনার শুভকামনা দিয়েই যদি আমার জীবনটা সুন্দর হয়, আপনি পাশে থাকলে তো হবে অনেক অনেক সুন্দর। তো ম্যাডাম, বাবা-মায়ের সাথে কথা বলে আমাকে কবে ডাকা হচ্ছে?’
একটুক্ষণ চুপ করে থাকল রিতু। তারপর হেসে বলল, ‘ঠিক আছে। আমি কথা বলে আপনাকে জানাতে চেষ্টা করব।’
আরও দুয়েকটা কথা হলো ওদের মধ্যে। তারপর রিতুকে বিদায় বলল শামীম। জানে ও, রিতুদের কাছ থেকে ইতিবাচক সাড়া না আসা পর্যন্ত আগামী বেশ কিছুদিন দারুণ কষ্টে কাটবে তার।
রিতু
গতকাল রাতেই শামীম ফোন করার পর থেকেই মনটা ক্যামন জানি করছে রিতুর। আবেগী মেয়ে ও নয়। পুরোই বাস্তববাদী। তারপরও মনে ক্যামন একটা বিষণ্ণতাবোধ কাজ করছে। প্রথম দেখায় শ্যামবর্ণ শামীমের নির্ভেজাল হাসি ওর মন কেড়েছিল। মনে হয়েছিল ছেলেটার ভেতরটা সাফ। আর যোগ্যতাও তো একেবারে কম নয়। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়য় থেকে পাস করে এখন একটা ভালো মাল্টিন্যাশনাল এনজিওতে কাজ করছে। ছেলেটাকে খারাপ লাগেনি ওর। কিন্তু ওর পারিবারিক ব্যাকগ্রাউন্ডের কথা শুনে ওর বাবা-মা সিদ্ধান্ত নেয় এই সম্মন্ধটা না করার। বাবা-মার সিদ্ধান্তের উপর বলার কিছু ছিল না রিতুর। বাবা-মা ওর ভালোর জন্যই সিদ্ধান্ত নেবে, এমনই বিশ্বাস ওর সবসময় ছিল। তখনও এতটা খারাপ লাগেনি। যতটা লাগছে এখন। শামীমের সিরিয়াসনেস ওর মনে চিন্তার ঝড় বইয়ে দিয়েছে। কেন জানি মনে হচ্ছে, শেষ পর্যন্ত শামীমকে না করাটা একটা প্রতারণা হবে। হবে একটা খারাপ কাজ। বাবা-মায়ের সাথে শামীমের ব্যাপারে কথা বলবে, সিদ্ধান্ত নিয়েছে ও। কিন্তু, বাবা-মা যদি তাদের আগের সিদ্ধান্তে অটল থাকে! তখন কি করবে চিন্তা করতে পারছে না রিতু। সিদ্ধান্ত নিলো আজকেই বাবা-মায়ের সাথে কথা বলবে।
রাত ৮ঃ৩০টার দিকে বাবা-মায়ের রুমের দিকে এগোল ও। রাতের খাবার খাওয়ার আগে এই সময়টা বাবা-মা ফ্রি-ই থাকে। রুমে ঢুকে বাবা-মার মুখের দিকে তাকাল রিতু।
‘কিরে রিতু, মুখটা অমন গোমড়া করে রেখেছিস কেন?’ বাবা বলল।
‘কিছু বলবি নাকি?’ জানতে চাইল মা।
‘হ্যাঁ, একটা বিষয় নিয়ে তোমাদের সাথে কথা বলতে চাই।’
‘কি বলবি, বলে ফেল।‘ বলল বাবা।
বাবা-মায়ের বিছানায় গিয়ে একপাশে বসল ও। ‘বাবা, তোমরা কি আমার জন্য নতুন কোনো ছেলে দেখলে?’
‘না রে, এখনও দেখিনি! তা তুই বললে খুব তাড়াতাড়িই দেখতে পারি!’ একগাল হেসে বলল বাবা।
‘বাবা, আর কোনো ছেলে দেখার দরকার নেই। আমি একটা সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেলেছি।‘
বাবা-মা ওর দিকে একটু অবাক হয়ে তাকাল। ‘কি রে, কি সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেলেছিস?’ প্রশ্ন করল মা। ‘তোর কি কোনো পছন্দের ছেলে আছে?’
‘আছে মা,’ বলল রিতু।
‘কে সে? কি করে কথায় থাকে?’ জানতে চাইল বাবা।
‘বাবা, তোমরা ওকে চেনো,’ বলল রিতু। ‘ও শামীম!’
শামীমের মুখ থেকে ‘আমি আপনাকে ভালোবাসি’ শুনে রিতু যেমন অবাক হয়েছিল, ঠিক তেমনি রিতুর মুখ থেকে শামীমের নাম শুনে অবাক হলো ওর বাবা-মা।
‘তুই কি ওকে আগে থেকে চিনতি?’ জানতে চাইল মা।
‘না, মা।‘ বলল রিতু।
‘তাহলে?’
রিতু তখন পুরো ব্যাপারটা খুলে বলল। শামীম যে ওকে কিভাবে চাইছে এবং গত কয়েকটা দিন কিভাবে নক করেছে, সেটা খুলে বলল।
শুনে বাবা-মা দুজনই অবাক হলো। ‘তুই তো আগে সেভাবে শামীমের কথা এমন করে বলিসনি,’ বলল বাবা। ‘দেখ, আমরা চাই তোর ভবিষ্যতটা ভালো হোক। সেজন্যই আমরা চেয়েছিলাম আরও ভালো একটা বংশের, একটু টাকা-পয়সা আছে এমন ছেলের সাথে বিয়ে দিতে।‘
‘বাবা, টাকা-পয়সা আর পারিবারিক ব্যাকগ্রাউন্ডই তো সব নয়। ওর ফ্যামিলি ব্যাকগ্রাউন্ডের পিছনে তো ওর কোনো হাত নেই। আর শামীমের আজ খুব বেশি টাকা-পয়সা নেই, ভবিষ্যতে তা হবে। সবচেয়ে বড় কথা ও আমাকে অনেক করে চাইছে। আমাকে সত্যি করে ভালোবাসে। বাবা...এমন ছেলেকে আমি ফিরিয়ে দিতে চাই না।‘
বাবা-মা দুজন একে অন্যের মুখের দিকে তাকাল। মায়ের মুখে নীরব সম্মতির লক্ষণ। তাই রিতুর বাবা বলল, ‘ঠিক আছে, আমরা তো তোর উপরে এই ব্যাপারে কোনোকিছু চাপিয়ে দিতে চাই না। ঘর-সংসার তো করবি তুই-ই। তুই যদি শামীমের সাথে ভালো থাকবি মনে করিস, তাহলে ওদের আবার ডাকি সামনের সপ্তাহে...’
দু’হাত দিয়ে বাবা-মায়ের দুই হাত ধরল রিতু। মুখে ছড়িয়ে পড়ল নির্মল হাসি। ‘ধন্যবাদ, বাবা,’ এতটুকুই ও বলতে পারল।
শামীম
গত কয়েকটা দিন শামীমের কাটল খুব অস্থিরভাবে। অফিসে যতক্ষণ কাজে ডুবে থাকে, ততক্ষণ ও ভালো থাকে। অফিস শেষ হওয়ার পর অস্থিরতাটা আবার পেয়ে বসে। ভালো লাগে না বন্ধুদের আড্ডাও। কারণ, বন্ধুদের সাথে আড্ডায় বসে রিতুর প্রসঙ্গটা উঠালেই ওরা বাজায় সেই পুরনো ভাঙ্গা রেকর্ডঃ ‘আরে, এর চেয়ে অনেক ভালো মেয়ে তুই পাবি’,... ‘আরে, তোর যোগ্যতা কি কম নাকি। ৫০,০০০ হাজারের মতো সেলারি পাস। কয়েক বছরে তোর সেলারি লাখখানেক হয়ে যাবে। এর চেয়ে সুন্দরি মেয়ে তুই অনেক পাবি...’ ... ‘আরে, রিতু তো শ্যামলা, তুই পরীর মতো ফুটফুটে বউ পাবি একদিন। তখন কই থাকব এই রিতু!’
এসব শুনে আরো মেজাজ খারাপ হয়ে যায় শামীমের। আরে, টাকা দিয়ে আরও সুন্দরি মেয়ে হয়তো পাওয়া যাবে। কিন্তু, রিতুকে যে ও ভালোবাসে ফেলেছে। এই শ্যামবালিকাকেই ওর চাই।
তাই বন্ধুদের আড্ডাও এখন ভালো লাগে না। সমাজের সবাই যেন টাকা দিয়ে যেন মেয়েদের কিনে নেওয়ায় বিশ্বাসী। যার যতবেশি টাকা আছে, সে ততবেশি সুন্দরি বউ পাবে। যেন এটা মাছের বাজার! নাকি বউয়ের বাজার বলা উচিত, ভাবছে শামীম। অ্যারেঞ্জড ম্যারেজের প্রতি আরও বেশি করে বিবমিষা জাগে ওর।
যখনি কেউ ফোন করে, মোবাইলে রিং বাজার সাথে সাথেই মনেপ্রাণে খুব চায় শামীম এটা হোক রিতু। কিন্তু রিতুর সাথে গত দুদিন আগে কথা বলার পর আর কোনো রেসপন্স পাওয়া যায়নি। রাত ন’টার দিকে ওর ফোনটা বেজে উঠল। অন্য কেউ হবে মনে করে মোবাইলটা হাতে নিলো শামীম। স্ক্রিনের দিকে তাকিয়ে ওর হৃদস্পন্দনের গতি বেড়ে গেল। এটা তো রিতুর নাম্বার! রিতু ফোন করেছে! কি বলবে রিতু, বলবে কি ওরা রাজি। নাকি দুঃখ প্রকাশ করে কিছু সমবেদনা জানাবে। ফোন রিসিভ করল ও।
হ্যালো,’ বলার সাথে সাথে রিতু বলল, ‘ক্যামন আছেন?’
বুকটা দুরুদুরু করছে শামীমের। কি বলতে চায় রিতু। ‘আর ভালো থাকতে দিলেন কোথায় আপনি? এভাবে ঝুলিয়ে রাখলে কি কেউ ভালো থাকে?’ হেসে বলল শামীম।
‘অপেক্ষার ফল তো মধুর, তাই না?’ হেসে বলল রিতু। সাথে সাথেই বুঝল শামীম ইতিবাচক কিছুই বলবে রিতু। তার প্রচেষ্টা সার্থক হয়েছে।
‘হুম মধুর! মিষ্টি। ঠিক আপনার মতো!’
‘তাই, না! আমি কি শুধুই মিষ্টি! আর কিছু না?’
‘আপনি আপনাকে আবিষ্কারের সুযোগটা দিলে তো বুঝত পারতাম আপনি শুধু মিষ্টিই, নাকি আরো কিছু। চেখে দেখতে দিলে তো আমি জানতে পারব, তাই না!’
‘যান, যান! সেই সুযোগ আপনি পাবেন না,’ হেসে বল রিতু।
‘আজ না পাই, একদিন তো পাব, নাকি?’ হেসেই বলল শামীম।
দুজনই একটু ক্ষণ চুপ করে থাকল। কেউ কিছু বলল না। রিতুই শেষে নিরবতা ভাঙ্গল। ‘আপনারা কালকে আমাদের বাসায় আসবেন, বাবা-মা আপনাদের ডেকেছে।‘
শুনে জানে আপানি আসল শামীমের। হৃদপিণ্ডের স্পন্দনের গতি বেড়ে গেল আনন্দের আতিশয্যে।
‘তা ডেকেছেন কি জন্য? আমাকে কোরবানি দেবেন নিশ্চয়?’
‘হা, আপনাকে কোরবানি তো দেবই। আপনার গলার দড়ি থাকবে আমার হাতে, বুঝেছেন মিয়া! সারাজীবনের জন্য!’ খিলখিল করে হেসে উঠে বলল রিতু।
রিতু ও শামীম
সব ভালো যার শেষ ভালোর মতো রিতু আর শামীম দুজনাই দুজনের হয়ে গিয়েছে। বাসর রাতে সব কাজ শেষ করে রুমে ঢুকতে একটু দেরিই করে ফেলল শামীম। ঢুকেই ও বলল, ‘আমি কি বেশি দেরি করে ফেলেছি, শ্যামপরী?’ গত কয়েকদিন ধরে এই নামেই রিতুকে ডাকছে শামীম – শ্যামপরী।
‘আজ দেরি করেছ, সমস্যা নেই। কিন্তু এরপর একদিনও আমাকে দেরি করিয়ে রাখলে তোমার খবর আছে, বুঝলে?’
বিছানায় ফিয়ে বসল শামীম। নতুন বউয়ের সাজে রিতুকে আজ সত্যিই পরীর মতো লাগছে। রিতুর একটা হাত ও নিজের হাতে তুলে নিলো।
‘তা, শেষ পর্যন্ত তো আমাকে অ্যারেঞ্জড ম্যারেজই করলে!’ খোঁচা দিয়ে বলল রিতু। ‘তুমি না অ্যারেঞ্জড ম্যারেজের ঘোর-বিরোধী?’
‘হ্যাঁ, আমি অ্যারেঞ্জড ম্যারেজই করেছি। কিন্তু এই অ্যারেঞ্জমেন্টটা কিন্তু আমরাই করেছি, বুঝলেন। অ্যারেঞ্জড ম্যারেজ তখনই হতে পারে, যখন ছেলে-মেয়ে দুজন দুজনকে ভালোবাসে। ভালোবাসাটা থাকতে হবে। এছাড়া, ছেলেমেয়ে একে অপরকে চেনে না, জানে না, এরকম অবস্থায় দুদিনের পরিচয়েই একে অপরের সাথে শুয়ে পড়ছে, এটা কোনো সভ্য সমাজের নিয়ম হতে পারে না, বুঝলেন বিবি সাহেবা।‘ লেকচার দেওয়ার মতো করেই বলল শামীম।
‘তা, আজ কি শুধু লেকচারই দিবেন?’ হেসে জানতে চাইল রিতু।
‘উহুঁ, আমি লেকচারার নই। আমি লাভার ম্যান!’ ঠোঁটটা গোল করে বলল শামীম।
হাত ধরে রিতুকে কাছে টানল শামীম। রিতুর ঠোঁটের দিকে এগিয়ে গেল ওর ঠোঁট।
২৩ শে এপ্রিল, ২০১৯ বিকাল ৩:৪৩
শেহজাদ আমান বলেছেন: দেখাদেখি থেকে বিয়ে পর্যন্ত কি আসলেই অনেক সময় পাওয়া যায়? সেই অল্প কয়দিনে কি আসলেই চিনে নেওয়া যায়? আর চিনে নেওয়ার কথাটা কয়জন ছেলেমেয়ে ভাবে? বেশিরভাগের ক্ষেত্রেই তো দেখা যায়, দুদিনের পরিচয়ে বিয়ে। তারপর আর কি দুদিনের পরিচয়ে ভালোবাসা সৃষ্টি হওয়া ছাড়াই যৌনতা!!!
২| ২৩ শে এপ্রিল, ২০১৯ বিকাল ৩:৪৭
অয়ন নাজমুল বলেছেন: দেখুন যাদের বিএফ জিএফ নেই তারা কি জীবনে বিয়ে করবে না? আমাদের সমাজে এরেঞ্জড ম্যারেজই বাস্তবতা। আর ভালবাসা গড়ে তুলতে সময় লাগে না। এতে চর্চার প্রয়োজন।
২৩ শে এপ্রিল, ২০১৯ বিকাল ৩:৫৯
শেহজাদ আমান বলেছেন: আমাদের সমাজে এটাই বাস্তবতা। কিন্তু গভীরভাবে ভাবলে এটার অন্তসারশূন্যতা ভালোভাবেই চোখে পড়ে। আর এর বিভিন্ন হাস্যকর ও বাজে দিক আছে, যেটা আমি গল্পে উল্লেখ করেছি। তবে, আশার কথা হচ্ছে পশ্চিমা দেশগুলোতে কিন্তু অ্যারেঞ্জড ম্যারেজ হয় না বললেই চলে। এটা হয় আমাদের মতো অন্ধকারাচ্ছন্ন ও পিছিয়ে পড়া সমাজেই।
৩| ২৩ শে এপ্রিল, ২০১৯ বিকাল ৪:০৫
অয়ন নাজমুল বলেছেন: পশ্চিমা দেশগুলোতে কিন্তু ডিভোর্সের সংখ্যাও বেশি। আর যারা বছরের পর বছর প্রেম করেও বিয়ের সময় অন্য একজনের কাঁধে ঝুলে পড়ে তাদের কি বলবেন? কোন ভালবাসাটা খাঁটি আর কোনটা ভুয়া সেটাও কিন্তু বুঝতে পারে না অনেকে। উলটো প্রেমের বিয়ের চেয়ে এরেঞ্জ ম্যারেজ অনেক সময়ই বেশি সুখের হয়। বাস্তবতার আলোকে বলছি।
২৩ শে এপ্রিল, ২০১৯ সন্ধ্যা ৬:০১
শেহজাদ আমান বলেছেন: এরেঞ্জড ম্যারেজ বিষয়টা অরুচিকর। আর সংসার সুখের হওয়াটা বা ডিভোর্সের ব্যাপারটা লাভ ম্যারেজে আছে, অ্যারেঞ্জড ম্যারেজেও। কিন্তু টাকা-পয়সা বা খানদানি ফ্যামিলির কথা বিবেচনা করেই তো মেয়ে বা ছেলের পরিবার এতে রাজি হয়। বিষয়টা কি একরকম ব্যবসা বলে আপনার কাছে মনে হয় না?
৪| ২৩ শে এপ্রিল, ২০১৯ বিকাল ৫:২০
রাজীব নুর বলেছেন: আসলে আমাদের দেশটা আজও পুরোপুরি আধুনিক হতে পারে নি।
২৩ শে এপ্রিল, ২০১৯ সন্ধ্যা ৬:০৩
শেহজাদ আমান বলেছেন: হুম, টিকে আছে মান্ধাতা আমলের কিছু অযৌক্তিক প্রথার উপর ভিত্তি করে। এর একটা হলো অ্যারেঞ্জড ম্যারেজ।
৫| ২৩ শে এপ্রিল, ২০১৯ বিকাল ৫:৪৯
গিয়াস উদ্দিন লিটন বলেছেন: গল্পটা অনেক বড় ছিল।
২৩ শে এপ্রিল, ২০১৯ সন্ধ্যা ৬:০৭
শেহজাদ আমান বলেছেন: ধন্যবাদ। সামনে আমার রচিত কিছু ছোট গল্প নিয়ে ছোটগল্পের একটা ব্যয়ী বের করার ইচ্ছে রয়েছে। সেখানে এই গল্পটার পরিধি আরেকটু বাড়তে পারে।
৬| ২৩ শে এপ্রিল, ২০১৯ সন্ধ্যা ৬:১৭
অয়ন নাজমুল বলেছেন: আপনার কথার যুক্তি আছে। আমি নিজেও প্রেমের বিয়ের পক্ষপাতি। কিন্তু সেরকম কাউকে না পাওয়া গেলে কিন্তু এরেঞ্জ ম্যারেজ ছাড়া গতি নেই। আর একটা নির্দিষ্ট সময় পর কিন্তু কারো পক্ষেই আর বেশিদিন দেরি করা সম্ভব হয় না।
৭| ২৩ শে এপ্রিল, ২০১৯ সন্ধ্যা ৭:২৩
নীল আকাশ বলেছেন: ১। আপনার এই গল্পটা অনেক জায়গায়ই অহেতুক টেনে টেনে বড় করেছেন। অনর্থক বড় করলে বেশির ভাগ পাঠক ধৈর্য্য হারা হয়ে যায়।
২। গল্পে আবেগের জায়গা গুলি নিয়ে ভালই কাজ করতে হবে আপনাকে। আবেগের বহিঃপ্রকাশ একদমই হয় নি।
৩। প্রথম দেখায় ভালোবাসা হয় না। যেটা হয় ভালোলাগা, সেখান থেকে ধীরে ধীরে সেটা ভালোবাসায় রূপান্তরিত হয়। এটা কখনই ভুলবেন না।
৪। কথপোকথন জন্য সামনে - হাইফেন ব্যবহার করুন। '' ব্যবহার করবেন না।
বেশি বেশি করে ব্লগে ভাল ভাল লেখকদের গল্প পড়ুন। শেখার কোনই শেষ নেই।
ধন্যবাদ এবং শুভ কামনা রইল
২৩ শে এপ্রিল, ২০১৯ রাত ১০:০৬
শেহজাদ আমান বলেছেন: ১। এই গল্প চূড়ান্ত গল্প না। এটার কাটছাট হতে পারে। সংযোজনও হতে পারে। প্যাটার্ন একটু চেঞ্জও হতে পারে। সবকিছু ঠিকঠাক করে প্রকাশিতব্য গল্পগ্রন্থে ব্যাপারটা যাবে।
২। আবেগের জায়গাগুলো নিয়ে অবশ্যই কাজ করা দরকার। কিন্তু, আপনি যে বললেন, আবেগের বহিঃপ্রকাশ একদমই হয়নি, সেটা কি আপনার নিজের কাছেই খটকা লাগছে না?
৩। প্রথম দেখায় তো এখানে ভালোবাসা হয়নি। মেয়ে দেখতে যাওয়ার পর, অর্থাৎ রিতুর সাথে শামীমের দেখা হওয়ার পর আর যে তাদের দেখা হয়নি, আর কথা হয়নি, সেই কথা কিন্তু এখানে বলা হয়নি। এধরনের ঘটনার ক্ষেত্রে আরও দেখা হওয়া, কথা হওয়া স্বাভাবিক। এখানে শামীম কোন পর্যায়ে রিতুকে ভালোবাসার কথা বলেছে, সেটা আপনি মনে হয় খেয়াল করেননি। বোঝাই যায়, গল্পটা ঠিকমতো পড়েননি আপনি। আর যদিও এখানে আমি প্রথম দেখায় ভালোবাসার কথা বলিনি, কিন্তু আপনিও কখনো ভুলবেন না - লাভ এট ফাস্ট সাইট' কথাটাও।
৪। আপনি নিশ্চয় আন্তর্জাতিক গল্প-উপন্যাসগুলো পড়েছেন। সেখানে কিন্তু হাইফেন ব্যবহার করা হয় না। সেটা স্ট্যান্ডার্ডও নয়।
এবার, আমি একটু বলি - আমার লেখা ছোটগল্পে কিন্তু আমি আবেগের বহিঃপ্রকাশ একটু কমই রাখি। দেই ততটুকুই, যতটুকু না দিলেই নয়। আমার গল্পে প্রাধান্য দেই যুক্তিময়তা ও প্লটের সুসামঞ্জস্যকে, যেটা অনেক বড় লেখকের গল্পেও অনুপস্থিত দেখা যায়। আর আমার গল্পের শক্তি হলো একেবারেই ভিন্ন ঘরানার প্লট। সামুতে প্রকাশিত আমার আগের কিছু গল্প পড়লেও আপনি ব্যাপারটা বুঝতে পারবেন। প্লটের ইউনিকনেসই আমার গল্পের বড় শক্তি। সেটা আশা করি আপনি ধরতে পারবেন।
যাই হোক, মন্তব্যের জন্য ধন্যবাদ!
৮| ২৩ শে এপ্রিল, ২০১৯ সন্ধ্যা ৭:৫৯
মাহমুদুর রহমান বলেছেন: নীল আকাশ ভাইয়ের সাথে সহমত।
২৩ শে এপ্রিল, ২০১৯ রাত ১০:০৭
শেহজাদ আমান বলেছেন: নীল আকাশ ভাইয়ের মন্তব্যের জবাবে আমার উত্তরঃ ১। এই গল্প চূড়ান্ত গল্প না। এটার কাটছাট হতে পারে। সংযোজনও হতে পারে। প্যাটার্ন একটু চেঞ্জও হতে পারে। সবকিছু ঠিকঠাক করে প্রকাশিতব্য গল্পগ্রন্থে ব্যাপারটা যাবে।
২। আবেগের জায়গাগুলো নিয়ে অবশ্যই কাজ করা দরকার। কিন্তু, আপনি যে বললেন, আবেগের বহিঃপ্রকাশ একদমই হয়নি, সেটা কি আপনার নিজের কাছেই খটকা লাগছে না?
৩। প্রথম দেখায় তো এখানে ভালোবাসা হয়নি। মেয়ে দেখতে যাওয়ার পর, অর্থাৎ রিতুর সাথে শামীমের দেখা হওয়ার পর আর যে তাদের দেখা হয়নি, আর কথা হয়নি, সেই কথা কিন্তু এখানে বলা হয়নি। এধরনের ঘটনার ক্ষেত্রে আরও দেখা হওয়া, কথা হওয়া স্বাভাবিক। এখানে শামীম কোন পর্যায়ে রিতুকে ভালোবাসার কথা বলেছে, সেটা আপনি মনে হয় খেয়াল করেননি। বোঝাই যায়, গল্পটা ঠিকমতো পড়েননি আপনি। আর যদিও এখানে আমি প্রথম দেখায় ভালোবাসার কথা বলিনি, কিন্তু আপনিও কখনো ভুলবেন না - লাভ এট ফাস্ট সাইট' কথাটাও।
৪। আপনি নিশ্চয় আন্তর্জাতিক গল্প-উপন্যাসগুলো পড়েছেন। সেখানে কিন্তু হাইফেন ব্যবহার করা হয় না। সেটা স্ট্যান্ডার্ডও নয়।
এবার, আমি একটু বলি - আমার লেখা ছোটগল্পে কিন্তু আমি আবেগের বহিঃপ্রকাশ একটু কমই রাখি। দেই ততটুকুই, যতটুকু না দিলেই নয়। আমার গল্পে প্রাধান্য দেই যুক্তিময়তা ও প্লটের সুসামঞ্জস্যকে, যেটা অনেক বড় লেখকের গল্পেও অনুপস্থিত দেখা যায়। আর আমার গল্পের শক্তি হলো একেবারেই ভিন্ন ঘরানার প্লট। সামুতে প্রকাশিত আমার আগের কিছু গল্প পড়লেও আপনি ব্যাপারটা বুঝতে পারবেন। প্লটের ইউনিকনেসই আমার গল্পের বড় শক্তি। সেটা আশা করি আপনি ধরতে পারবেন।
যাই হোক, মন্তব্যের জন্য ধন্যবাদ!
৯| ২৪ শে এপ্রিল, ২০১৯ রাত ১২:০৮
নীল আকাশ বলেছেন: আপনি কন্ট্রাডিকশন নিয়ে কথা বলেনঃ ১। এই গল্প চূড়ান্ত গল্প না। এটার কাটছাট হতে পারে। সংযোজনও হতে পারে। প্যাটার্ন একটু চেঞ্জও হতে পারে। সবকিছু ঠিকঠাক করে প্রকাশিতব্য গল্পগ্রন্থে ব্যাপারটা যাবে।
চুরান্ত না হলে এটা পড়তে দিয়েছেন কেন আমাদের? আমি আপনার এই লেখার উপর মন্তব্য করেছি। ভবিষ্যতে কি করবেন, কত টুকু রাখবেন, সেটা নিয়ে কিছু বলিনি।
বই বের করবেন না কি করবেন সেটা বার বার সবাই কে বলছেন কেন? বই বের করাই একজন লেখকের সব কিছু?
আবেগের বহিঃপ্রকাশ আমার পছন্দ হয়নি, কারন কিভাবে কোথায় আবেগ প্রকাশ করতে হয় সেটার কোন নমুনা আমি দেখলাম না। আপনি আমি কি বুঝিয়েছি সেটা ধরতে পারেন নি।
হাইফেন ব্যবহার করতে বলেছি কারন আমরা সবাই ব্লগে এই কনভেনশন ইউজ করি। সবার সুবিধার জন্য বলেছি।
আমি কোন লেখা ভাল করে না পড়ে মন্তব্য করি না। আপনি সম্ভবত আমার লেখা বা মন্তব্যের সাথে পরিচিত না।
আপনি সমালোচনা সহ্য করতে পারছেন না। এটা খুব খারাপ লক্ষন। আমি আপনার আর কোন গল্পে বা লেখায় মন্তব্য করবো না।
ধন্যবাদ।
২৪ শে এপ্রিল, ২০১৯ রাত ১২:৫৪
শেহজাদ আমান বলেছেন: দেখেন, গল্পের প্যাটার্ন একটু চেঞ্জ হতে পারে, সংযোজন-বিয়োজন হতে পারে - এটা বলে কিন্তু আমি বোঝাতে চেষ্টা করেছি প্রয়োজনে গল্প সম্পাদনা ও এদিক-ওদিক বা আরও ঠিকঠাক করা হবে। অর্থাৎ আমি গো ধরে বসে নেই যে, যা লিখছি ঠিকই আছে। কিন্তু আপনি বোধহয় সেটা বুঝতে ব্যর্থ হয়েছেন।
আর আবেগের প্রকাশ যে গল্পে আপনি দেখতে পাননি, সেজন্য আপনার প্রতি সমবেদনা রইল। যদিও, আমার মন্তব্যে আমি এটাও পরিষ্কার করেছি যে আমার গল্পে আবেগের প্রকাশ একটু কমই থাকে। যুক্তির প্রকাশ ও বক্তব্যের প্রচণ্ডতাই সেখানে মূখ্য। আমি তো সাদাত হোসাইন নই যে আবেগ দিয়ে পাঠককে কাঁদিয়ে তাদেরকে আমার ভক্ত বানিয়ে নেব। আমার ধরণ আলাদা।
আর ব্লগে সবাই হাইফেন ইউজ করে, এই বিষয়টা কতটুকু সত্য আমার জানা নেই। আমি কিন্তু ব্লগে নতুন না। ২০১৩ সাল থেকে ব্লগিং করছি। কাজেই এই ব্যাপারেও আপনার সাথে একমত হওয়া গেল না।
আপনার মন্তব্য পড়ে আমার ডেফিনেটলি মনে হয়েছে আপনি আমার গল্পটা ভালোভাবে পড়েননি। এতে ভুল হয়ে থাকলে আমি দুঃখিত।
আর, সমালোচনা আমি সবসময় সহ্য করি। কিন্তু, সমালোচনার একটা স্ট্যান্ডার্ড থাকে - ভালো, খারাপ - দুটো দিকই এতে থাকে। কিন্তু, আপনি তো কেবল আমার খুঁতই ধরে গেলেন। কাজেই এই সমালোচনার মূল্য কতটা, সেটা আপনিই বলুন?
©somewhere in net ltd.
১| ২৩ শে এপ্রিল, ২০১৯ বিকাল ৩:৩৪
অয়ন নাজমুল বলেছেন: ভাল হয়েছে। তবে এরেঞ্জ ম্যারেজ যে সভ্য সমাজের নিয়ম হতে পারে না তা নয়। ছেলে মেয়ে দেখাদেখি থেকে শুরু করে বিয়ে হওয়া পর্যন্ত অনেক সময় পাওয়া যায়। ততদিনে চাইলে একজন অন্যজনকে চিনে নিতে পারে।